চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই ৩ মাসে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে ৭৬৭ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ কৃষক রাজ্যের বিদর্ভ এলাকার বাসিন্দা। রাজ্য বিধানসভায় সরকারের পক্ষ থেকে এই তথ্য দাখিল করা হয়েছে।

কৃষিকাজে লোকসানের বহর বেড়ে যাওয়া, অনেক সময় ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসল নষ্ট হওয়া ও ঋণের বোঝা বৃদ্ধি কৃষকদের আত্মহত্যার অন্যতম কারণ। ঋণের বোঝা শোধ করতে না পারায় বহু কৃষক মৃত্যুকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

রাজ্য সরকার বিধানসভায় জানিয়েছে, অকাল বর্ষণ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে যাঁদের ফসল নষ্ট হয়েছে, সরকার তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। তা ছাড়া দরিদ্র কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান যোজনা থেকে বছরে ছয় হাজার টাকা সহায়তা যেমন দেওয়া হচ্ছে, তেমনই রাজ্য সরকারও দিচ্ছে বাড়তি ছয় হাজার টাকা। সরকারি সহায়তা সত্ত্বেও কৃষকদের আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকানো যাচ্ছে না কেন, তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন।

কৃষকদের আত্মহত্যা–সংক্রান্ত প্রশ্নটি তুলেছিলেন কংগ্রেস সদস্যরা। গত মঙ্গলবার সেই প্রশ্নের লিখিত জবাব পেশ করেন এনসিপি নেতা ও ত্রাণমন্ত্রী মরকন্দ পাটিল। তিনি বলেন, আত্মহত্যা করেছেন এমন কৃষকদের পরিবারকে সরকার এক লাখ টাকা সাহায্য দিয়েছে। যদিও তাঁর পেশ করা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ৭৬৭ জন আত্মহত্যা করলেও সরকারি সাহায্য পাওয়ার যোগ্য মাত্র ৩৭৬ জন। যে যে কারণে সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়, ওই ৩৭৬ জন সেই শর্ত পূরণ করেছেন।

সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী উপযুক্ত বলে স্বীকৃত না হওয়ায় ২০০ কৃষক সাহায্য পাবেন না। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় স্থবির। এসব ক্ষেত্রে সরকারকে মানবিক হতে হয়। দেবেন্দ্র ফাডনবিশ সরকার সেই মানবিকতার পরিচয় রাখতে পারছে না।

মন্ত্রীর পেশ করা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি পশ্চিম বিদর্ভে। শুধু এই এলাকাতেই আত্মহত্যা করেছেন ২৫৭ জন কৃষক। যদিও সরকার এখনো নিশ্চিত নয়, তাদের তৈরি তালিকার ১৯৪ জন সত্যি সত্যিই আত্মহত্যা করেছেন, নাকি তাঁদের মৃত্যুর কারণ অন্য।

বিরোধী বিধায়কেরা অভিযোগ করেন, তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে সরকার হতভাগ্য কৃষকদের বঞ্চিত করছে। তাঁরা বলেন, ক্ষতিপূরণ ও সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি করার দাবি সত্ত্বেও সরকার কর্ণপাত করছে না।

কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার কখনো কৃষকবান্ধব বলে পরিচিত হতে পারেনি। কৃষকদের ভাতে মেরে করপোরেট দুনিয়ার মুনাফা বাড়াতেই নরেন্দ্র মোদির সরকার কৃষি আইন এনেছিল। কৃষকদের বিক্ষোভ ও বিদ্রোহের মুখে সেই আইন খারিজ করতে বাধ্য হলেও এখনো কৃষকদের কোনো রকম সুরাহা দিতে পারেনি। তাই আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে।

মহারাষ্ট্রে ২০২৩ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন ২ হাজার ৮৫১ জন কৃষক। ২০২৪ সালে সংখ্যাটা সামান্য কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৩৫–এ। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, কৃষকদের এই মৃত্যুমিছিল সত্ত্বেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের টনক নড়েনি। কৃষকদের কল্যাণে কোনো ব্যবস্থাই সরকার নিতে পারেনি। তাই ৩ মাসে ৭৬৭ জন কৃষককে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ষকদ র কর ছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট কী এবং জীবনে এর কেমন প্রভাব পড়ে, জানেন?

মানসিক সংযোগ বা অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল হলো আমাদের মানসিক ও আচরণগত সেই ধরন, যা আমরা অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির সময় ব্যবহার করি। এই স্টাইল মূলত গড়ে ওঠে শৈশবে, বিশেষ করে মা-বাবা বা প্রধান অভিভাবকদের সঙ্গে আমাদের সংযোগের অভিজ্ঞতা থেকে। ছোটবেলা থেকেই অভিভাবকেরা কতটা সাড়া দিতেন, ভালোবাসতেন বা সহানুভূতি দেখাতেন, তার ওপর নির্ভর করে আমরা নিরাপদ, উদ্বিগ্ন, এড়িয়ে যাওয়া বা অগোছালো সম্পর্ক গড়ে তুলি। এর মধ্যে এড়িয়ে চলার মানসিকতা বা অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট এমন এক ধরন, যেখানে মানুষ ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলে ও আবেগ চেপে রাখে। বিস্তারিত জেনে রাখুন।

অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল কী

অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্টকে অবজ্ঞাসূচক মানসিক সংযোগও বলা হয়। মা-বাবা শিশুর সব মৌলিক চাহিদা পূরণ করলেও আবেগপূর্ণ ভালোবাসা বা সহানুভূতি না দেখালে শিশুর মধ্যে এ বৈশিষ্ট্য তৈরি হতে পারে।

এ ধরনের শিশু শিখে যায় যে কষ্ট পেলে সেটা গোপন রাখতে হবে, নিজের আবেগ নিজেকেই সামলাতে হবে। তারা বড় হয়ে স্বাধীন হতে চায়, অন্যের ওপর নির্ভর করতে চায় না। গভীর সম্পর্ক বা আবেগের ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলে। এই সংযোগের ধারা বড় বয়সেও থেকে যেতে পারে এবং প্রভাব ফেলে বন্ধুত্ব, প্রেম বা অন্যান্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রে এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ২০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মনে করেন, তাঁদের অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট আছে এবং পুরুষদের মধ্যে এ প্রবণতা কিছুটা বেশি।

আরও পড়ুনশিশু-কিশোরেরা কেন সহিংস হয়ে উঠছে?২১ মে ২০২৫অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট কেন হয়

অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট সাধারণত তখনই তৈরি হয়, যখন শিশুর মা-বাবা খুব কড়া, আবেগহীন বা উপেক্ষাপূর্ণ আচরণ করেন। শিশুর কষ্ট বা আবেগের সময় তাঁরা সহানুভূতি না দেখিয়ে বলেন, ‘নিজেই সামলে নাও।’ শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতনের মতো শৈশবের মানসিক আঘাতও এই অ্যাটাচমেন্টের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। কিছু উদাহরণ দেখুন—

শিশুর কান্না উপেক্ষা করা।

আবেগ দেখানোকে দুর্বলতা ভাবা।

শিশুর সমস্যা নিয়ে হাসাহাসি করা।

ভালোবাসা বা স্পর্শ থেকে বিরত থাকা।

শিশুকে প্রশ্ন করতে না দিয়ে শুধু নিয়ম মানতে বাধ্য করা।

কখনো কখনো জেনেটিক কারণেও অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট হতে পারে। বিশেষ করে সিওএমটি নামের এক জিনের পরিবর্তন এ প্রবণতা বাড়াতে পারে।

অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট পুরোপুরি ঠেকানো না গেলেও, শিশুর মধ্যে নিরাপদ সংযোগ গড়ে তোলা সম্ভব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অ্যাভয়েডেন্ট অ্যাটাচমেন্ট কী এবং জীবনে এর কেমন প্রভাব পড়ে, জানেন?