এক মিনিট ইন্টারনেট বন্ধের পরিকল্পনা অবশেষে বাদ
Published: 3rd, July 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার অবশেষে ‘এক মিনিট ইন্টারনেট বন্ধের’ পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। প্রবল সমালোচনার মুখে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা’ থেকে ইন্টারনেট বন্ধের পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়েছে বলে আজ বৃহস্পতিবার ফেসবুকে জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
গতকাল বুধবার ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা’ ঘোষণা করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ অনুষ্ঠানমালার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে একটি কর্মসূচি হলো ১৮ জুলাই সারা দেশে এক মিনিটের জন্য প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট। সরকার বলছে, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই রাত ৯টায় আন্দোলন ঠেকাতে তৎকালীন সরকার মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই সময়কে স্মরণ করতে এই প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সিদ্ধান্ত। যা বাস্তবায়ন করবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ।
তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকজুড়ে। নেটিজেনরা এ ধরনের পরিকল্পনাকে ‘সস্তা চিন্তা’ বলছেন। কেউ কেউ আবার এদিন ইন্টারনেট ফ্রি করে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।
নেটিজেনদের যত সমালোচনা
‘আমি একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছি—এ ধরনের চরম অর্থহীন প্রস্তাব যে আদৌ আলোচনার টেবিলে উঠতে পারে, সেটাই বিশ্বাস করতে পারছি না।’ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কথাগুলো লিখেছিলেন একসময়ের ফেসবুকের বাংলাদেশবিষয়ক কর্মকর্তা সাবহানাজ রশীদ দিয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ জুলাই এক মিনিটের জন্য ইন্টারনেট বন্ধের কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় গতকাল রাতে তিনি এ কথা লেখেন। সাবহানাজ রশীদ আরও লেখেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের (বিশেষত আইসিসিপিআর ও ইউএনজিপি), বাংলাদেশের সংবিধান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন এবং সদ্য গেজেট হওয়া সাইবার সিকিউরিটি অধ্যাদেশ—সবকিছুর সরাসরি লঙ্ঘন।’ সাবহানাজ রশীদের আশঙ্কা, ‘এমন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে। যাতে বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোনো সরকার অনায়াসে কোনো অর্থপূর্ণ ও আইনসম্মত কারণ ছাড়া ইন্টারনেট বন্ধ করে দিতে পারে।’ এর পরিবর্তে এক দিনের জন্য ইন্টারনেট বিনা মূল্যে করে দেওয়া উচিত বলেও লিখেছেন তিনি।
সাবহানাজ রশীদের ওই পোস্টে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের সময়কার মতোই তেলবাজি আইডিয়া।’ তৌফিকুল ইসলাম পিয়াস নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘সস্তা চিন্তা ভাবনা।’
মাসুম তালুকদার নামে অন্য একটি ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে প্রধান উপদেষ্টার পেজের পোস্টটি শেয়ার দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘এক মিনিট ইন্টারনেট বন্ধ না রেখে পুরো জুলাই মাসে ইন্টারনেট ফ্রি করে দেওয়া উচিত ছিল।’
প্রধান উপদেষ্টার পেজ থেকে পোস্ট করা ওই ফটো কার্ডটিতে প্রায় এক হাজার মন্তব্য পড়েছে। যার প্রায় সব কটিই নেতিবাচক। সেখানে ইমাম হোসেন আরমান নামের একজন লিখেছেন, ‘এক মিনিট কীভাবে বাংলাদেশ কে এগিয়ে নেওয়া যাবে সেই চিন্তা করেন। আপনাদেরকে এই সব পুরোনো নাটক করার জন্য বসানো হয় নাই।’
মো.
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা যা লিখেছেন
ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘জুলাই কোমেরেশন প্রোগ্রামের একটা কর্মসূচি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা পর্যায় থেকেই দ্বিধা ছিল। একটা মাত্র কর্মসূচি আমরা কয়েকবার কেটেছি, আবার যুক্ত হয়েছে। আমরা অনেকেই একমত ছিলাম “এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট” গ্রেট আইডিয়া না সম্ভবত। পরে আবার নানা আলোচনায় এটা ঢুকে পড়েছে কর্মসূচিতে। অনেক বড় কর্মসূচি এবং বড় একটা দল কাজ করলে এ রকম দু-একটা ভুল চোখের আড়ালে থেকে যায়। যাই হোক, আমরা কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে, সেই কর্মসূচি নিয়ে আপনাদের মতামত জানানোর জন্য।
‘আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমরা নিজেদের মধ্যে দ্রুত সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি—এক মিনিট প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি থাকছে না। সংশোধিত স্লাইড শেয়ার করে হয়েছে। এর বাইরে সব কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকছে। লেটস রিকানেক্ট, রিগ্রুপ অ্যান্ড রিগনাইট দ্য ভেরি জুলাই ফায়ার।’
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির কর্মসূচি চলাকালে সরকারি দুই সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিত। এমনকি তখনকার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকও সরাসরি ফোন করে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
১৭ জুলাই (বুধবার) রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। টানা পাঁচ দিন সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা বন্ধ ছিল ১৩ দিন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১৮ জ ল ই আপন দ র উপদ ষ ট ফ সব ক র জন য সরক র ব ষয়ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘জুলাই স্মরণে’ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি বাতিল
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছরপূর্তি উপলক্ষে ৩৬ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে সরকার। তবে ১৮ জুলাই ১ মিনিটের প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল পৌনে ১০টার দিকে ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানান সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সেখানে তিনি লেখেন, “জুলাই কোমেমোরেশন প্রোগ্রামের একটা কর্মসূচি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা পর্যায় থেকেই দ্বিধা ছিলো। একটা মাত্র কর্মসূচিই আমরা কয়েকবার কেটেছি, আবার যুক্ত হয়েছে। আমরা অনেকেই একমত ছিলাম “এক মিনিট ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট” গ্রেট আইডিয়া না সম্ভবত। পরে আবার নানা আলোচনায় এটা ঢুকে পড়ে কর্মসূচিতে। অনেক বড় কর্মসূচি এবং বড় একটা দল কাজ করলে এরকম দুয়েকটা ভুল চোখের আড়ালে থেকে যায়। যাই হোক, আমরা কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে, সেই কর্মসূচি নিয়ে আপনাদের মতামত জানানোর জন্য। আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমরা নিজেদের মধ্যে দ্রুত সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি- এক মিনিট প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট কর্মসূচি থাকছে না। সংশোধিত স্লাইড শেয়ার করে হচ্ছে।”
এর বাইরে সব কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকছে জানিয়ে তিনি লেখেন, লেটস রিকানেক্ট, রিগ্রুপ এন্ড রিইগনাইট দ্য ভেরি জুলাই ফায়ার (চলুন, আমরা আবার যুক্ত হই, সংগঠিত হই এবং সেই জুলাই আগুনকে নতুন করে জ্বালিয়ে তুলি)।
এর আগে গত ২৫ জুন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় ৩৬ দিনের কর্মসূচির বিস্তারিত জানানো হয়।
এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে– ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জুলাই শহীদের স্মরণ, পোস্টারিং, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, গ্রাফিতি, সব জেলায় জুলাই স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন, আলোচনা অনুষ্ঠান প্রভৃতি। ৫ আগস্ট মানিক মিয়া অ্যাভিনউ অভিমুখে বিজয় মিছিলসহ আরও কিছু আয়োজনের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হবে।
ঢাকা/ইভা