শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গেই যেন গর্জে উঠল এক অন্যরকম উদ্‌যাপন। মাঠে থাকা খেলোয়াড়দের চোখে-মুখে গর্ব, ঘামে ভেজা কপালে হাসি। জোড়া গোল করা জয়ের নায়ক ঋতুপর্ণা চাকমা বেঞ্চ ছেড়ে উঠে এলেন। মাটির গন্ধ মেখে উঠে আসা পাহাড়ি মেয়ে ছুটে গেলেন সহযোদ্ধাদের দিকে। এতোদিন অপেক্ষা করা একটা স্বপ্ন তখন সত্যি হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের মূলপর্বে।

এই ইতিহাসের কেন্দ্রে থাকা নাম ঋতুপর্ণা। মাত্র ২১ বছর বয়সেই তার ডান-বাঁ পায়ের জাদুতে আজ দেশের গর্ব বেড়েছে বহু গুণ। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব ছুঁয়ে এবার এশিয়ার মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের পালা।

মিয়ানমারের বিপক্ষে ২-১ গোলের ঐতিহাসিক জয়ে জোড়া গোল করেছেন এই ফরোয়ার্ড। প্রথমটি ১৮ মিনিটে, বাঁ পায়ের নিখুঁত ফিনিশে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে। আর দ্বিতীয়টি ৭১ মিনিটে, দূর থেকে ভেসে আসা বলে চোখ রেখে নিখুঁত ভলিতে জালে পাঠিয়ে। এ যেন কেবল গোল নয়, তা ছিল প্রতিপক্ষের আত্মবিশ্বাসে ছুরি চালানো শট। স্টেডিয়ামে থাকা দর্শকরা তখন উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিচ্ছেন, পাহাড়ের সেই কন্যা তখন হাসিমুখে তা গ্রহণ করছেন।

এক সময় বিদ্রোহ আর বিতর্কের কারণে দল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন ঋতুপর্ণা। কিন্তু ফিরেছেন দ্বিগুণ উদ্যম নিয়ে। তিন জাতি টুর্নামেন্টে ছিলেন সতর্ক বার্তার মতো, এবার বাছাইপর্বে যেন বাজিমাত। বাহরাইনের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সময় এসেছে আবার আলোয় ফেরার। তবে আসল আগুনটা জ্বলে উঠল মিয়ানমারের বিপক্ষে। বারবার প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ভেঙেছেন ড্রিবলিংয়ে, বুদ্ধিমত্তায়, দৌড়ে। যেন বলটি তার পায়ের সঙ্গে বাঁধা!

ম্যাচশেষে কৃতজ্ঞ ঋতুপর্ণা বলেন, ‘আমরা প্রতিটা ম্যাচ জয়ের জন্য মাঠে নামি, তবে আজকের জয়টা ছিল বিশেষ। সারা বছর পরিশ্রম করি, কষ্ট করি, আজ সেই পরিশ্রমের পুরস্কার পেলাম। এশিয়ান কাপে জায়গা করে নিতে পেরে গর্ব হচ্ছে। এখনো একটা ম্যাচ বাকি, সেটা জিতেও উদ্‌যাপন করতে চাই। যারা মাঠে এসে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

এশিয়া কাপে এবার সত্যিকারের লড়াই শুরু হবে। বাংলাদেশের মেয়েরা স্বপ্ন দেখছে শুধু অংশগ্রহণের নয়, লড়াই করে প্রমাণ করার। আর সেই যুদ্ধে দলের সামনে থেকে তলোয়ার চালাতে প্রস্তুত ঋতুপর্ণা চাকমা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় ফুটপাত দখল করে দোকানের পসরা, কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ

বগুড়া শহরের সার্কিট হাউস-কালীবাড়ি মোড় সড়কে সারি সারি ভ্যানে হরেক খাবারের পসরা। পিৎজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন শর্মা, মিটবক্স—সবই মিলছে রাস্তার পাশের এসব দোকানে। ক্রেতারা মূলত কিশোর ও তরুণ-তরুণী।

দোকানগুলোতে নেই কোনো আলাদা শেফ। বিক্রেতারাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করছেন, পরিবেশনও করছেন। কারও হাতে গ্লাভস নেই, শরীরে নেই অ্যাপ্রোন। বিকেল গড়াতেই এসব ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানে ভিড় জমছে। কোর্ট হাউস স্ট্রিটের পাশেই আছে ‘পিজ অ্যান্ড বার্গ’, ‘পদ্মা ফুডস’ ও ‘হিলিয়াম রেস্টুরেন্ট’-এর মতো নামীদামি খাবারের দোকান। একসময় সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতার ঢল নামত। এখন সে ভিড় চলে গেছে রাস্তার পাশে বসা দোকানগুলোর দিকে।

পদ্মা ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জলেশ্বরীতলা ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমেদ বলেন, ‘অভিজাত এ এলাকায় একটি খাবারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। অন্তত ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ নিতে হয়। এসব নবায়নে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। ভবন ভাড়া, দামি শেফ ও কর্মচারীর বেতন—সব মিলিয়ে খরচ বিপুল। অথচ রাস্তার পাশে ভ্যানে বসা দোকানে বিনিয়োগ মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোনো সনদ নেই, দোকানভাড়া নেই, কর্মচারীও নেই। শুধু দামে সস্তা বলে ক্রেতারা ঝুঁকছেন ওদিকে। সড়ক দখল করে দোকান বসায় যানজটও বাড়ছে। অভিযোগ করেও প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মিলছে না।

বগুড়া হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলেশ্বরীতলা অভিজাত এলাকা। এখানে দোকান দিতে বিপুল বিনিয়োগ লাগে। নামীদামি দোকানে একটি পিৎজার দাম ৫০০ টাকা হলে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও ক্রেতারা সস্তা পেয়ে সেখান থেকেই কিনছেন। এতে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো লোকসানে পড়ছে। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, ‘আমরা স্ট্রিট ফুড ব্যবসার বিরোধী নই। তবে সেটা অভিজাত এলাকা থেকে সরিয়ে পৌর পার্ক, অ্যাডওয়ার্ড পার্কসংলগ্ন সড়ক কিংবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের পাশের এলাকায় নিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।’

সড়কজুড়ে দোকান, ভোগান্তিতে শহরবাসী

সম্প্রতি দেখা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সড়কের এক পাশে ২০-২৫টি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসেছে। অন্য পাশে ফলের দোকান। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণের সামনে যানজট লেগেই থাকে।

এ ছাড়া পৌরসভা লেন, জেলা খানা মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, মহিলা ক্লাব মোড়, শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, সাতমাথা-সার্কিট হাউস সড়কসহ শহরের নানা সড়কেই বসছে ফুচকা, চটপটি, জুস, ফাস্ট ফুড ও ফলের দোকান।

সাতমাথায় প্রতিদিন বসছে অর্ধশতাধিক দোকান। জিলা স্কুলের সামনে চটপটি ও কাবাবের দোকানগুলোর চেয়ার বসানো হয়েছে ফুটপাত দখল করে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, কালিতলা—সবখানেই দুই পাশে দোকান।

রাস্তা দখল করে দোকান বসানোয় বেশির ভাগ সময় যানজটে থাকে শহরে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ