নিরাপদ বিনিয়োগ বলতে দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয়পত্রই ছিল সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমেছে, রয়েছে বিনিয়োগ সীমা ও নানা জটিলতা। তবে সঞ্চয়পত্রে নানা বেড়াজাল থাকলেও সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড।

বিল ও বন্ডে সবার জন্য সীমাহীন এবং একক বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। সঞ্চয়পত্রের চেয়েও রিটার্ন বেশি পাওয়া যাচ্ছে এ খাতে, সেই সঙ্গে রয়েছে নিরাপদ বিনিয়োগ। ফলে বিল ও বন্ড আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রে সরকারকে তুলনামূলক বেশি সুদ দিতে হয়। যা বাজেটের ওপর চাপ বাড়ে। এর চেয়ে বাজারভিত্তিক হারে অর্থ সংগ্রহ করতে পারলে সরকারি দায় কমে।এছাড়া বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফও সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ ব্যবস্থাকে আরো বাজারমুখী করার পরামর্শ দিয়ে আসছে।

আরো পড়ুন:

সিটি ব্যাংক ও আইবিএ মিলে আনছে ‘এক্সিকিউটিভ লিডারশিপ ট্রেনিং গ্রোগ্রাম’

প্রভিশন সংরক্ষণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন নির্দেশনা 

অন্যদিকে, সঞ্চয়পত্রের টাকা অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় বা অলস খাতে চলে যায়। ট্রেজারি বন্ড ও বিলের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারি বেশি এবং তারল্যও থাকে। যা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য রক্ষা করবে। এসব কারণে সরকার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে বিপরীত দিকে বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করতে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তবে বিল ও বন্ডে মুনাফার হার আরো বাড়ালে এগুলো দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠত বলে মনে করছেন তারা।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, “সঞ্চয়পত্র দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয় হলেও, সঞ্চয়পত্রে সরকারকে তুলনামূলক বেশি সুদ দিতে হয়। অন্যদিকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের রিটার্ন বেশি হলে এগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।”

তার মতে, শেয়ারবাজারের মতো যারা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে চায়, আয় করতে চায় তাদের জন্য সঞ্চয়পত্রের চেয়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ভালো বিকল্প হতে পারে।

সঞ্চয়পত্রে সুদ কমেছে
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের পর থেকে ধাপে ধাপে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমিয়ে আনা হয়। বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৮১ থেকে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ, তিন মাস পর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১০ দশমিক ৬৫ থেকে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ পর্যন্ত, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ৯ দশমিক ৮৪ থেকে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ৯ দশমিক ৭৪ থেকে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। যা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে (সাড়ে ৭ লাখ টাকা) বিনিয়োগকারীদের জন্য। সাড়ে ৭ লাখ টাকার উপরে বিনিয়োগ করলে মুনাহার হার আর কম। গত জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ১১ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এদিকে, সরকার বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। শেয়ারবাজার থেকেও ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে।

ট্রেজারি বিল ও বন্ড কী?
ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ড হচ্ছে সরকারের ইস্যু করা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র। এগুলোর মাধ্যমে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহ করে। ট্রেজারি বিল সাধারণত ৯১ দিন, ১৮২ দিন ও ৩৬৪ দিনের হয়। ট্রেজারি বন্ড হয় ২, ৫, ১০, ১৫, ২০ বছর মেয়াদি। এই বন্ড ও বিল আগে মূলত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য ছিল।তবে বর্তমানে সাধারণ মানুষও অনলাইনে ট্রেজারি বন্ড ও বিল কিনতে পারেন।

সঞ্চয়পত্র বনাম ট্রেজারি বিল-বন্ডের মুনাফা:
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের সর্বনিম্ন সুদহার হবে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

গত ৭ জুলাই ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ।১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলে সুদহার দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশের বেশি। এছাড়া ২-২০ বছরের ট্রেজারি বন্ডে সুদহার ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ।

এর আগে গত ১৬ জুন ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার দাঁড়ায় ১২ দশমিক ১০ শতাংশ। ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলে সুদহার ছিল ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ।ওইদিন ট্রেজারি বন্ড ৫-২০ বছর সুদহার ছিল ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুবিধা
সঞ্চয়পত্রের মতো বিনিয়োগের নির্দিষ্ট সীমা নেই। চাইলে এককভাবে কয়েক কোটি টাকাও বিনিয়োগ করা যায়। সরকার নিজেই এগুলোর গ্যারান্টার। ফলে ডিফল্টের সুযোগ নেই। কর রেয়াতের সুবিধা, আবগারি শুল্ক থেকে অব্যাহতির সুযোগ রয়েছে।

ঢাকা/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বন ড ও ব ল ব ন য় গ কর ব ল ও বন ড ১২ দশম ক ১১ দশম ক ৯ দশম ক জনপ র য় র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্রেডিট কার্ড, সঞ্চয়পত্র কেনাসহ ১৩ সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে না

চলতি অর্থবছর থেকে বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। ১৩ ধরনের সেবা নিতে আপনাকে রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে না। সর্বশেষ বছরের আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখিয়ে এত দিন এসব সেবা নিতে হতো। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে কিছুটা স্বস্তি এল সাধারণ করদাতাদের।

এবার দেখা যাক, চলতি বছর থেকে কোন কোন সেবাকে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানো থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।

১. নানা প্রয়োজনে আপনি সঞ্চয়পত্র কেনেন। সংসারের বাড়তি খরচ জোগাতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকা বেশ কাজে লাগে। ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কিনতে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগবে না।

২. ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মেয়াদি আমানত খোলা ও বহাল রাখায় এই সুবিধা দেওয়া হয়। এর মানে, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেউ যদি এফডিআর করেন, তাহলেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে না ব্যাংক কর্মকর্তাকে।

৩. যেকোনো ধরনের ক্রেডিট কার্ড নেওয়া ও নবায়নের সময় এত দিন আপনাকে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র লাগত। চলতি অর্থবছর থেকে ক্রেডিট কার্ড নেওয়া বা নবায়নে এই বাধ্যবাধকতা নেই।

৪. সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ।

৫. সমবায় সমিতির নিবন্ধন নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে না।

৬. সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ারের নতুন লাইসেন্স গ্রহণের সময়।

৭. চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি ও সার্ভেয়ার হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণ।

৮. পাঁচ লাখ টাকার অধিক পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়।

৯. এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মচারীর কোনো অর্থপ্রাপ্তিতে।

১০. স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে।

১১. স্ট্যাম্প, কোর্ট ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নিবন্ধন ও তালিকাভুক্তিতে।

১২. ত্রিচক্র মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নের সময়।

১৩. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই–কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্রেডিট কার্ড, সঞ্চয়পত্র কেনাসহ ১৩ সেবায় রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখাতে হবে না