যে কারণে প্লাস্টিকের র্যাকের ব্যবহার বাড়ছে
Published: 30th, May 2025 GMT
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বায়ুদূষণ রোধের সমাধান আছে, আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই
বায়ুদূষণ সমস্যার সমাধান সবারই জানা আছে। আইন আছে, বিধান আছে। কিন্তু সমাধান করি না। যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ করা হয় না। এখন সময় এসেছে এগুলো কার্যকর করতে হবে। সবাইকে নিয়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে।
‘নীরব ঘাতক বায়ুদূষণ: সমস্যার গভীরতা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন খ্যাতিমান জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে যৌথভাবে এই সেমিনার আয়োজন করে ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ও ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্ট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।
সেমিনারে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বায়ুদূষণের কারণ ও প্রতিকার এবং বায়ুদূষণের কারণের স্বাস্থ্যগত সমস্যার দিক তুলে ধরে দুটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। পরে এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, নগর–পরিকল্পনাবিদ, চিকিৎসক ও পরিবেশবাদীরা আলোচনায় অংশ নেন।
প্রকৌশলী সরদার আমিন তাঁর তথ্যবহুল গবেষণাপত্রে বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে কোনো শহরে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৫০ থাকা ভালো। এই মাত্রা ১০০ পার হলেই তা বিপজ্জনক। ঢাকায় ২০২৪ সালে একিউআই মাত্রা ছিল ১২৪। এই মাত্রা স্থায়ী ছিল ৩৫ দিন। এত দিন ধরে এত উচ্চমাত্রা একিউআই বিশ্বে আর কোনো দেশে ছিল না।
দিল্লিতে একিউআই মাত্রা সবচেয়ে বেশি ছিল ২০৯, তবে তা ছিল মাত্র ১০ দিন। লাহোরে এই মাত্রা ১২৬ আর দূষণের মেয়াদ ছিল ১০ দিন। এ কারণে ঢাকা এখন বিশ্বের তৃতীয় বায়ুদূষণের শহর হলেও স্থায়িত্বের দিক থেকে শীর্ষ স্থানে রয়েছে বলে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।
সরদার আমিন বলেন, জনঘনত্বের নিরিখেও ঢাকা শীর্ষে। এই শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৮৭ হাজার মানুষের বাস, যেখানে আদর্শ জনঘনত্ব হওয়া উচিত প্রতি বর্গকিলোমিটারে সাড়ে ছয় হাজার। এই বিপুল জনসংখ্যার চাপও বায়ুদূষণের একটি কারণ। এত মানুষের খাবার তৈরির জন্য রান্নাঘরে যে ধোঁয়া উৎপন্ন হয়, তা বায়ুকে দূষিত করছে।
এ ছাড়া অপর প্রধান কারণের মধ্য মোটরযানের ধোঁয়া, ইটভাটা, শিল্পকারখানার ধোঁয়া, নির্মাণসামগ্রী ও নির্মাণকাজের ধুলাবালি প্রভৃতি। বাতাস মিশে থাকা ধোঁয়া ও বিভিন্ন ধরনের অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা মানবদেহে প্রবেশ করে মারাত্মক ক্ষতি করছে। বায়ুদূষণ রোধে ১৫টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন এই গবেষক।
স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন চিকিৎসক তামান্না বাহার। তিনি বলেন, বায়ুদূষণ বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ। গত বছর দেশের বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫–এর মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে শনাক্ত করা হয়েছে ৭৮ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, বাতাসে এই অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা মধ্যে যেসব ক্ষতিকর উপাদান থাকে তা কাশি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি অ্যালার্জি, নিউমোনাইটিস থেকে হৃদ্রোগ ও কিডনির রোগ, ক্যানসার, স্নায়বিক রোগ এবং গর্ভবতীদের নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। দেশে ২০২১ সালের এক জরিপে ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণকে দায়ী করা হয়েছিল।
তামান্না বাহার বলেন, এ থেকেই বায়ুদূষণের ভয়াবহতা উপলব্ধি করা যায়। প্রতিবছর এত মানুষ মারা যাচ্ছে। এর সঙ্গে বিপুল চিকিৎসা ব্যয় পরিবার ও সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতেও গভীর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।
অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, শুধু বায়ু নয়, পানি, মাটিসহ দেশে পরিবেশের সবকিছুই খুব খারাপ অবস্থায় আছে। এসব নিয়ে অনেক সেমিনার, গবেষণা হয়েছে। কী করণীয় তা বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, পরিবেশ, নদী, পানি, বায়ু—সবকিছু নিয়েই ভালো ভালো আইন ও বিধিমালা আছে। কিন্তু কোনো কিছু সঠিকভাবে কার্যকর করা হয় না। এটাই হলো প্রধান সমস্যা। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। এখন সময় এসেছে, বিপুল জনমত তৈরি করে জোরদারভাবে আইন প্রয়োগের দাবি তুলতে হবে।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও বায়ুদূষণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ২০১৬ সাল থেকে ঢাকার বায়ুদূষণ মাত্রা ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে কেবল করোনাকালে (২০২০ সাল) অল্প কিছু সময়ের জন্য বায়ুদূষণ কমেছিল। এর পর থেকে ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে ঢাকা এখন বিশ্বের তৃতীয় দূষিত বায়ুর শহর।
অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, সারা দিনের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শহরে দূষণের মাত্রা একটু কম থাকে। স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনতে হলে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। করোনাকালে মাস্ক ব্যবহারের যে অভ্যাস গড়ে উঠেছিল, তা বহাল রাখলে নাগরিকেরা উপকৃত হবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক নগর–পরিকল্পনাবিদ শেখ মো. মেহেদী হাসান বলেন, এই নগর গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। আইন আছে বটে, কিন্তু এটা পরিষ্কার যে ক্ষমতাবানদের জন্য কোনো আইন নেই। তারা জলাধার ভরাট করছে, নদী দখল করছে। সব রকমের দূষণে সঙ্গে তাদের ভূমিকা আছে। এই সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে।
প্রকৌশলী আল্লামা আর রাজি বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে দূষণ জড়িত। তবে দূষণ রোধে সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশকর্মী চিকিৎসক লেনিন চৌধুরী বলেন, বায়ুদূষণের ফলে শুধু মানুষের সমস্যাই হচ্ছে না, সমগ্র বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে জীবজগতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দূষণরোধে যে আইন ও বিধিমালা রয়েছে এবং উচ্চ আদালতের যে ১২ দফা নির্দেশ রয়েছে, সেগুলো কঠোরভাবে কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকৌশলী নিমাই গাঙ্গুলি। সঞ্চালনা করেন চিকিৎসক আনোয়ারুল আনাম কিবরিয়া।