বৈরী পরিবেশের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। ইলিশ ধরতে সাগরে নামতে পারছে না কক্সবাজার উপকূলের কয়েক হাজার ট্রলার। বেকার হয়ে পড়েছেন ১ লাখের বেশি জেলে। অধিকাংশ ট্রলার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীতে।

আজ মঙ্গলবার সকালে নদী নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, জেলেরা অলস সমায় কাটাচ্ছেন। সেখানে দেখা হয় জেলে জুবাইদুল ইসলামের (২৫) সঙ্গে। সাগর উত্তাল থাকায় গত সাত দিন ইলিশ ধরতে যেতে পারেননি। সংসার কীভাবে চলবে, সে ভাবনায় দিন কাটছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরি সাগরত ইলিশ ধরিত ন পারির। সাগর বেশি গরম। ট্রলারত বই বই টেনশন গরির (করছি)-সংসার কেনে (কীভাবে) চালাইয়ুম। ঘরত মা-বাপ, বউ আছে। তারা ঠিক মতন একবেলা খাইত ন পারের। চোখেমুখে অন্ধহার দেহির।’

জুবাইদুলের বাড়ি সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ার আলী আকবরডেইল গ্রামে। কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ায় থেকে সাত বছর ধরে তিনি ট্রলারে জেলে শ্রমিকের কাজ করছেন। ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে গিয়ে মাছ ধরছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয়নি জানিয়ে জুবাইদুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ ১৭ জুন একটি ট্রলার নিয়ে তাঁরা ১৫ জন জেলে সাগরে ইলিশ ধরতে গিয়েছিলেন। ইলিশের সন্ধানে সাগরে তাঁরা সাত দিন অবস্থান করে গত ২২ জুন ঘাটে ফিরে আসেন। তত দিনে জালে ধরা পড়ে ১৪ মণ লইট্যা মাছ। বিক্রি করে পাওয়া গেছে ৫৬ হাজার টাকা। অথচ সমুদ্রযাত্রায় ট্রলারে খরচ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। লোকসান হলে জেলেদের সংকট বাড়ে।

পাশের আরেক ট্রলারের জেলে কামরুল হাসান (৪৫) বলেন, গভীর সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছে ভরপুর, কিন্তু সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাভাবে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিন সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ১৩ বছরের জেলে জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি তাঁকে।

আজ সকাল থেকেই কক্সবাজারের আকাশ ছিল মেঘলা। থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। এমন আবহাওয়ায় বাঁকখালী নদীর পাঁচ-ছয় কিলোমিটার এলাকায় অবস্থান করছে তিন হাজারের বেশি ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে জেলে থাকেন ১৬-২২ জন। কয়েকজন জেলে ট্রলার পাহারা দিলেও বেশির ভাগ বাড়িতে চলে গেছেন।

কক্সবাজার ফিশিং বোটমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত ১২ জুন ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার মুহূর্তে সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। গত ১৮ দিনে সাগরে তিনটি লঘু ও নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এখনো সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া অনিরাপদ। ফলে কক্সবাজার সদরসহ মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার ছোট–বড় অন্তত ৬ হাজার ট্রলার ঘাটে পড়ে আছে। কিছু ট্রলার ঝুঁকি নিয়ে সাগরের কাছাকাছি এলাকায় গিয়ে জাল ফেলে ছোট আকৃতির লইট্যা, ফাইস্যা, পোঁপা, ছুরি ধরে আনলেও ইলিশের দেখা নেই। ইলিশ ধরতে গেলে ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে যেতে হবে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার মতো ট্রলার নেই। ২০ জুলাই পর্যন্ত সাগরের উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।

সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার উপকূলে জেলেরা ইলিশ ধরতে যেতে পারছেন না। কাটাচ্ছেন অলস সময়। আজ সকালে নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

শুভ জন্মাষ্টমী আজ

অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ—এই বিশ্বাস পোষণ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব তিথি শুভ জন্মাষ্টমী হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়।

সনাতন ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করেন, পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। আজ শনিবার শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি।

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শুক্রবার এক বাণীতে তিনি বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি জানিয়েছে, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আজ সকাল আটটায় দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় শ্রীশ্রী গীতাযজ্ঞ, বেলা তিনটায় ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে শ্রীকৃষ্ণপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি জানিয়েছে, রাজধানীর পলাশীর মোড়ে আজ বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন করবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন ও নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ