উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মিজোরাম থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই মার্কিন নাগরিককে আটক করেছে স্থানীয় পুলিশ। শুক্রবার রাজ্যটির লেংপুই বিমানবন্দরে ওই দুই মার্কিন নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। 

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল চট্টগ্রামে সক্রিয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে। এই অভিযোগ সামনে আসার পরই রাজ্যটির রাজধানী আইজল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। 

গোয়েন্দা সূত্রে খবর ছিল, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই মার্কিন নাগরিকসহ মোট চারজন মার্কিন নাগরিক পর্যটন ভিসায় ভারতে রয়েছেন এবং ২ মে তারা আইজলে আসছেন। এরপরই তাদের সন্ধানে অভিযানে নামে গোয়েন্দারা। গ্রেপ্তারকৃত দুজনের নাম চেকুন ও সারন। তবে বাকি দুজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। 

আরো পড়ুন:

বাবা-মা হতে যাচ্ছেন নাগা-শোভিতা?

এবার ভারতীয় জাহাজ নিষিদ্ধ করল পাকিস্তান

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, গত শুক্রবার, ২ মে লেংপুই বিমানবন্দর থেকে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন পুরুষ, অন্যজন নারী। পরদিন শনিবার সেখান থেকে তাদের দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর কারণ হিসেবে ওই কর্মকর্তা জানান, “গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের কারোরই রাজ্যে প্রবেশের জন্য ‘সুরক্ষিত এলাকা পারমিট’ (প্রোটেকটেড এরিয়া পারমিট বা পিএপি) নেই।” 

শনিবার একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা থেকে ভারতে পালিয়ে আসা বম সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন সদস্য মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন। 

আইজলে পৌঁছানোর পরেই চিটাগং হিল ট্র্যাক্টসে (সিএইচটি) অত্যন্ত সক্রিয় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএ/এফ)-এর সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনা ছিল ওই মার্কিন নাগরিকদের। আটককৃতরা কেএনএ/এফ-এর নেতা নাথান লনচেও বমের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

নাথান লনচেও বম বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএ/এফ) এবং এর সশস্ত্র শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির প্রতিষ্ঠাতা। যদিও বর্তমানে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। 

গোয়েন্দা সূত্রে এও জানা গেছে, ওই চারজন মার্কিন নাগরিক মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে লংতলাই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় বম সম্প্রদায়ের শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পরিকল্পনা করছিল। 

সূত্রে খবর, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট গঠনে প্রাথমিকভাবে অন্তত দুজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এবং সেই সময় থেকেই এখনো পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় উসকানিমূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এই তথ্য পাওয়ার পরই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। 

এমনকি এও জানা গেছে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি বিভ্রান্ত সৃষ্টির জন্য ‘কেএনএ’ সহ বিভিন্ন সংক্ষেপিত নাম ব্যবহার করে আসছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই এই সংগঠনটি ‘কেএনএ/এ’ নাম ব্যবহার করেছিল, বর্তমানে তারা ‘কেএনএ/এফ’ ব্যবহার করছে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

লিফলেট বিতরণে যাওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলার অভিযোগ

মাদারীপুরের শিবচরে তারেক রহমানের ৩১ দফা–সংবলিত লিফলেট বিতরণের সময় বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার রাত আটটার দিকে শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লিফলেট নিয়ে বের হন মাদারীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে লাবলু সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থকেরা। শিবচর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করেন তাঁরা। ফেরার পথে উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকায় এলে শিবচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান বাবুল ফকিরের লোকজনের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ।

এ সময় উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে আহত হন উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন। ভাঙচুর করা হয় পাঁচটি মোটরসাইকেল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিবচর থানা–পুলিশ ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া সুমন আহম্মেদ ও রাশেদ মৃধা বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা লিফলেট নিয়ে তাঁরা চরশ্যামাইল এলাকার কাজীর দোকান নামক স্থানে এলে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল ফকিরের ছেলে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা সুমন ফকিরের নেতৃত্বে শতাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে তাঁদের অনেক লোকজন আহত হয়েছেন। মোটরসাইকেল রেখে তাঁদের অনেকে সেখান থেকে ফিরেছেন।

বিএনপি নেতা সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজন অনুসারীর কথাকাটাকাটি হয়। পরে বিষয়টি মিটমাটও হয়ে গেছে। লিফলেট বিতরণ শেষ করে মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরার সময় রাস্তায় গতিরোধ করে দুই দিক থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করে। কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। হামলায় যারা আহত বেশির ভাগই বিএনপির কর্মী সমর্থক। তিনি হামলার নিন্দা জানিয়ে জড়িতের বিচার দাবি করেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে বাবলু ফকিরের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমিসহ অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিই। এ ঘটনায় থানায় এখনো অভিযোগ দেয়নি কেউ। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ