২৯০ আরোহীসহ ইরানের উড়োজাহাজ কেন ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ধ্বংস করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
Published: 3rd, July 2025 GMT
সুন্দর রোদেলা সকাল। ঝা–চকচকে নীল আকাশ। পারস্য উপসাগরের ওপর দিয়ে বইছে ঝিরিঝিরি মিঠে হাওয়া। এমন চমৎকার আবহাওয়ায় উড়াল দিয়েছিল একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ। এতে দেশি-বিদেশি ২৭৪ জন যাত্রী আর ১৬ জন ক্রু ছিলেন। কে ভেবেছিলেন, এটাই হবে এই ২৯০ জনের শেষ উড়াল। মুহূর্তের মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে এসে আঘাত হানবে উড়োজাহাজটিতে। মাঝ আকাশেই সেটি ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে, এমনটাই-বা কে ভেবেছিলেন।
ঘটনাটি ১৯৮৮ সালের আজকের দিন অর্থাৎ ৩ জুলাইয়ের। ঘটনাস্থল পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালি। চমৎকার আবহাওয়ায় হরমুজ প্রণালিঘেঁষা ইরানের বন্দর আব্বাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয় ইরান এয়ারের ফ্লাইট ৬৫৫। এয়ারবাস এ-৩০০ মডেলের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটির গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। সঙ্গে মোট ২৯০ জন আরোহী। এরপরই বিশ্বের আকাশসেবা খাতের অন্যতম বড় ট্র্যাজেডির শিকার হয় উড়োজাহাজটি।
সময় মাত্র ৭ মিনিট
ঘড়িতে তখন সকাল ১০টা ৪৭ মিনিট। নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পর ইরানের বন্দর আব্বাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয় ফ্লাইট ৬৫৫। ওই সময় নিরাপত্তার জন্য হরমুজ প্রণালিতে মোতায়েন করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস ভিনসেন্স। সেখান থেকে উড়োজাহাজটি লক্ষ্য করে পরপর দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, এ ঘটনা আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঘটেছে। যদিও পরে সেটা ভুল প্রমাণিত হয়। উড়োজাহাজটি ইরানের আকাশসীমায় থাকা অবস্থাতে হামলার শিকার হয়েছিল। বলা হয়, অনুমোদিত বাণিজ্যিক বিমানপথে উড়োজাহাজটি নির্ধারিত গতির চেয়ে ধীরে আসার কারণে এই ‘ভুল’ হয়েছে।দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের একটি উড়ে গিয়ে আঘাত হানে ফ্লাইট ৬৫৫-এ। মাঝ আকাশে ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায় ইরানের ওই উড়োজাহাজটি। প্রাণ হারান ২৯০ জন আরোহীর সবাই। তখন ঘড়িতে সকাল ১০টা ৫৪ মিনিট। অর্থাৎ উড্ডয়নের মাত্র ৭ মিনিটের মাথায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয় উড়োজাহাজটি।
যুদ্ধের সময়ের উৎকণ্ঠা
ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ধ্বংসের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তুমুল প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ ঘটনার ব্যাপক নিন্দা জানানো হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ইরানের আকাশসীমায় দেশটির একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ কেন ধ্বংস করলে যুক্তরাষ্ট্র? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একটু পেছনে যেতে হবে। বুঝতে হবে তখনকার সময়টাকে। উপলব্ধি করতে হবে ইরান, বিশেষত হরমুজ প্রণালির কৌশলগত অবস্থান ও গুরুত্বকে।
১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন একটি যুদ্ধের সূচনা হয়। ইতিহাসে এই যুদ্ধ ইরান-ইরাক যুদ্ধ নামে পরিচিত। কেউ কেউ একে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ বলেন। থেমে থেমে আট বছর ধরে চলে দুই দেশের যুদ্ধ। ১৯৮৮ সালের আগস্টে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধের লাগাম টানা হয়।
যা–ই হোক, ফ্লাইট ৬৫৫ যখন ধ্বংস করা হয়, অর্থাৎ ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে তখনও ইরান ও ইরাকের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল। ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের তখনও এক দশক পার হয়নি। এর মধ্যেই দেশটি বড় একটি যুদ্ধে জড়িয়েছে। যুদ্ধের সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের (বিশেষত জ্বালানি বাণিজ্যের) কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট হরমুজ প্রণালির নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিল ইরান। একই উদ্বেগ ছিল ইরাকের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোরও।
হরমুজের নিরাপত্তায় যুদ্ধজাহাজ
যুদ্ধের সময়ের কয়েকটি ঘটনা জানলে তখনকার সময় আর পরিস্থিতি বোঝাটা সহজ হবে। তখন ইরান যেকোনো মূল্যে পারস্য উপসাগর হয়ে ইরাকের জ্বালানি তেল রপ্তানি বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। এ জন্য জ্বালানিবাহী নৌযানে মাইন পেতে রাখা, রকেট ছুড়ে জ্বালানিবাহী নৌযান ধ্বংস—নিত্যদিন এমন নানা তৎপরতা চলছিল। তেহরানের বিরুদ্ধে ইরাকও একই ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছিল।
সাগরে ফ্লাইট ৬৫৫-এর রেপ্লিকা ভাসিয়ে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করছেন ইরানিরা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
২৯০ আরোহীসহ ইরানের উড়োজাহাজ কেন ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ধ্বংস করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
সুন্দর রোদেলা সকাল। ঝা–চকচকে নীল আকাশ। পারস্য উপসাগরের ওপর দিয়ে বইছে ঝিরিঝিরি মিঠে হাওয়া। এমন চমৎকার আবহাওয়ায় উড়াল দিয়েছিল একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ। এতে দেশি-বিদেশি ২৭৪ জন যাত্রী আর ১৬ জন ক্রু ছিলেন। কে ভেবেছিলেন, এটাই হবে এই ২৯০ জনের শেষ উড়াল। মুহূর্তের মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে এসে আঘাত হানবে উড়োজাহাজটিতে। মাঝ আকাশেই সেটি ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে, এমনটাই-বা কে ভেবেছিলেন।
ঘটনাটি ১৯৮৮ সালের আজকের দিন অর্থাৎ ৩ জুলাইয়ের। ঘটনাস্থল পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালি। চমৎকার আবহাওয়ায় হরমুজ প্রণালিঘেঁষা ইরানের বন্দর আব্বাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয় ইরান এয়ারের ফ্লাইট ৬৫৫। এয়ারবাস এ-৩০০ মডেলের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটির গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। সঙ্গে মোট ২৯০ জন আরোহী। এরপরই বিশ্বের আকাশসেবা খাতের অন্যতম বড় ট্র্যাজেডির শিকার হয় উড়োজাহাজটি।
সময় মাত্র ৭ মিনিট
ঘড়িতে তখন সকাল ১০টা ৪৭ মিনিট। নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পর ইরানের বন্দর আব্বাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয় ফ্লাইট ৬৫৫। ওই সময় নিরাপত্তার জন্য হরমুজ প্রণালিতে মোতায়েন করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস ভিনসেন্স। সেখান থেকে উড়োজাহাজটি লক্ষ্য করে পরপর দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, এ ঘটনা আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঘটেছে। যদিও পরে সেটা ভুল প্রমাণিত হয়। উড়োজাহাজটি ইরানের আকাশসীমায় থাকা অবস্থাতে হামলার শিকার হয়েছিল। বলা হয়, অনুমোদিত বাণিজ্যিক বিমানপথে উড়োজাহাজটি নির্ধারিত গতির চেয়ে ধীরে আসার কারণে এই ‘ভুল’ হয়েছে।দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের একটি উড়ে গিয়ে আঘাত হানে ফ্লাইট ৬৫৫-এ। মাঝ আকাশে ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায় ইরানের ওই উড়োজাহাজটি। প্রাণ হারান ২৯০ জন আরোহীর সবাই। তখন ঘড়িতে সকাল ১০টা ৫৪ মিনিট। অর্থাৎ উড্ডয়নের মাত্র ৭ মিনিটের মাথায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয় উড়োজাহাজটি।
যুদ্ধের সময়ের উৎকণ্ঠা
ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ধ্বংসের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তুমুল প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ ঘটনার ব্যাপক নিন্দা জানানো হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ইরানের আকাশসীমায় দেশটির একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ কেন ধ্বংস করলে যুক্তরাষ্ট্র? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একটু পেছনে যেতে হবে। বুঝতে হবে তখনকার সময়টাকে। উপলব্ধি করতে হবে ইরান, বিশেষত হরমুজ প্রণালির কৌশলগত অবস্থান ও গুরুত্বকে।
১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন একটি যুদ্ধের সূচনা হয়। ইতিহাসে এই যুদ্ধ ইরান-ইরাক যুদ্ধ নামে পরিচিত। কেউ কেউ একে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ বলেন। থেমে থেমে আট বছর ধরে চলে দুই দেশের যুদ্ধ। ১৯৮৮ সালের আগস্টে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধের লাগাম টানা হয়।
যা–ই হোক, ফ্লাইট ৬৫৫ যখন ধ্বংস করা হয়, অর্থাৎ ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে তখনও ইরান ও ইরাকের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল। ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের তখনও এক দশক পার হয়নি। এর মধ্যেই দেশটি বড় একটি যুদ্ধে জড়িয়েছে। যুদ্ধের সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের (বিশেষত জ্বালানি বাণিজ্যের) কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট হরমুজ প্রণালির নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিল ইরান। একই উদ্বেগ ছিল ইরাকের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোরও।
হরমুজের নিরাপত্তায় যুদ্ধজাহাজ
যুদ্ধের সময়ের কয়েকটি ঘটনা জানলে তখনকার সময় আর পরিস্থিতি বোঝাটা সহজ হবে। তখন ইরান যেকোনো মূল্যে পারস্য উপসাগর হয়ে ইরাকের জ্বালানি তেল রপ্তানি বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। এ জন্য জ্বালানিবাহী নৌযানে মাইন পেতে রাখা, রকেট ছুড়ে জ্বালানিবাহী নৌযান ধ্বংস—নিত্যদিন এমন নানা তৎপরতা চলছিল। তেহরানের বিরুদ্ধে ইরাকও একই ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছিল।
সাগরে ফ্লাইট ৬৫৫-এর রেপ্লিকা ভাসিয়ে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করছেন ইরানিরা