চট্টগ্রামে উদ্যান বা পার্ক একেবারেই কম। এর মধ্যে একটি উদ্যান নিয়ে গত কয়েক বছরে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ যা করছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ছোট্ট উদ্যানটি যে পরিমাণ ‘অত্যাচারের’ শিকার হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক। আরও হতাশাজনক হচ্ছে, বর্তমান সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষও আগের নিয়মে হাঁটছে। ফলে উদ্যানটি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে তো, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে?
একটি উন্মুক্ত জনপরিসরকে উন্নয়নের নামে বাণিজ্যকরণের চূড়ান্ত সর্বনাশ করার বড় উদাহরণ হতে পারে বিপ্লব উদ্যান। ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় অবস্থিত এ উদ্যান একসময় সবুজে ভরপুর ছিল। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আমলের দুই মেয়র উদ্যানটিকে ইজারা দিয়ে সবুজশূন্য করে দেন। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় মেয়র হওয়া ডা.
খোলা স্থানে কোনো নতুন স্থাপনা হবে না বলে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করলেও বিদ্যমান স্থাপনা বৃদ্ধির সুযোগ এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমোদনই যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। অথচ গত বছরের ৩ অক্টোবর সিটি করপোরেশন আয়োজিত গণশুনানিতে নগরবাসী স্পষ্ট মত দিয়েছিলেন, বিপ্লব উদ্যানে নতুন করে কোনো স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। নগর-পরিকল্পনাবিদ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বারবার একই কথা বলে আসছেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন এ গণমতের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপই করছে না। এটি কি জনস্বার্থের প্রতি উপহাস নয়?
নতুন চুক্তি অনুযায়ী, দ্বিতীয় তলায় আরবান লাউঞ্জ, তৃতীয় তলায় ইনডোর গেমসের জন্য কফি শপ এবং চতুর্থ তলায় চট্টগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-সংবলিত প্রদর্শনী কেন্দ্র নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে ২১টি দোকান, ২টি শৌচাগার, ডিজিটাল স্ক্রিন, এটিএম বুথ, কিয়স্ক ও বাণিজ্যিক প্রচারের সুযোগও থাকছে। এ যেন উদ্যানের জায়গা ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা!
মেয়র শাহাদাত হোসেন নিজে গত বছরের নভেম্বরে ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিপ্লব উদ্যানে বাণিজ্যিক স্থাপনার চেয়ে সবুজায়নকে প্রাধান্য দেওয়া হবে এবং কোনো নতুন স্থাপনা হবে না। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর আমলে নির্মাণাধীন অবকাঠামো ভেঙে ফেলার নির্দেশও তিনি দিয়েছিলেন। তাঁর এসব প্রতিশ্রুতি কি তাহলে মিথ্যা আশ্বাস ছিল?
আমরা বিপ্লব উদ্যানে কোনো ধরনের ভবন, দোকানপাট, অবকাঠামো বা স্থাপনা চাই না। বিপ্লব উদ্যানকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনা হোক। কোনো কংক্রিট নয়, মাটি ও গাছগাছালিকেই প্রাধান্য দেওয়া হোক। নগরবাসীর প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার এ সুযোগ কি সিটি করপোরেশন দিতে পারবে না?
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনা-ঢাকা রুটে আবারও বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা
রাবেয়া বেগম আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা থেকে পাবনার বেড়াগামী আলহামরা পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন। গন্তব্যের ২০ কিলোমিটার আগে পৌঁছার পর জানতে পারেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর হয়ে পাবনার বাস যেতে পারবে না। শাহজাদপুর বাসস্ট্যান্ডের অনেক আগে তালগাছি এলাকায় সব যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাঁকে বেড়ায় পৌঁছাতে হয়।
পাবনা ও শাহজাদপুরের অনেক যাত্রীকে আজ রোববার দিনভর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই দুর্ভোগের কারণ, পাবনা ও শাহজাদপুর বাসমালিকদের পুরোনো দ্বন্দ্ব। আজ সকাল থেকে দুই এলাকার বাস চলাচল আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। পাবনা থেকে শাহজাদপুর হয়ে ঢাকা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে কোনো বাস চলাচল করছে না। একইভাবে শাহজাদপুর থেকেও পাবনার দিকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না।
বাসমালিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে চলতি বছরেই অন্তত চারবার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। আর গত সাত-আট বছরে বাস চলাচল বন্ধ ছিল অন্তত ৩০ বার। একবার বাস চলাচল বন্ধ হলে তা চালু হতে সময় লেগেছে পাঁচ দিন থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত।
বাসমালিক ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি ও পাবনার নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রুট ও সময়সূচি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। পাঁচ-ছয় দিন আগে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির লোকজন শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির মালিকানাধীন নবীনবরণ পরিবহন নামের একটি বাস আটকায়। এর প্রতিবাদে শাহজাদপুরের বাসমালিকেরা নগরবাড়ী সমিতির মালিকানাধীন বাসগুলো চলাচলে বাধা দেন। ঘটনার জেরে গতকাল শনিবার পাবনার দাশুড়িয়ায় নবীনবরণ পরিবহনের একটি বাস আটকে রাখে পাবনা বাসমালিক সমিতি। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আজ সকালে শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে পাবনার সড়ক দিয়েও শাহজাদপুরের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাবনা ও শাহজাদপুর উভয় সমিতির দুই শতাধিক বাস আজ সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহনশ্রমিকেরাও।
এদিকে পাবনা থেকে বেড়া হয়ে ঢাকাগামী বেশির ভাগ পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। দু–একটি বাসের কাউন্টার খোলা থাকলেও সেসব বাস বেড়া থেকে যাত্রী নিয়ে কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে অথবা নাটোরের বনপাড়া হয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।
পাবনা এক্সপ্রেস পরিবহনের বেড়া কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘শাহজাদপুর হয়ে পাবনার কোনো বাস যেতে না পারায় আমাদের বাসগুলো হয় ফেরি হয়ে, না হয় নাটোরের বনপাড়া ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।’
শাহজাদপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাবনা ও নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতি আমাদের বাস চলাচলে বাধা দেওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগ হচ্ছে, তেমনি উভয় মালিক সমিতিরই ক্ষতি হচ্ছে। দুই পক্ষ আলোচনায় বসলে আশা করি সমাধানের পথ পাওয়া যাবে।’
পাবনা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোমিন মোল্লা বলেন, ‘শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির লোকজন প্রায় এক মাস ধরে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির বাসগুলো শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে যেতে দিচ্ছিল না। আজ থেকে তারা পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দিল। শাহজাদপুর মালিক সমিতি ছোটখাট যেকোনো ব্যাপার হলেই তাদের এলাকার ওপর দিয়ে পাবনার বাস চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।’