সুন্দর রোদেলা সকাল। ঝা–চকচকে নীল আকাশ। পারস্য উপসাগরের ওপর দিয়ে বইছে ঝিরিঝিরি মিঠে হাওয়া। এমন চমৎকার আবহাওয়ায় উড়াল দিয়েছিল একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ। এতে দেশি-বিদেশি ২৭৪ জন যাত্রী আর ১৬ জন ক্রু ছিলেন। কে ভেবেছিলেন, এটাই হবে এই ২৯০ জনের শেষ উড়াল। মুহূর্তের মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে এসে আঘাত হানবে উড়োজাহাজটিতে। মাঝ আকাশেই সেটি ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে, এমনটাই-বা কে ভেবেছিলেন।

ঘটনাটি ১৯৮৮ সালের আজকের দিন অর্থাৎ ৩ জুলাইয়ের। ঘটনাস্থল পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালি। চমৎকার আবহাওয়ায় হরমুজ প্রণালিঘেঁষা ইরানের বন্দর আব্বাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয় ইরান এয়ারের ফ্লাইট ৬৫৫। এয়ারবাস এ-৩০০ মডেলের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটির গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। সঙ্গে মোট ২৯০ জন আরোহী। এরপরই বিশ্বের আকাশসেবা খাতের অন্যতম বড় ট্র্যাজেডির শিকার হয় উড়োজাহাজটি।

সময় মাত্র ৭ মিনিট

ঘড়িতে তখন সকাল ১০টা ৪৭ মিনিট। নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পর ইরানের বন্দর আব্বাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেয় ফ্লাইট ৬৫৫। ওই সময় নিরাপত্তার জন্য হরমুজ প্রণালিতে মোতায়েন করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস ভিনসেন্স। সেখান থেকে উড়োজাহাজটি লক্ষ্য করে পরপর দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।

ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, এ ঘটনা আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঘটেছে। যদিও পরে সেটা ভুল প্রমাণিত হয়। উড়োজাহাজটি ইরানের আকাশসীমায় থাকা অবস্থাতে হামলার শিকার হয়েছিল। বলা হয়, অনুমোদিত বাণিজ্যিক বিমানপথে উড়োজাহাজটি নির্ধারিত গতির চেয়ে ধীরে আসার কারণে এই ‘ভুল’ হয়েছে।

দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের একটি উড়ে গিয়ে আঘাত হানে ফ্লাইট ৬৫৫-এ। মাঝ আকাশে ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায় ইরানের ওই উড়োজাহাজটি। প্রাণ হারান ২৯০ জন আরোহীর সবাই। তখন ঘড়িতে সকাল ১০টা ৫৪ মিনিট। অর্থাৎ উড্ডয়নের মাত্র ৭ মিনিটের মাথায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয় উড়োজাহাজটি।

যুদ্ধের সময়ের উৎকণ্ঠা

ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ধ্বংসের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তুমুল প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ ঘটনার ব্যাপক নিন্দা জানানো হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ইরানের আকাশসীমায় দেশটির একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ কেন ধ্বংস করলে যুক্তরাষ্ট্র? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একটু পেছনে যেতে হবে। বুঝতে হবে তখনকার সময়টাকে। উপলব্ধি করতে হবে ইরান, বিশেষত হরমুজ প্রণালির কৌশলগত অবস্থান ও গুরুত্বকে।

১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন একটি যুদ্ধের সূচনা হয়। ইতিহাসে এই যুদ্ধ ইরান-ইরাক যুদ্ধ নামে পরিচিত। কেউ কেউ একে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ বলেন। থেমে থেমে আট বছর ধরে চলে দুই দেশের যুদ্ধ। ১৯৮৮ সালের আগস্টে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধের লাগাম টানা হয়।

যা–ই হোক, ফ্লাইট ৬৫৫ যখন ধ্বংস করা হয়, অর্থাৎ ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে তখনও ইরান ও ইরাকের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল। ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের তখনও এক দশক পার হয়নি। এর মধ্যেই দেশটি বড় একটি যুদ্ধে জড়িয়েছে। যুদ্ধের সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের (বিশেষত জ্বালানি বাণিজ্যের) কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট হরমুজ প্রণালির নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিল ইরান। একই উদ্বেগ ছিল ইরাকের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোরও।

হরমুজের নিরাপত্তায় যুদ্ধজাহাজ

যুদ্ধের সময়ের কয়েকটি ঘটনা জানলে তখনকার সময় আর পরিস্থিতি বোঝাটা সহজ হবে। তখন ইরান যেকোনো মূল্যে পারস্য উপসাগর হয়ে ইরাকের জ্বালানি তেল রপ্তানি বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। এ জন্য জ্বালানিবাহী নৌযানে মাইন পেতে রাখা, রকেট ছুড়ে জ্বালানিবাহী নৌযান ধ্বংস—নিত্যদিন এমন নানা তৎপরতা চলছিল। তেহরানের বিরুদ্ধে ইরাকও একই ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছিল।

সাগরে ফ্লাইট ৬৫৫-এর রেপ্লিকা ভাসিয়ে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করছেন ইরানিরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মো. মিজানুর রহমান (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। মিজানুরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামে।

আরও পড়ুননিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ নিয়ে দুই মামলায় মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান জেনারেটর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানুরকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো ও হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে রাজবাড়ীর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুননুরাল পাগলার দরবারে হামলায় হত্যা মামলা, মসজিদের ইমামসহ চারজন গ্রেপ্তার০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ওই দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এই মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। ওই মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মিজানুরসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ