স্বামীর জীবন সংকটাপন্ন। কিডনি প্রতিস্থাপন করা না হলে তিনি বাঁচবেন না। স্বামীকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন উম্মে সাহেদীনা টুনি। তিনি নিজের শরীর থেকে একটি কিডনি খুলে দিয়ে স্বামীকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।

হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে সাত দিন পর বেরিয়ে স্বামী মো.

তারেকের হাসিমুখটাই দেখতে চেয়েছিলেন উম্মে সাহেদীনা টুনি। তখন হয়ত কল্পনাও করেননি, যে মানুষটিকে নিজের দিয়ে কিডনি দিয়ে বাঁচালেন, সেই মানুষটাই একদিন তাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেবে। ত্যাগের পুরস্কার হিসেবে পাবেন অবহেলা, নির্যাতন আর বিশ্বাসঘাতকতা।

সাভারের কলমা এলাকায় বসবাস করা এই নারী এখন আদালতের দ্বারে দাঁড়িয়েছেন সেই প্রতারক স্বামীর বিচার চাইতে। 

স্বামীর জন্য স্বর্ণালঙ্কারসহ সারা জীবনের সঞ্চয়, এমনকি মায়ের পেনশনের টাকাও খরচ করেছেন উম্মে সাহেদীনা টুনি। তিনি এখন নিঃস্ব ও প্রতারিত। 

২০০৬ সালে মালয়েশিয়া প্রবাসী তারেকের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় টুনির। পরের বছর জন্ম হয় তাদের একমাত্র সন্তান আজমাইন দিব্যর।

২০০৮ সালে তারেকের কিডনি রোগ ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ে উভয় কিডনি।

চিকিৎসকরা জানান, তারেককে বাঁচাতে হলে ডায়ালাইসিস চালিয়ে যেতে হবে। কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনও হতে পারে।

তারেকের পরিবার ও স্বজনদের অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেন, কিন্তু তারেকে সঙ্গে ছায়ার মতো রয়ে যান স্ত্রী টুনি। তারেককে নিয়ে ভারতের সিএমসি ও দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে ছুটেছেন দিনের পর দিন।

২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর টুনি নিজের একটি কিডনি দান করেন স্বামীকে। চিকিৎসক কেএন সিংয়ের তত্ত্বাবধানে হয় কিডনি প্রতিস্থাপন। জীবন ফিরে পান তারেক।

এর পর টুনির জীবনে শুরু হয় আরেক যুদ্ধ। ধীরে ধীরে বদলে যান তারেক। ঢাকায় ফিরে যুক্ত হন অনলাইন জুয়া ও পরকিয়ায়। স্ত্রীর ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন তারেক।

টুনি বলেছেন, “তারেককে কিডনি দেওয়ার পর আমি সাত দিন আইসিইউতে ছিলাম। সেখানেই শুনি, আমার খালা টাকা পাঠাতে দেরি করায় চিৎকার করে আমাকে গালি দিচ্ছে তারেক। অপারেশনের পরে হাসপাতালেই সে আমার ওপর চড়াও হয়। আমি যেন ভুল মানুষকে জীবন দিয়েছি।”

তারেক এখন সাভারে নিজ বাসায় বাস করছেন তাহমিনা মেরি নামের এক ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে।

টুনি বলেন, “তারেক এখন আমাকে ডিভোর্স দিতে ও বাড়িটা নিজের নামে লিখে দিতে চাপ দিচ্ছে। আমি শুধু চাই, এই প্রতারক যেন শাস্তি পায়। কেউ যেন এমন বিশ্বাসঘাতকতার শিকার না হয়।”

২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি সাভার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তারেক এক দিন পর মুচলেকা দিলে অভিযোগ তুলে নেন।

পরে ২২ এপ্রিল ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌতুক আইনে মামলা দায়ের করেন টুনি। ২৪ এপ্রিল পুলিশ তারেককে গ্রেপ্তার করে। তবে, ৪ জুন তিনি জামিনে মুক্তি পান। এর পর থেকেই আত্মগোপনে তারেক। চাপ দিচ্ছেন ডিভোর্সের জন্য।

প্রতিবেশীরা বলছেন, স্বামীর জন্য এমন আত্মত্যাগ বিরল। বিয়ের পর টুনি যেভাবে স্বামীকে আগলে রেখেছেন, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। নিজের কিডনি দিয়ে বাঁচিয়েছেন। অথচ, সেই তারেক এখন তাকে মারধর করছে, প্রেমিকার সঙ্গে থাকছে।

টুনির মা বলেন, “আমার পেনশনের সব টাকা তারেকের চিকিৎসায় খরচ করেছি। আজ সেই ছেলে আমার মেয়েকে বের করে দিল! বিচার চাই।”

আইনজীবী অ্যাডভোকেট নেহার ফারুক বলেছেন, “তারেক শুধু নারী নির্যাতন নয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন লঙ্ঘন করেছেন। প্রতারণার মাধ্যমে স্ত্রীর কিডনি নিয়ে পরে তার ওপর নির্যাতন করেছেন। আমরা চার্জশিট হাতে পেলেই জামিন বাতিলের আবেদন করব।”

ঢাকা/সাব্বির/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ক ডন কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে এ. কে. আজাদের বাড়িতে চড়াও হলেন বিএনপির একাংশের নেতাকর্মী

ফরিদপুরে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদের বাড়িতে চড়াও হয়েছেন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। ‘আওয়ামী লীগের গোপন মিটিং’ হচ্ছে– দুয়ো তুলে এই ঘটনা ঘটানো হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের ঝিলটুলীতে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই বাড়িতে ছিলেন হা-মীম গ্রুপের ল্যান্ড অফিসার মো. রাফিজুল খান, হা-মীম গ্রুপের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. সোলাইমান হোসেন, সিকিউরিটি গার্ড মেহেদী হাসান ও ক্লিনার মো. হান্নান মিয়া।

রাফিজুল খান বলেন, কিছু লোক বাড়ির গেটে বারবার আঘাত করলে সিকিউরিটি গার্ড মেহেদী হাসান এগিয়ে যান। এক পর্যায়ে গেট খুলে দিলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম নাহিদসহ কয়েকজন বাড়িতে ঢুকে পড়েন। তারা বাড়িতে আওয়ামী লীগের গোপন সভা হচ্ছে কিনা– এই বলে ধমকাধমকি করেন। এক পর্যায়ে খালি বাড়ি থেকে তারা বেরিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ. কে. আজাদের বাসা থেকে বের হয়ে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা পাশে ভূমি অফিসের সামনে জড়ো হন। পরে সেখানে শতাধিক লোক জড়ো করা হয়। তারা মিছিল বের করে। মিছিলটি ভূমি অফিসের সামনে থেকে শুরু হয়ে অনাথের আচারের মোড় এলাকায় যায়। 
মিছিলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন ফরিদপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলী রেজোয়ান বিশ্বাস, ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শাহরিয়ার হোসেন, মহানগর ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুনিব হাসান প্রমুখ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ বলেন, ‘আমরা জানতে পারি, ঝিলটুলীর ওই বাড়িতে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য সভা করছে। সে জন্য আমরা ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম।’

একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে দেশের শীর্ষ একজন ব্যবসায়ীর বাড়িতে এভাবে চড়াও হতে পারেন কিনা– জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচন করতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে নায়াব ইউসুফ। এ জন্য আমরা কাজ করছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নায়াব ইউসুফ জানান, শহরে এ. কে. আজাদের অনেক বাড়ি। আজ বিএনপির একটি মিছিল হয়েছে; কিন্তু কোন বাড়িতে বিএনপির নেতাকর্মীরা চড়াও হয়েছে– এ খবর আমার জানা নেই।

নায়াব ইউসুফ দাবি করেন, এ. কে. আজাদ আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এলাকার মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তবে আমি হিংসার রাজনীতি করি না, হামলার রাজনীতি করি না। আমি এর পক্ষপাতী নই। সন্ত্রাস-বিশৃঙ্খলা আমি পছন্দ করি না এবং আমার নেতাকর্মীদের করতে দিই না।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী জানান, তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ. কে. আজাদের বাড়িতে কিছু ঘটেছে বলে তাঁর জানা নেই। কেউ তাঁকে জানায়নি।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদউজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে খবর পাই এ. কে. আজাদের বাড়িতে বিএনপির লোকজন গিয়েছে। পরে দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কাউকে পায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ