Prothomalo:
2025-06-16@23:07:14 GMT

অর্থনীতি ও জনজীবনে অশনিসংকেত

Published: 14th, January 2025 GMT

যেখানে দেশে গ্যাসের চাহিদা দিনে ৩৮০ কোটি ঘনফুট, সেখানে ২৫০ কোটি ঘনফুট দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারপরও অন্তর্বর্তী সরকার জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে, যদিও তার সফলতা নিয়ে সংশয় আছে।

মানুষ এখন দ্বিমুখী সংকটে আছে। একদিকে গ্যাসের সরবরাহ কম, অন্যদিকে নতুন শিল্পকারখানায় দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে। এটি বৈষম্যমূলক প্রস্তাব। পুরোনো শিল্পের সঙ্গে নতুন শিল্প প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। এতে বিনিয়োগে উৎসাহ কমে যাবে। ইতিমধ্যে সরকার যে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর বাড়িয়ে দিয়েছে, তা জনজীবনে প্রভাব ফেলবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম আগে থেকেই চড়া ছিল, ভ্যাট বাড়ানোর পর আরও অনেক পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাবে।

মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, কলাবাগান, উত্তরাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ নেই। দিনে গ্যাস না থাকায় অনেক স্থানে রান্নার চুলা জ্বালাতে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলেও গ্যাসের চাপ কম। সাধারণত ১০ থেকে ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চি) চাপে গ্যাস সরবরাহ করা হয় শিল্পকারখানায়। এবার গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় কারখানা গ্যাস পাচ্ছে ১ থেকে ২ পিএসআই চাপে। গত রোববার গাজীপুরে ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৪০ কোটি ঘনফুট। নারায়ণগঞ্জেও চাহিদামতো গ্যাস পায়নি তিতাস। ফলে রপ্তানিশিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত নারায়গঞ্জ ও গাজীপুরের কারখানাগুলোর উৎপাদনও কমে গেছে। কোথাও কোথাও রেশনিং করে কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে।

অদূর ভবিষ্যতে গ্যাস–সংকট কাটার সম্ভাবনা নেই বলে স্বীকার করেছেন জ্বালানি ও খনিজ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাইলেই চট করে গ্যাসের সংকট সমাধান করা যাবে না। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমার পাশাপাশি বাইরে থেকে আমদানির সক্ষমতাও সীমিত।’

অস্বীকার করার উপায় নেই যে আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই গ্যাস–সংকট বেড়েছে। তারা গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চেয়ে বিদেশ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানির ওপর জোর দিয়েছিল। এর পেছনে কমিশন বাণিজ্যও ছিল। কিন্তু উত্তরণের পথ তো বের করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রের সময় বাড়িয়ে উন্মুক্ত করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এই প্রেক্ষাপটে সরকার দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি ইতিবাচক হলেও সময়সাপেক্ষ।

সে ক্ষেত্রে সরকারকে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানের পাশাপাশি তরল গ্যাস আমদানির পরিমাণও বাড়াতে হবে। চালু গ্যাসক্ষেত্র থেকে আরও বেশি গ্যাস উত্তোলন করা যায় কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। ভোলার গ্যাস দেশের অন্যান্য স্থানে এলএনজির মাধ্যমে সরবরাহের কাজটিও জোরদার করা প্রয়োজন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জ্বালানি খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বর্তমান সরকার লোপাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে আমরা এ–ও আশা করি যে গ্যাস খাতের দুর্নীতির ছিদ্রগুলো বন্ধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এখনো বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের অনেক অবৈধ সংযোগ আছে, যা থেকে রাষ্ট্র কোনো অর্থ না পেলেও ফায়দা নিয়ে যায় দুর্নীতিবাজেরা।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে, গ্যাস–বিদ্যুতের সংকট জিইয়ে রেখে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যাবে না। রেশনিং পদ্ধতিতে কারখানা চালু রাখতে হলে মালিকের ব্যয় যেমন বাড়ে, তেমনি উৎপাদিত পণ্যের দামও বেশি পড়বে।

দেশবাসী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি বাস্তবমুখী নীতি–পরিকল্পনা এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন আশা করে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সুপেয় পানির সংকট, কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প

ঝালকাঠির নলছিটিতে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে ভয়াবহ পানি সংকট দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি ওঠে না গভীর নলকূপে। পানির চাহিদা মেটাতে জনস্বাস্থ্যের উদ্যোগে প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। কিন্তু ঠিকাদারের অনিয়ম এবং পৌরসভার গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতায় আজও সুফল বয়ে আনেনি প্রকল্পটি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গত ৩০ বছরের হিসাব অনুযায়ী, নলছিটি পৌর এলাকার ১৭টি গ্রামে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬৭৩টি ও বেসরকারিভাবে ২ হাজার ৫০০ গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু বিরূপ প্রভাবে 
উপজেলায় ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পৌর এলাকার বেশির ভাগ নলকূপ অকেজো। এ অবস্থায় ২০১৬ সালের পর থেকে পৌর এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো বন্ধ আছে। সচ্ছল পরিবার নিজ খরচে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে চাহিদা 
পূরণ করলেও পানির জন্য হাহাকার করছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
পৌর এলাকায় বসবাসরত ৭০ হাজারের বেশি মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে শহরের নান্দিকাঠিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। ২০১৭ সালে ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার কাজটি পায় ঢাকার মেঘনা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তৎকালীন সহকারী প্রকৌশলী ও স্থানীয় এমপি আমির হোসেন আমুর সহায়তায় নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে প্রকল্পের কাজ করেছেন। বোরিংয়ের কাজে অনিয়ম ও খরচ বাঁচাতে পাইপ সুগন্ধা নদীর গভীরে স্থাপন না করে নদীর চরে স্থাপন করেছেন। এসব অভিযোগে তৎকালীন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল হক ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপরও ধীরগতিতে 
প্রকল্পের কাজ করে গোপনে বিল তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে, ওয়াটার প্লান্ট নির্মাণের আগে ২০১৫ সালে পৌর ভবনের পাশে প্রোডাকশন টিউবওয়েলের মাধ্যমে একটি সাপ্লাই ইউনিট নির্মাণ করা হয়। এ দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকদের মধ্যে দুবার পানি সরবরাহের কথা। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে একবার। কোনো দিন তাও মেলে না। এ ছাড়া ময়লা কাদাযুক্ত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ দুটি প্রকল্পে বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় হলেও পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের বিশুদ্ধ পানির সংকট কাটেনি; বরং সময়ের সঙ্গে এর মাত্রা আরও বেড়েছে। গ্রাহকের কাছ থেকে বিল নেওয়া হলেও পৌরসভার মোট জনসংখ্যার ৫ ভাগ মানুষের চাহিদাও পূরণ করতে পারছে না প্রকল্প দুটি। 
সরেজমিন পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড ও ১৭টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলাজুড়ে পানির জন্য হাহাকার। সরকারি-বেসরকারিভাবে বসানো প্রায় তিন হাজার গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যেগুলো সচল আছে, তাও টিপটিপ করে পড়ছে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজেও অনিয়ম হয়েছে। সুগন্ধা নদীর পানি নিয়ে শোধনাগারে পরিষ্কার করে গ্রাহকদের মধ্যে দুবার সরবরাহ করার কথা থাকলেও এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। প্রতিদিন একবার  করে পানি সরবরাহ করা হলেও কোনো কোনো দিন তাও মেলে না। আবার যেটুকু পানি পাওয়া যায় তাও কাদা-ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। গ্রাহক কয়েক দফা পৌর প্রশাসক বরাবর অভিযোগ জানালেও কাজ হয়নি। 
সূর্যপাশা এলাকার শারমিন বেগম, অনুরাগ গ্রামের তামান্না আক্তার ও সিকদারপাড়া এলাকার সুমি বেগম বলেন, ২০ বছর আগের টিউবওয়েল। এক কলসি পানি তুলতে আধাঘণ্টা সময় লাগে। বারবার মেরামত করেও কাজ হচ্ছে না। টিউবওয়েলে পানি তুলতে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে খালবিলের ময়লা পানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। 
নলছিটি পৌরসভার মালিপুর এলাকার 
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য কাজটি সমাপ্ত করে পৌরসভাকে হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু পৌরসভার গাফিলতিতে জনগণ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল হক বলেন, গভীর নলকূপে পানি উঠেছে না– এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই পাচ্ছি। নির্বিঘ্নে পানি পেতে হলে সাবমার্সিবল বসাতে হবে। নতুন করে পাইপলাইন সংযুক্ত করে বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ওভারহেড ট্যাঙ্ক যুক্ত করতে হবে। প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা কাজ শেষ হওয়ার পরপরই পৌরসভাকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা ঠিকমতো দেখভাল না করায় এ হাল হয়েছে। 
গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পৌর প্রশাসক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পৌর এলাকার সুপেয় পানির সংকট নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীর পানি, স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংকট কেটে যাবে।
পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবুল হোসেন বলেন, কাজ শেষে পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই পাইপে লিকেজ দেখা দেয়। পানিতে কাদা আসা শুরু করে। ট্রিটমেন্ট প্লান্টের নদীর সংযোগস্থল শুকিয়ে যায়। এতে পানি পেতে বিঘ্ন ঘটে।
সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, এ প্রকল্প আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর সময় হয়েছে। তাই অনিয়ম-দুর্নীতির  বিষয়ে কিছু্ই বলতে পারব না। তবে পৌরসভাবে কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়ার পর আমাদের দপ্তরের কোনো তদারকি থাকে না। রক্ষণাবেক্ষণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সব দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। দায় তাদেরই নিতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারি লবণের তথ্য পৌঁছেনি বিতরণে কারসাজির অভিযোগ
  • অশ্বিন ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ
  • অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে, বাবা থানায় আটকা ২৬ ঘণ্টা 
  • ইসরায়েল কেন ইরানি তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে, এগুলো কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
  • ড্রোন ও উড়ুক্কু যানে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চীনের
  • প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় স্কুলছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, যুবক গ্রেপ্তার
  • সুপেয় পানির সংকট, কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প
  • গোপালগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ৩ বাসের ধাক্কা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ২
  • গোপালগঞ্জে ৬ যানবাহনের সংঘর্ষ, পুলিশ সদস্যসহ নিহত ২
  • রেললাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন মুঠোফোনে, ট্রেনে কাটা পড়ে চা–শ্রমিকের মৃত্যু