Prothomalo:
2025-11-24@19:59:54 GMT

অর্থনীতি ও জনজীবনে অশনিসংকেত

Published: 14th, January 2025 GMT

যেখানে দেশে গ্যাসের চাহিদা দিনে ৩৮০ কোটি ঘনফুট, সেখানে ২৫০ কোটি ঘনফুট দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারপরও অন্তর্বর্তী সরকার জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে, যদিও তার সফলতা নিয়ে সংশয় আছে।

মানুষ এখন দ্বিমুখী সংকটে আছে। একদিকে গ্যাসের সরবরাহ কম, অন্যদিকে নতুন শিল্পকারখানায় দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে। এটি বৈষম্যমূলক প্রস্তাব। পুরোনো শিল্পের সঙ্গে নতুন শিল্প প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। এতে বিনিয়োগে উৎসাহ কমে যাবে। ইতিমধ্যে সরকার যে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর বাড়িয়ে দিয়েছে, তা জনজীবনে প্রভাব ফেলবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম আগে থেকেই চড়া ছিল, ভ্যাট বাড়ানোর পর আরও অনেক পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাবে।

মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, কলাবাগান, উত্তরাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ নেই। দিনে গ্যাস না থাকায় অনেক স্থানে রান্নার চুলা জ্বালাতে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলেও গ্যাসের চাপ কম। সাধারণত ১০ থেকে ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গইঞ্চি) চাপে গ্যাস সরবরাহ করা হয় শিল্পকারখানায়। এবার গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় কারখানা গ্যাস পাচ্ছে ১ থেকে ২ পিএসআই চাপে। গত রোববার গাজীপুরে ৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৪০ কোটি ঘনফুট। নারায়ণগঞ্জেও চাহিদামতো গ্যাস পায়নি তিতাস। ফলে রপ্তানিশিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত নারায়গঞ্জ ও গাজীপুরের কারখানাগুলোর উৎপাদনও কমে গেছে। কোথাও কোথাও রেশনিং করে কারখানা চালু রাখতে হচ্ছে।

অদূর ভবিষ্যতে গ্যাস–সংকট কাটার সম্ভাবনা নেই বলে স্বীকার করেছেন জ্বালানি ও খনিজ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাইলেই চট করে গ্যাসের সংকট সমাধান করা যাবে না। দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমার পাশাপাশি বাইরে থেকে আমদানির সক্ষমতাও সীমিত।’

অস্বীকার করার উপায় নেই যে আওয়ামী লীগ সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই গ্যাস–সংকট বেড়েছে। তারা গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চেয়ে বিদেশ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানির ওপর জোর দিয়েছিল। এর পেছনে কমিশন বাণিজ্যও ছিল। কিন্তু উত্তরণের পথ তো বের করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রের সময় বাড়িয়ে উন্মুক্ত করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এই প্রেক্ষাপটে সরকার দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি ইতিবাচক হলেও সময়সাপেক্ষ।

সে ক্ষেত্রে সরকারকে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানের পাশাপাশি তরল গ্যাস আমদানির পরিমাণও বাড়াতে হবে। চালু গ্যাসক্ষেত্র থেকে আরও বেশি গ্যাস উত্তোলন করা যায় কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। ভোলার গ্যাস দেশের অন্যান্য স্থানে এলএনজির মাধ্যমে সরবরাহের কাজটিও জোরদার করা প্রয়োজন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জ্বালানি খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বর্তমান সরকার লোপাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে আমরা এ–ও আশা করি যে গ্যাস খাতের দুর্নীতির ছিদ্রগুলো বন্ধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এখনো বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের অনেক অবৈধ সংযোগ আছে, যা থেকে রাষ্ট্র কোনো অর্থ না পেলেও ফায়দা নিয়ে যায় দুর্নীতিবাজেরা।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে, গ্যাস–বিদ্যুতের সংকট জিইয়ে রেখে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যাবে না। রেশনিং পদ্ধতিতে কারখানা চালু রাখতে হলে মালিকের ব্যয় যেমন বাড়ে, তেমনি উৎপাদিত পণ্যের দামও বেশি পড়বে।

দেশবাসী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি বাস্তবমুখী নীতি–পরিকল্পনা এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন আশা করে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সি-স্যুট সম্মাননা পেলেন দেশের ২৪ জন করপোরেট ব্যক্তিত্ব

দেশের করপোরেট জগতের ২৪ জন ব্যক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশ সি-স্যুট অ্যাওয়ার্ডস বা পুরস্কার। গত শনিবার ঢাকার ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। চতুর্থবারের মতো এই পুরস্কার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২০২৫ সালের সেরা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছেন সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মাসরুর আরেফিন। বর্ষসেরা প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা বা ব্যবসায় পরিচালক শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছেন প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মইনুল ইসলাম এবং নেস্‌লে বাংলাদেশের পরিচালক এ এস এম হাফিজুল ইসলাম।

বর্ষসেরা প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছেন গ্রামীণফোনের সিএমও ফারাহ নাজ জামান এবং মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কাজী মো. মহিউদ্দিন। বর্ষসেরা প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিও) শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছেন ওয়ালটন হাই–টেক ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ আলম। বছরে ১০০–৪৯৯ কোটি আয় করা প্রতিষ্ঠানের বর্ষসেরা এমডি বা সিইও শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছেন আইপিডিসি ফাইন্যান্সের এমডি রিজওয়ান দাউদ শামস।

বর্ষসেরা প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা (সিএইচআরএ) শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছেন ট্রান্সকম গ্রুপের করপোরেট হেড অব এইচআর ও পরিচালক এম সাব্বির আলী এবং আকিজবশির গ্রুপের পরিচালক দিলরুবা শারমীন খান। বর্ষসেরা করপোরেটবিষয়ক কর্মকর্তা (সিসিএও) শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছেন গ্রামীণফোনের সিসিএও তানভীর মোহাম্মদ। বছরে ১০০ কোটি টাকার কম আয় করা প্রতিষ্ঠানের বর্ষসেরা সিইও শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছেন ওয়ালটন মাইক্রো–টেক করপোরেশনের সিইও নিশাত তাসনিম শুচি। এ ছাড়া বর্ষসেরা প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) শ্রেণিতে ট্রান্সকমের হেড অব টেকনোলজি আরিফ উজ জামান এবং বর্ষসেরা প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) শ্রেণিতে আকিজবশির গ্রুপের ক্লাস্টার ৩ এর সিইও মো. মফিজুল হোসেন আইরাজ সম্মাননা পেয়েছেন।

ইলেকট্রনিক খাতের বর্ষসেরা সিইও শ্রেণিতে ইলেক্ট্রো মার্টের সিইও মো. নূরুল আফসার, তৈরি পোশাক খাতের বর্ষসেরা সিইও বা এমডি শ্রেণিতে উর্মি গ্রুপের এমডি আসিফ আশরাফ এবং এফএমসিজি খাতের বর্ষসেরা সিইও শ্রেণিতে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক তাহমিনা মোস্তফা সম্মাননা পেয়েছেন। বর্ষসেরা প্রধান আর্থিক (সিএফও) বা অর্থ পরিচালক শ্রেণিতে প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী এবং বিকাশের সিএফও মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর, বর্ষসেরা প্রধান সরবরাহ ব্যবস্থা কর্মকর্তা (সিএসসিও) বা সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালক প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের সিএসসিও মো. তানজীর হেলাল এবং রেকিটের সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালক মোহাম্মদ জিয়া উদ্দীনও সম্মাননা পেয়েছেন।

এ ছাড়া বর্ষসেরা ট্রানজিশনাল সি–স্যুট শ্রেণিতে কীরনের সিইও মো. তাজদীন হাসান, বর্ষসেরা উদ্যোক্তা এসিআইয়ের এমডি আরিফ দৌলা এবং বর্ষসেরা টেকসই উদ্ভাবনে অগ্রদূত সম্মাননা পেয়েছেন টিম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আবদুল্লাহ হিল রাকিব এবং বর্ষসেরা ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টিকারী নেতৃত্বের সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি), ইউনাইটেড গ্রুপ ও টুয়েলভ ক্লথিংয়ের সহযোগিতায় এই ফ্ল্যাগশিপ আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম। এ বছর সম্মাননাটির জন্য ৫১টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১০২টি মনোনয়ন জমা পড়ে। বাছাই প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেছে একটি বিশেষায়িত কাউন্সিল বোর্ড।

বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের প্রয়োজন এমন নেতৃত্ব, যা ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বে বৃহত্তর দায়িত্বকে অনুধাবন করে কাজ করবে এবং সততা ধরে রেখে প্রতিষ্ঠান ও দেশের উন্নয়নে দিকনির্দেশনা দিতে পারবে। সি-স্যুট অ্যাওয়ার্ড শুধু সম্মাননা নয়, এটি করপোরেট নেতৃত্বের মানোন্নয়নের জন্য একটি প্রয়োজনীয় আহ্বান।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘উদাসীনতায়’ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সংকটে যবিপ্রবি
  • ৫০ হাজার টন চাল কিনবে সরকার, ভারত থেকে সরবরাহ করবে সিঙ্গাপুরের কোম্পানি
  • নারায়ণগঞ্জে ফেটে যাওয়া পাইপলাইন মেরামত হয়নি, গ্যাস সরবরাহ বন্ধে ভোগান্তি
  • সি-স্যুট সম্মাননা পেলেন দেশের ২৪ জন করপোরেট ব্যক্তিত্ব
  • বহুপক্ষীয় বৈশ্বিক ব্যবস্থা এখন, শুধু পশ্চিমে দেখার সুযোগ নেই
  • পঞ্চবটিতে পাইপলাইন ফেটে বন্ধ গ্যাস সরবরাহ, চরম ভোগান্তি
  • মুন্সীগঞ্জের দুই পৌর এলাকায় গ্যাস নেই, ভোগান্তি চরমে
  • খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিন
  • লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা হবে : পুলিশ সুপার
  • রেহমান সোবহান এলডিসির খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানালেন