একা ভ্রমণের জন্য নিরাপদ যেসব গন্তব্য
Published: 3rd, July 2025 GMT
বর্তমানে ‘সলো ট্রাভেলিং’ বা ‘একক ভ্রমণ’ বেশ ট্রেন্ডে। কারণ, জীবনের ঝক্কি কাটিয়ে উঠতে অনেকেই পছন্দ করেন একা দূরে কোথাও গিয়ে নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে। তবে একা ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে গেলেই যে ব্যাপার সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা হলো নিরাপত্তা। নিরাপত্তার অভাব বা সঙ্গবিহীন অচেনা পরিবেশে যাত্রা—এসব বিবেচনায় ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় একা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয় না।
তবে সময় পাল্টেছে। যেহেতু এখন প্রযুক্তি অনেক উন্নত, ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও বেশ সচেতন, তাই গন্তব্য ও পরিকল্পনা সঠিক থাকলে সলো ট্রাভেলিং আপনার জীবনে যুক্ত করতে পারে অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ভ্রমণকারীদের মতামত এবং গ্লোবাল পর্যটন নিরাপত্তাসূচক অনুযায়ী এমন কিছু গন্তব্যের সঙ্গে আজ পরিচিত হব, যেগুলো একা ভ্রমণের জন্য শুধু নিরাপদই নয়, উপভোগ্য বটে।
১.
মরক্কো
উত্তর আফ্রিকার বৈচিত্র্যময় দেশটিতে একসঙ্গে পাওয়া যায় সাহারা মরুভূমি আর আটলান্টিক উপকূলের মোহময়তা। মরক্কোর হাজার বছরের পুরোনো বাজার, প্রাচীন স্থাপত্য, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি—ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য বরাবরই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এসাওইরায় সার্ফিং শেখা থেকে শুরু করে সাহারায় ক্যাম্পিং, সমুদ্রতটে অলস সময় কাটানো, লোকজ সংগীতের আসরে যোগ দেওয়া কিংবা প্রাচীন বাজারগুলো ঘুরেফিরে দেখা—সবকিছুই যেন অনন্য এক অভিজ্ঞতার উপলক্ষ এনে দেয়। আর ভোজনরসিকেরা এখানে নিতে পারেন মরক্কোর খাবারের প্রকৃত স্বাদ। সব মিলিয়ে এটি একটি ভিন্নমাত্রার ভ্রমণস্থান। নারী ভ্রমণকারীরাও মরক্কোতে একাকী সহজেই নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন। বিশেষ করে যেসব এলাকা পর্যটকপ্রিয়, সেখানে স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তার বিষয়ে অনেক সচেতন।
২. প্রাগ
চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগ যেন এক জীবন্ত মিউজিয়াম। চার্লস ব্রিজ, প্রাগ ক্যাসল, পুরোনো টাউন স্কয়ার—প্রতিটি স্থান যেন ইতিহাসের পাতায় মোড়ানো। সেখানকার কফিশপ, স্ট্রিট আর্ট, জাদুঘর আর নাইটলাইফে মিশে আছে আধুনিক শহরজীবনের নানা রং, নানা ঢঙে। সেই সঙ্গে এখানে একা ঘুরে বেড়ানো বেশ নিরাপদ, এমনকি রাতের বেলায়ও। স্থানীয়দের সহানুভূতিশীল আচরণ আর পর্যটন খাতের মানসম্পন্ন সেবা এটিকে ইউরোপের অন্যতম নিরাপদ একক ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত করেছে।
৩. শ্রীলঙ্কা
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত দ্বীপদেশটি পাহাড়, সমুদ্র আর ঐতিহ্যের এক অপূর্ব সমাহার। সবুজের সমারোহে সমৃদ্ধ শ্রীলঙ্কা একদিকে যেমন প্রশান্তির, অন্যদিকে রোমাঞ্চের অভিজ্ঞতাও দেয়। এখানে অনুরাধাপুরার প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপনা পরিদর্শনে যেতে পারেন, ট্রেনে উঠে পাহাড়ি পথে ঘুরে বেড়াতে পারেন কিংবা একান্ত সময় কাটাতে চলে যেতে পারেন মিরিসা বা গলের সৈকতে। শ্রীলঙ্কায় পর্যটকদের প্রতি স্থানীয়দের রয়েছে আলাদা আন্তরিকতা। দেশটির পর্যটনসেবা এবং পরিবহনব্যবস্থা যথেষ্ট নিরাপদ ও কার্যকর। একা ভ্রমণকারীদের জন্য সেখানে গাইড বা হোস্টেল পরিষেবাও বেশ সহজলভ্য।
৪. ইন্দোনেশিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত দ্বীপপুঞ্জ ইন্দোনেশিয়ায় ভ্রমণ মানেই যেন প্রকৃতি ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। এর মধ্যে দ্বীপ এলাকা ‘বালি’ অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য, বিশেষ করে একা ভ্রমণকারীদের কাছে। সব মিলিয়ে এখানে পাওয়া যায় মানসিক প্রশান্তি ও অসাধারণ সব অভিজ্ঞতা। উবুদের শিল্পশৈলী আর সেমিনিয়াকের সমুদ্রতট—সবই যেন নির্জনে একাকী উপভোগ করার আয়োজন নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে। বালিতে রাত্রিযাপনও বেশ নিরাপদ। কারণ, এখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থা বেশ উন্নত এবং পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অত্যন্ত পেশাদার ও দায়িত্বশীল।
৫. পর্তুগাল
ইউরোপের নিরিবিলি শান্তির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম পর্তুগাল। একা ঘুরে বেড়ানোর জন্য এটি আদর্শ একটি দেশ। রাজধানী লিসবনের ঐতিহ্যবাহী ট্রামযাত্রা, পোর্তোর নদীভ্রমণ কিংবা আলগারভের সূর্যাস্ত—সবই একাকী উপভোগ করার মতো। পর্তুগিজরা সাধারণত বন্ধুসুলভ, আর শহরগুলোতে হেঁটে ঘুরে বেড়ানো যায় সহজে ও নিরাপদে। ছোট রেস্টুরেন্টে নিতে পারেন স্থানীয় খাবারের স্বাদ। বিশ্ব পর্যটন নিরাপত্তাসূচকে পর্তুগাল নিয়মিতভাবে শীর্ষে থাকে, বিশেষ করে একা নারী ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তার দিক থেকে।
‘সলো ট্রাভেলার’দের জন্য কিছু টিপস
এয়ারপোর্টে গিয়ে যেকোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করতে পারেন ফ্লাইট এক্সপার্টের সঙ্গে। সলো ট্রাভেলারদের জন্য ফ্লাইট এক্সপার্ট দিচ্ছে সার্বক্ষণিক সহায়তা—দিনে বা রাতে যেকোনো সময় যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া তাদের কাছে আছে ব্লু রিবন ব্যাগেজ সুবিধা, যা আপনার ব্যাগেজের যেকোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দেবে।
অনেক সময় ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় সলো ট্রাভেলারদের ভিনদেশে গিয়ে অসুবিধায় পড়তে হয় বা হঠাৎ কোনো সমস্যায় পড়লে দ্রুত সহায়তা পাওয়া যায় না। ফ্লাইট এক্সপার্টের ই-সিমের সাহায্যে আপনি যেকোনো দেশে গিয়ে সহজে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন।
টিকিট বুকিংয়ের পর কোনো কারণে ডেট চেঞ্জ বা রিফান্ড ক্লেইম করলে টাকা ফেরত পাওয়া হয়ে ওঠে কষ্টকর। এ ক্ষেত্রে ফ্লাইট এক্সপার্টের ‘রিফান্ডেবল বুকিং আপডগ্রেড’ অ্যাড-অনটি (Add-on) আপনাকে দেবে শতভাগ রিফান্ড পাওয়ার সুযোগ। ফ্লাইট বুক করার সময় এই অ্যাড-অনটি যোগ করে নিলে পরবর্তী সময়ে রিফান্ড অ্যাপ্লাই করার দুই দিনের মধ্যেই আপনি সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পাবেন।
এ ছাড়া সলো ট্রাভেলারদের জন্য ফ্লাইট এক্সপার্টে রয়েছে ৩৬ মাস পর্যন্ত মাসিক ইএমআইতে ফ্লাইট ও হোটেল বুক করার সুযোগ, যা সলো বা বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য ভ্রমণকে করছে আরও সহজলভ্য।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ রমণক র দ র দ র জন য ন র পদ পর ত গ মরক ক ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকালে বৈদ্যুতিক লাইনের নেটের আঘাতে নিহত ১, আহত ৫
টাঙ্গাইলে ট্রেনের ছাদে অবৈধভাবে ভ্রমণের সময় বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম রিপন আলী (৩৭)। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রেলওয়ে পুলিশের টাঙ্গাইল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর পর ছাদে রক্তাক্ত অবস্থায় ছয়জনকে পাওয়া যায়। আহত যাত্রীরা পুলিশকে জানান, তাঁরা ঢাকা থেকে ট্রেনের ছাদে উঠেছিলেন। টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর ১৫–২০ মিনিট আগে রেলপথের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা একটি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নিচের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তাঁরা আহত হন।
আহত ছয়জনকে পুলিশ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে রিপন আলীর মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে আশরাফুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত আমিরুল ইসলাম (২৫), আলিম (২৫) ও ফয়সাল (২৭) চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অজ্ঞাতপরিচয়ের এক কিশোর (১৫–১৬) এখনো টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তার হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে। কর্তব্যরত নার্স জানান, ছেলেটি কথা বলতে পারছে না।
এদিকে নিহত রিপন আলীর রাজশাহীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কালিয়ানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আহাজারি করছেন। বাইরে রিপনের দাফনের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে, কেউ বাঁশ কাটছেন।
রিপনের বাবা ইসরাফিল হোসেন জানান, রিপন ঢাকার একটি ইলেকট্রনিকস কোম্পানিতে চাকরি করত। কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন কাজ খুঁজছিল। গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল হাসপাতাল থেকে রিপনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার ছোট ছেলের ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, রিপন ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।