সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগোর একটি অভিবাসী আদালত থেকে বেরোনোর পর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা আটক করেন সৈয়দ নাসের নামের এক আফগান নাগরিককে, যিনি কয়েক বছর ধরে মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য অনুবাদকের কাজ করেছেন।
নাসের যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য যেটুকু প্রত্যাশিত-সব কিছুই করেছিলেন। তালেবান যোদ্ধারা যখন তার ভাইকে হত্যা করে এবং বাবাকে অপহরণ করে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করায় তখন তিনি ও তার পরিবার ব্রাজিলে পালিয়ে যান এবং সেখান থেকে দীর্ঘ ও বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে হেঁটে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।

২০২৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে সরকার তাকে পারোল স্ট্যাটাসে দেশে প্রবেশ করতে দেয়। পরে তিনি অ্যাসাইলাম এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করা বিদেশিদের জন্য তৈরি ‘স্পেশাল ইমিগ্রান্ট ভিসা’ (এসআইভি)-এর আবেদন করেন।

১১ জুন ২০২৫-এ তিনি অ্যাসাইলাম আবেদনের অংশ হিসেবে তাঁর প্রথম শুনানিতে হাজির হন। কিন্তু আদালতে পৌঁছানোর পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক আইনজীবী দাবি করেন, তাঁর মামলাটি ‘ভুলভাবে জারি’ হয়েছে। এরপর কোর্টরুমের বাইরে অপেক্ষমাণ আইসিই এজেন্টরা তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যান। বর্তমানে তিনি ডিটেনশনে আছেন, আর তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা গা-ঢাকা দিয়ে আছেন।
যদিও ঘটনাটি চমকপ্রদ, তবু নাসেরের এই পরিণতি আজকাল আর বিরল কিছু নয়। মে মাস থেকে আইসিই এজেন্টরা প্রতিদিন ৩,০০০ জন আটক করার কোটা পূরণের লক্ষ্যে আদালত থেকে বের হওয়া শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করছেন।

এক সময় কোর্ট এলাকা থেকে আটক করা নিষিদ্ধের কাছাকাছি ছিল এবং যৌক্তিক কারণেই। এই ধরনের কর্মকাণ্ড অভিবাসীদের সামনে এক অসম্ভব পছন্দ রেখে দেয়: আইনি পথে গিয়ে অ্যাসাইলাম বা গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন করে নিজেই নিজেকে গ্রেপ্তারের ঝুঁকিতে ফেলুন, অথবা অনুপস্থিত থাকুন এবং নিজ অধিকার ত্যাগ করে অনুপস্থিতিতে ডিপোর্টেশন অর্ডার পান। পাশাপাশি, আদালতে প্রবেশাধিকার ব্যাহত হওয়ার আরেকটি কম দৃশ্যমান পথ তৈরি হয়েছে। যদি ট্রাম্পের বাজেট রিকনসিলিয়েশন বিল বর্তমান আকারে পাস হয়, তবে নাসেরের মতো অভিবাসী ও অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের আদালতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে অতিরিক্ত ফির কারণে।

বিলে বলা হয়েছে, যারা প্যারোলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবেন, তাদের প্রবেশের সময় ১,০০০ ডলার এবং ওয়ার্ক পারমিটের জন্য ৫৫০ ডলার দিতে হবে। প্যারোলে নবায়নের জন্য প্রতি ছয় মাস অন্তর আরও ৫৫০ ডলার। এরপর অ্যাসাইলামের জন্য আবেদনে আরও ১,০০০ ডলার ফি। আর যদি শুনানির জন্য অতিরিক্ত সময় লাগে, তাহলে প্রতি ‘কন্টিনুয়েন্স’ আবেদনের জন্য অতিরিক্ত ১০০ ডলার দিতে হবে। যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগপীড়িত দেশ থেকে আগত শিশু বা অন্যান্য আবেদনকারীর জন্যও একই রকম ফি প্রযোজ্য হবে।

যে নাসের ব্রাজিল থেকে হেঁটে এসেছে, তার পক্ষে এমন হাজার হাজার ডলার জোগাড় করা সম্ভব নয় আর অধিকাংশ আবেদনকারীর ক্ষেত্রেও তাই। এই ফি কার্যত কেবল ধনীদের জন্য আদালতের দরজা খুলে রাখবে।
আইন অনুসরণ করে আদালতে হাজির হয়ে যারা সঠিক পথ বেছে নেয়, তাদের গ্রেপ্তার করে এবং আদালতে যাওয়ার ফি এত বেশি নির্ধারণ করে আমরা আমাদের দেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ভিত্তিকেই দুর্বল করে ফেলছি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পঞ্চম ও চতুর্দশ সংশোধনীর অধীনে সংরক্ষিত ‘ডিউ প্রসেস’ বলে সরকার কাউকে জীবনের, স্বাধীনতার বা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার আগে আদালতে প্রমাণসহ শুনানি দিতে বাধ্য।

ডিউ প্রসেস শুধু অভিবাসীদের নয়, এমনকি অভিবাসী বলে ভুলভাবে শনাক্ত হওয়া নাগরিকদেরও রক্ষা করে। এটি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার অধিকার, যেটি শিশুদের কাছ থেকে আলাদা করা, কারাগারে প্রেরণ বা সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার আগেও আদালতের হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করে।
আদালতের কাজ হলো সবাইকে আইনের চোখে সমানভাবে বিচার করা এবং সরকারকে ন্যায্য প্রক্রিয়া অনুসরণে বাধ্য করা। এটি নির্বাহী ও আইন পরিষদ শাখার ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যালান্স।

যখন ডিউ প্রসেস ভেঙে পড়ে এবং মানুষ আর আদালতে যাওয়ার সাহস বা সামর্থ্য পায় না তখন শুধু অভিবাসী সমাজই আতঙ্কে ভোগে না, পুরো বিচার ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে। আর এটি আমাদের সবার জন্যই গভীর উদ্বেগের বিষয়।

ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম র ক ন য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র ন র জন য প রব শ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা ঋণের ফাঁদে পড়ে গেছি: এনবিআর চেয়ারম্যান

দেশের ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের উদ্বেগ, বাংলাদেশ ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে বাংলাদেশ গুরুতর ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে, এম আশঙ্কা আছে।

অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান আরও স্পষ্টভাবে মন্তব্য করেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই ঋণের ফাঁদে পড়েছি; এ সত্য স্বীকার না করলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়।’

আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন তাঁরা। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ ও ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৫’ প্রকাশ ও উপস্থাপন উপলক্ষে এ সেমিনার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য মঞ্জুর হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিইডির অতিরিক্ত সচিব মনিরা বেগম।

অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঋণের ফাঁদে পড়া আমাদের দেশের জন্য ভালো হবে না। তখন ঋণ নিয়ে আবার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ইতিমধ্যে রাজস্ব বাজেটে ব্যয়ের প্রধান খাতের মধ্যে ছিল সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন। এরপর দ্বিতীয় স্থানে ছিল কৃষি ও শিক্ষা। কিন্তু কৃষি ও শিক্ষার মতো খাত পেছনে ফেলে এখন জায়গা এখন নিয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধ।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, কয়েক বছর আগেও আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি ছিল, এখন তা ৭ শতাংশের ঘরে ঘোরাফেরা করছে। সমস্যাটি কোথায়, তা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কর-জিডিপি অনুপাত কমার একটি বড় কারণ হলো, জিডিপির সব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এনবিআর দুই ভাগ হয়ে দুজন সচিবের নেতৃত্বে কাজ শুরু করবে বলে জানান আবদুর রহমান খান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংকের সংযুক্তির প্রক্রিয়া দ্রুত এগোচ্ছে। ডিপোজিট গ্যারান্টি ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ করা হয়েছে। এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে আমানতকারীদের মধ্যে অর্থ বিতরণ শুরু হতে পারে।

সরকারের এ উদ্যোগের ফলে পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকসহ ৭৬ লাখ পরিবার আমানত ফেরত পাবেন বলে জনান গভর্নর। এ ছাড়া নতুন ব্যাংকটি প্রথম বা দ্বিতীয় বছরেই মুনাফার মুখ দেখতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ