২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবনে শুরু হতে যাচ্ছে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ সংস্কার ও আধুনিকায়ন কার্যক্রম। ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের সময় ভবনটির বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং প্রযুক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির পর ১ বছর প্রায় অচল থাকা ভবনটিকে আবারো সচল ও কার্যকর করতে নেমেছে সংসদ সচিবালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তর।

প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার বাজেট। কাজ শুরু হবে চলতি জুলাই মাসেই। সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৫। লক্ষ্য একটাই নির্বাচনের ঠিক আগে সংসদকে একটি কার্যকর ও প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম কাঠামোতে রূপ দেওয়া।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিন হাজারো বিক্ষুব্ধ জনতা প্রবেশ করেছিল জাতীয় সংসদ ভবনে। তারা ভাঙচুর করে স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী ও হুইপদের দপ্তর, সংসদীয় কমিটির অফিস, আইটি সেন্টার ও ভিআইপি কক্ষ। এসি, কম্পিউটার, ভোটিং সিস্টেম, টেলিফোন, এমনকি সরাসরি সম্প্রচারের প্রযুক্তি পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যায়।

আরো পড়ুন:

সাত মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি জাফর

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের একদল সংসদ সদস্যের সাক্ষাৎ

সংসদ সচিবালয়ের কিছু দপ্তর সীমিত মেরামতের মাধ্যমে চালু রাখা গেলেও মূল অধিবেশন কক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি অংশ এখনো সম্পূর্ণ অকার্যকর। বর্তমান অবস্থা দেখে অনেকেই বলছেন, ভবনটি যেন একটি প্রেতচ্ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে, অথচ এটি ছিল দেশের গণতন্ত্রের কেন্দ্রস্থল।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের  নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

কামরুল ইসলাম বলেন, “আমরা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সংস্কার শুরু করব। ৩-৪ মাস সময় লাগবে। ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার লক্ষ্য আছে, যেন নির্বাচনপূর্ব অধিবেশন বসানো যায়।”

তিনি জানান, সংস্কারের আওতায় রয়েছে—অভ্যন্তরীণ কাঠামোর মেরামত, আসবাবপত্র প্রতিস্থাপন, কার্পেট ও কাঠ নির্মাণ, সাউন্ড-প্রুফিং, ভোটিং ও সম্প্রচার প্রযুক্তির পুনঃস্থাপন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ।
সংসদ সচিব মো. মিজানুর রহমানের (এনডিসি) বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংসদ সচিবালয়ের এক যুগ্ম সচিব বলেন, “জাতীয় সংসদ ভবন শুধু একটি প্রশাসনিক অবকাঠামো নয়। এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরাধিকার, জবাবদিহি ও সাংবিধানিক স্বরূপের প্রতীক। গত ৫ আগস্টের ঘটনার পর ভবনের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এখন আমরা কেবল সংস্কার করছি না, এটি পুনরায় সম্মানজনক রাষ্ট্রীয় মর্যাদার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে চাই।”

তিনি বলেন, “প্রযুক্তিগতভাবে পুরো ভবন অকেজো হয়ে পড়েছে। আইটি নেটওয়ার্ক, ই-ভোটিং সফটওয়্যার, সাউন্ড ও ভিডিও সম্প্রচার—সবই নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। সংসদীয় কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা বজায় রাখতে এ আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি।”

গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাঠ ও আসবাবপত্র বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, “শপথ কক্ষ, অধিবেশন কক্ষ, সদস্য লাউঞ্জ সবই নতুন করে নির্মাণের আওতায় আসবে। এমনকি আসবাব, কার্পেট, শব্দ নিরোধক প্রযুক্তিও বদলাতে হবে। নিরাপত্তা ক্যামেরা, ফোন-ইন্টারকম সংযোগ, লাইভ সম্প্রচার প্রযুক্তি সবকিছুই নতুনভাবে বসানো হবে।”

বর্তমানে উচ্চকক্ষ (সিনেট বা দ্বিতীয় চেম্বার) যুক্ত করার আলোচনা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। এ নিয়ে স্থপতিরা জানান, এখনই উচ্চকক্ষের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে এমন পরিকল্পনা এলে যেন বর্তমান কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে লক্ষ্যে কিছু স্থাপত্যিক নমনীয়তা রাখা হচ্ছে।

সংসদ সচিবালয়ের অর্থ ও পরিকল্পনা বিভাগ জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে কিছু জরুরি মেরামতের জন্য বরাদ্দ থাকলেও বড় পরিসরের সংস্কার কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে আসন্ন ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের ওপর। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন ৩০০ কোটি টাকার বেশি।

বাজেটের আওতায় থাকছে কাঠামোগত মেরামত,আসবাবপত্র প্রতিস্থাপন, বিদ্যুৎ ও আইটি সংযোগ, নিরাপত্তা ও ব্রডকাস্টিং সিস্টেম উন্নয়ন, সাউন্ড ও আলো ব্যবস্থার আধুনিকায়ন।

সংসদ সচিবালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “সংসদ ভবনে এখনো ঢুকলে চোখে পড়ে ছেঁড়া পর্দা, ভাঙা চেয়ার, ঝুলে থাকা তার। এসব দেখে মন ভারাক্রান্ত হয়। অথচ এটি রাষ্ট্রের মুখ, দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন কেন্দ্র। এখানে কোনো সংকোচ, হীনমন্যতার সুযোগ নেই।”

তিনি বলেন, “এ সংস্কার শুধু ইট সুরকির ব্যাপার নয়, এটি গণতন্ত্রের এক ধরনের পুনর্জন্ম।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র মত দ ভবন আসব ব

এছাড়াও পড়ুন:

আউটডোর বিজ্ঞাপনের অডিয়েন্স মেজারমেন্ট আনল ব্রেইনকাউন্ট

দেশের আউটডোর বিজ্ঞাপন খাতে প্রথমবারের মতো অডিয়েন্স মেজারমেন্ট ও মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম নিয়ে এসেছে ব্রেইনকাউন্ট। এ প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগের মাধ্যমে বিলবোর্ড বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা নিয়মিতভাবে পরিমাপ করা যাবে, যা ব্র্যান্ড ও এজেন্সিগুলোকে দ্রুত ও তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। মার্কেটিং ও টেকনোলজিক্যাল পেশাজীবীদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আউটডোর বিজ্ঞাপনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির নতুন যুগের সূচনা করেছে।

বাংলাদেশে আউটডোর বিজ্ঞাপন খাতে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়। দেশজুড়ে ১২ হাজারের বেশি বিলবোর্ড ও ডিজিটাল স্ক্রিন থাকা সত্ত্বেও এত দিন বিজ্ঞাপনের ফলাফল নির্ভরযোগ্যভাবে পরিমাপের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা ছিল না। ফলে বিজ্ঞাপনদাতাদের অনুমান ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করেই সিদ্ধান্ত নিতে হতো।

দীর্ঘদিনের এ সমস্যার সমাধান হিসেবে ব্রেইনকাউন্ট নিয়ে এসেছে আধুনিক ডেটা বিশ্লেষণভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম। এখানে ডেটা সায়েন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি ডিভাইস ও অন্যান্য প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা জানতে পারবেন, কোন এলাকার কোন বিলবোর্ড কেমন ফলাফল দিচ্ছে।

শুধু তাই নয়, বিজ্ঞাপন প্রচারের সময়ই প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপনের কৌশলে পরিবর্তন আনার সুযোগও তৈরি হয়েছে। প্ল্যাটফর্মটির সাহায্যে বিজ্ঞাপনদাতারা তাঁদের বিনিয়োগ কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা যাচাই করতে পারবেন। পাশাপাশি প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপনের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণও সহজেই করতে পারবেন।

ব্রেইনকাউন্টের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ মার্কেটার তাওহীদুর রহমান তাপস বলেছেন, ‘বিশ্বের সবকিছু যখন তথ্যনির্ভর হয়ে উঠছে, তখন আমাদের দেশের আউটডোর বিজ্ঞাপন খাতটি চলছিল কোনো তথ্যের সহায়তা ছাড়াই। ব্রেইনকাউন্ট সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন এনেছে। বিলবোর্ড বা আউটডোর বিজ্ঞাপন অনেক দিন থেকেই ব্র্যান্ডগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, তবে এত দিন এর কার্যকারিতা প্রমাণের সুযোগ ছিল না।’

ব্রেইনকাউন্ট এই খাতে ডেটাকে যুক্ত করেছে। বিজ্ঞাপনদাতারা এখন তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।

মিডিয়া মালিকদের জন্যও ব্রেইনকাউন্ট নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। কোন এলাকায়, কোন বিলবোর্ড কতটা দৃশ্যমান, এখন তার সঠিক তথ্য পাবেন তাঁরা। ফলে নতুন লোকেশন নির্বাচন কিংবা ক্লায়েন্টের সঙ্গে আলোচনার সময় নির্ভরযোগ্য তথ্য ব্যবহার করা যাবে। ডেটাভিত্তিক এই প্রমাণ মিডিয়া মালিকদের সেবা ও মূল্য নির্ধারণে আরও স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করবে।

ব্রেইনকাউন্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সফল টেক উদ্যোক্তা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, বিশ্বব্যাপী অডিয়েন্স মেজারমেন্ট ব্র্যান্ডগুলোর পরিকল্পনা, ব্যয় ও ক্যাম্পেইনের ফলাফল মূল্যায়ন পদ্ধতিকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ডেটা সায়েন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল আর্কিটেকচার ব্যবহার করে বিশ্ববাজারগুলো আউটডোর বিজ্ঞাপনকে নতুনভাবে গড়ে তুলেছে, যার ফলে থ্রিডি বিলবোর্ড, ইন্টারঅ্যাকটিভ আউটডোর কমিউনিকেশন ও রিয়েল টাইম বিজ্ঞাপন ডেলিভারি সিস্টেমের মতো উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। এই উন্নত পদ্ধতিগুলো মাথায় রেখে আমরা ব্রেইনকাউন্ট তৈরি করেছি, যাতে বাংলাদেশেও এই সক্ষমতা আনা যায়, যা আউটডোর বিজ্ঞাপনের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।’

প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে অডিয়েন্স মেজারমেন্ট ও মনিটরিং কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ না থেকে আরও বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা করছে। নতুন নতুন সেবা নিয়ে আসার মাধ্যমে আউটডোর বিজ্ঞাপনের খাতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় ব্রেইনকাউন্ট।

অডিয়েন্স মেজারমেন্ট চালু হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের আউটডোর বিজ্ঞাপন খাত একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যেখানে প্রতিটি বিজ্ঞাপন পরিমাপযোগ্য, কৌশলগুলো আরও স্মার্ট এবং প্রতিটি ইমপ্রেশন গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

সম্পর্কিত নিবন্ধ