ইসরায়েল ও ইরান গত মাসে যখন সংঘাতে জড়িয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু করে, তখন রাজ্যের হতাশা নিয়ে আনমনে তাকিয়ে ছিলেন আফগান নাগরিক এনায়েতুল্লাহ আসগরি। আফগানিস্তানে অস্থিরতা দেখা দেওয়ার পর ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু ইরানের পরিস্থিতি এখন বৈরী হয়ে পড়েছে। তেহরানে ভবন নির্মাণকেন্দ্রগুলোতে কাজ কমে গেছে। আর আসগরির বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে।
হাজার হাজার আফগান নাগরিকের মতো ৩৫ বছর বয়সী আসগরি সম্প্রতি ইরান ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, এ সংঘাত আফগানিস্তানকেও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। দেশটি এমনিতেই মানবিক সংকটে জর্জরিত।

পরিবার নিয়ে দীর্ঘ যাত্রা শেষে আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছার পর আসগরি বলেন, একটা ভাড়া বাসা খুঁজে পাওয়াই কঠিন, আর পেলেও ভাড়া খুব বেশি.

..কোনো কাজও নেই। তিনি আরও বলেন, তালেবান ২০২১ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এ দেশে ফিরে তিনি কী করবেন, তা জানেন না।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, সংঘাত চলাকালে ইরান প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশি আফগানকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এটি সংঘাতের আগের সময়ের ১৫ গুণ বেশি।

ইরানি কর্তৃপক্ষের অনুমান, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর ২০২২ সালে প্রায় ২৬ লাখ আফগান ইরানে কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বসবাস করছিলেন।

ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি গত মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা সব সময় ভালো আতিথেয়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি; কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার। অবৈধভাবে থাকা বিদেশিদের অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।’

ফাতেমেহ আরও বলেন, এটাকে ‘বিতাড়ন’ না বলে ‘নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন’ হিসেবে দেখতে হবে। গুপ্তচরদের ধরতে সরকারের অভিযান সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে তৎক্ষণাৎ কোনো মন্তব্য করা হয়নি। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাত শেষে সম্প্রতি একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছে। এর আগে তারা একে অপরের ওপর হামলা চালায় এবং যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনার ওপর আক্রমণ করে।

জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে এ বছর বিদেশি, বিশেষ করে আফগানদের ধরপাকড় শুরু করেছে ইরান। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সময় ধরপাকড় আরও তীব্র হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিতাড়িত আফগান ও মানবিক সংস্থার কর্মকর্তারা।

ইরানি কর্তৃপক্ষের অনুমান, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর ২০২২ সালে প্রায় ২৬ লাখ আফগান ইরানে কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বসবাস করছিলেন।

আসগরি বলেন, ‘তারা (ইরান) আমাদের গুপ্তচর মনে করত এবং ঘৃণার চোখে দেখত। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পুলিশ এবং সরকার পর্যন্ত সবাই বলত—তোমরা আফগানরাই আমাদের শত্রু, তোমরাই আমাদের ভেতর থেকে ধ্বংস করেছ।’

বিতাড়ন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে

এক সাক্ষাৎকারে আফগানিস্তানে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি আরাফাত জামাল বলেন, আফগানদের জোর করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। কারণ, ইরানে ইসরায়েলি হামলার ক্ষোভ এসব আফগানের ওপরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আরাফাত জামাল রয়টার্সকে বলেন, ‘তাঁরা (ইরানিরা) একটি ভয়ানক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গেছেন, তা আমরা বুঝি; কিন্তু আফগানদের বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে বলেও মনে হয়। তাঁদের ওপরও কিছু ক্ষোভ ঝাড়া হচ্ছে।’

আফগানিস্তানের জন্য একটি বড় দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে বলে সতর্ক করেন আরাফাত জামাল। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পাকিস্তানও বাস্তুচ্যুত আফগানদের ফেরত পাঠাচ্ছে। ২০২৩ সালে তাঁদের বড় পরিসরে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয় পাকিস্তান সরকার।  

ইউএনএইচসিআরের এই প্রতিনিধি আরও বলেন, আফগানিস্তানের দুর্দশা আরও গভীর হয়েছে। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটির ব্যাংক খাত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত। এতে দেশটির অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তানের জন্য অনুদান দেওয়া ব্যাপক হারে বন্ধ করে দিচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে পুরো অঞ্চলের জন্য বড় ধরনের অস্থিরতার রসদ।

আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশের তোরখাম সীমান্তের মোহমান্দ দারা এলাকায় পাকিস্তান থেকে বহিষ্কৃত আফগান নাগরিকদের জন্য স্থাপিত ওমারি শরণার্থীশিবির

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন র ত আফগ ন র জন য আম দ র ক ষমত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে ১২ দিনের ইসরায়েলি হামলায় ৯৩৫ জন নিহত

ইরানে ১২ দিনের ইসরায়েলি হামলায় ৯৩৫ জন নিহত হয়েছেন। বিচার বিভাগের বরাতে ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সপ্তাহখানেকের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিহতের এ সংখ্যা জানানো হলো।

ইরানের বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগর জাহাঙ্গীর রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএকে (ইরনা) বলেন, ‘আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর ১২ দিনের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৯৩৫ জন শহীদকে শনাক্ত করা হয়েছে।’ তাঁদের মধ্যে ১৩২ নারী ও ৩৮টি শিশুও রয়েছেন।

আসগর জাহাঙ্গীর আরও জানান, রাজধানী তেহরানে অবস্থিত এভিন কারাগারে গত ২৩ জুন ইসরায়েলের হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৭৯–এ দাঁড়িয়েছে। কারাগারটিতে হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বন্দী, পরিদর্শনে আসা আত্মীয়স্বজন ও প্রশাসনিক কর্মীরা রয়েছেন।

আরও পড়ুনইসরায়েলি হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় পরমাণুবিজ্ঞানীসহ পরিবারের ৭ সদস্য নিহত২৪ জুন ২০২৫

ইরানে ১৩ জুন হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ১২ দিন ধরে চলা টানা হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়। হামলা করা হয় ইরানজুড়ে সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক আর জ্বালানি স্থাপনা, এমনকি আবাসিক এলাকাগুলোতেও।

ইরানের পক্ষ থেকেও ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়। তবে বেশি হামলা হয়েছে তেল আবিব শহর আর বন্দরনগরী হাইফা লক্ষ্য করে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ইরানি হামলায় দেশটিতে ২৮ জন নিহত হয়েছেন।

২৪ জুন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এতে মধ্যস্ততা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুনগোপনে ইরানে ঢুকে যেভাবে হামলা করেছিল ইসরায়েল২৭ জুন ২০২৫আরও পড়ুনএভিন কারাগারে ইসরায়েলের হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৭১: ইরান২০ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানে ১২ দিনের ইসরায়েলি হামলায় ৯৩৫ জন নিহত