ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় যে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের জন্য ন্যায় বিচারের দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, দেশের ভেতর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উস্কানি না দিয়ে সীমান্ত সুরক্ষায় নজর দিন।

পশ্চিমবঙ্গে দাঙ্গার জন্য বিজেপি ও কেন্দ্র সরকারকে দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি বিজেপি হচ্ছে ‘ছুপা রুস্তম’। আমি যদি ওদের জিজ্ঞাসা করি 'হু আর দ্য হেভি লোডেড ভাইরাস'? কারা সব সময় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করে এবং দেশকে বিক্রি করছে?” 

সোমবার (৫ মে) পশ্চিমবঙ্গের দাঙ্গাকবিলত মুর্শিদাবাদ জেলা সফরে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন সব এসব মন্তব্য করেন মমতা।

আরো পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের সহিংসতার বিষয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য নাকচ ভারতের

মুর্শিদাবাদে সহিংসতায় বাংলাদেশকে জড়ানোর চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ

প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্দেশে মমতা বলেন, “সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করার বদলে সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়ে যত্নবান হোন, ভারতকে সুরক্ষার ব্যাপারে যত্নবান হোন। আমরা ভারতকে ভালোবাসি। ভারত আমাদের মাদারল্যান্ড। যেকোনো দুর্যোগের হাত থেকে ভারতকে বাঁচান।” 

“দয়া করে নোংরা রাজনীতির খেলা খেলবেন না। আমি শেষ ব্যক্তি যে এই নোংরা খেলা সহ্য করছে,” যোগ করেন মমতা। 

ভারতের ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরোধিতার প্রতিবাদের নামে গত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুর্শিদাবাদে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সুতি, ধুলিয়ান, শামসেরগঞ্জসহ জেলার বেশ কিছু জায়গায় হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট, সম্পত্তি নষ্ট, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বোমা, গুল, পুলিশ ও ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। 

ওই সহিংসতায় প্রাণ হারান তিনজন, আহত হন অনেকে। ঘর ছাড়া হয় কয়েক শত মানুষ। 

পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সোমবার দাঙ্গাকবিলত মুর্শিদাবাদ সফর করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মুর্শিদাবাদে পৌঁছেই জেলাপ্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ জন্য কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি, কেন্দ্রীয় সরকার ও বিএসএফকে দায়ী করেন মমতা। 

দাঙ্গা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যারা দাঙ্গা করেছে তারা বুঝে রাখুন, আপনারা দাঙ্গা করেছেন, আর আমাকে গালাগালি শুনতে হচ্ছে। এটা কেন হবে? আমি কি আপনাদের কাউকে বলেছি কারো বিরুদ্ধে দাঙ্গা করতে? 

এসময় বিএসএফের গুলি চালানোকে দাঙ্গার জন্য দায়ী করে মমতা বলেন, “আর বিএসএফ-ই বা কেন গুলি চালিয়েছিল? বিএসএফ যদি গুলি না চালাত, তবে পরের দিনের ঘটনা ঘটত না। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।” 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি নিশানা করেন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।

মমতা বলেন, “আমি আমার জীবনে অনেক কিছু দেখেছি। আমি যখন সংসদে ছিলাম, তখন ১০ থেকে ১২ জন প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছি। আমি তাদের সঙ্গে কাজ করেছি।”

“সংসদে থাকাকালীন আমি তাদের খুব কাছ থেকে দেখেছি কিন্তু আমি কখনো এ রকম অ্যাকটিং প্রধানমন্ত্রী দেখিনি।”

পরক্ষণেই তার প্রশ্ন, “এখন আমাদের দেশের অ্যাকটিং প্রাইম মিনিস্টার কে? আমি জানি না। এর উত্তর বিজেপি ভালো দিতে পারবে।” 

নরেন্দ্র মোদিকে আন্তরিক, সৎ, যুক্তিসঙ্গত এবং দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মমতা বলেন, “আপনি যখন চেয়ারে আছেন, তখন মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারেন না। আমি এই অ্যাক্টিং প্রধানমন্ত্রীকে বলব, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা অশান্তি সৃষ্টির পরিবর্তে সীমান্ত সুরক্ষার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া উচিত।” 

মুর্শিদাবাদের ঘটনার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সবকিছুই পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে। বাংলা এসব সহ্য করবে না। কারা কারা এই ঘটনার পিছনে রয়েছে, আমি সব কিছু ক্রস চেক করেছি। ইতোমধ্যেই আমি বেশিরভাগ ষড়যন্ত্রের উন্মোচন করেছি। সব তথ্য সামনে আসলে আমি এটি মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করব।” 

মিডিয়াকেও তিনি মুর্শিবাদ সহিংসতার পেছনের সত্য উদঘাটনের আহ্বান রেখে বলেন, “আপনারাও সত্য তুলে আনুন, দেশের মানুষকে জানান; যা যা সত্য সব আমি মেনে নেব।”

ঢাকা/সুচরিতা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম খ যমন ত র কর ন ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিজিবিতে চাকরি পেলেন ফেলানীর ছোট ভাই

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানীর ছোট ভাই মো. আরফান হোসেন (২১) বিজিবির সিপাহি পদে চাকরি পেয়েছেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ বিজিবি আয়োজিত সিপাহী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তিনি উত্তীর্ণ হন।

আজ বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটে ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম আরফান হোসেনের হাতে নিয়োগপত্র হস্তান্তর করেন। এ সময় আরফান হোসেনের বাবা মো. নুরুল ইসলামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, ‘বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে আছে। ফেলানীর ছোট ভাই বিজিবি নিয়োগ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। আমরা আশা করি, প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি একজন যোগ্য বিজিবি সদস্য হিসেবে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন।’ তিনি বলেন, সীমান্তে ফেলানী হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে বিজিবি সর্বদা সীমান্তে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেষ্ট রয়েছে।

লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১১ সালে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছিল কিশোরী ফেলানী খাতুন। সীমান্ত হত্যার সেই মর্মস্পর্শী দৃশ্য দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ফেলানীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ন্যায়বিচারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ফেলানী খাতুনের ছোট ভাই আরমান হোসেনের (২১) এই নিয়োগ যেন দীর্ঘদিনের এক চাপা বেদনার মাঝে আশার দীপ্তি এনে দিয়েছে। পরিবারসহ স্থানীয়দের বিশ্বাস, দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করে যাওয়া বোন ফেলানী খাতুনের অসমাপ্ত স্বপ্ন একদিন আরমান হোসেন পূর্ণ করবেন।

এইচএসসি পাস আরফান হোসেন নিয়োগপত্র পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ছেলের এই চাকরি তাঁর যোগ্যতায় হয়েছে, সবার দোয়াও ছিল। তাঁর ছেলে চাকরিজীবনে সততা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হবে। তাহলে তাঁর মেয়ে ফেলানীর আত্মা শান্তি পাবে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্তে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার পর কাঁটাতারে ঝুলে ছিল বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুনের মরদেহ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেহেরপুর সীমান্তে ১৮ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ
  • ঠাকুরগাঁও সীমান্তে মা-ছেলেকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ, জুড়ী সীমান্তে তরুণকে হস্তান্তর
  • নওগাঁ সীমান্ত দিয়ে আরও ১৬ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • বিজিবিতে চাকরি পেলেন ফেলানীর ছোট ভাই