Prothomalo:
2025-11-24@00:30:19 GMT

অর্থনীতি ও জনজীবনে অশনিসংকেত

Published: 14th, January 2025 GMT

যেখানে দেশে গ্যাসের চাহিদা দিনে ৩৮০ কোটি ঘনফুট, সেখানে ২৫০ কোটি ঘনফুট দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারপরও অন্তর্বর্তী সরকার জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে, যদিও তার সফলতা নিয়ে সংশয় আছে।

মানুষ এখন দ্বিমুখী সংকটে আছে। একদিকে গ্যাসের সরবরাহ কম, অন্যদিকে নতুন শিল্পকারখানায় দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে। এটি বৈষম্যমূলক প্রস্তাব। পুরোনো শিল্পের সঙ্গে নতুন শিল্প প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। এতে বিনিয়োগে উৎসাহ কমে যাবে। ইতিমধ্যে সরকার যে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর বাড়িয়ে দিয়েছে, তা জনজীবনে প্রভাব ফেলবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম আগে থেকেই চড়া ছিল, ভ্যাট বাড়ানোর পর আরও অনেক পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাবে।

মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, কলাবাগান, উত্তরাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ নেই। দিনে গ্যাস না থাকায় অনেক স্থানে রান্নার চুলা জ্বালাতে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলেও গ্যাসের চাপ কম। সাধারণত ১০ থেকে ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চি) চাপে গ্যাস সরবরাহ করা হয় শিল্পকারখানায়। এবার গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় কারখানা গ্যাস পাচ্ছে ১ থেকে ২ পিএসআই চাপে। গত রোববার গাজীপুরে ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৪০ কোটি ঘনফুট। নারায়ণগঞ্জেও চাহিদামতো গ্যাস পায়নি তিতাস। ফলে রপ্তানিশিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত নারায়গঞ্জ ও গাজীপুরের কারখানাগুলোর উৎপাদনও কমে গেছে। কোথাও কোথাও রেশনিং করে কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে।

অদূর ভবিষ্যতে গ্যাস–সংকট কাটার সম্ভাবনা নেই বলে স্বীকার করেছেন জ্বালানি ও খনিজ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাইলেই চট করে গ্যাসের সংকট সমাধান করা যাবে না। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমার পাশাপাশি বাইরে থেকে আমদানির সক্ষমতাও সীমিত।’

অস্বীকার করার উপায় নেই যে আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই গ্যাস–সংকট বেড়েছে। তারা গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চেয়ে বিদেশ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানির ওপর জোর দিয়েছিল। এর পেছনে কমিশন বাণিজ্যও ছিল। কিন্তু উত্তরণের পথ তো বের করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রের সময় বাড়িয়ে উন্মুক্ত করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এই প্রেক্ষাপটে সরকার দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি ইতিবাচক হলেও সময়সাপেক্ষ।

সে ক্ষেত্রে সরকারকে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানের পাশাপাশি তরল গ্যাস আমদানির পরিমাণও বাড়াতে হবে। চালু গ্যাসক্ষেত্র থেকে আরও বেশি গ্যাস উত্তোলন করা যায় কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। ভোলার গ্যাস দেশের অন্যান্য স্থানে এলএনজির মাধ্যমে সরবরাহের কাজটিও জোরদার করা প্রয়োজন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জ্বালানি খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বর্তমান সরকার লোপাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে আমরা এ–ও আশা করি যে গ্যাস খাতের দুর্নীতির ছিদ্রগুলো বন্ধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এখনো বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের অনেক অবৈধ সংযোগ আছে, যা থেকে রাষ্ট্র কোনো অর্থ না পেলেও ফায়দা নিয়ে যায় দুর্নীতিবাজেরা।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে, গ্যাস–বিদ্যুতের সংকট জিইয়ে রেখে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যাবে না। রেশনিং পদ্ধতিতে কারখানা চালু রাখতে হলে মালিকের ব্যয় যেমন বাড়ে, তেমনি উৎপাদিত পণ্যের দামও বেশি পড়বে।

দেশবাসী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি বাস্তবমুখী নীতি–পরিকল্পনা এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন আশা করে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

উড়ালসড়কের পাইলিংয়ের সময় তিতাসের পাইপলাইনে ফাটল, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় পঞ্চবটী-মুক্তারপুর উড়ালসড়কের পাইলিংয়ের সময় আবারও তিতাস গ্যাসের প্রধান পাইপলাইন ফেটে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের শাসনগাঁও এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আজ রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টাতেও এ লাইন মেরামত করা সম্ভব হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল বিকেলে ১২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন ফেটে শোঁ শোঁ শব্দে গ্যাস বের হতে থাকলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল অঞ্চল থেকে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় জেলার বেশির ভাগ আবাসিক গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছেন। শিল্পকারখানার উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

পঞ্চবটী-মুক্তারপুর উড়ালসড়কের পাইলিংয়ের কাজ শুরুর পর থেকে ফতুল্লায় অন্তত ২৫ বার তিতাসের প্রধান পাইপলাইন ফাটার ঘটনা ঘটেছে। এতে অগ্নিকাণ্ডসহ বহুবার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। সেই সঙ্গে শিল্প উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

আজ সকালে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উড়ালসড়কের পাইলিংয়ের সময় প্রধান পাইপলাইন ফেটে গেছে। ২০ থেকে ২৫ ফুট গভীরে পাইপ থাকা অবস্থায় মাটি খুঁড়তে গিয়ে বারবার মাটি ভেঙে পড়ছে। মাটি যাতে ভেঙে না পড়ে সে জন্য চারদিকে লোহার পাত দিয়ে সুরক্ষা তৈরির কাজ চলছে। মাটি খোঁড়াসহ পাইপলাইন মেরামতে আরও পাঁচ–ছয় ঘণ্টা সময় লাগবে। মেরামতকাজ সম্পন্ন হলে দ্রুত গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে।

উড়ালসড়ক প্রকল্পের পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শাসনগাঁও এলাকায় পাইলিংয়ের সময় তিতাসের পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সি-স্যুট সম্মাননা পেলেন দেশের ২৪ জন করপোরেট ব্যক্তিত্ব
  • বহুপক্ষীয় বৈশ্বিক ব্যবস্থা এখন, শুধু পশ্চিমে দেখার সুযোগ নেই
  • পঞ্চবটিতে পাইপলাইন ফেটে বন্ধ গ্যাস সরবরাহ, চরম ভোগান্তি
  • মুন্সীগঞ্জের দুই পৌর এলাকায় গ্যাস নেই, ভোগান্তি চরমে
  • সারে গ‍্যাসের দাম ১৬ থেকে বেড়ে ২৯ টাকা ২৫ পয়সা
  • উড়ালসড়কের পাইলিংয়ের সময় তিতাসের পাইপলাইনে ফাটল, গ্যাস সরবরাহ বন্ধ
  • খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন
  • লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা হবে : পুলিশ সুপার
  • রেহমান সোবহান এলডিসির খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানালেন
  • ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের