বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাপে একে অপরের সঙ্গে বার্তার মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ করেন অনেকেই। তবে ব্যস্ততার কারণে অপরিচিত ব্যক্তিদের পাঠানো সব বার্তার উত্তর দেওয়া সব সময় সম্ভব হয় না। এ সমস্যা সমাধানে মেটা এআই চ্যাটবটের মাধ্যমে অন্যদের পাঠানো সব বার্তার সারসংক্ষেপ জানার সুযোগ চালু করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। এর ফলে বার্তাগুলো না পড়েই উল্লেখযোগ্য তথ্য জানার সুযোগ পাবেন ব্যবহারকারীরা।

হোয়াটসঅ্যাপের তথ্যমতে, মেটার প্রাইভেট প্রসেসিং প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অন্যদের পাঠানো সব বার্তার সারসংক্ষেপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে লিখে দেবে ‘মেটা এআই’ চ্যাটবট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ‘এআই মেসেজ সামারি’ সুবিধাটি ঐচ্ছিক হওয়ায় ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী চালু বা বন্ধ করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীদের জন্য সুবিধাটি চালু করা হয়েছে। বছরের শেষ নাগাদ অন্যান্য দেশে সুবিধাটি চালু করা হবে।

হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস ব্যবহারকারীদের জন্যও ভয়েস কলের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এত দিন এ সুবিধা শুধু ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা গেলেও এবার বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভয়েস কল করতে পারবে। এর ফলে গ্রাহকেরা সরাসরি ফোন করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোও গ্রাহকের নম্বরে কল করে বিভিন্ন সেবা দিতে পারবে। হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, ভয়েস কলের পাশাপাশি ভয়েস বার্তা আদান-প্রদানের সুযোগও শিগগিরই চালু করা হবে।

হোয়াটসঅ্যাপের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা জানিয়েছে, ভয়েস কল ও বার্তার সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ভয়েস এজেন্ট যুক্ত করা যাবে। প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তৈরি এআই ভয়েস এজেন্ট যুক্ত করে হোয়াটসঅ্যাপেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহকসেবা পরিচালনা করতে পারবে।

সূত্র: দ্য ভার্জ, টেক ক্র্যাঞ্চ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ য় টসঅ য প ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

মহররমে ইবাদতের নামে ছড়ানো ৫টি কুসংস্কার

মহররমকে কেন্দ্র করে সমাজে রয়েছে অসংখ্য ভুল ধারণা ও কুসংস্কার, যার ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। অধিক প্রচলিত কয়েকটি কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা করা হলো।

১. অলীক বর্ণনা

মহররমের গুরুত্ব বোঝাতে অনেকে নানা কথা বলেন। যেমন এ মাসে ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন, ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন, ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন, ইদরিস (আ.)-কে আসমানে তুলে নেওয়া হয়। অনেকে বলেন, এ দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। এসব কথার দৃঢ় কোনো ভিত্তি নেই। (আল-আসারুল মারফুআ, আবদুল হাই লাখনবি: ৬৪-১০০; মা সাবাতা বিস-সুন্নাহ ফি আয়্যামিস সানাহ, আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবি: ২৫৩-২৫৭)।

আরও পড়ুনমরিয়ম (আ.)-এর অলৌকিক ঘটনা০৯ মে ২০২৫২. খাবারে নিষেধাজ্ঞা

মহররম এলে অনেকে মাছ, শাক ও মিষ্টি–জাতীয় খাবার খান না। এটা সঠিক নয়। ইসলাম অন্যান্য মাসের মতো এ মাসেও কোনো হালাল খাদ্য হারাম করেনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বছরের সব সময় হালাল খাদ্য গ্রহণ করেছেন। কোনো কারণে মহররমে তা বর্জন করেননি। আল্লাহ বলেছেন, ‘মুমিনগণ, আল্লাহ যেসব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না এবং সীমা লঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৮৭)।

৩. বিয়েশাদিতে কঠোরতা

অনেকে মনে করেন, এ মাসে বিয়ে করলে তা শুদ্ধ হবে না। কারণ, এতে ইমাম হোসাইন (রা.)-কে অপমান করা হয়। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর থেকে এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত নেই। শায়খ আলবানি (রহ.)-এর মতে, ‘বিয়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট মাস বা সময়ের কথা বলা হয়নি।’ (সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস: ১৯১৬-এর টীকা)

আরও পড়ুনইসলামে বিয়ে ও পরিবার গঠনের উদ্দেশ্য০৮ নভেম্বর ২০২৪৪. উদ্ভট নামাজের রেওয়াজ

আশুরার দিনে রোজা পালনের কথা হাদিসে এলেও ওই দিন দিনে বা রাতে কোনো বিশেষ নামাজের বিধানের কথা আসেনি। আশুরার দিন জোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে অথবা রাতে অনেক নামাজ কিংবা নির্দিষ্ট সুরা বহুবার পাঠ করাকে পুণ্যময় ভাবা সঠিক নয়। সরলপ্রাণ মুসলমানদের মন জয় করতে অনেক ওয়ায়েজ কথার অবতারণা করে থাকেন; ইসলামে যার ভিত্তি নেই। (মাওজুআত লি ইবনিল জাওজি: ২/৪৫-৪৬; লাআলি লিশ শায়খ জালালুদ্দিন সুয়ুতি: ২/৫৪; তানজিহ লি ইবনে আররাক: ২/৮৯; আল-ফাওয়াইদ লিশ শাওকানি: ১/৭৩)।

৫. ভিত্তিহীন কেচ্ছাপাঠ

অনেকেই এ–সময় ভিত্তিহীন কেচ্ছাপাঠ বা পুঁথির আসর বসান। যেখানে এ–ধরনের নানা বর্ণনা শোনা যায়, যা ইসলামের মূল বর্ণনার সঙ্গে মেলে না। যেমন: উড়িয়া যায় রে জোড়া কবুতর, ফাতেমা কেন্দে কয়—/আজ বুঝি কারবালার আগুন লেগেছে মোর কলিজায়।।মা ফাতেমার কান্দন শুনে আরশ থেকে আল্লাহ কয়—/যাও গো জিব্রিল বাতাস কর মা ফাতেমার কলিজায়,/পুত্রশোকে কলিজা জ্বলে বাতাসে কী ঠান্ডা হয়!

এগুলো সত্য নয়, কেননা, ফাতেমা (রা.) মৃত্যুবরণ করেন ১১ হিজরিতে, আর হুসাইন (রা.) শহিদ হন ৬১ হিজরিতে। দুজনের মাঝে প্রায় ৫০ বছরের ব্যবধান। তাহলে ফাতেমা (রা.) তাঁর সন্তানের জন্য কান্না করেছেন কী করে সঠিক হতে পারে? (আত-তবাকাতুল কুবরা, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত : ৮/২৩)।

অনেকে মনে করেন, আশুরা মানে কারবালা; এ কারণেই মহররমের ১০ তারিখের এত গুরুত্ব ও মর্যাদা। এটা সঠিক নয়। কেননা, আশুরার মর্যাদা ও ঐতিহ্য ইসলাম–পূর্ব যুগ থেকেই স্বীকৃত।

আরও পড়ুনআশুরা বিশেষ একটি দিন১৭ জুলাই ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ