আ’লীগ কর্মীকে পায়ের রগ কেটে হত্যা
Published: 15th, January 2025 GMT
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের চানপাড়া গ্রামে কওসার লস্কর (৫৫) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে পিটিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের লুৎফর লস্করের ছেলে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পুলিশ ও র্যাবের সোর্স ছিলেন কাওসার। ওই সময় বিএনপি, জামায়াত নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন মামলার আসামি গ্রেপ্তারে তথ্য দেওয়ার জন্য তাঁকে দায়ী করা হয়। ২০১৪ সালে কাওসারের পাশের গ্রামের জামায়াত কর্মী এনামুল বিশ্বাসকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। কাওসার এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। এসব বিরোধের জেরে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে।
তারা আরও জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রায় ২০টি মোটরসাইকেলে অন্তত ৪০ জন কাওসারের বাড়িতে যায়। পুলিশ পরিচয়ে তারা কাওসারকে বাড়ি থেকে ডেকে পাশের রেললাইনের ধারে বন্ধ গেট এলাকায় নেয়। সেখানে তাঁকে মারধরের পর দুই পায়ের রগ কেটে ফেলে যায়। রাত ২টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহতের স্ত্রী ওজলা খাতুন জানান, বাড়ির ভেতর ১৫-২০ জন ঢুকে পুলিশ পরিচয়ে কাওসারকে ডাকতে থাকে। পুলিশের লোক শুনে তিনি স্বামীসহ বেরিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা কাওসারকে ধরে নিয়ে যায়। তবে দলটির কাউকে চিনতে পারেননি তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, কাওসারের দু’পায়েই ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাত ছিল। শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হতে পারে।
স্থানীয় রুবেল লস্কর সমকালকে জানান, কাওসারের দুই পায়ের রগ কাটা ছিল। তবে হাসপাতালে নেওয়ার আগপর্যন্ত সে কথা বলছিল।
কাওসার মৃত্যুর আগে পরিবারের সদস্যদের হত্যায় জড়িতদের বিষয়ে তথ্য দিতে পারেন বলে ধারণা স্থানীয়দের। তবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি পরিবারের সদস্যরা।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মহিদুর রহমান জানান, মামলার প্রক্রিয়া চলছে। জড়িতদের শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ায় শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রথম দিনে যেমন ছিল প্রতিক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত আইন বুধবার রাত থেকে কার্যকর হয়েছে। ফলে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স, স্ন্যাপচ্যাট, টিকটক ও ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে ১৬ বছরের কম বয়সীদের লাখো অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্বের প্রথম কোনো দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরও কিছু দেশ একই ধরনের পরিকল্পনা করছে।
শিশু-কিশোরদের অনলাইন আসক্তি, সহিংসতা, পর্নোগ্রাফি ও অন্যান্য ক্ষতিকর আধেয় (কনটেন্ট) থেকে রক্ষা করতে সরকার এই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। আইন ভাঙলে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৪৯ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানার বিধান করা হয়েছে। তবে শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নেই।
কিন্তু আইনটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রথম দিনেই বড় প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচকদের আশঙ্কা, অনেক কিশোর-কিশোরী এখনো স্বচ্ছন্দে নিজেদের প্রিয় প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় রয়েছে এবং রীতিমতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রথম দিন বিষয়টি নিয়ে সিডনিসহ পুরো অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেশের সব সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনায় বিষয়টি প্রাধান্য পায়। আইনটির ভবিষ্যৎ, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং এর সামাজিক প্রভাব নিয়ে সারা দিন নানা মতামত চোখে পড়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী আনিকা ওয়েলস সকালে জানান, ১৬ বছরের কম বয়সী বলে ধারণা করা ২ লাখের বেশি টিকটক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। অনেক কিশোর-কিশোরী দাবি করছে, তাদের অ্যাকাউন্ট সচল আছে, কোনো পরিবর্তনই আসেনি। তারা প্রকাশ্যে নিষেধাজ্ঞা অমান্যেরও কথা জানাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ আইন কার্যকরের ১০ ঘণ্টা পর এ উদ্যোগকে ‘ইতিমধ্যে সফল’ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তাঁর টিকটক অ্যাকাউন্ট কিশোর-কিশোরীদের মন্তব্যের বন্যায় ভেসে গেছে। একজন মন্তব্যে লিখেছে, ‘কাজ হয়নি, আমি এখনো আছি।’ আরেকজন নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে নিজের ‘বিজয়ের মুহূর্ত’ ঘোষণা করেছে। কেউ মূল অ্যাকাউন্ট থেকে বাদ পড়লেও গোপন বা বিকল্প মাধ্যমে ঢোকার দাবি করেছে।
ই-নিরাপত্তা কমিশনার জুলে ইনম্যান গ্রান্ট অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন, প্ল্যাটফর্মগুলো আইন কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে সব কম বয়সী ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করে বাদ দিতে পারবে না। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা থাকবেই। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্ল্যাটফর্মগুলো ভিপিএন (ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহারের ঘটনাও শনাক্ত করতে পারবে। তবু কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে।
এদিকে প্ল্যাটফর্মে নিষিদ্ধ কিশোর-কিশোরীরা সকাল থেকেই বিকল্প অ্যাপ খুঁজতে থাকে। অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে বুধবার সকালে টিকটকের বিকল্প ‘লেমন৮’, ইনস্টাগ্রামের বিকল্প ‘ইয়োপে’ এবং স্ন্যাপচ্যাটের বিকল্প ‘কভারস্টার’ ডাউনলোডের হিড়িক পড়ে যায়।
যোগাযোগমন্ত্রী ওয়েলস জানান, তাঁরা ব্যবহারকারীদের ‘স্থানান্তরের প্রবণতা’ নজরদারি করছেন এবং প্রয়োজন হলে এসব নতুন প্ল্যাটফর্মও নিষিদ্ধের তালিকায় যুক্ত করা হতে পারে।
প্রভাবশালী কিশোরদের প্রতিক্রিয়া
নতুন আইনের কারণে হাজার হাজার অনুসারী থাকা অনেক কম বয়সী ইনফ্লুয়েন্সার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বাদ পড়ে গেছে। এমন একজন ১৪ বছর বয়সী জোয়ি। তার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। বিদায়ী ভিডিও পোস্ট সে অনুসারীদের তার বাবাকে অনুসরণ করতে বলেছে এবং জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে সে আবার তাদের কাছে ফিরে আসার পথ খুঁজে নেবে।
১৪ বছর বয়সী আরেক আধেয় নির্মাতা চার্লি লিয়া নিষেধাজ্ঞা এড়াতে যুক্তরাজ্যে চলে গেছে। তবে যেসব কিশোর-কিশোরীর অ্যাকাউন্ট অভিভাবকেরা পরিচালনা করেন, সেগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েনি।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিক্রিয়া
নতুন আইন নিয়ে সিডনিসহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক অভিভাবক এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এতে শিশুরা অনলাইন ঝুঁকি ও আসক্তি থেকে কিছুটা হলেও দূরে থাকবে।
সিডনির ক্যাম্পবেলটাউনের প্রবাসী বাংলাদেশি মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি এটাকে ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখি। বাচ্চাদের নিরাপত্তা ও শৈশব রক্ষার জন্য এটা দরকারি পদক্ষেপ। এখন তারা মাঠে খেলাধুলা করতে বাধ্য হবে।’
আরেক প্রবাসী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘এটা সরকারের সাহসী সিদ্ধান্ত। প্রযুক্তির ভালো দিক আছে। কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর।’
তবে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা কঠোর হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তাঁদের মতে, অনেক কিশোর-কিশোরী দায়িত্বশীলতার সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বিভিন্ন কিছু শেখার ক্ষেত্রে তা তাদের কাজে লাগে।
রিয়া হোসেন নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, ‘মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। কারণ, অনেক বাচ্চা দায়িত্বশীলভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করত। তবে সুরক্ষা অবশ্যই আগে।’
ফারহানা করিম বলেন, নিষেধাজ্ঞার প্রযুক্তিগত নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। যদি বাচ্চারা ভিপিএন বা বিকল্প অ্যাপে চলে যায়, সেখানে নিয়ন্ত্রণ আরও কম হবে।
অভিজ্ঞ সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, অধিকাংশ প্রবাসী বাংলাদেশিসহ অস্ট্রেলীয় নাগরিকেরা নতুন আইন নিয়ে সন্তুষ্ট। কারণ, তাঁদের বিশ্বাস, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে শিশুদের নিরাপত্তা বাড়বে। তবে কেউ কেউ মনে করেন, এর একটা মাঝামাঝি সমাধান হলে ভালো হতো।