মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ২ বছর পিছিয়েছে: পেন্টা
Published: 3rd, July 2025 GMT
মার্কিন বিমান হামলার ফলে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনার পারমাণবিক কর্মসূচি অন্তত ২ বছর পিছিয়ে গেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। খবর সিনহুয়ার।
বুধবার (২ জুলাই) পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছি। আমাদের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা প্রতিবেদন এ তথ্য নিশ্চিত করছে।”
পার্নেল আরো বলেন, “আমরা যেসব গোয়েন্দা তথ্য দেখেছি তাতে আমাদের বিশ্বাস, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।”
আরো পড়ুন:
মার্কিন অস্ত্র সহায়তা স্থগিতে রুশ হামলা জোরদারের শঙ্কায় ইউক্রেন
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে বললেন ট্রাম্প
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য জানায়নি পেন্টাগন।
গত ২২ জুন, মার্কিন বাহিনী ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা- নাতাঞ্জ, ফোরডো এবং ইসফাহানে হামলা চালায়।
গত মঙ্গলবার (১ জুলাই) ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ফোরডোতে কী ঘটেছে তা কেউ সঠিকভাবে জানে না। আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি তা হলো, স্থাপনাগুলো গুরুতর ও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করছে।”
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বুধবার (২ জুলাই) আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে তেহরানের সহযোগিতা স্থগিত করে একটি আইন প্রণয়নের নির্দেশনা জারি করেছেন।
ইরানের সাংবিধানিক পরিষদের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফের মতে, আইনটিতে ইরানের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, পারমাণবিক স্থাপনা ও বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আইন অনুসারে, ভবিষ্যতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আইএইএর যেকোনো পরিদর্শনের জন্য তেহরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাগবে।
এদিকে, এর জবাবে আইএইএ এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা এই প্রতিবেদনগুলো সম্পর্কে অবগত। আইএইএ ইরানের কাছ থেকে আরো আনুষ্ঠানিক তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছে।”
বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখার সময় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের প্রধান মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক ইরানের সিদ্ধান্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি এটিকে ‘স্পষ্টতই উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেন।
ডুজারিক বলেন, “জাতিসংঘ প্রধান আইএইএর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতার বিষয়ে বরাবরই স্পষ্ট অবস্থানে ছিলেন। তিনি পারমাণবিক ইস্যুতে আইএইএর সঙ্গে সকল দেশকে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।”
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের মতে, আইএইএর সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত ‘অগ্রহণযোগ্য’।
বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্রুস বলেন, “আমরা ‘অগ্রহণযোগ্য’ শব্দটি ব্যবহার করব। কারণ ইরান এমন এক সময়ে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যখন তাদের কাছে পথ পরিবর্তন করে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
তিনি বলেন, “ইরানের আর দেরি না করে জাতিসংঘের সংস্থা আইএইএর সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র সহয গ ত গ ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
কমিশনের ‘অগ্রহণযোগ্য’ সুপারিশ জাতিকে বিভক্ত করবে: মির্জা ফখরুল
সনদ বাস্তবায়নে ঐক্যমত কমিশনের সুপারিশ ‘অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে এই সুপারিশ জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অবস্থান তুলে ধরেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করেছে। সেখানে যে সকল বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনা আসেনি, তা অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সকল সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না।’’
“আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, এই সকল সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে।’’
মনগড়া যে কোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে বলেও এ সময় হুঁশিয়ার করে দেন মীর্জা ফখরুল।
নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক :
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিকে অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা… সেক্ষেত্রে (সংসদ) নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে প্রস্তাবিত গণভোট অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।’’
তিনি বলেন, ‘‘সময় স্বল্পতা, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল অঙ্কের ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগ এবং একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মত বিশাল আয়োজনের বিবেচনায় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত। একই আয়োজনে এবং একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয়।’’
‘‘আমরা আশা করি, জাতির প্রত্যাশা পূরণ এবং দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০২৪ সালে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদদের রক্তের অঙ্গীকার অনুযায়ী এবং যারা দীর্ঘ এই সংগ্রামে ফ্যাসিবাদী শাসন আমলে গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন, মামলা, হামলার শিকার হয়েছেন, তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে পারব। প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা,’’ বলেন বিএনপির এই শীর্ষনেতা।
জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা সকলের কাম্য জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জাতির অভিপ্রায় অনুযায়ী সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য হবে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। জাতীয় সংসদকে প্রকৃত অর্থে জাতীয় জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত করা।’’
“আমরা আন্তরিকভাবেই চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার সাফল্য কামনা করি। কিন্তু একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশ ও জনগণের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের অবস্থান প্রকাশে আমরা দায়বদ্ধ,’’ যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
উল্লেখ্য জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালা গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হয়। সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে সেখানে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, ওই আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। তবে কখন সেই ভোট হবে তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রবল মতবিরোধ রয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/তারা