বইমেলায় আগামীকাল প্রথম শিশুপ্রহর
Published: 6th, February 2025 GMT
‘লোকে বই কেনে না, বই হাতে নিয়ে সেলফি তোলে। তারপর বইটি টেবিলে ধপ করে ফেলে দিয়ে হাঁটা দেয়।’ কথাগুলো জাতীয় সাহিত্য প্রকাশের প্রকাশক কমল কান্তি দাসের। তাঁদের অনেক দিনের পুরোনো প্রকাশনা সংস্থা। প্রগতিশীল রাজনীতিক, সাহিত্যিকদের অনেক বই এখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রকাশকের ভাষ্য, বই তেমন আর বিক্রি হয় না। লোকে এখন বইয়ের পাতায় চোখ রাখার চেয়ে সেলফোনে তাকিয়ে থেকে সময় কাটিয়ে দেয়। ফলে বইমেলায় বই বিক্রি কমে গেছে।
অমর একুশের বইমেলায় আজ বৃহস্পতিবার লোকসমাগম আগের দিনগুলোর চেয়ে বেশ কম ছিল। প্রকাশকদের ধারণা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যে উত্তেজনাকর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে মেলায়। লোকজন একটু সতর্ক থাকছেন। একটু নিরুৎসাহিত বোধ করছেন বাইরে যেতে। এতে বেশ ফাঁকা ফাঁকা লেগেছে মেলার পরিবেশ। তবে এর মধ্যে যাঁরা প্রকৃতই বইকেনার উদ্দেশ্য নিয়ে মেলায় এসেছিলেন, তাঁরা বেশ স্বস্তির সঙ্গে স্টল-প্যাভিলিয়ন ঘুরে পছন্দের বই কিনেছেন।
এমনই এক গ্রন্থানুরাগী কাওসার মোস্তফার সঙ্গে দেখা হলো রোদেলা প্রকাশনের স্টলে। পেশায় সমুদ্রগামী জাহাজের ক্যাপ্টেন। ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। তুর্কি লেখক সিদ্দিক গুমুসের কেন তারা মুসলমান হলো, সুফিসাধক ফরীদুদ্দীন আত্তারের ইলাহিনামাসহ দর্শন ধর্ম পরিবেশ বিষয়ে বেশ কিছু বই কিনেছেন। তিনি বললেন, ‘বইমেলার সময় ঢাকায় থাকব আর মেলায় আসব না—এমন হয় না।’ গল্প-উপন্যাসের চেয়ে দর্শন, পরিবেশ বিষয়ের গবেষণামূলক বই তাঁর পছন্দ। তাঁর কাছে বই পড়ার আনন্দ অন্য সব কিছুর চেয়ে আলাদা। তাই বইয়ের টানেই মেলায় আসা।
আজ মেলায় তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে নতুন বই এসেছে ৮০টি। উল্লেখযোগ্য নতুন বইয়ের মধ্যে ঐতিহ্য থেকে এসেছে বাংলাদেশের উর্দু কবিদের কাব্যচর্চা ও তাঁদের কবিতা নিয়ে কবি আসাদ চৌধুরীর বাংলাদেশের উর্দু সাহিত্য, ইউপিএল এনেছে ভেলাম ভান সেন্দেলের বাংলাদেশ জনপদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, সুচয়নী পাবলিশার্স থেকে এসেছে গৌতম দত্তের বাংলা গদ্যসাহিত্য বিক্ষণ, অনিক মাহমুদের গল্প কাদামাটির সংসার, নবযুগ থেকে এসেছে ধর্মানন্দ কোসম্ভীর বৌদ্ধধর্মবিষয়ক ভগবান বুদ্ধ, আগামী থেকে এসেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থ চীন দেশে কয়েকবার, ফরহাদ মজহারের সঙ্গে সাক্ষাৎকার সামনাসামনি, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ থেকে এসেছে আবদুল গনীর ভাষাবিষয়ক গবেষণা গৌড়ের ভাষা বাংলা ভাষা: ভাষা ও লিপির ক্রমবিকাশ, বিভাস থেকে এসেছে রামশংকর দেবনাথের কিশোর উপন্যাস সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে, বাংলা একাডেমি এনেছে মিলন কান্তি দের নির্বাচিত যাত্রাপালা।
মেলামঞ্চের আলোচনামেলার মূলমঞ্চে আজ ছিল ‘স্মরণ : মাহবুবুল হক’ শীর্ষক আলোচনা। সৈয়দ আজিজুল হকের সভাপতিত্বে প্রবন্ধ পাঠ করেন তারিক মনজুর। আলোচনায় অংশ নেন মাহবুব বোরহান ও মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
জুলাইয়ের গল্পআজ বইমেলায় শুরু হলো ‘জুলাইর গল্প’ নামে একটি নতুন কার্যক্রম। এতে গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ শাহারিয়া খাঁন আনাসের বাবা সাহরিয়া খান পলাশ ও মা সানজিদা খান আলোচনায় অংশ নেন। সঞ্চালনায় ছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানবিষয়ক বিশেষ সেলের সেল সম্পাদক হাসান ইমাম।
প্রথম শিশুপ্রহরে নানা আয়োজনকাল শুক্রবার মেলার প্রথম শিশুপ্রহর। মেলার দ্বার খুলবে বেলা ১১টায়, শিশুপ্রহর চলবে বেলা ১টা পর্যন্ত। তবে শিশু-কিশোরদের জন্য একাডেমির বিভিন্ন প্রতিযোগিতা শুরু হবে সকাল সাড়ে আটটায়। প্রথমে একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সকাল ১০টা থেকে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। বরাবরের মতোই মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ শ প রহর বইম ল য় পর ব শ ব ষয়ক প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত
লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা।
জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন।
আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো।
আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।
ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক।
আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’
উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।
ঢাকা/লিটন/টিপু