ডিএইয়ের সংযুক্তি আদেশ বাতিল, মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণে গতি ফেরার আশা
Published: 8th, July 2025 GMT
সারাদেশে আধুনিক কৃষি ও ফসল বিস্তারের দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই)। সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সংস্থাটির প্রায় ২৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। দুর্গম অনেক এলাকায় ডিএইয়ের জনবল সংকট রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রামে বদলি করা হলেও তারা সংযুক্তি নিয়ে শহরে অফিস করেন। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষক সঠিক সেবা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি সেবা কার্যক্রমকে গতিশীল করতে দেশের বিভিন্ন শহরে সংযুক্ত থাকা বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারসহ অন্যান্য কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে ডিএই। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এ বিষয়ে সম্প্রতি ডিএইর মহাপরিচালক মো.
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছাকাছি থেকে কার্যকর সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এতে করে কৃষি উৎপাদন ও সম্প্রসারণে গতি আসবে বলেও মনে করছেন তারা।
ডিএইয়ের ৭ জুলাই জারি করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, বিভাগীয় ও জেলা শহরের বিভিন্ন দপ্তর যেমন—অতিরিক্ত পরিচালক, উপপরিচালক, অধ্যক্ষ, হর্টিকালচার সেন্টার, সংগনিরোধ কেন্দ্র এবং মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসে অনেক কর্মকর্তা -কর্মচারী অনুমোদিত জনবলের অতিরিক্ত হিসেবে সংযুক্তিতে কর্মরত রয়েছেন। এর ফলে মাঠ পর্যায়ের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি অফিসগুলোতে জনবল সংকট তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সংযুক্তি আদেশ বাতিল করে সংশ্লিষ্টদের নিজ নিজ মূল কর্মস্থলে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১০ম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি সংযুক্তিতে কর্মরত থাকেন, তাহলে তাদের দ্রুত নিজ কর্মস্থলে ফেরত পাঠিয়ে অধিদপ্তরকে অবহিত করতে হবে।
এছাড়া যারা অধীনস্থ কর্মকর্তার প্রশাসনিক ক্ষমতার আওতার বাইরে, তাদের তালিকা প্রস্তাব আকারে মহাপরিচালকের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে উন্নয়ন শাখায় দাপ্তরিক প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে অতিরিক্ত বা উপপরিচালকের কার্যালয়ে সর্বোচ্চ ২-৩ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে সংযুক্ত রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, এ ধরনের সংযুক্তি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম ব্যাহত করছে। তাই মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমকে বেগবান করতে এবং কৃষকের দোরগোড়ায় কৃষিসেবা পৌঁছে দিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডিএইয়ের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, অনেক এলাকায় জনবল কম। অথচ শহরে এলাকায় জনবল বেশি। এতে কিছু এলাকায় কর্মকর্তাদের ওপর কাজের অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা তাদের কাজের মান কমিয়ে দিতে পারে। এই সংকট নিরসনে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ গ্রামীণ জনপদে সেবার মান উন্নত হবে এবং জনগণের ভোগান্তি কমবে। কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আগের কর্মস্থলে যোগ না দেন- তাহলে তাদের সংযুক্তি বাতিল আদেশ অমান্য করা এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ঠ পর য য় কর মকর ত এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
গুলি ছুড়ে প্রহরীদের ভয় দেখিয়ে বনের গাছ কেটে নিল দুর্বৃত্তরা
হবিগঞ্জে বনে ঢুকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ও বনপ্রহরীদের ভয় দেখিয়ে ২০ থেকে ২৫টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে একদল দুর্বৃত্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত দেশের অন্যতম বনাঞ্চল রেমা–কালেঙ্গায় এ ঘটনাটি ঘটে।
বন বিভাগের হবিগঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জনবল কম। যে কারণে ৫০ থেকে ৬০ জনের বনদস্যু দল বনের ভেতরে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’
১ হাজার ৮০০ একর আয়তনের এই সংরক্ষিত বনের ভেতরে সেগুনগাছসহ নানা প্রজাতির গাছগাছালি রয়েছে। সম্প্রতি এ বনের গাছ কেটে নেওয়াসহ নানা অপরাধের ঘটনা ঘটছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বনের হিমানিয়া বাজারসংলগ্ন এলাকা দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে। তারা বনে ঢুকে প্রথমে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। গুলির আওয়াজ শুনে বনপ্রহরীরা এগিয়ে গেলে তাঁদের লক্ষ্য করেও গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় প্রহরীরা পাল্টা গুলি চালান। একপর্যায়ে বনদুস্যদের তাড়া খেয়ে বনপ্রহরীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা বনের ভেতর থেকে একে একে ২০ থেকে ২২টি সেগুনগাছ কেটে ট্রাক্টরে নিয়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে আজ শুক্রবার সকালে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
রেমা–কালেঙ্গা বন কর্মকর্তা (রেঞ্জার) আবদুল খালেক বলেন, প্রহরীদের লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়লে তাঁরা পিছু হটেন। কারণ, এ সময় মাত্র তিন প্রহরী দায়িত্বরত ছিলেন। এর বিপরীতে দুর্বৃত্তরা ছিল বেশ সংঘবদ্ধ। বন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বনদস্যুরা বেশি গাছ নিতে পারেনি। সেগুন ও আকাশমণি জাতের ২০ থেকে ২২টি গাছ নিয়ে গেছে। আমরা কিছু উদ্ধার করতে পেরেছি। দুর্বৃত্তরা আধুনিক করাত ব্যবহার করে। এই করাত দিয়ে তিন থেকে চার মিনিটে একটি কাছ কাটা যায়।’
হবিগঞ্জ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, এত বড় বন কমসংখ্যক জনবল দিয়ে সংরক্ষণ করা কঠিন। এ ছাড়া বনের কর্মকর্তা ও বনপ্রহরী সবাই এ বনে নতুন যোগদান করেছেন। যে কারণে তাঁরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এ ঘটনাটি ঘটে। তিনি বলেন, কী পরিমাণ গাছ কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা, তা নির্ণয় ও তদন্তকাজ চলছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।