Prothomalo:
2025-12-06@16:41:47 GMT

অর্থনীতি ও জনজীবনে অশনিসংকেত

Published: 14th, January 2025 GMT

যেখানে দেশে গ্যাসের চাহিদা দিনে ৩৮০ কোটি ঘনফুট, সেখানে ২৫০ কোটি ঘনফুট দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারপরও অন্তর্বর্তী সরকার জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে, যদিও তার সফলতা নিয়ে সংশয় আছে।

মানুষ এখন দ্বিমুখী সংকটে আছে। একদিকে গ্যাসের সরবরাহ কম, অন্যদিকে নতুন শিল্পকারখানায় দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে। এটি বৈষম্যমূলক প্রস্তাব। পুরোনো শিল্পের সঙ্গে নতুন শিল্প প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। এতে বিনিয়োগে উৎসাহ কমে যাবে। ইতিমধ্যে সরকার যে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর বাড়িয়ে দিয়েছে, তা জনজীবনে প্রভাব ফেলবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম আগে থেকেই চড়া ছিল, ভ্যাট বাড়ানোর পর আরও অনেক পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাবে।

মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, কলাবাগান, উত্তরাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ নেই। দিনে গ্যাস না থাকায় অনেক স্থানে রান্নার চুলা জ্বালাতে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলেও গ্যাসের চাপ কম। সাধারণত ১০ থেকে ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চি) চাপে গ্যাস সরবরাহ করা হয় শিল্পকারখানায়। এবার গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় কারখানা গ্যাস পাচ্ছে ১ থেকে ২ পিএসআই চাপে। গত রোববার গাজীপুরে ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৪০ কোটি ঘনফুট। নারায়ণগঞ্জেও চাহিদামতো গ্যাস পায়নি তিতাস। ফলে রপ্তানিশিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত নারায়গঞ্জ ও গাজীপুরের কারখানাগুলোর উৎপাদনও কমে গেছে। কোথাও কোথাও রেশনিং করে কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে।

অদূর ভবিষ্যতে গ্যাস–সংকট কাটার সম্ভাবনা নেই বলে স্বীকার করেছেন জ্বালানি ও খনিজ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাইলেই চট করে গ্যাসের সংকট সমাধান করা যাবে না। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমার পাশাপাশি বাইরে থেকে আমদানির সক্ষমতাও সীমিত।’

অস্বীকার করার উপায় নেই যে আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই গ্যাস–সংকট বেড়েছে। তারা গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চেয়ে বিদেশ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানির ওপর জোর দিয়েছিল। এর পেছনে কমিশন বাণিজ্যও ছিল। কিন্তু উত্তরণের পথ তো বের করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রের সময় বাড়িয়ে উন্মুক্ত করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এই প্রেক্ষাপটে সরকার দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি ইতিবাচক হলেও সময়সাপেক্ষ।

সে ক্ষেত্রে সরকারকে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানের পাশাপাশি তরল গ্যাস আমদানির পরিমাণও বাড়াতে হবে। চালু গ্যাসক্ষেত্র থেকে আরও বেশি গ্যাস উত্তোলন করা যায় কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। ভোলার গ্যাস দেশের অন্যান্য স্থানে এলএনজির মাধ্যমে সরবরাহের কাজটিও জোরদার করা প্রয়োজন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জ্বালানি খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বর্তমান সরকার লোপাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে আমরা এ–ও আশা করি যে গ্যাস খাতের দুর্নীতির ছিদ্রগুলো বন্ধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এখনো বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের অনেক অবৈধ সংযোগ আছে, যা থেকে রাষ্ট্র কোনো অর্থ না পেলেও ফায়দা নিয়ে যায় দুর্নীতিবাজেরা।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে, গ্যাস–বিদ্যুতের সংকট জিইয়ে রেখে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যাবে না। রেশনিং পদ্ধতিতে কারখানা চালু রাখতে হলে মালিকের ব্যয় যেমন বাড়ে, তেমনি উৎপাদিত পণ্যের দামও বেশি পড়বে।

দেশবাসী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি বাস্তবমুখী নীতি–পরিকল্পনা এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন আশা করে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মমতাজের জনপ্রিয় পঞ্চমিশালি আচার

২০২০ সালের কথা। তখন করোনা মহামারি চলছিল। ঘরবন্দী বেশির ভাগ মানুষ। দ্বিতীয় সন্তান পেটে আসে গৃহবধূ মমতাজ পারভীন মমর। ঘরে বসে থাকতে অস্বস্তি লাগছিল তাঁর। মাথায় আসে কিছু একটা কাজ করে সময় কাটানোর। বাজার থেকে কিছু আম আর জলপাই কিনে শুরু করেন আচার বানানো। ছোট পরিসরে এসব আচার স্থানীয় লোকজনের কাছে বিক্রিও শুরু করেন। এরপর প্রচার শুরু করেন ফেসবুকে। এতে ব্যাপক সাড়া পান। অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে এখন অনলাইনে জনপ্রিয় হয়েছে মমতাজের ‘পঞ্চমিশালি’ আচার।

মমতাজ পারভীন পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের প্রধানপাড়া এলাকার বাসিন্দা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা মমতাজ অনলাইনে নিজের তৈরি আচার বিক্রি করে পেয়েছেন সাফল্য। পাঁচ বছর ধরে অনলাইনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আচার বিক্রি করে আসছেন তিনি।

মমতাজ পারভীনের ভাষ্য, ভেজালমুক্ত ও মজাদার এই আচার এখন শুধু দেশেই নয়, প্রবাসীদের কাছেও ব্যাপক চাহিদার পণ্য হয়ে উঠেছে। প্রবাসী ও তাঁদের স্বজনদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর আচার পৌঁছে যাচ্ছে। আর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে এই আচার। এতে দিন দিন ব্যবসার পরিধি ও আয়ও বাড়ছে।

ছোটবেলা থেকেই বড় হয়ে নিজে কিছু করার প্রবল ইচ্ছা ছিল মমতাজ পারভীনের। কিন্তু স্নাতক শেষ না হতেই বিয়ে হয়ে যায়। তবু পড়ালেখা চালিয়ে যান। সংসারের দৈনন্দিন কাজকর্ম আর বাচ্চা সামলানোসহ নানা কাজে একঘেয়েমি লাগা শুরু করে। ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় ঘরবন্দী অবস্থায় দ্বিতীয় সন্তান গর্ভধারণ করেন তিনি। এ সময় টেলিভিশন দেখা, ফেসবুক চালানো—কোনো কিছুই ভালো লাগত না। পরে অনলাইনে ঘরে তৈরি আচারের ব্যবসা করবেন বলে স্বামীকে জানান। প্রথম দিকে বেসরকারি চাকরিজীবী স্বামী মোর্শেদ আলম সম্মতি না দিলেও শ্বশুর-শাশুড়ির উৎসাহে আচার বানানোর কাজ শুরু করেন। নাম দিলেন ‘পঞ্চমিশালি আচার’।

মমতাজ পারভীন জানান, প্রথম দিকে স্থানীয় লোকজনের কাছে আচার বিক্রি শুরু করে প্রচার চালান ফেসবুকে। এতে নানাজনের নানা কটূক্তির শিকারও হতে হয়েছে তাঁকে। তারপরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সাড়া পেতে থাকেন ক্রেতাদের। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহের পাশাপাশি প্রবাসী ও তাঁদের স্বজনদের মাধ্যমে অন্তত আটটি দেশে সরবরাহ হচ্ছে তাঁর আচার। এতে মাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন।

আচারের গুণগত মান নিশ্চিত করতে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভ ছাড়াই তৈরি করা হয়। নির্দিষ্ট কাঁচামালে প্রয়োজনমতো মসলা, তেল, বিট লবণ ও ভিনেগার মিশিয়ে তৈরি করা এসব আচার নির্ধারিত জারে সরবরাহ করা হয় ক্রেতাদের কাছে। রেফ্রিজারেটরে রেখে এসব আচার এক বছর পর্যন্ত খাওয়া যায় বলে জানান মমতাজ।

মমতাজের আচারের মধ্যে আছে কাঁচা আমের আচার, আমের মোরব্বা, পাকা আমের মাসালা আচার, আম-কাসুন্দি, আমের বার্মিজ আচার, আমের ঝুরি আচার, বরই আচার, বরই-তেঁতুল মিক্সড আচার, তেঁতুল আচার, জলপাই আচার, শর্ষেপাই আচার, কাঁচা মরিচের আচার, চালতার আচার, আমড়ার আচার ও কাঁঠালের আচার। প্রতি কেজি কাঁঠালের আচার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি কেজি আমলকীর আচার ৭০০ টাকা, আমসত্ত্ব ৮০০ টাকা, রসুনের আচার ৮০০ টাকা এবং গরুর মাংসের আচার ১ হাজার ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মমতাজ পারভীন বলেন, ‘আমাদের আচার একেবারে স্বাস্থ্যকর এবং স্বাদে অতুলনীয়। আমি আচার তৈরি করি, যাতে কোনো ধরনের রাসায়নিক বা ভেজাল থাকে না। প্রথম দিকে স্থানীয়ভাবে আচার বিক্রি করতাম, কিন্তু অনলাইনে যখন অর্ডার আসা শুরু করল, তখন ব্যবসা আরও বড় হয়েছে। এখন আমাদের আচার শুধু পঞ্চগড়েই নয়, দেশের নানা জায়গায় পাঠানো হয়, এমনকি বিদেশেও আমাদের পণ্য যাচ্ছে।’ ভবিষ্যতে তাঁর পণ্য আরও অনেক দেশে ছড়িয়ে দেওয়া এবং ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করাই একমাত্র লক্ষ্য বলে তিনি জানান।

ঢাকার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক নারী মমতাজের নিয়মিত ক্রেতা। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মমতাজ পারভীনের পঞ্চমিশালি নামের ফেসবুক পেজের মাধ্যমেই তাঁর আচারের বিষয়ে জানতে পারি। সেখান থেকেই আমি আচারের অর্ডার করি। এখন আমি পঞ্চমিশালি আচারের নিয়মিত কাস্টমার। আচার শেষ হলেই ফোন করি। হোমমেড পঞ্চমিশালি আচার আমার কাছে মানসম্মত মনে হয়েছে। এমনকি দামও হাতের নাগালে আছে।’

মমতাজ পারভীনের শ্বশুর শামসুল আলম অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মমতাজের পরিশ্রমই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাতদিন পরিশ্রম করে এত যত্নসহকারে আচার তৈরি করায় তাঁর আচারের মান ভালো। প্রথম দিকে ভেবেছিলেন, গ্রামে থেকে কীভাবে অনলাইনে বিক্রি হবে? কিন্তু এখন দেশ-বিদেশের ক্রেতাদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়াল, ডিসেম্বরে দাম বাড়ে কেন
  • রেল পুলিশের মাদক নেটওয়ার্ক!
  • পুলিশ সদস্যরাই মাদক পাচারে যুক্ত, কেউ করেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি, কেউ হোটেল  
  • বন্দরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দাবিতে মানববন্ধন  
  • ট্রাম্পের শুল্কের আঘাতে বড় সংকটে ভারত
  • ভারতকে ‘নিরবচ্ছিন্নভাবে’ জ্বালানি সরবরাহ দিতে প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন
  • চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, নীলফামারীতে সারসংকটে বিপাকে কৃষক
  • কমেছে মাছ মুরগি ও সবজির দাম
  • মমতাজের জনপ্রিয় পঞ্চমিশালি আচার
  • সংস্কারকাজ শেষে হবিগঞ্জ-৫নং কূপ থেকে গ্যাস সরবরাহ বেড়েছে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট