কুষ্টিয়ায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট, মাইক্রোবাসে আগুন
Published: 12th, July 2025 GMT
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চক দৌলতপুর এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা করে একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয়া, তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়েছে। ব্যবসায়ী সানজিদ অভিযোগ করেন, চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় একই এলাকার আকবর আলীর ছেলে আব্দুল জব্বার ও তার লোকজন হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন। যদিও আব্দুল জব্বার চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত ৯টার দিকে চক দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে আব্দুল জব্বার ও তার লোকজন সানজিদের কাছ থেকে টাকা দাবি করেন। সানজিদ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার উপর হামলা করে জব্বার ও তার লোকজন। এর কিছুক্ষণ পর জব্বার তার লোকজন নিয়ে সানজিদের বাড়িতে হামলা করে। সেখান আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে সানজিদের একটি মাইক্রোবাস পুড়ে যায়। তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দৌলতপুর থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে আগুন নেভাতে ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আসে। বর্তমানে ওই এলাকায় পুলিশ ও সেনা সদস্যরা টহলরত রয়েছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সানজিদ বলেন, ‘‘আমি ব্যবসা ও চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি নেতা আব্দুল জব্বার আমার নামে আওয়ামী লীগ ট্যাগ লাগিয়ে বিভিন্ন সময়ে চাঁদা দাবি করে আসছেন। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি আমাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত ৮টার কিছু পরে চক দৌলতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে রাস্তার মোড়ে আমার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে জব্বার মারধর করেন। পরে আমার ব্যবসায়িক পার্টনার ও আমার চাচাত ভাই এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করেন ও আমাদের তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। আমরা সেখান থেকে আত্মরক্ষার্থে মোটরসাইকেল ফেলে দৌড়ে পালিয়ে আসলে জব্বার তার লোকজন নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা করে নগদ টাকা, গহনাসহ মূল্যবান সম্পদ লুট করে এবং আমার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। আগুনে আমার ৪২ লাখ টাকা দামের এক্স নোহা মাইক্রোবাস পুড়ে যায়।’’
আরো পড়ুন:
পাথর মেরে হত্যা, আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে: জামায়াত
পাবনায় দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ১০ নেতাকর্মী বহিষ্কার
এমন ঘটনায় তিনি ও তার পরিবার হুমকির মুখে পড়েছেন বলে বলে জানান সানজিদ।
এ ব্যাপারে আব্দুল জব্বারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমার এক কাছের লোকের কাছে থেকে সানজিদ চাকরি দেয়ার নাম করে টাকা নিয়েছিলেন। সানজিদ চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়া বা টাকা ফেরত দিচ্ছেলেন না। এই কারণে তার কাছে টাকা দারি করা হচ্ছিল।’’ তবে আব্দুল জব্বার চাকরি প্রার্থীর নাম ও টাকার পরিমাণ বলতে পারেননি।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা জানান, টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একটি বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। একটি মাইক্রোবাস পুড়ে গেছে ও কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ আগ ন ত র ল কজন ব যবস য় দ লতপ র
এছাড়াও পড়ুন:
নিবিড়ের কৃতিত্বের পেছনে কঠোর পরিশ্রম, প্রতিদিন পড়ালেখা করেছেন ১০-১২ ঘণ্টা
১৩০০ নম্বরের মধ্যেই ১২৮৫! অবাক হওয়ার মতো এমন অনন্য ফলাফল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী নিবিড় কর্মকার। নগরীর নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এমন অনন্য ফলাফল করেছে নিবিড়।
এমন সেরা ফলাফলের পেছনে বেশি বেশি পাঠ্যপুস্তক পড়া, অধ্যাবসায়, প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা পড়ালেখার ব্যস্ত থাকা, শিক্ষকদের গাইডলাইন অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করা, মনোবল না হারানো - মূলত এসব বিষয় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করে নিবিড়। আগামীতে প্রকৌশলী হয়ে দেশের সেবায় কাজ করার আশা তার।
নিবিড় চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকার জীবন কর্মকার ও রিপা রায়ের ছেলে। তার বাবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আর মা গৃহিণী। ছেলের এমন সাফল্যে আনন্দিত বাবা-মা।
নিবিড় কর্মকার বলেন, ‘এমন ভালো ফলাফল করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি পাঠ্যবইয়ে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতাম। প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা পড়ালেখা করতাম। গাইড বইয়ের চেয়ে পাঠ্যবইকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। আমি মনে করি এই ফলাফলের পেছনে পাঠ্যবইয়ে বাড়তি সময় দেওয়াটা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে সবচেয়ে বেশি। শিক্ষকরা আমাকে খুব ভালোভাবে গাইড করেছেন। মাঝেমধ্যে পরিচিত অন্য স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গেও পড়ালেখার নানা বিষয় শেয়ার করতাম।’ তিনি বলেন, ‘এই অর্জনের পেছনে মা-বাবার ভূমিকা অনেক বেশি। উনারা আমার প্রতি অনেক বেশি যত্নবান ছিলেন। কখনও পড়ালেখা নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে সাহস দিতেন। নানা বিষয়েও সার্বক্ষণ নানা পরামর্শ দিতেন। মা-বাবার অনেক কষ্ট আর পরিশ্রমের ভালো প্রতিদান দিতে পেরে আমি আনন্দিত।’
নিবিড় বলেন, ‘এবার ভালো ফলাফল করে আগামীতে প্রকৌশলী বিষয়ে পড়ার প্রবল ইচ্ছা। বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করতে চাই।’
নিবিড়ের বাবা জীবন কর্মকার বলেন, ‘ছেলের এমন সেরা অর্জনে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। এমন ফলাফলের মাধ্যমে আমাদের জীবন ধন্য করেছে নিবিড়। সবসময় তার পাশে থাকার চেষ্টা করেছি আমি ও তার মা। এবারের ফলাফল আগামীতে আরও ভালো কিছু করতে তাকে উৎসাহ যোগাবে।’ নিবিড়ের মা রিপা রায় বলেন, ‘সামান্য নম্বরের জন্য সে কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায়নি। এতে ওর মতো আমাদেরও খুব মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু সেখানে চান্স না পেলেও নিবিড় যে মেধাবী এত ভালো ফলাফল করে তা প্রমাণ করেছে সে। তার এই ফলাফলে সে দিনের সব কষ্ট এখন নিমিষেই দূর হয়ে গেছে। নিবিড়কে নিয়ে আমরা গর্বিত। তার এমন সেরা ফলাফল নিঃসন্দেহে চট্টগ্রামবাসীর জন্যও গর্বের ও আনন্দের।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘নিবিড় অত্যন্ত ভদ্র, সুশৃঙ্খল ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থী। সব সময় নিয়মিত ক্লাস করেছে সে। কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকের পরামর্শ নিত। ভালো ফলাফল করার এক ধরনের নেশা কাজ করতো তার মাঝে। এসবের কারণে সে নজরকাড়া নম্বর পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।’
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, ‘১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৮৫ পাওয়া নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভালো ফলাফল। মেধাবী শিক্ষার্থীর পক্ষেই এমন ফলাফল করা সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘তবে এমন ফলাফলকে দেশসেরা বলা যাবে না। কারণ কাউকে দেশসেরা হিসেবে কেবল মন্ত্রণালয় বা বোর্ড কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করতে পারে। কারণ ঢাকা বা অন্য বোর্ডে আর কোনো শিক্ষার্থী যে এর চেয়ে বেশি নম্বর পায়নি সেটা আমরা নিশ্চিত করে বলবো কিভাবে? কারণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সবোর্চ্চ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা করতেও নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে কোনো শিক্ষার্থী দেশসেরা সেটা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমন বিষয় তুলে ধরতে আগ্রহী নয়।’
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবারের এসএসসি পরীক্ষার পাসের হার ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৯০ জন এবং ছাত্রী ৬ হাজার ৩৫৩ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২১৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ১৬৪টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা এবার এসএসসিতে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ হাজার ৭২৫ জন ছাত্রী ও ৬১ হাজার ৬৬৩ জন ছাত্র। এবার ছাত্র পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ছাত্রী পাসের হার ৭২ দশমিক ১৯ শতাংশ।