জাতীয় পুরস্কার পাওয়া রাব্বীর তৎপরতায় উদ্ধার হয়েছিল ৪৯টি পদ্মগোখরা
Published: 1st, July 2025 GMT
২০২০ সালের ১২ আগস্ট নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার এক গ্রামে ঘটেছিল অদ্ভুত এক ঘটনা। ওই দিন শাহাদত হোসেন নামের এক ব্যক্তি অবৈধভাবে ৪৯টি বিষধর পদ্মগোখরা সাপ আটকে রেখেছিলেন। অপ্রশিক্ষিত কারও কাছে এতগুলো সাপ থাকায় গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে প্রচণ্ড আতঙ্ক। বিষয়টি জানতে পারেন স্থানীয় পরিবেশকর্মী ফজলে রাব্বী। তিনি দ্রুত যোগাযোগ করেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সঙ্গে। বিভাগের কর্মকর্তারা গিয়ে সাপগুলো উদ্ধার করে সংরক্ষিত স্থানে ছেড়ে দেন। এতে আতঙ্কমুক্ত হয় গ্রামবাসী।
এই একটি ঘটনা নয়, ফজলে রাব্বীর কর্মকাণ্ডে প্রাণ পেয়েছে বহু বন্য প্রাণী। শিকারিদের কবল থেকে তিনি উদ্ধার করেছেন ৯ হাজারের বেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, ৫টি হনুমান, ৮২টি সাপ, ১টি শকুন, ৫টি বেজি, ১টি মেছো বিড়াল, ১৮টি বনবিড়াল, ১টি নেপালি ইগল, ৫টি দেশি ইগল, ২৮টি কাছিম ও ২টি ময়ূর। এ ছাড়া উদ্ধার করেছেন বন্য প্রাণী শিকারির ৩৫০টি ফাঁদ ও জাল।
পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরিতে ফজলে রাব্বী রোপণ করেছেন ৩০ হাজার গাছ, বিতরণ করেছেন ১ লাখ ৩০ হাজার লিফলেট ও মাইকিং করেছেন ১৮০ বার।
নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর হাজীপাড়ার বাসিন্দা ফজলে রাব্বীর বয়স ৩২ বছর। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি পরিবেশ ও বন্য প্রাণী রক্ষায় কাজ করে আসছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের (বিবিসিএফ) প্রচার সম্পাদক। পরিবেশ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে ২০২৫ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
২৫ জুন ঢাকায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
ফজলে রাব্বী বলেন, ‘নলডাঙ্গা পুরোপুরি বন্য প্রাণীর জন্য নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমার কাজ চলবে।’ তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতন করতে গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সবুজ বাংলা’।
গ্রামের শিশুসহ নানা বয়সের নারী-পুরুষ এই সংগঠনের সদস্য। হালতি বিলসহ আশপাশের যেকোনো জায়গায় বন্য প্রাণী বিপদে পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে খবর পান ফজলে রাব্বী। ছুটে যান ঘটনাস্থলে।
নেপালী একটি অসুস্থ ঈগলকে নলডাঙ্গার হালতি বিল থেকে উদ্ধার করে ফজলে রাব্বী ও তাঁর সহকর্মীরা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন য প র ণ নলড ঙ গ স রক ষ কর ছ ন পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরে কোন্দলে জর্জরিত বিএনপি বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত, মাঠ গোছাচ্ছে জামায়াত
গত ৫ আগস্টের পর শরীয়তপুরের রাজনীতির হালচাল পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এই জনপদে দেখা নেই দলটির নেতা-কর্মীর। রাজনীতির মাঠে এখন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কমিটি ও রাজনৈতিক তৎপরতা নেই।
পুরো রাজনীতির মাঠ দখলে থাকলেও বিএনপিতে কোন্দল আছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জেলার রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোন্দল মোকাবিলা করতে হচ্ছে দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। দলটির নেতারা ঠিকাদারি, হাট-ঘাট, বালুর ইজারাসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য বাগিয়ে নিতেও তৎপর। আর তিনটি সংসদীয় আসন, ছয়টি উপজেলা পরিষদ ও ছয়টি পৌরসভায় প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে ইসলামী মাঠ গোছানোর কাজ করছে।
বিএনপির হালচাল
বিএনপিতে কোন্দলের কারণে শরীয়তপুরে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। নেই যুবদলের কমিটি, ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে চলছে বিরোধ। বিএনপির নেতাদের জেলার নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণ ও তিনটি সংসদীয় আসনের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় চরম আকারে বিরোধ আছে।
১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি শরীয়তপুরের কোনো আসনে জয়ী হতে পারেননি। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার জন্য শরীয়তপুর-১ আসনে তৎপরতা চালাচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য সরদার নাসির উদ্দিন, জেলা বিএনপির সাবেক অর্থ সম্পাদক মজিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাবুবুর রহমান তালুকদার ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিন্টু সওদাগর।
শরীয়তপুর-২ আসনে তৎপর আছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম ফয়সাল ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন ঝিন্টু।
শরীয়তপুর-৩ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এপিএস মিয়া নুরুদ্দিন ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আহমেদ আসলাম। এই নেতারা মনোনয়ন চেয়ে মাঠপর্যায়ে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙিয়েছেন। এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ আছে। যাঁর যাঁর মতো আলাদাভাবে স্থানীয় ও জাতীয় কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।
২০১৭ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করে। এরপর আর ওই কমিটি কোনো সম্মেলন করতে পারেনি। সম্প্রতি আবার জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হবে, এমন গুঞ্জন শুরু হয়। এর পর থেকে কমিটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন মিয়া নুরুদ্দিন, আরেক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন শফিকুর রহমান ও সরদার নাসির উদ্দিন। জেলার অন্য নেতারা ওই দুই পক্ষর সঙ্গে বিভক্ত হয়ে বিরোধে আছেন।
৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতারা নদীর চরের বালু উত্তোলন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি, গরুর হাট ইজারা, হাটবাজার ইজারা, ফেরিঘাট ইজারাসহ বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। ফলে ব্যবসার আধিপত্য ও দখল নিয়ে নেতাদের মধ্যে বিরোধ আছে।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দলটি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চালাতে পারছি না। আমাকে নীতিনির্ধারণী মহলের আদেশ ফলো করতে হয়। আর বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে নেতৃত্বের নানা ধরনের প্রতিযোগিতা থাকে। তারপরও বলব, দীর্ঘ ১৭ বছরের মামলা-হামলা, দমন-নিপীড়ন মোকাবিলা করে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত রাখতে পেরেছি।’
মিয়া নুরুদ্দিনের বক্তব্য জানার জন্য মুঠোফোনে কয়েক দফা কল করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা দিলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
নির্বাচনমুখী কার্যক্রমে জামায়াত
শরীয়তপুরের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর শক্ত অবস্থান কখনোই ছিল না। মামলা-হামলায় জর্জরিত দলটির নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থেকে চালাতেন কার্যক্রম। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাঁরা সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছেন জোরেশোরে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির আমিরসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের উপস্থিতিতে শরীয়তপুরে বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তিনটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ছয়টি উপজেলা পরিষদ ও ছয়টি পৌরসভার মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি, যাঁরা মাঠপর্যায়ে নানা ধরনের প্রচারণা কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সংসদ নির্বাচনের জন্য ঘোষণা করা প্রার্থীরা হলেন শরীয়তপুর-১ আসনে মোশারফ হোসেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির শিবিরের সাবেক সভাপতি। শরীয়তপুর-২ আসনে জাতীয় ডক্টর ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন বকাউলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আর শরীয়তপুর-৩ আসনে ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ আজহারুল ইসলামের নাম।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর শরীয়তপুর জেলার নায়েবে আমির কে এম মকবুল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আমরা নির্বিঘ্নে স্বস্তিতে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারছি। আমরা সব প্রার্থী ঘোষণা করেছি। তাঁরা ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ করছেন।’
অন্য দলের তৎপরতা নেই
শরীয়তপুরে এনসিপির জেলা কমিটি গঠন করা হয়নি। এর বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন কোনো তৎপরতা জেলার কোথাও নেই।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির প্রথম আলোকে বলেন, এনসিপির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এখনো এ জেলায় শুরু হয়নি। সামাজিক কর্মকাণ্ড ও নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য তাঁরা বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে নেই তৎপরতা
শরীয়তপুর বরাবরই আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকা। সরকার পতনের পর দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা মামলার আসামি হয়ে এলাকা ছেড়েছেন। কর্মী-সমর্থকেরা থাকলেও তাঁরা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেই। তবে রাতের আঁধারে জেলার বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি বেশ কিছু মিছিল করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে।