সংসদ ভবনে প্রযুক্তির ছায়ায় নয়া অধ্যায়
Published: 8th, July 2025 GMT
২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবনে শুরু হতে যাচ্ছে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ সংস্কার ও আধুনিকায়ন কার্যক্রম। ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের সময় ভবনটির বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং প্রযুক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির পর ১ বছর প্রায় অচল থাকা ভবনটিকে আবারো সচল ও কার্যকর করতে নেমেছে সংসদ সচিবালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তর।
প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার বাজেট। কাজ শুরু হবে চলতি জুলাই মাসেই। সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৫। লক্ষ্য একটাই নির্বাচনের ঠিক আগে সংসদকে একটি কার্যকর ও প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম কাঠামোতে রূপ দেওয়া।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিন হাজারো বিক্ষুব্ধ জনতা প্রবেশ করেছিল জাতীয় সংসদ ভবনে। তারা ভাঙচুর করে স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী ও হুইপদের দপ্তর, সংসদীয় কমিটির অফিস, আইটি সেন্টার ও ভিআইপি কক্ষ। এসি, কম্পিউটার, ভোটিং সিস্টেম, টেলিফোন, এমনকি সরাসরি সম্প্রচারের প্রযুক্তি পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
সাত মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি জাফর
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের একদল সংসদ সদস্যের সাক্ষাৎ
সংসদ সচিবালয়ের কিছু দপ্তর সীমিত মেরামতের মাধ্যমে চালু রাখা গেলেও মূল অধিবেশন কক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি অংশ এখনো সম্পূর্ণ অকার্যকর। বর্তমান অবস্থা দেখে অনেকেই বলছেন, ভবনটি যেন একটি প্রেতচ্ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে, অথচ এটি ছিল দেশের গণতন্ত্রের কেন্দ্রস্থল।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
তিনি জানান, সংস্কারের আওতায় রয়েছে—অভ্যন্তরীণ কাঠামোর মেরামত, আসবাবপত্র প্রতিস্থাপন, কার্পেট ও কাঠ নির্মাণ, সাউন্ড-প্রুফিং, ভোটিং ও সম্প্রচার প্রযুক্তির পুনঃস্থাপন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ।
সংসদ সচিব মো. মিজানুর রহমানের (এনডিসি) বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংসদ সচিবালয়ের এক যুগ্ম সচিব বলেন, “জাতীয় সংসদ ভবন শুধু একটি প্রশাসনিক অবকাঠামো নয়। এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরাধিকার, জবাবদিহি ও সাংবিধানিক স্বরূপের প্রতীক। গত ৫ আগস্টের ঘটনার পর ভবনের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এখন আমরা কেবল সংস্কার করছি না, এটি পুনরায় সম্মানজনক রাষ্ট্রীয় মর্যাদার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে চাই।”
তিনি বলেন, “প্রযুক্তিগতভাবে পুরো ভবন অকেজো হয়ে পড়েছে। আইটি নেটওয়ার্ক, ই-ভোটিং সফটওয়্যার, সাউন্ড ও ভিডিও সম্প্রচার—সবই নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। সংসদীয় কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা বজায় রাখতে এ আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি।”
গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাঠ ও আসবাবপত্র বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, “শপথ কক্ষ, অধিবেশন কক্ষ, সদস্য লাউঞ্জ সবই নতুন করে নির্মাণের আওতায় আসবে। এমনকি আসবাব, কার্পেট, শব্দ নিরোধক প্রযুক্তিও বদলাতে হবে। নিরাপত্তা ক্যামেরা, ফোন-ইন্টারকম সংযোগ, লাইভ সম্প্রচার প্রযুক্তি সবকিছুই নতুনভাবে বসানো হবে।”
বর্তমানে উচ্চকক্ষ (সিনেট বা দ্বিতীয় চেম্বার) যুক্ত করার আলোচনা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। এ নিয়ে স্থপতিরা জানান, এখনই উচ্চকক্ষের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে এমন পরিকল্পনা এলে যেন বর্তমান কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে লক্ষ্যে কিছু স্থাপত্যিক নমনীয়তা রাখা হচ্ছে।
সংসদ সচিবালয়ের অর্থ ও পরিকল্পনা বিভাগ জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে কিছু জরুরি মেরামতের জন্য বরাদ্দ থাকলেও বড় পরিসরের সংস্কার কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে আসন্ন ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের ওপর। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন ৩০০ কোটি টাকার বেশি।
বাজেটের আওতায় থাকছে কাঠামোগত মেরামত,আসবাবপত্র প্রতিস্থাপন, বিদ্যুৎ ও আইটি সংযোগ, নিরাপত্তা ও ব্রডকাস্টিং সিস্টেম উন্নয়ন, সাউন্ড ও আলো ব্যবস্থার আধুনিকায়ন।
সংসদ সচিবালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “সংসদ ভবনে এখনো ঢুকলে চোখে পড়ে ছেঁড়া পর্দা, ভাঙা চেয়ার, ঝুলে থাকা তার। এসব দেখে মন ভারাক্রান্ত হয়। অথচ এটি রাষ্ট্রের মুখ, দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন কেন্দ্র। এখানে কোনো সংকোচ, হীনমন্যতার সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “এ সংস্কার শুধু ইট সুরকির ব্যাপার নয়, এটি গণতন্ত্রের এক ধরনের পুনর্জন্ম।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র মত দ ভবন আসব ব
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি
ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’
২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।
মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।
অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’
জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখমাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।
আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’
রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’
রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।
জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’
২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ
তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী। স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।
কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।