খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) প্রভাষক ও সহকারী ছাত্রবিষয়ক পরিচালক হাসান মাহমুদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধরের অভিযোগে বিক্ষোভ করেছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবি, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের পাশে তাঁকে লাঞ্ছিত করেন সাবেক এক শিক্ষার্থী।

অভিযুক্ত সাবেক শিক্ষার্থীর নাম মোহম্মদ মোবারক হোসেন। তিনি বাংলা ডিসিপ্লিনের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষক বর্তমানে খুলনার সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

হাসান মাহমুদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে গতকাল রাত একটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষকের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ তুলে মোবারক হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মোবারক হোসেন ওই শিক্ষকের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি জানাজানি হলে রাতেই প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তিসহ বিভিন্ন দাবি তুলে স্লোগান দেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ শেষ করে নিজেদের হলে ফিরে যান।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকেরা যদি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকেন, ক্যাম্পাসের মধ্যেই যদি হামলার শিকার হন, তাহলে আমরা শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিরাপদ বোধ করব?’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোবারক হোসেনের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। তবে তাঁর দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক নাজমুস সাদাত। তিনি বলেন, আম পাড়তে বাধা দেওয়ায় ওই শিক্ষকের ওপর হামলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এটা করা হতে পারে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনুন

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে কূটনীতিকসহ ইরানে যেসব বাংলাদেশি আছেন, তাঁরা ভয়াবহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছেন। তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের চ্যান্সারি ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবন ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকিতে আছে। বিবিসি বাংলার খবরে জানা যাচ্ছে, ইসরায়েলি হামলায় বাংলাদেশের একজন কূটনীতিকের বাসভবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনিসহ তেহরান দূতাবাসের ৪০ জন কর্মীকে নিরাপদ স্থানে সরানোর প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু গোটা ইরানই যখন ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু, তখন সেটা কতটা নিরাপদ, তা ভেবে দেখার বিষয়।

মঙ্গলবার ঢাকায় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলন করে জানান, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির নিরাপত্তা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

কিন্তু ইরানে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। কোনো কোনো সূত্র বলেছে, আরও বেশি। উল্লেখসংখ্যক বাংলাদেশি ইরানিদের বিয়ে করে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাঁরা হয়তো ইরানি সমাজে মিশে যেতে পারবেন। কিন্তু যেসব বাংলাদেশি সমুদ্র অঞ্চলে মাছ ধরাসহ ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাঁরা সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় আছেন। অনেকের বৈধ কাগজপত্র নেই। আবার কিছু বাংলাদেশি ইরানের ডিটেনশন সেন্টারে (আটককেন্দ্র) আছেন। এর বাইরে কিছু বাংলাদেশি আছেন পেশাজীবী, যাঁরা গণমাধ্যম ও চিকিৎসাসেবা খাতে কাজ করছেন।

রুহুল আলম সিদ্দিকী জানান, ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনীতিকসহ দূতাবাসের ৪০ জনকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সোমবার রাতে ইরানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রদূতের নির্ধারিত বাসভবন ছেড়ে গেছেন। পররাষ্ট্রসচিব যতই বলুন সবাইকে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; কিন্তু ইরানে এখন যে পরিস্থিতি, তাতে নিরাপদ স্থানে যাওয়া মোটেই সহজ নয়। ইরানের সঙ্গে বহির্বিশ্বের বিমান যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ। এ অবস্থায় ইরান ত্যাগ করা কঠিন। স্থলপথে তুরস্ক, পাকিস্তান হয়তো যাওয়া গেলেও সেটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়সাপেক্ষ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তার ভাষ্যে জানা যাচ্ছে, ইরানে অবস্থিত সব বাংলাদেশি এখনো তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। সে ক্ষেত্রে দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরই উচিত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। প্রয়োজনে ইরান সরকারের সহায়তা নিতে হবে। তবে এ সময় তারা কতটা সহায়তা দিতে পারবে, সেই প্রশ্নও আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তেহরান শহর খালি করার কথা বলেন, তখন উদ্বিগ্ন হতে হয় বটে। ইরানে যেসব বাংলাদেশি আছেন, তাঁদের বৈধ কাগজপত্র থাকুক আর না-ই থাকুক বাংলাদেশ সরকারের কর্তব্য হবে তাঁদের জীবন বাঁচানো। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে জানা যাচ্ছে, এরই মধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও পাকিস্তান তাদের নাগরিকদের ইরান থেকে সরিয়ে আনছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকারকে আমাদের নাগরিকদের ইরান থেকে সরিয়ে আনার জন্য জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহায়তা নিতে হবে। যেকোনোভাবেই বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে আনতে হবে।

আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হবে। কিন্তু সেটি যদি না হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে; যা কারও কাম্য নয়। যুদ্ধ প্রলম্বিত ও বিস্তৃত হলে ইসরায়েলের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয়ও যেসব বাংলাদেশি আছেন, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়েও সরকারকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনুন