একাই আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিলেন তরুণী, জানালেন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা
Published: 3rd, July 2025 GMT
তরুণীর বয়স মাত্র একুশ বছর। এই বয়সেই তিনি এক অসাধ্য সাধন করেছেন, যা আগে কেউ করেনি। আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে একের পর এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা অর্জন করেও আশাহত হননি তিনি। ওই তরুণীর নাম জারা লকরান। একা আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যের এই তরুণী তিনটি রেকর্ড গড়েছেন।
জারা ২৪ ফুট লম্বা একটি নৌকা নিয়ে নিজ হাতে বৈঠা চালিয়ে পর্তুগাল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার ফরাসি গায়ানায় পৌঁছান। ৯৭ দিন ১০ ঘণ্টা ২০ মিনিটে তিনি ৪ হাজার ৩৬৬ মাইল পাড়ি দিতে সমর্থ হন।
জারার নামের পাশে এখন তিনটি রেকর্ড। তিনি এই পথে একা বৈঠা চালিয়ে পৌঁছানো প্রথম নারী, তিনি ইউরোপ থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় একা পাড়ি দেওয়া সবচেয়ে কম বয়সী ব্যক্তি এবং বিশ্বে কোনো মহাসাগর একা পাড়ি দেওয়া সবচেয়ে কম বয়সী নারী।
আরো পড়ুন:
টেস্ট ক্রিকেটে ইতিহাস গড়লেন কেশব মহারাজ
তিন-তিনটি সুপার ওভারের এক বিরল ও শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ
জারা বড় হয়েছেন যুক্তরাজ্যে। সামরিক কলেজে পড়ালেখা করেছেন। পরে লাফবারো ইউনিভার্সিটিতে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নৌকা (রোয়িং) চালাতে শুরু করেন।
তিন মাসে তিনি রোয়িং শিখেছেন,এই যাত্রায় তিনি পৃষ্ঠপোষক জোগাড় করেছেন এবং ৮০০ কেজি খাদ্য, সরঞ্জামসহ নৌকাটি প্রস্তুত করেছেন।
জারার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা
যাত্রা শুরুর পর প্রথম ৪০ দিন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন জারা। ঝড়ের কবলে পড়তে হয়েছে, প্রতিকূল বাতাসে নৌকা বাইতে হয়েছে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৭ ঘণ্টা বৈঠা চালিয়েছেন জারা। তিনি এই যাত্রাপথে কখনোই টানা চার ঘণ্টার বেশি ঘুমাননি। ৪০তম দিনে জারার নৌকাটি উল্টে গিয়েছিল, ওই ঘটনায় মুঠোফোন হারান জারা। এরপর বাকি ৫৭ দিন কেটেছে একদম নিঃসঙ্গতায়।
একবার ব্যারাকুডা মাছ জারার পায়ে কামড় দেয়, যাত্রা পথে জারার নৌকা হাঙরের সামনেও পড়েছে।
তবে শেষ পর্যন্ত তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন। তরুণী বলেন, ‘আমি পুরো অভিজ্ঞতাটা দারুণ উপভোগ করেছি। ভাবিনি এতটা ভালো লাগবে।’
ভবিষ্যতে নতুন রেকর্ড গড়ার ইচ্ছা আছে তার। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস জারার অর্জনকে ‘অফিশিয়ালি অ্যামেজিং!’ বলে মন্তব্য করেছে।
সূত্র: গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র কর ড য ক তর জ য কর ছ ন র কর ড
এছাড়াও পড়ুন:
পাটগ্রাম থানায় হামলা চালিয়ে সাজাপ্রাপ্ত ২ আসামি ছিনতাই, পুলিশসহ আহত ২৫
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা চালিয়ে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় থানায় ভাঙচুর করা হয়। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার রাত ১১টার দিকে পাথরবাহী ট্রাক থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে থানা থেকে ছিনিয়ে নিতে এ হামলা চালানো হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার, পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পাটগ্রাম থানা পরিদর্শন করেছেন।
বুধবার রাতের এ হামলার বিষয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ২০০-২৫০ জন একযোগে থানা চত্বরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। তারা থানার চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ভাঙচুর করে, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তছনছ করে, ইট-পাটকেল ছুড়ে থানার জানালার কাঁচ ও দরজা ভেঙে ফেলে। পুলিশ তাদের বাধা দিলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ হয়।
যেসব আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তারা হলেন- পাটগ্রাম উপজেলার মমিনপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে বেলাল হোসেন এবং মির্জারকোর্ট এলাকার সামসুল হকের ছেলে সোহেল রানা চপল। পাথর কয়ারির ইজারাশর্ত ভঙ্গ করে ইজারাদারদের পক্ষে মহাসড়কে পাথরবাহী ট্রাক থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগে উপজেলার সরেওর বাজার এলাকা থেকে বুধবার রাতে তাদের আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদেরকে এক মাস করে কারাদণ্ড প্রদান করেন।
এ ঘটনার পরেই জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করে একটি পোস্ট করেন। তিনি বলেন, পাটগ্রামের ই্উএনও দুই চাঁদাবাজকে ধরে এনে শাস্তি হিসেবে এক মাসের জেল দেয়। পরবর্তীতে বিএনপি এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকশ নেতাকর্মী থানা ঘেরাও করে ভাঙচুর করে এবং ওই চাঁদাবাজদেরকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। জেলা পুলিশ সুপার পাশ্ববর্তী হাতীবান্ধা থানা থেকে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে হাতিবান্ধা থানার বিএনপির নেতাকর্মীরা সেই ধানাও অবরুদ্ধ করে। এভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা যদি মাঠ পর্য়ায়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি লুটপাট শুরু করে তাহলে দেশ সংস্কার হবে কিভাবে? বিএনপি থেকে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সেটা এখন দেখার অপেক্ষায়।
তবে এ ঘটনায় বিএনপিকে দায়ী করা হলেও দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সদস্য বাদশা জাহাঙ্গীর মোস্তাজির চপলের বক্তব্য জানতে তাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তার উত্তর দেননি তারা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রংপুর রেঞ্চের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বলেন, সরেওর বাজার এলাকায় চাঁদাবাজির সময় দুজনকে আটক করে পুলিশ। ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে উচ্ছৃঙ্খল জনতা তাদের থানা থেকে ছিনিয়ে নেয়। এসময় তার থানার বিভিন্ন কক্ষের ৮টি ল্যাপটপ ভাঙচুর ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে য়ায় দুর্বৃত্তরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এড়াতে থানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আর হামলা, ভাঙচুর, আসামি ছিনতাই ও সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়েরর প্রস্তুতি চলমান রয়েছে জানান তিনি।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, পাটগ্রামে ৯টি পয়েন্টে পাথর কোয়ারির জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট এলাকার বাইরে কেউ কোন ধরনের পাথর উত্তোলন করতে পারবে না। ওখান থেকেই উত্তোলন করতে হবে ম্যানুয়ালী। আর নিয়মের বাহিরে গিয়ে পাথর উত্তোলন ও চাঁদাবাজি করলে ছাড় নয়।
এ ঘটনায় পাটগ্রামের পাথর মহালের ইজারাদার মাহমুদ হোসেন বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে তিনি দাবি করেন, ইউএনও উত্তম কুমার দাস ও ওসি মিজানুর রহমান তাদের কাছে ১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। দাবীকৃত টাকা না দেওয়ায় ২ জুলাই ছাড়পত্র চেকিং পয়েন্ট থেকে দুইজন কোয়ারি কর্মীকে ধরে নিয়ে যায়। ঘটনা জানতে এদিন রাতে থানায় গেলে থানার ওসি বাদশা জাহাঙ্গীর চপল ও আমাকে শারিরীকভাবে আহত করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ী মহলের লোকজন এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা থানার সামনে জড়ো হয়। এ সময় থানার ওসির নির্দেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে ১৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে ইউএনও ও ওসির প্রত্যাহার দাবি করা হয়।
এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ জানান, ‘পাথর কোয়ারির ইজারাশর্ত ভঙ্গ করে ইজারাদারদের পক্ষে মহাসড়কে চলাচলকারি পাথরবাহী ট্রাক থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে- এমন অভিযোগে উপজেলার সরেওর বাজার এলাকা থেকে সোহেল রানা ও বেলাল হোসেনকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রত্যেককে এক মাস করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।’
থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পাটগ্রাম পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালাউজ্জামান ওপেল সমকালকে বলেন, বিএনপি বিশৃঙ্খলার রাজনীতি বিশ্বাস করে না। চাঁদাবাজের বিরুদ্বে বিএনপির অবস্থান শক্ত। পাটগ্রামের ঘটনায় জামায়াতের লোকজন বিএনপিকে জড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।