পুঁজিবাজারে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ‘আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেডে’র পরিচালনা পর্ষদ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ডেটা সেন্টার বিক্রি করার ঘোষণা দেয়। এ সম্পদ বিক্রির ফলে মুনাফার ওপর প্রভাব পড়বে বলে জানায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

এ ঘোষণার এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারের দাম প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়ে যায়। তাই  কোম্পানির ডেটা সেন্টার বিক্রি এবং শেয়ারদর অস্বাভাবিক বাড়ার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ লক্ষ্যে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার ব্যাখ্যা দিল রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স

টানা তিন দিন বন্ধ থাকবে পুঁজিবাজার

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে শর্তসাপেক্ষে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়ে আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া এবং সহকারী পরিচালক মো.

মোসাব্বির আল আশিক।

বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১ আগস্ট কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ৩৬.১০ টাকা। অর ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ বেড়ে দাঁড়ায় ৭২.৫০ টাকায়। পরবর্তীতে ৫ জুন কোম্পানির শেয়ারের দাম আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৮২.৮০ টাকায়। ফলে ডেটা সেন্টার বিক্রির সংবাদ প্রকাশের পর আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ারের দাম এক বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়ে যায়। গঠিত তদন্ত কমিটি কোম্পানির ডাটা সেন্টার বিক্রির প্রকৃত কারণ এবং অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করে দেখবে।

বিএসইসির তদন্ত আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ মর্মে অভিমত দিয়েছে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেডের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন। যাতে ডেটা সেন্টার বিক্রির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সুবিধা বা প্রকৃত কারণগুলি খুঁজে বের করা যায়। এছাড়া ওই সময়ে কোম্পানির শেয়ার ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেটা সেন্টার বিক্রির খবরে আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ারের দাম ৩৭.৯০ টাকা থেকে ৭০.৮০ টাকায় ওঠানামা করে।

এমতাবস্থায়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নম্বর XVII) এর সেকশন ২১ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর সেকশন ১৭ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দুইজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করা হলো। তদন্ত কর্মকর্তাদের ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিশনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে আমরা নেটওয়ার্কের পরিচালনা পর্ষদ। সর্বশেষ হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২.৪৬ টাকা। আগের হিসাববছরের একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ২.৪৩ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৭.০১ টাকা।

শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি
আমরা নেটওয়ার্ক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৭ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৯২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানির মোট শেয়ার ৯ কোটি ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯১২টি। ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩৩.০৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২১.৭১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৫.২৫ শতাংশ শেয়ার আছে। এ কোম্পানির স্বল্প মেয়াদি ঋণ আছে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের পরিমাণ ১৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১৭.২০ টাকায়।

২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর দেশের উভয় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনেদন শুরু করে ‘আমরা নেটওয়ার্ক’। এর আগে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে ১ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। এক্ষেত্রে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করা হয় ৩৯ টাকা।

সে সময় কোম্পানিটি জানায়, আইপিওরে মাধ্যমে সংগ্রহীত টাকা দিয়ে-ঋণ পরিশোধ, ব্যবসা সম্প্রসারণ, ডাটা সেন্টার স্থাপন ও আইপিও খাতে ব্যবহার করা হবে।

তবে ডেটা সেন্টার স্থাপনের ৫ বছর পরও কোম্পানিটি তা থেকে কোনো লাভের মুখ দেখেনি। যার ফলে ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের তৈরি করা ডাটা সেন্টার ১১.৫০ কোটি টাকায় তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আমরা হোল্ডিংসের (কোম্পানির ব্যবস্থাপনার ওপর উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণসহ একটি সাধারণ পরিচালক পদের জন্য একটি সম্পর্কিত পক্ষ) কাছে বিক্রি করা হবে। যেখানে এ সম্পদের বুক ভ্যালু ছিল ৮.৪৫ কোটি টাকা। ফলস্বরূপ, সম্পদ বিক্রি করে ২.৩৭ কোটি টাকা লাভ করবে, যার সরাসরি লাভের ওপর প্রভাব পড়বে বলে জানায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২২ স ল র ন টওয় র ক র ব যবস থ ব এসইস র তদন ত ক ন টওয

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
  • ২২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেবে বিএসইসি
  • পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
  • বিএসইসির তদন্তের মুখে ভ্যানগার্ড ও ক্যাপিটেক অ্যাসেট
  • দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহারের প্রস্তাব
  • ৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড