বিভাগীয় শহরেও হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চের বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে: আলী রীয়াজ
Published: 3rd, July 2025 GMT
হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে এক বা একাধিক বেঞ্চ করার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বর্তমান বিধান সংশোধনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। নতুন বিধানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির অপরাধীকে ক্ষমা করার সুযোগ থাকবে।’
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের নবম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গত ১৬ বছর বা তার আগে থেকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি ব্যাপকভাবে অপব্যবহার হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল অনুধাবন করেছে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার যে বিষয়টি আছে, তা সংশোধন করা প্রয়োজন। সে বিষয়ে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন থেকে কিছু সুপারিশ ছিল। তিনি বলেন, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও সব নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে ক্ষমার বিষয় সংবিধানে যুক্ত করার সুপারিশে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি এই বিধি (সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ) অনুসরণ করে ক্ষমা প্রয়োগ করতে পারবেন বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য পাঠানোর আগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মতামত নিতে হবে। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে নতুন আইন যুক্ত হলে বিগত সময়ে রাজনৈতিকভাবে এই আইনের যে অপব্যবহার হয়েছে তা বন্ধ হবে।
বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের জন্য ঐকমত্য হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকবে। তবে রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগে প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে এক বা একাধিক বেঞ্চ থাকবে। অর্থাৎ হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে থাকবে—এই বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।
আগামী সপ্তাহে নতুন নতুন আরও অনেক বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এ ছাড়া জরুরি অবস্থা নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। কিন্তু এই বিষয়টি এনসিসির (জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল) সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এখন যেহেতু এনসিসি আলোচনার টেবিলে নেই, তাই জরুরি অবস্থার বিষয়টি নতুন করে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে তোলা হবে।
আজকের আলোচনায় বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘তিনটি বিষয়ের মধ্য দুটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে অন্যান্য বিষয়ে আমরা অগ্রগতিতে পৌঁছাতে পারব।’
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফররাজ হোসেন, বিচারপতি মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো সাংবাদিকতা করলে ছাপা পত্রিকারও সম্ভাবনা আছে
পাঠকের জন্য ভালো কিছু করতে পারলে, ভালো মানের সাংবাদিকতা উপহার দিলে ছাপা পত্রিকাও সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। অনেকে বলেন, ছাপা পত্রিকার দিন শেষ। আমি মনে করি, মানসম্পন্ন কনটেন্টই যে কোনো মাধ্যমের টিকে থাকার মূল চাবিকাঠি।
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান মঙ্গলবার তাঁকে দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে টাইমস মিডিয়া ভবনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সাহসী সাংবাদিকতা, তরুণ পাঠকদের যুক্ত করা এবং পরে নানামুখী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগের জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা পত্রিকা হিসেবে ‘ইনমা গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ পায় প্রথম আলো। এটি গণমাধ্যমের জন্য সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তা উদযাপন করতে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) এ সংবর্ধনার আয়োজন করে। নোয়াব সদস্যরা প্রথম আলো সম্পাদককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নোয়াবের সভাপতি এ. কে. আজাদ, সহসভাপতি এ এস এম শহীদুল্লাহ খান বাদল, যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের পরিচালক শামীম ইসলাম, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, কাউন্টার পার্ট সম্পাদক জাফর সোবহান এবং ডেইলি ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ড-এর প্রকাশক মাসরুর রিয়াজ।
অনুষ্ঠানে মতিউর রহমানের সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে আলোকপাত করেন এ. কে. আজাদ। তিনি বলেন, মতিউর রহমান গণতন্ত্রকে সুসংহত করা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আপসহীন সম্পাদকীয় নীতি অনুসরণ করছেন।
এ. কে. আজাদ বলেন, এসিড সহিংসতার বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরিতে নিরলস লড়াইয়ের জন্য তিনি র্যা মন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান। সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলনেও ভূমিকা রেখেছেন মতিউর রহমান। তিনি সাহস, সততা ও পেশাদারিত্বের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা দেশের সংবাদপত্র শিল্পের জন্য গর্বের।
সংবর্ধিত অতিথি মতিউর রহমান বলেন, সাংবাদিকতা জীবনের ৫০ বছর পার করে ফেলেছি। যা কিছু করেছি ভালো ভেবে, ভালোর জন্য করেছি। ভুলও আছে অনেক। নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। সে সময়ে এমন একটা পুরস্কার পাওয়া সংবাদপত্রের শক্তিকেই তুলে ধরে।
মতিউর রহমান বলেন, গত জুলাই-আগস্টে অনলাইনে প্রথম আলোর পাঠক হয়েছিল ৩১ কোটি। পত্রিকার প্রচার সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়। এটি প্রমাণ করে, প্রিন্ট পত্রিকার চ্যালেঞ্জের যুগেও ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করতে পারলে পত্রিকার সার্কুলেশন বাড়ানো যায়।
নোয়াবের সহসভাপতি এ এস এম শহীদুল্লাহ খান বাদল বলেন, মতিউর রহমান রাজনীতি করেছেন, সমাজ বদলের চেষ্টা করেছেন, লিখেছেন। তিনি আসলে আমাদের মাথার ওপর বটগাছের মতো। নিজের পথচলাতেই আমাদের জন্য দিশা তৈরি করেছেন তিনি।
যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের পরিচালক শামীম ইসলাম বলেন, মতিউর রহমান যা করে দেখিয়েছেন, তা এককথায় অসাধারণ ও অনুকরণীয়। সাহস, দূরদৃষ্টি ও দায়িত্ববোধ নিয়ে তিনি শুধু প্রথম আলো নয়, পুরো সাংবাদিকতাকেই এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শামসুল হক জাহিদ, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, জাফর সোহবান ও শাহেদ মুহাম্মদ আলী।