খুলনা বিভাগে এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি ১১৭ ডেঙ্গু রোগী
Published: 3rd, July 2025 GMT
খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এক সপ্তাহে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১৭ জন। এখনো চিকিৎসাধীন আছেন ৫৭ জন। অনেক রোগীর শরীরে দেখা দিচ্ছে নতুন উপসর্গ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের বেশি। ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ জন।
প্রতি বছর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণের মৌসুম ধরা হলেও এ বছর জুন-জুলাই মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন রোগী।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী তানজিলা আক্তার বলেছেন, “জ্বর হওয়ার পর শরীর কাঁপতে থাকে, তারপর বমি শুরু হয়। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, এটা ডেঙ্গু জ্বর। আগে কখনো এমন হয়নি।”
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিন দিন আগে বাগেরহাটের শরণখোলা থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছেন সোলাইমান মিয়া। তার বোন বলেন, “বড় ভাই ক্ষেত-খামারে কাজ করেন। সেখানে মশার কামড়ে ডেঙ্গু হতে পারে। প্রথমে তাকে শরণখোলা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। জ্বর না কমায় পরীক্ষা করা হয়। এতে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে খুলনায় নিয়ে আসি।”
আরেক রোগীর স্বজন রফিকুল ইসলাম বলেন, “হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। আলাদা ব্যবস্থা না থাকলে সবার জন্যই রিস্ক।”
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এবার ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে জ্বরের সঙ্গে ঝাঁকুনি, বমি ও অতিরিক্ত দুর্বলতার উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি বরগুনাতে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ জেলায় সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি থেকে ভয়াবহভাবে ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। একইভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের সাত উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ বৃষ্টির পানি ড্রাম, ডেকচি, ট্যাংক বা অন্যান্য পাত্রে সংরক্ষণ করেন। এসব জায়গা সহজেই এডিস মশার প্রজননস্থলে পরিণত হচ্ছে। ফলে, একই রকম ঝুঁকিতে আছেন এসব উপজেলার মানুষ।
খুলনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কা থাকলেও সিটি করপোরেশনের কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। আগের তুলনায় মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার করার প্রয়োজন হলেও তারা তা আরো কমিয়ে ফেলেছেন। হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতিও সন্তোষজনক নয়।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড.
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মজিবুর রহমান বলেছেন, প্রতি জেলায় মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার করতে এবং হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
টনসিলের উপসর্গ ও অস্ত্রোপচার
আমাদের দেশে অনেকেই টনসিলের দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণে ভুগে থাকেন। টনসিলের প্রদাহকে ‘টনসিলাইটিস’ বলা হয়। সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কারণে টনসিলের প্রদাহ হয়। টনসিলের সংক্রমণে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। বিশেষত স্কুলগামী শিশুরা এর বড় ভুক্তভোগী। এ জন্য প্রায়ই শিশুদের স্কুল কামাই হয়।
উপসর্গ
টনসিলে প্রদাহের প্রধান উপসর্গ হলো গলায় ব্যথা। কেউ কেউ বছরে অনেকবার টনসিলের প্রদাহে আক্রান্ত হন। অনেকেই বছরের পর বছর টনসিলের প্রদাহে ভুগে থাকেন। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে টনসিল ও গলার লসিকাগ্রন্থি বড় হয়ে যায়, অনেক শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের ফলে টনসিল এত বড় হয়ে যায় যে শ্বাসপ্রশ্বাসে ও খেতে অসুবিধা হয়। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের প্রদাহে রিউমেটিক ফিভার এবং হার্ট ও কিডনিতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। সর্বোপরি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের প্রদাহে রিউমেটিক ফিভার এবং হার্ট ও কিডনিতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।কখন অস্ত্রোপচার করাবেন
টনসিলের তীব্র প্রদাহ ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের প্রদাহে যাঁদের বছরে চার–পাঁচবারের বেশি সংক্রমণ হয় বা বছরের পর বছর ভুগে থাকেন, তাঁদের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। টনসিল বড় হয়ে শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা, রাতে ঘুমের ব্যাঘাত, টনসিলে ফোড়া, হঠাৎ একদিকের টনসিল অনেক বড় হলে যদি ক্যানসার সন্দেহ হয়, টনসিলে টিবি বা অন্যান্য কারণে টনসিল অস্ত্রোপচার করাটা দরকার।
অস্ত্রোপচারের যত পদ্ধতি
টনসিল অপারেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। যেমন ডিসেকশন মেথড, ইলেকট্রোকোটারি, লেজার, কোবলেশন, আলট্রাসনিক ইত্যাদি। ডিসেকশন মেথড বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। এ পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের সময় কিছু রক্তপাত হয় এবং রক্তনালি সেলাই করে দিতে হয়। লেজার, কোবলেশন ও আলট্রাসনিক উপায়ে টনসিলের অস্ত্রোপচার অনেক উন্নতমানের কিন্তু ব্যয়বহুল। এতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ শল্যবিদ (সার্জন) প্রয়োজন।
কোবলেশন টনসিল অস্ত্রোপচারের সুবিধা
এই অস্ত্রোপচার সেলাইবিহীন ও রক্তপাতহীন। ব্যথা তুলনামূলক কম। নিরাপদ ও আধুনিক পদ্ধতি। অত্যন্ত কম সময় লাগে। অস্ত্রোপচারের পরই রোগী খেতে পারেন। সকালে অস্ত্রোপচার করা হলে সন্ধ্যার মধ্যে রোগী বাসায় ফিরতে পারবেন। শুধু টনসিলেরই অস্ত্রোপচার করতে হয়। এ ক্ষেত্রে টনসিলের আশপাশের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। দ্রুত আরোগ্য লাভ এর একটি বড় সুবিধা। রোগী দ্রুতই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। বর্তমানে বাংলাদেশে দক্ষ শল্যবিদেরা এ পদ্ধতিতে টনসিল অস্ত্রোপচার করতে সক্ষম।
ডা. এম আলমগীর চৌধুরী, অধ্যাপক, ইএনটি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা