পরামর্শক কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হোক
Published: 4th, May 2025 GMT
প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভেতরে থাকা আমলাতন্ত্র বড় বাধা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদের নেতৃত্বে গঠিত পরামর্শক কমিটি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শতাধিক সুপারিশ করে, যার মধ্যে শিক্ষকদের বেতন–ভাতা ও পদমর্যাদা বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। কমিটি ‘সহকারী শিক্ষক’ পদ বিলুপ্ত করে শুরুর পদ ‘শিক্ষক’ করার সুপারিশ করেছে। এ ক্ষেত্রে ‘শিক্ষক’ হিসেবে শুরুতে বেতন গ্রেড হবে ১২তম (শুরুর মূল বেতন হবে ১১ হাজার ৩০০ টাকা)। দুই বছর পর চাকরি স্থায়ীকরণ ও আরও দুই বছর পর তাঁরা ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হবেন। তখন তাঁদের বেতন গ্রেড হবে ১১তম।
এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জনবলকাঠামোতে (অর্গানোগ্রাম) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের সুপারিশ করা উন্নীত গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বেতন স্কেল উন্নীতকরণের চেকলিস্ট অনুযায়ী প্রস্তাব দিতে অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি, তাঁদের বেতনকাঠামোর সূচনা হতে হবে ১১তম গ্রেড থেকে। তবে প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে কমিটি যে বেতন গ্রেড দশম করার সুপারিশ করেছে, সেটা তাঁরা মেনে নিয়েছেন। আদালত যে তাঁদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা দেওয়ার কথা বলেছেন, সেটা বাস্তবায়নের বিষয়ে মন্ত্রণালয় কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
এটাই হলো আমলাতন্ত্র। কোনো সমস্যা তারা দ্রুত সমাধান করতে চায় না। সেটা করলে তাদের গুরুত্ব কমে যায়। এই মানসিকতা থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেরিয়ে আসতে হবে।
বর্তমানে সারা দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌনে চার লাখের মতো শিক্ষক আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকদের বর্তমান বেতন গ্রেড ১১তম। আর সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩তম (শুরুর মূল বেতন ১১ হাজার টাকা, এর সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যোগ হয়)।
ইতিমধ্যে শিক্ষকেরা আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছেন। শিক্ষাবছরের পাঁচ মাসের মাথায় শিক্ষকেরা আন্দোলনে গেলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষকের বেতন স্তর উন্নীত করার বিষয়ে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
উন্নত দেশ তো বটেই, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন–ভাতা অত্যন্ত কম। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন যেখানে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় শুরু, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষকদের বেতন শুরু হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা থেকে। পাকিস্তানে ৩০ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কায় ২৭ হাজার টাকা, নেপালে ৩৫ হাজার টাকা এবং ভুটানের শিক্ষকেরা ৩৩ হাজার টাকা মাসে বেতন পান।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়াতে হলে এর অবকাঠামোগত উন্নয়নও জরুরি। অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনমতো পাঠকক্ষ নেই, নেই শিক্ষকদের আলাদা কক্ষ। অনেক সময় কক্ষের অভাবে দুই পালায় শিক্ষকদের পাঠদান করতে হয়। আবার অনেক বিদ্যালয়ে নির্ধারিত বিষয়ের শিক্ষক থাকেন না, অন্য বিষয়ের শিক্ষক জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে যান। এসব বিষয়েও কমিটির সুপারিশগুলো সরকার দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে আশা করি।
সরকারকে মনে রাখতে হবে, শিক্ষকদের বঞ্চিত রেখে কখনোই শিক্ষার মান বাড়ানো যাবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প র শ কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় নাগরিক পার্টির গঠনতন্ত্র অনুমোদন
প্রতিষ্ঠার চার মাসের মাথায় গঠনতন্ত্র তৈরি করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ষষ্ঠ সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়। পরে এর বিভিন্ন দিক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
আখতার হোসেন বলেন, কিছু সংশোধনীসহ সভায় এনসিপির ‘খসড়া গঠনতন্ত্র’ অনুমোদিত হয়েছে। আগামী কাউন্সিলের আগে প্রয়োজন সাপেক্ষে বর্তমান প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটি এতে সংশোধনী আনতে পারবে।
গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আখতার বলেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সারা দেশের কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। একজন সদস্য জীবনে সর্বোচ্চ দুইবার সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এবং সর্বোচ্চ দুইবার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলের রাজনৈতিক পরিষদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।
এনসিপির রাজনৈতিক পরিষদ ন্যাশনাল কাউন্সিলের (জাতীয় পরিষদ) সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবে। ‘রাজনৈতিক পরিষদ’ সর্বনিম্ন ১১ জন থেকে সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্যের হবে। ১১ জন সদস্য ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবেন। তার মধ্যে ন্যূনতম তিনজন নারী সদস্য থাকতে হবে। পদাধিকারবলে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাজনৈতিক পরিষদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। এই পরিষদের বাকি দুজন সদস্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বারা মনোনীত হবেন।
এনসিপির একটি ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল’ থাকবে। এই ফোরাম ‘রাজনৈতিক পরিষদ’ নির্বাচন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন এবং জরুরি সময়ে কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দায়িত্ব পালন করবে। কেন্দ্রীয় কমিটি, অঙ্গসংগঠনের নির্বাহী কমিটি, জেলা পদমর্যাদার কমিটি থেকে পাঁচজন এবং উপজেলা পদমর্যাদার কমিটি থেকে দুজন সদস্যের সমন্বয়ে ন্যাশনাল কাউন্সিল গঠিত হবে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটি দলের সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলী, অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাধারণ সদস্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে জেলা সভাপতিদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ হবে তিন বছর। মেয়াদের শেষ ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
এনসিপির এই গঠনতন্ত্র দলীয় ফোরামে অনুমোদিত হলো নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদন সময়সীমা শেষ হওয়া সামনে রেখে। আগামী রোববার এই সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
এনসিপির নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন দাখিলের বিষয়ে সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সামগ্রিক যোগাযোগের জন্য মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন, যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।