ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের চানপাড়া গ্রামে কওসার লস্কর (৫৫) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে পিটিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ওই গ্রামের লুৎফর লস্করের ছেলে। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্স ছিলেন কাওসার। ওই সময় বিএনপি, জামায়াত নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন মামলার আসামি গ্রেপ্তারে তথ্য দেওয়ার জন্য তাঁকে দায়ী করা হয়। ২০১৪ সালে কাওসারের পাশের গ্রামের জামায়াত কর্মী এনামুল বিশ্বাসকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। কাওসার এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। এসব বিরোধের জেরে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। 

তারা আরও জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রায় ২০টি মোটরসাইকেলে অন্তত ৪০ জন কাওসারের বাড়িতে যায়। পুলিশ পরিচয়ে তারা কাওসারকে বাড়ি থেকে ডেকে পাশের রেললাইনের ধারে বন্ধ গেট এলাকায় নেয়। সেখানে তাঁকে মারধরের পর দুই পায়ের রগ কেটে ফেলে যায়। রাত ২টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। 

নিহতের স্ত্রী ওজলা খাতুন জানান, বাড়ির ভেতর ১৫-২০ জন ঢুকে পুলিশ পরিচয়ে কাওসারকে ডাকতে থাকে। পুলিশের লোক শুনে তিনি স্বামীসহ বেরিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা কাওসারকে ধরে নিয়ে যায়। তবে দলটির কাউকে চিনতে পারেননি তিনি। 

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, কাওসারের দু’পায়েই ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাত ছিল। শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হতে পারে। 

স্থানীয় রুবেল লস্কর সমকালকে জানান, কাওসারের দুই পায়ের রগ কাটা ছিল। তবে হাসপাতালে নেওয়ার আগপর্যন্ত সে কথা বলছিল।

কাওসার মৃত্যুর আগে পরিবারের সদস্যদের হত্যায় জড়িতদের বিষয়ে তথ্য দিতে পারেন বলে ধারণা স্থানীয়দের। তবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি পরিবারের সদস্যরা।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মহিদুর রহমান জানান, মামলার প্রক্রিয়া চলছে। জড়িতদের শনাক্তে পুলিশ কাজ করছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ঝ ন ইদহ

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্যসেবার ‘আরোগ্য’, পাঁচ বছরেই বড় সাফল্য

দেশে অসুস্থ হলে চিকিৎসাসেবা নেওয়া অনেকের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে সিরিয়াল পেতেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। আবার চিকিৎসকের পরামর্শে স্বাস্থ্য পরীক্ষার (টেস্ট) জন্য নানা জায়গায় ঘুরতে হয় রোগী ও স্বজনদের। এখানেই শেষ নয়। ওষুধের জন্য দৌড়াতে হয় ফার্মেসিতে।  

স্বাস্থ্যসেবার এমন নানা সমস্যার একক সমাধান দিচ্ছে ‘আরোগ্য’ নামের একটি স্টার্টআপ। এটি মূলত একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যেখানে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। দেশের যেকোনো স্থান থেকে ক্রয়াদেশ দিলে দ্রুততম সময়ে ওষুধ পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়। এ ছাড়া এই অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই চিকিৎসকের পরামর্শ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা সেবাও নিতে পারবেন রোগীরা।

সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে শুরু হয়েছিল আরোগ্যের যাত্রা। শুরুতে কর্মী ছিল ৮-৯ জন। পাঁচ বছরের ব্যবধানে স্টার্টআপটির বিনিয়োগ ছাড়িয়েছে ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, যার বড় অংশ বিদেশি বিনিয়োগ। সেই সঙ্গে কর্মীর সংখ্যা বেড়ে ৫০০ ছাড়িয়েছে। আরোগ্যের নিবন্ধিত গ্রাহক এখন ২২ লাখেরও বেশি।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও তখন করোনার প্রকোপ। এই সময়ই বাংলাদেশি চার তরুণ উদ্যোক্তার হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় আরোগ্যের। শুরুতে শুধু ওষুধ সরবরাহকারী একটি ডিজিটাল ফার্মেসি হিসেবে কাজ করত এটি। পরে ওষুধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন মেডিক্যাল, হেলথকেয়ার ডিভাইস, পার্সোনাল কেয়ার পণ্য, নিউট্রিশন সাপ্লিমেন্ট এবং পোষা প্রাণীর খাবার ও স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত সামগ্রী বিক্রি। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা (প্যাথলজি) সেবাও।

আরোগ্যের চার প্রতিষ্ঠাতা হলেন—প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রোজিনা মজুমদার, প্রধান স্ট্র্যাটেজি কর্মকর্তা ইওয়ার মেহেবুব, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ফাহাদ হোসেন ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) শামীম হাসান। তাঁদের এ উদ্যোগ নিয়ে গত বছরের আগস্টে বৈশ্বিক ম্যাগাজিন ফোর্বসেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকায় আরোগ্যের কার্যালয়ে কথা হয় স্টার্টআপটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ইওয়ার মেহেবুবের সঙ্গে। গল্পে গল্পে তিনি জানালেন আরোগ্যের যাত্রা, বিনিয়োগ, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের কথা। ইওয়ার মেহেবুব বলেন, ‘আমরা চারজন মিলে আরোগ্য শুরু করি। এর মধ্যে আমি এবং রোজিনা দুজনেই দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে ছিলাম। সেখানেই বড় হয়েছি, পড়াশোনা করেছি। তারপর লম্বা সময় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং, রিসার্চ ও প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। পরবর্তী সময়ে আমরা একটি কেক ম্যাগাজিনের ব্যবসাও করি। তখন কেক ইন্ডাস্ট্রিকে কেন্দ্র করে আমরা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ইভেন্ট করেছি, ব্যবসা বাড়িয়েছি। ব্যবসা, ব্যবস্থাপনা ও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং—এই তিন ক্ষেত্রেই যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাতে। সব মিলিয়ে আমরা সফলই ছিলাম বলা যায়। কিন্তু কোভিডের সময় আমাদের মনে নতুন ভাবনা জন্ম নেয়।

এ সময় দুবাইতে থাকা এক বন্ধু জানালেন, বাংলাদেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম এখনো খুব নতুন। আমরা সেখানে কিছু করতে পারি। প্রাথমিকভাবে আমাদের ইচ্ছা ছিল, বাংলাদেশি কোনো স্টার্টআপে বিনিয়োগ ও পরামর্শ সেবা দেব, কিন্তু সরাসরি যুক্ত হব না।’

আরোগ্যের সঙ্গে পরিচয়

ইওয়ার মাহমুদ জানান, শুরু করার আগে এ দেশের স্বাস্থ্য খাতের সম্ভাব্য স্টার্টআপগুলো খুঁজতে শুরু করেন তিনি। এ সময় এক বন্ধুর মাধ্যমে চট্টগ্রামের দুই তরুণ মার্চেন্ট নেভি অফিসারের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। তাঁরা আরোগ্য নামে একটি অ্যাপের জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজছিলেন। আরোগ্য অ্যাপ দিয়ে তাঁরা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতেন। তবে চট্টগ্রামেই ছোট পরিসরে সীমাবদ্ধ ছিল তাঁদের কার্যক্রম।

ইওয়ার বলেন, ‘প্রথম দেখাতেই বুঝলাম, এর মধ্যে সম্ভাবনা আছে। সঠিক কৌশল ও অর্থায়ন পেলে বড় কিছু করা সম্ভব। দুবাইয়ে আমার অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর বন্ধুদের জানালাম। তারা রাজি হলো, তবে শর্ত দিল, আমরা চারজন মিলে নেতৃত্ব দিলে তারা বিনিয়োগ করবে। বিদেশে স্থিতিশীল ও স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্তটা সহজ ছিল না। আমি সিদ্ধান্ত নিতে প্রায় এক মাস সময় নিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত রাজি হলাম। এভাবেই ডিসেম্বর ২০২০ থেকে আরোগ্যের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু।’

ইওয়ার মাহমুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ