জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে গণমাধ্যম ও গণসার্বভৌমত্বের সম্পর্ক বিচার বাংলাদেশের আগামী রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথম আলোয় কামাল আহমেদের ‘জুলাই সনদে কী থাকছে, কী থাকা উচিত’ (২৬ জুন ২০২৫) লেখাটির সূত্রে দুই কিস্তিতে প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা করব।

একটি সহজ সূত্র ধরে সে আলোচনা শুরু করতে পারি। সেটা হচ্ছে: জনগণের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা হরণ করার ক্ষমতা বা অধিকার রাষ্ট্রের থাকা উচিত কি না? জনগণ সেই অধিকার বা ক্ষমতা রাষ্ট্রকে দিতে পারে কি না বা দেওয়া উচিত কি না—এই তর্ক পুরোনো। টমাস হবসের লেভিয়াথান (১৬৫১) প্রকাশের সময় থেকেই নানাভাবে চলে আসছে।

গণসার্বভৌমত্ব বা ‘পপুলার সভরেন্টি’র দাবি হচ্ছে,  জনগণই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মূল উৎস, রাষ্ট্র নয়। বিপরীতে, টমাস হবসের লেভিয়াথান গ্রন্থে সার্বভৌমত্ব (সভারেন্টি) একটি নিরঙ্কুশ, একক ও অপরিহার্য ক্ষমতা, যা হবস জনগণের চুক্তির মাধ্যমে একটি সর্বময় কর্তৃত্বের (সার্বভৌম) হাতে তুলে দেওয়ার যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করেন।

গণসার্বভৌমত্বের ধারণার দৃষ্টিকোণ থেকে লেভিয়াথান-এর সার্বভৌমত্ব একটি গণবিরোধী, গণহীন এবং জনগণের ক্ষমতাকে অক্ষম করে ফেলার পদ্ধতি।

আরও পড়ুনজুলাই সনদে কী থাকছে, কী থাকা উচিত২৬ জুন ২০২৫২.

শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট ‘সিকিউরিটি স্টেট’ সন্ত্রাসবিরোধী অনন্ত যুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার হয়ে ওঠার পেছনে সার্বভৌম রাষ্ট্রের অনুমান বা ধারণা কাজ করে। বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান রাষ্ট্রের এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে গণসার্বভৌমত্বের প্রশ্ন বা তর্ক সামনে নিয়ে এসেছে।

শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত হয়ে গিয়েছে। এটাই গণসার্বভৌমত্ব। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে ও অংশগ্রহণ করেছে, তাদের অভিপ্রায়ের সারকথাও গণসার্বভৌমত্ব কায়েম এবং গণসার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনগণের দ্বারা নতুন বাংলাদেশ গঠন।

গণমাধ্যমের তরফে কথাটা আমরা তুলব কীভাবে? সেটা পরিষ্কার: তথাকথিত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের নামে গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার কোনো আইন আমরা মেনে নিতে পারি না, অথচ কলোনিয়াল (ঔপনিবেশিক) আমল থেকেই নানান গণবিরোধী আইন বলবৎ আছে। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো নতুন আইনও জারি হয়েছে।

চিন্তা ও বিবেককে দমন করে এমন আইনের সংখ্যাও প্রচুর: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ (বর্তমানে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫); তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, ২০০৬; স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্ট, ১৯৭৪; ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (অনুপ্রবেশ) আইন, ১৯৭২; ধর্মীয় অবমাননাসংক্রান্ত আইন (দণ্ডবিধি, ১৮৬০); মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইন, ১৯৭৩; অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩; বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৪ ইত্যাদি। বাক্‌ ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করার বিস্তর রাষ্ট্রীয় আইন আমাদের কণ্ঠ রোধ করে রেখেছে।

৩.

রাষ্ট্রকে সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন গণ্য করা হয় বলে এ ধরনের গণসার্বভৌমত্ববিরোধী আইনকে বৈধ ও আইনসংগত গণ্য করা হয়। এটা ভুল এবং বিতর্কিত। ক্ষমতার বিচার ও রাষ্ট্রচিন্তার পর্যালোচনার ভয়াবহ অভাবের কারণে আমরা এই ভুল মাথায় বয়ে বেড়াই।

আমরা  প্রতিবাদ করি বটে, কিন্তু রাষ্ট্রকে যদি আমরা সার্বভৌম গণ্য করি, তাহলে রাষ্ট্রীয় বিধি মোতাবেক আইন প্রণয়ণের অধিকার, এমনকি চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা হরণ করার অধিকারও রাষ্ট্রের আছে। এই কাজটা রাষ্ট্র করে ‘যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে’ নামক আইনি ধারণা দিয়ে।

বাংলাদেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে গণসার্বভৌমত্বের বিরোধ নিষ্পত্তির জায়গাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জায়গা। এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য এই গোড়ার বিতর্কটি তোলা এবং গণসার্বভৌমত্বের পক্ষে একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ চিন্তার ধারা গড়ে তোলা।

৪.

গণসার্বভৌমত্বের দিক থেকে জনগণের সামষ্টিক রাজনৈতিক সত্তাকে সক্রিয় ও সজীব এবং জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায় নির্ণয়ের প্রক্রিয়াকে প্রাণবন্ত রাখার ওপর রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক বিকাশ নির্ভর করে। সেই ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অর্থাৎ বাক্‌ ও ব্যক্তিস্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই। তাই গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার অধিকার জনগণ কখনো একচেটিয়া রাষ্ট্রের ওপর ন্যস্ত করতে পারে না।

পুরোনো ওয়েস্টফিলীয় রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত প্রাচীন ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। তেমনি টমাস হবসের চিন্তাজাত ‘সিকিউরিটি স্টেট’-এর ধারণা থেকেও নিষ্ক্রান্ত হওয়া দরকার। চিন্তা বা বিবেকের প্রকাশ রুদ্ধ করা কিংবা বাক্‌ ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করার অধিকার আমরা রাষ্ট্রের ওপর ন্যস্ত করতে পারি না।

তাহলে গণমাধ্যমের জবাবদিহির ক্ষেত্র কী? জনগণ। কিন্তু জনগণ এ ক্ষেত্রে কোনো অনৈতিহাসিক বিমূর্ত বর্গ বা ক্যাটাগরি না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থাবিরোধী জনগণই ‘জনগণ’। ‘কংক্রিট’ সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পরিগঠিত।

বিমূর্ত ও অরাজনৈতিক অর্থে ‘জনগণ’ কথাটা আমরা হামেশাই ব্যবহার করি। জনগণ কোনো বিমূর্ত সত্তা নয়, বরং একটি সক্রিয় রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী, যারা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নিজেদের গঠনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। আমার গণ-অভ্যুত্থান ও গঠন গ্রন্থে এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছি।

৫.

সুনির্দিষ্ট বাস্তব রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কংক্রিট অর্থে জনগণ পরিগঠিত হয় বলে রাজনীতি ও বাস্তব লড়াই-সংগ্রামবহির্ভূত বিমূর্ত ‘জনগণ’-এর ধারণা পরিহার করা আমাদের জরুরি। কারণ, বিমূর্ত জনগণের ধারণা দ্বারা ফ্যাসিস্ট শক্তিকেই আবার পুনর্বাসিত করার দাবি ওঠে এবং বলা হয় আওয়ামী লীগও জনগণের অংশ।

আমরা তথাকথিত ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির কথাও শুনি। অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি আসলে ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিস্ট শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করার রাজনীতি। ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তি মার্কা রাজনীতি ফ্যাসিস্ট শক্তির আধিপত্য এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রকে আরও নিখুঁত করে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখতে হলে তথাকথিত ইনক্লুসিভ বা গালভরা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির ধারণা নাকচ করা জরুরি। সেদিক থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে গণমাধ্যমের জবাবদিহি একমাত্র ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থাবিরোধী জনগণের কাছেই নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিকভাবে সচেতন জনগণই গণমাধ্যমের মিত্র। সেই সচেতনতা তৈরির দায়ও গণমাধ্যমের।

৬.

কামাল আহমেদ ‘জুলাই সনদে কী থাকছে, কী থাকা উচিত’ (২৬ জুন ২০২৫) শিরোনামের লেখাটিতে গণমাধ্যমের তরফে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হাজির করেছেন। তিনি ঠিক বলেছেন যে ‘সংসদ, বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও স্বৈরতন্ত্রের (?) সহায়ক হাতিয়ার করে ফেলা হয়েছিল কিংবা তাদের অনেকে উৎসাহী সহযোগী হয়ে উঠেছিল’।

তবে মতবাদ কিংবা ব্যবস্থা হিসেবে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ এক কথা নয়, তেমনি  একনায়কতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র আর ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থাও এক নয়। ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিভাষা। আমরা যেন এই ভাষা এড়িয়ে না যাই। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিভাষা যেন আবার অনর্থক ব্যবহার না করি। দুটিই খারাপ কাজ।

গুরুত্বপূর্ণ পরিভাষা আমরা এড়াতে চাই কেন? কেন আমরা এখনো ‘ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা’কে স্বৈরতন্ত্র বলি? জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সেক্যুলার এবং ধর্মবাদীসহ সব কিসিমের ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই ছিল; শুধু আওয়ামী লীগ ও সেক্যুলার বাঙালি জাতিবাদ সৃষ্ট ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরোধী ছিল না।

সেক্যুলার ফ্যাসিবাদ ছাড়াও ধর্ম বা ধর্মীয় পরিচয়ের ঝান্ডা নিয়ে সমাজে ধর্মবাদী ফ্যাসিবাদ এবং ফ্যাসিস্ট শক্তি সমাজে সক্রিয়। তাই পরিভাষা এড়িয়ে যাওয়া বিপজ্জনক।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ ও যোদ্ধা নিয়ে এলোমেলো কিছু প্রশ্ন২৭ জুন ২০২৫৭.

তথাকথিত পাশ্চাত্য ‘লিবারেলিজম’ এবং নির্বাচনবাদী রাজনীতি ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিস্ট শক্তি পরিগঠনের শক্তিশালী জমিন। হিটলার, মুসোলিনি ও শেখ হাসিনা নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তাহলে লিবারেল নির্বাচনী গণতন্ত্র এবং তার বিপরীতে ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা করতে সক্ষম গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য বিশাল।

গণসার্বভৌমত্ব মানে স্বাধীন ব্যক্তিদের সামষ্টিক অভিপ্রায়ের সার্বভৌম ক্ষমতা। এই ক্ষমতাই ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা করতে পারে। এ জন্যই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মর্ম ছিল গণসার্বভৌমত্ব কায়েম। অর্থাৎ রাষ্ট্রের নামে ব্যক্তির অধিকার ও ব্যক্তির মর্যাদা হরণ করার কোনো আইন প্রণয়নের এখতিয়ার রাষ্ট্রের থাকবে না। কারণ, রাষ্ট্র নয়, জনগণই সার্বভৌম—জনগণই সব রাজনৈতিক ও আইনি ক্ষমতার উৎস।

‘স্বৈরতন্ত্র’ ও ‘স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ এবং ‘ফ্যাসিবাদ’ ও ‘ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা’ যে আলাদা—এই জ্ঞান বা সচেতনতা আমাদের থাকতে হবে। আমরা ‘স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়িনি, বরং লড়েছি  ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে। উভয়ের বিপরীতে গণসার্বভৌমত্ব অর্থাৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের কর্তব্য। সেটা পরিষ্কারভাবে জনগণের কাছে হাজির করা দরকার। জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলা এই মুহূর্তের সবচেয়ে জরুরি কাজ।

৮.

বাঙালি জাতিবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ধর্মবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তিকেও আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে রক্ষা যেমন রাজনৈতিক কর্তব্য, তেমনি ধর্মকেও ফ্যাসিস্ট শক্তির কবল থেকে উদ্ধার করাও একই রাজনৈতিক কর্তব্য।

নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, চিন্তা ও নীতি-নৈতিকতা বিকাশের মধ্য দিয়েই আমাদের শক্তিশালী রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে গঠিত হওয়ার শিক্ষা পেতে হবে। জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে আগামী দিনে লড়াই আরও তীব্র হবে। তাকে মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি নিতে হলে প্রথম কাজ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিভাষা পরিহার না করা।

সেক্যুলার জাতিবাদ ও জাতিবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তির পশ্চাদপসরণের পর ধর্মবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই অস্বাভাবিক কিছু না, সেটা অনিবার্য। সেই ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিশেষত চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা কায়েম এবং নিশ্চিত করা সব ধরনের ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাস্ত করার গুরুত্বপূর্ণ গণহাতিয়ার।

ফরহাদ মজহার  কবি, লেখক ও চিন্তক

*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব রতন ত র র স ব ধ নত জ ল ই সনদ ক র জন ত র জন ত ক র ষ ট রক ব যবস থ জনগণ র ত কর র স ত কর পর ভ ষ আম দ র ক ষমত র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয়নি: নাহিদ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, শুধু ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য, এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয়নি, গণ-অভ্যুখান করেনি।

আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটায় গাইবান্ধা শহরের পৌর শহীদ মিনার চত্বরে জুলাই গণ-অভ্যুখানের বর্ষপূতি উপলক্ষে আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে আমরা চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, লুটপাট, দখলদারত্বের আর কোনো সুযোগ দেব না। ইনশা আল্লাহ, আমরা–আপনারা একসঙ্গে যে দেশ গড়ার ডাক দিয়েছি, সেই দেশ গড়ে আমরা আবার ঘরে ফিরব।’ তিনি বলেন, ‘জুলাই গণহত্যাসহ গত ১৬ বছরে যত অপকর্ম হয়েছে, খুনি হাসিনা ও এই আওয়ামী লীগ, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ, তাদের বিচার অবশ্যই এই বাংলার মাটিতেই হতে হবে। তাদের বিচার অবশ্যই আমরা নিশ্চিত করব এবং নতুন বাংলাদেশের জন্য যে সংস্কার, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে যেতে হবে।’

গাইবান্ধার অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, কেন্দ্রীয় সদস্য ফিহাদুর রহমান প্রমুখ।

এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আজকের এই দিনে জুলাই গণ-অভ্যুখানের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সারা বাংলাদেশের ছাত্র–জনতা একটি যৌক্তিক আন্দোলনে নেমে এসেছিল। সেই আন্দোলনে যখন খুনি হাসিনা সরকার পুলিশ এবং ছাত্রলীগ দিয়ে দমন–নিপীড়ন চালায়; ছাত্র, সাধারণ জনগণের ওপর নির্বিচার গুলি চালায়, তখন ছাত্র–শ্রমিক–সাধারণ জনগণ এক দফার দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছিল। আমরা বলতে চাই, এই গণ-অভ্যুখানে হাজারো মানুষ শহীদ হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র–জনতা আহত হয়েছে। একটা নতুন বাংলাদেশের জন্য। এই বাংলাদেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না, গণতন্ত্র থাকবে। সেই বাংলাদেশে কথা বলতে গেলে পুলিশ আপনার ওপর গুলি চালাবে না। আপনি কথা বলতে চাইলে, প্রতিবাদ করতে চাইলে প্রতিবাদ করবেন। জুলাই গণ-অভ্যুখান সেই প্রতিবাদ শিখিয়েছে আমাদের। আমরা যেন প্রতিবাদ থেকে সরে না আসি।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের যে অধিকার, এলাকার সমস্যা, সেগুলো আপনারা নির্ভয়ে বলবেন। আমাদের ভয় কিন্তু ২০২৪ সালে ভেঙে গেছে। নতুন করে কোনো ভয়ের সংস্কৃতি এই বাংলাদেশে হতে দেব না। শহীদেরা রক্ত দিয়েছেন, প্রয়োজনে আমরা আবারও নিজের রক্ত দেব। জুলাই গণ-অভ্যুখানের পথেই এই বাংলাদেশকে চলতে হবে।’

জুলাই গণ-অভ্যুখানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এনসিপি ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু করেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘নির্বাচন হলেই তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন’
  • জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হবে
  • জুলাই বিপ্লবে ঘরে থাকা ব্যক্তিরা কখনোই জনগণের আনন্দের ভাষা বুঝবে না: বাঁধন
  • জুলাই বিপ্লবে ঘরে থাকা ব্যক্তিরা কখনোই জনগণের ভাষা বুঝবে না: বাঁধন
  • জুলাই পদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে রংপুর-কুড়িগ্রামের পথে প্রান্তরে এন
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ওয়েবসাইটে টার্গেট হামলা
  • ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
  • একটি পক্ষ তৈরি হচ্ছে, যাতে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে না পারে: মির্জা আব্বাস
  • এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয়নি: নাহিদ