চীন থেকে ১৯ হাজার ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কম্বো কিট দেশে পৌঁছেছে। এসব কিট আরও কার্যকরভাবে ডেঙ্গু শনাক্ত করবে। এসব কিটে একসঙ্গে এনএস১, আইজিজি ও আইজিএম পরীক্ষা করা যাবে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে চীন সরকারের দেওয়া ডেঙ্গু কম্বো কিট গ্রহণ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। 

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা.

মো. সায়েদুর রহমান দাবি করেন, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর হটস্পটগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স ও ডায়াগনস্টিক কিট পাঠানোসহ সব ধরনের সহযোগিতা অতিদ্রুত পাঠাচ্ছে। এমনকি আজকে চীন সরকার যে কিট ডেঙ্গু কিট দিলো সেটিও তারই অংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফরের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের ডেপুটি মিশন চিফ লিউ ইউইন। ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভেক্টর প্রোগ্রাম। প্রাথমিক এই শনাক্তকরণ প্রোগ্রাম যখনই ব্যর্থ হতে থাকে অথবা মৌসুম পরিবর্তনের কারণে হাসপাতালে রোগী বেড়ে যায়। এজন্য যে উৎসগুলোর কারণে এই পরিস্থিতি হচ্ছে সেখানে নজর দিতে হবে। যার যার দায়িত্ব তিনি তা পালন করলে শুধুমাত্র চিকিৎসা নিয়ে উদ্বেগ পোহাতে হবে না। তবে ডেঙ্গু এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

তিনি বলেন, মুগদা হাসপাতালসহ আমরা বেশকিছু সুযোগ-সুবিধার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। রোগী বেড়ে গেলে হয়তো কিছুটা কঠিন হবে। তবে যেসব নির্দেশনা সাধারণ মানুষকে পালনের জন্য দেওয়া হয়েছে, তা করতে পারলে রোগী ব্যবস্থাপনা সহজ হবে।

বিশেষ সহকারী বলেন, ‌‘বর্তমানে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ চারটি ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। যার কারণে অনেকে সাধারণ রোগ ভেবে বাসায় থাকছেন। দেরিতে হাসপাতালে আসায় চিকিৎসা জটিল হচ্ছে। আমরা মনে করি, শনাক্তকরণ কিট যথেষ্ট আছে। তারপরও সংকটের কিছু থাকলে আমরা সংগ্রহের ব্যবস্থা করছি। তবে সবার আগে দরকার সচেতনতা। উপসর্গ থাকলে পরীক্ষা করা ও চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া।’

সাইদুর রহমান বলেন, ‘বিগত সময়ে স্বাস্থ্যখাত কখনও অগ্রাধিকারে ছিল না, কখনও পাঁচে স্থান পায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্যকে সব জায়গায় গুরুত্ব দিচ্ছে। সেটি শুধু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নয়, আন্তর্জাতিক যেকোনো পর্যায়ে আলোচনায় হচ্ছে। তার অংশ হিসেবে চীন সরকার ডেঙ্গুর কিট দিয়েছে। এটি সহযোগিতার ছোট্ট একটা অংশমাত্র। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও দৃশ্যমান হবে। এটি শুধু কতকগুলো কিট, ভ্যাকসিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রূপান্তরের জন্য যে অবকাঠামো ও নীতিগত সম্প্রাসারণ দরকার, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এগুলো অল্প সময়ে দৃশ্যমান হয় না। তাদের সঙ্গে বড় ধরনের হাসপাতাল, ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইক্যুইপমেস্ট প্ল্যান, ভ্যাকসিন সক্ষমতা গড়ে তোলা, রোবটিক্স যন্ত্রসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতার আলোচনা চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ঙ গ জ বর সহয গ ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আন্দোলনে রাজধানীতে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ যানজট, ডিএমপির দুঃখপ্রকাশ
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত