‘সাগরত ইলিশ ধরিত ন পারির, চোখেমুখে অন্ধহার দেহির’
Published: 1st, July 2025 GMT
বৈরী পরিবেশের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। ইলিশ ধরতে সাগরে নামতে পারছে না কক্সবাজার উপকূলের কয়েক হাজার ট্রলার। বেকার হয়ে পড়েছেন ১ লাখের বেশি জেলে। অধিকাংশ ট্রলার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীতে।
আজ মঙ্গলবার সকালে নদী নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, জেলেরা অলস সমায় কাটাচ্ছেন। সেখানে দেখা হয় জেলে জুবাইদুল ইসলামের (২৫) সঙ্গে। সাগর উত্তাল থাকায় গত সাত দিন ইলিশ ধরতে যেতে পারেননি। সংসার কীভাবে চলবে, সে ভাবনায় দিন কাটছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরি সাগরত ইলিশ ধরিত ন পারির। সাগর বেশি গরম। ট্রলারত বই বই টেনশন গরির (করছি)-সংসার কেনে (কীভাবে) চালাইয়ুম। ঘরত মা-বাপ, বউ আছে। তারা ঠিক মতন একবেলা খাইত ন পারের। চোখেমুখে অন্ধহার দেহির।’
জুবাইদুলের বাড়ি সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ার আলী আকবরডেইল গ্রামে। কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ায় থেকে সাত বছর ধরে তিনি ট্রলারে জেলে শ্রমিকের কাজ করছেন। ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে গিয়ে মাছ ধরছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয়নি জানিয়ে জুবাইদুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ ১৭ জুন একটি ট্রলার নিয়ে তাঁরা ১৫ জন জেলে সাগরে ইলিশ ধরতে গিয়েছিলেন। ইলিশের সন্ধানে সাগরে তাঁরা সাত দিন অবস্থান করে গত ২২ জুন ঘাটে ফিরে আসেন। তত দিনে জালে ধরা পড়ে ১৪ মণ লইট্যা মাছ। বিক্রি করে পাওয়া গেছে ৫৬ হাজার টাকা। অথচ সমুদ্রযাত্রায় ট্রলারে খরচ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। লোকসান হলে জেলেদের সংকট বাড়ে।
পাশের আরেক ট্রলারের জেলে কামরুল হাসান (৪৫) বলেন, গভীর সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছে ভরপুর, কিন্তু সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাভাবে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিন সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ১৩ বছরের জেলে জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি তাঁকে।
আজ সকাল থেকেই কক্সবাজারের আকাশ ছিল মেঘলা। থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। এমন আবহাওয়ায় বাঁকখালী নদীর পাঁচ-ছয় কিলোমিটার এলাকায় অবস্থান করছে তিন হাজারের বেশি ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে জেলে থাকেন ১৬-২২ জন। কয়েকজন জেলে ট্রলার পাহারা দিলেও বেশির ভাগ বাড়িতে চলে গেছেন।
কক্সবাজার ফিশিং বোটমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত ১২ জুন ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার মুহূর্তে সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। গত ১৮ দিনে সাগরে তিনটি লঘু ও নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এখনো সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া অনিরাপদ। ফলে কক্সবাজার সদরসহ মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার ছোট–বড় অন্তত ৬ হাজার ট্রলার ঘাটে পড়ে আছে। কিছু ট্রলার ঝুঁকি নিয়ে সাগরের কাছাকাছি এলাকায় গিয়ে জাল ফেলে ছোট আকৃতির লইট্যা, ফাইস্যা, পোঁপা, ছুরি ধরে আনলেও ইলিশের দেখা নেই। ইলিশ ধরতে গেলে ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে যেতে হবে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার মতো ট্রলার নেই। ২০ জুলাই পর্যন্ত সাগরের উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার উপকূলে জেলেরা ইলিশ ধরতে যেতে পারছেন না। কাটাচ্ছেন অলস সময়। আজ সকালে নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন: আখতার
জাতীয় পার্টিকে ‘দলদাস ও দালাল’ উল্লেখ করে দলটির বিরুদ্ধে রংপুরের মানুষকে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
আজ মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রংপুর নগরের ডিসি মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আখতার হোসেন এ আহ্বান জানান। এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র আজকের কর্মসূচি শেষ হয়।
আজ সকালে এই গণপদযাত্রা শুরু করেছে এনসিপি। রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর পদযাত্রা যায় গাইবান্ধায়। পরে এনসিপির নেতারা রংপুরে ফিরে আসেন।
রংপুরের সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আখতার হোসেন বলেন, ‘একটি দল আছে, যে দল বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে সবচেয়ে নগ্নভাবে ভূমিকা পালন করেছে। সেই গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি রংপুরে বিভিন্ন ধরনের নাশকতা করছে। তারা আমাদের ভাইদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। আমরা রংপুরের মাটি থেকে হুঁশিয়ারি দিতে চাই, অবিলম্বে জাতীয় পার্টির গুন্ডা ও দালাল কর্তৃক আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে, সেই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’
রাত সাড়ে আটটার দিকে ডিসি মোড়ের এ সংক্ষিপ্ত সমাবেশে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন। সঞ্চালনা করেন দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
সমাপনী বক্তব্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ হাসান বলেন, ‘আমরা আগামীকাল কুড়িগ্রাম যাব এবং ধারাবাহিকভাবে দেশের ৬৪ জেলা অতিক্রম করে আগস্টে ঢাকায় ঢুকব। ঢাকায় ঢুকে আমরা আমাদের যে লক্ষ্য, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ, আমরা আদায় করে নেব ইনশা আল্লাহ।’
বুধবার পদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে এনসিপি নেতারা কুড়িগ্রামে যাবেন। সেখানে কলেজ মোড়ের বিজয়স্তম্ভ চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে ঘোষপাড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিফলকে এসে পথসভা করবে। এরপর ফুলবাড়ী উপজেলায় আরেকটি পথসভায় অংশ নিয়ে লালমনিরহাটের উদ্দেশে যাত্রা করবে পদযাত্রা।