রাজধানীর বনশ্রী ও আফতাবনগরকে দুই ভাগ করে বয়ে গেছে রামপুরা খাল। সময়ের সঙ্গে খালটির দুই পাশে নগরজীবনের বড় পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু নির্বিঘ্ন যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বনশ্রী ও আফতাবনগরের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন চারটি বাঁশের সাঁকো।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে চারটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। এসব সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ দুই পাশে যাতায়াত করে। বনশ্রী ও আফতাবনগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য অনেক শিক্ষার্থী এই সাঁকো ব্যবহার করেন।
আফতাবনগরের কোনো বাসিন্দা যদি বনশ্রী আসতে চান, তাহলে তাঁকে রামপুরা সেতু ঘুরে আসতে হয়। এতে অন্তত চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। জাহিদুজ্জামান, বনশ্রীর বাসিন্দাস্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বনশ্রী ও আফতাবনগরে ছোট–বড়ো মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ২০টি ছোট–বড় হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। বনশ্রীতে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল থাকায় আফতাবনগরের বাসিন্দাদের এপারে আসতে হয়।
এদিকে, সাঁকোগুলো নড়বড়ে হওয়ায় প্রায়ই ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। সঙ্গে কিছুদিন পরপর সাঁকো মেরামতের কাজ হলে কিংবা ঝড়বৃষ্টিতে দুই পাশের মানুষের যাতায়াতে নেমে আসে অসহনীয় ভোগান্তি। যদিও দেড় দশক ধরে এসব সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে বনশ্রী ও আফতাবনগরের মানুষ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সিটি করপোরেশন কিংবা সরকারের অন্য কোনো পক্ষ থেকে এর আগে কখনো সাঁকোগুলো মেরামত বা নির্মাণের কাজ হয়নি। সাঁকো ভেঙে গেলে বা মেরামতের প্রয়োজন হলে তা আফতাবনগর জহুরুল ইসলাম সোসাইটির উদ্যোগে করা হয়।
একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আফতাবনগরের বাসিন্দারা কেউ গাড়ি বা রিকশা নিয়ে বনশ্রীর দিকে যেতে চাইলে রামপুরা ব্রিজ ঘুরে যেতে হয়। বাঁশের সাঁকোতে মানুষ হাঁটলেও সেটি নড়তে থাকে। বেশি আতঙ্কে থাকে শিশু ও বৃদ্ধরা। যদিও বাসিন্দারা দেড় দশক ধরে বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে কংক্রিটের সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন।
বনশ্রীর ইনটেলিজেন্টসিয়া স্কুলের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি প্রতিদিন আফতাবনগর থেকে বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে এই ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে আসেন।
যাতায়াতে দুর্ভোগের কথা জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অসংখ্য মানুষের ভোগান্তি। যাতায়াত সবচেয়ে কঠিন হয় যখন বৃষ্টি হয় কিংবা সাঁকোগুলো ভেঙে যায়। খালের ওপর কয়েকটি কাঠের নৌকা পরপর লাগিয়ে মানুষ পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়। তখন এপাশ থেকে ওপাশে যেতে পাঁচ টাকা করে দিতে হয়।
মঙ্গলবার বনশ্রী জি ব্লকের সামনের বাঁশের সাঁকো পার হওয়ার সময় কথা হয় আফতাবনগরের আরেক বাসিন্দা দিপা রানীর সঙ্গে। তিন বছর ধরে তিনি আফতাবনগর থেকে এই পথে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেন।
দিপা রানী বলেন, ‘সাঁকো অনেকটা নড়বড়ে। কিন্তু কিছু করার নেই। বাচ্চার স্কুলের জন্য প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। কিছুদিন পরপর যখন সাঁকো মেরামতের কাজ করা হয়, তখন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ি। তার ওপর শীত মৌসুমে খালে পানি কম থাকলে উৎকট গন্ধে ভোগান্তি আরও বাড়ে।’
বনশ্রীর বাসিন্দা জাহিদুজ্জামান বললেন, আফতাবনগরের কোনো বাসিন্দা যদি বনশ্রী আসতে চান, তাহলে তাঁকে রামপুরা সেতু ঘুরে আসতে হয়। এতে অন্তত চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। তবে বিড়ম্বনার বিষয় হলো, বনশ্রীর কোনো বাসিন্দা যদি আফতাবনগরে যেতে চান, তাহলে বাড্ডা ইউলোপ ঘুরে আসতে হয়। এতে দূরত্ব দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
আফতাবনগর জহুরুল ইসলাম সোসাইটির সহসভাপতি হাশেম ভুঁইয়া জানান, এই ভোগান্তি লাঘবের জন্য তাঁরা বিভিন্ন সময় সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তবে শিগগিরই এই এলাকায় বাঁশের সাঁকোর স্থলে একাধিক পাকা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে কয়েক মাসের মধ্যে সেতুগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা।
একই রকম কথা বললেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আফত বনগর র ও আফত বনগর বনশ র র ম র মত
এছাড়াও পড়ুন:
দর্শনা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে যুবকের মৃত্যুর খবর
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ইব্রাহিম বাবু (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। বুধবার দুপুরে দর্শনা থানার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ৭৯ নম্বর প্রধান খুঁটির কাছে ভারতের অভ্যন্তরে গুলির এ ঘটনা ঘটে।
ইব্রাহিম বাবুর বাবা মো. নূর ইসলাম বলেন, তাঁর ছেলে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ঘাস কাটতে সীমান্ত এলাকার মাঠে যায়। সেখানে ঘাস কাটার সময় ভুল করে ভারত অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লে বিএসএফ তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর দুটি গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে ইব্রাহিম বাবু মারা যান।
৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো . নাজমুল হাসান সীমান্তে বিএসএফের গুলিবর্ষণের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঝাঁঝাডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএসফের গুলিবর্ষণের খবর পাওয়ার পরপরই ৩২ বিএসএফের কমান্ড্যান্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন স্বর্ণ চোরাকারবারি ভারতের ২০০ মিটার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লে বিএসএফ তাঁদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হন এবং অন্যরা পালিয়ে যান। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে সেখানকার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
স্থানীয় একাধিক সূত্রের ভাষ্য, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ঝাঁঝাডাঙ্গা গ্রামের মো. নূর ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম বাবুসহ ৪-৫ জন দুপুর ১২টার দিকে গরুর ঘাস কাটার জন্য ভারতের সীমান্তের কাছাকাছি গালার মাঠে যান। এর কিছুক্ষণ পর স্থানীয় বাসিন্দারা পরপর দুটি গুলির শব্দ শুনতে পান। ইব্রাহিমের সঙ্গে ঘাস কাটতে যাওয়া লোকজন ফিরে এসে ইব্রাহিম বাবুর বাবাকে জানান, বিএসএফের গুলিতে তাঁর ছেলে মারা গেছেন এবং তাঁর লাশ বিএসএফ নিয়ে গেছে।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহীদ তিতুমীর প্রথম আলোকে বলেন, সীমান্তে গুলিবর্ষণের খবর অনেকেই শুনেছেন। যেহেতু গুলিবর্ষণের পর ইব্রাহিম বাবু বাড়িতে ফেরেননি, এ জন্য তাঁর মা–বাবার ধারণা যে তাঁদের ছেলে মারা গেছেন। তবে গুলিবিদ্ধ লাশ দেখেছেন, এমন প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি।