রায়পুরে ২৫০ কোটি টাকার সয়াবিন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষ মুখোমুখি
Published: 3rd, May 2025 GMT
রায়পুর উপজেলার মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরটির নাম কানিবগা চর। চরের আয়তন প্রায় ৬ হাজার ৮০৯ একর। চলতি মৌসুমে চরের ৪ হাজার একর জমিতে সয়াবিন (তেল জাতীয় ফসল) চাষ করেছেন ২৫৪ জন কৃষক, যারা দখল সূত্রে ও অসিয়তমূলে মালিক। চরে প্রতি বছর প্রায় ২৫০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদিত হয়। কিন্তু গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চরের মালিকানা নিয়ে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। নতুন করে জমির মালিকানা দাবি করেছেন আরও ১৫০ জন; যাদের অধিকাংশই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী।
কৃষকরা জানান, ইতোমধ্যে চর দখলের লড়াইয়ে নেমেছে বিএনপির স্থানীয় দুটি গ্রুপ। তারা হামলা-পাল্টা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও সয়াবিন লুটে জড়িত বলে তাদের অভিযোগ। চর দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ৭ এপ্রিল দুই পক্ষের সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। বিএনপি কর্মী সাইজ উদ্দিন ঘটনাস্থলে ও আহত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জসিম উদ্দিন ব্যাপারী হাসপাতালে মারা যান।
অভিযোগ রয়েছে, জমির দখল নিতে মরিয়া চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মেহেদী কবিরাজ ও জিএম শামীম গাজীর অনুসারীরা। ৭ এপ্রিলের খুনের ঘটনার পর চরে শুরু হয়েছে বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। এতে আতঙ্কে আছেন স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষ। তবে খুন-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি দল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, নতুন জেগে ওঠা চরের ২ হাজার ৮০৯ একর জমির মালিক মূলত সরকার। জরিপ না হওয়ায় এখনও এসব জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। এ সুযোগে প্রভাবশালীরা জমির দখল নিতে মরিয়া।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ জহির আহমেদ বলেন, ‘আবহাওয়াগত কারণে দেশের ৮০ শতাংশ সয়াবিন উৎপাদিত হয় লক্ষ্মীপুরে। এতে প্রায় ৭০ হাজার কৃষক জড়িত। এ বছর জেলায় সয়াবিন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে; চাষ হয়েছে তার চেয়েও ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর বেশি জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন হতে পারত প্রায় ৬৫ হাজার ৫০ মেট্রিক টন সয়াবিন, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকা। তার মধ্যে কেবল কানিবগা চরেই উৎপাদিত হবে ২৫০ কোটি টাকার সয়াবিন।’
সরেজিমন পরিদর্শনের সময় কৃষকরা জানান, পাকা সয়াবিন ফসল লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন দখলদাররা। অনেক কৃষক মারধরের শিকার হয়েছেন। সাহাব উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধ কৃষক কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সারাবছর খেয়ে না খেয়ে সয়াবিন লাগাইছি। এখন ফসল ঘরে তুলতে পারছি না। প্রশাসন আমাদের একটু সাহায্য করলে আমাদের ফসল বাঁচত, আমরাও বাঁচতে পারতাম।’
চাষিরা জানান, নতুন করে যারা জমির মালিকানা দাবি করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন রায়পুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তফা গাজী, হারুন হাওলাদার, মোবারক আলী, বাদশা গাজী, ফারুক কবিরাজ, শামীম গাজী, মেহেদী কবিরাজ, হাসিম মাতাব্বর, গিয়াস উদ্দিন মাতাব্বর। এসব নাম পুলিশের তদন্তেও এসেছে বলে জানিয়েছেন রায়পুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তফা গাজী বলেন, ‘আমি কারও জমি দখল করিনি। কাউকে মারধরও করিনি। বিএনপির কেউ দখলের সঙ্গে জড়িত নেই।’ অপরিদেক আরেক যুগ্ম আহবায়ক বাদশা গাজী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পতনের পর চরে যেন কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা
দিয়েছি। বহিষ্কৃত জামায়াত নেতাসহ কয়েকজন পরিকল্পিতভাবে চরের জমি দখলের সঙ্গে আমার নাম জড়িয়েছেন। তকে এসবে আমি জড়িত নই।’
চাষিরা অভিযোগ, জমি রক্ষায় প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাননি তারা। ৭ এপ্রিলের সংঘর্ষের পর স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা মিলে একটি ‘তথাকথিত সম্মিলিত শান্তি কমিটি’ গঠন করেছেন, কমিটিতে জমির প্রকৃত মালিকদের রাখা হয়নি। সেখানে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের রাখা হয়েছে, যারা নিজেরাই দখলের সঙ্গে জড়িত।
জমির প্রকৃত মালিক দাবিদার সফিক ভূঁইয়া, আফছার উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী, কুদ্দুস পাটোয়ারী, শাহাজান পাটোয়ারী, বলেন, ‘সরকার জরিপ করে জমির প্রকৃত মালিকদের চিহ্নিত করতে পারে, এতে দ্রুত সমস্যার সমাধান সম্ভব।’
রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘গত ৭ এপ্রিল উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি দল থেকে তাদের আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। উপজেলা বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা কার্যকর করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন, উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি কর্মী মেহেদী কবিরাজ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবাদ উল্যা গাজী, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফারুক কবিরাজ, ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিক রাড়ী, ৮ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরিফ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী ফারুক গাজী ও রায়হান, ৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী আল আমিন কবিরাজ, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মানিক আহমেদ তারেক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর আলী হাওলাদার, কর্মী নজরুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবদল কর্মী শরিফ বাগ, শাহজাহান মাঝি এবং ইউনিয়ন কৃষকদলের সদস্য সচিব শাহ আলী।’
তিনি আরও বলেন, ‘বহিষ্কৃতদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা বা উঠাবসা করার ব্যাপারে নেতাকর্মীদের নিষেধ করা হয়েছে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
রায়পুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহেদ আরমান বলেন, ‘বরিশাল ও লক্ষ্মীপুর জেলার সীমানা জটিলতা, জরিপ না হওয়া এবং মামলা-মোকদ্দমার কারণে এসব জমি বন্দোবস্ত দেওয়া যাচ্ছে না।’
রায়পুর থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন ভুঁইয়া জানান, এ পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনায় ৪টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৯ জনকে। কেউ কেউ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। পুলিশের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুর-সার্কেল) জামিলুল হক বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।’
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ত কর ম দ র ব এনপ র স ল ইসল ম স ঘর ষ র দখল উৎপ দ র ঘটন দখল র
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যাওয়ে ‘অভিষেকে’ নাঈমের ফাইফার
২০১৮ সালে নাঈম হাসানের টেস্ট অভিষেক। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাদা পোশাকে পথচলা শুরু। সাত বছর পর নাঈমের দীর্ঘ এক অপেক্ষা ফুরাল। দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট ম্যাচে বোলিংয়ের সুযোগ পেলেন তিনি। একটু ঘুরিয়ে হলেও বলা যায় অ্যাওয়ে ‘অভিষেক’। যেখানে ৫ উইকেট নিয়ে নাঈম নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
একটু ঘুরিয়ে কেন সেটা খোলাসার প্রয়োজন। ২০১৯ সালে ইডেনে নাঈমের খেলার সুযোগ হয়েছিল। একাদশে থেকে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করে ১৯ রান করেছিলেন। কিন্তু ২২ গজে হাত ঘোরানো হয়নি। ফিল্ডিংয়ে চোট পাওয়ায় নাঈম ছিটকে যান। ফলে তার অ্যাওয়ে ম্যাচে বোলিংয়ের অভিষেকের অপেক্ষা দীর্ঘ হয়। টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার সাত বছর পর দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট খেলেই বাজিমাত করলেন। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফাইফারের স্বাদ পেলেন। ৪৩.২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১২১ রানে ৫ উইকেট নেন এই অফস্পিনার।
আরো পড়ুন:
শ্রীলঙ্কার কড়া জবাব
ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের একাদশ ঘোষণা
এর আগে তিনবার ফাইফার পেয়েছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৬ উইকেট পেয়েছিলেন যা তার ক্যারিয়ার সেরা। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আছে ৫ উইকেট পাওয়ার কীর্তি। সাত বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে নাঈম ঘরের মাঠেও খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি। এই ম্যাচের আগে তার টেস্টের সংখ্যা ছিল ১২টি। সব মিলিয়ে ১৩ টেস্টে তার উইকেট ৪৪টি।
এই ম্যাচেও তার খেলা হতো কিনা সেটাও বিরাট প্রশ্নের। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ দুই ডান হাতি অফস্পিনার খেলানোর চিন্তা করতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। মিরাজ ও নাঈম একই সঙ্গে খেলতে পারেন। দেশের বাইরে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে। ব্যাটিংয়ে এগিয়ে থাকায় মিরাজ হয়ে যান অটোমেটিক চয়েজ। ফলে নাঈমকে থাকতে হয় ডাগআউটে। থাকতে হয় সুযোগের অপেক্ষায়। এই টেস্টের আগে হঠাৎ মিরাজের জ্বর আসায় নাঈমের ভাগ্য খুলে যায়। অফস্পিনারের সুযোগ হয় হাত ঘুরানোর। সুযোগটি দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে ফাইফারের স্বাদ পেয়ে গেলেন অ্যাওয়ে অভিষেকেই।
উইকেট ফ্ল্যাট। বল বিরতি দিয়ে ঘুরছে। সমান বাউন্সের উইকেট থেকে বাড়তি টার্ন ও বাউন্স পাওয়ায় নাঈমের বোলিং ছিল ধ্রুপদী। বাংলাদেশ ১০ রানের লিড পেয়েছে। নাঈমের ফাইফারের সুবাদেই মিলেছে এই সাফল্য। এই টেস্টে ফল পেতে হলে দ্বিতীয় ইনিংসেও অভাবনীয় পারফর্ম করতে হবে বোলারদের।
তার সঙ্গে তাইজুল ও মুমিনুল ১টি করে উইকেট পেয়েছেন। হাসান মাহমুদের পকেটে গেছে ৩ উইকেট।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল