Samakal:
2025-08-07@08:08:11 GMT

রঙিন ছাতা

Published: 5th, May 2025 GMT

রঙিন ছাতা

আজ রোদের ঝাঁজ নেই। বৃষ্টির সম্ভাবনাও কম। তবু সাফওয়ান সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে বেড়ায় একটা রঙিন ছাতা মাথায় দিয়ে। রোদ হোক, মেঘ হোক ছাতা হাতে থাকেই। আজ মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই আকাশে; তবুও ছাতা। তার ব্যাগে বইপত্র, কাঁধে ঝোলানো পানির বোতল আর হাতে সেই বিশাল রঙিন ছাতা। সবাই ঠাট্টা করে, পেছন পেছন আওয়াজ করে– ‘ছাতা মিয়া আসছে! ছাতা মিয়া!’ সাফওয়ানের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে নীরবে হাঁটে নিজের মতো। যেন এই পৃথিবীতে তার কোনো তাড়া নেই, কোনো লজ্জা নেই, কোনো ব্যথা নেই।’
আজ ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে বসে সাফওয়ান ছাতা খুলে সামনে রেখে ভেজা স্যান্ডউইচ কামড় দিচ্ছিল, তখনই এলো মিরাজ। মিরাজের হাতে দুই কাপ চা। একটা বাড়িয়ে দিল সাফওয়ানের দিকে। বলল– ভাইরে, সত্যি করে বল, ছাতাটা কিসের জন্য?
সাফওয়ান মুখ তুলে তাকাল, চোখেমুখে এক অদ্ভুত শান্তি। আস্তে বলল, স্মৃতি রক্ষা করি।
মিরাজ হাসল, কার স্মৃতি ছাতায়?
সাফওয়ান কিছু বলল না। এক চুমুকে চা শেষ করে উঠে পড়ল। সেই রঙিন ছাতা খুলে মাথার ওপর ধরল আর হাওয়ায় ভেসে ভেসে চলে গেল কলেজের গেটের দিকে।
মিরাজ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকল। ছেলেটা এমন কেন?
পরের দিন সকালে আবার দেখা হলো। আজ ক্যান্টিনে ছিল রিমি। নতুন ছাত্রী। তার হাতে মোটা মোটা বই আর অগোছালো চুল। রিমি সাফওয়ানের পাশের টেবিলে বসে পড়ল। হঠাৎ তার কলম মেঝেতে পড়ে গেল। সাফওয়ান ছাতা হাতে রেখে নরম গলায় বলল, তোমার কলম।
রিমি মৃদু হাসল। বলল, থ্যাঙ্ক ইউ ছাতা ভাই।
সাফওয়ান লজ্জা পেল। এতদিন পরে কেউ তাকে এই নামে ডাকল না বিদ্রূপ করে। বরং এমনভাবে বলল যেন নামটা আদরের।
রিমি বলল, আপনার ছাতাটা খুব সুন্দর।
সাফওয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল, এটা আমার দাদির ছাতা। দাদি মারা যাওয়ার সময় বলেছিলেন– ‘যখন খুব কষ্ট পাবে, এই ছাতা মাথায় দিও, ছায়া পাবে।’ 
রিমি চুপ করে গেল। ছেলেটার কথায় যেন বাতাসের ভেতর একটা নরম কষ্ট ছড়িয়ে পড়ল। তারপর থেকে রিমি প্রায়ই সাফওয়ানের পাশে বসত। কখনও ছাতা নিয়ে গল্প করত, কখনও নিজেদের বই বদলে নিত। মাঝেমধ্যে রিমি বলত, ছাতা নিয়ে চল আজ ইউনিভার্সিটির পেছনে বটগাছের নিচে বসি।
এভাবেই কেটে গেল মাস তিনেক। একদিন রিমি এলো না। পরদিনও না। তৃতীয় দিনও না। চতুর্থ দিনে খবর এলো– রিমির বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাকে গ্রামের বাড়ি যেতে হয়েছে।
সাফওয়ান সারাদিন ছাতাটা বন্ধ করে হাতে রাখল। তার মাথার ওপর তখন রোদ্দুর পুড়ছিল, গরমে মাথা ঝিমঝিম করছিল, কিন্তু সে ছাতা খোলেনি। রিমির অনুপস্থিতি যেন তার মাথার ওপর কোনো ছায়া রাখতে পারছিল না।
আরও এক সপ্তাহ কেটে গেল।
হঠাৎ এক বিকেলে মেঘ করে বৃষ্টি এলো। পুরো ইউনিভার্সিটিতে সবাই ছুটছে কোনো ছাদের নিচে আশ্রয় নিতে। ক্যান্টিনের সামনে দাঁড়িয়ে সাফওয়ান ছাতা খুলে ধরেছে মাথার ওপর। ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা কণ্ঠ– ছাতাটা আমার দিকে দেবে?
পেছন ফিরতেই দেখে, রিমি দাঁড়িয়ে, ভেজা চুল, ভেজা চোখ। সাফওয়ান ছাতাটা তার দিকে এগিয়ে দিল। দু’জন এক ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। বৃষ্টি ঝরছিল অবিরাম। রিমি বলল, আমাকে একটা ছায়া দেবে সারাজীবন?
সাফওয়ান মাথা নিচু করে বলল, আমার ছাতা আছে। ছাতা ভাগ করে নিলে দু’জনেই ছায়ায় থাকব। কান্নাভেজা চোখে হেসে উঠল রিমি। 
কলেজের মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে দুটো মানুষ– এক রঙিন ছাতার নিচে নতুন এক গল্প বুনছিল।
সুহৃদ ঢাকা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ স ফওয় ন ছ ত ম থ র ওপর স ফওয় ন র রঙ ন ছ ত

এছাড়াও পড়ুন:

‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’

‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ অপারেশন টেবিলে শুয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক চিকিৎসকের মুখে তারেক শাহরিয়ার তন্ময়কে শুনতে হয়েছিল এমন কটূক্তি।

তন্ময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল দিনে পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থী। তার কাছে হাসপাতালের সেই অপমান আজো দগদগে ক্ষত।

গত বছর ১৬ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তন্ময়ও অংশ নেন। রাজধানীর ভাটারা থানা ও নতুন বাজারের রাস্তায় দিনভর চলতে থাকে স্লোগান ও মিছিল। ১৭ জুলাই আন্দোলনে সাময়িক বিরতি এলেও পরদিন সকালেই ফের রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা আয়োজন

বাকৃবি ২ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৫৪ জনকে শাস্তি

তন্ময় বলেন, “বন্ধুর ফোনে খবর পেয়ে বের হওয়ার আগে বেলকনি থেকে দেখি আওয়ামী লীগের কিছু লোক বস্তা থেকে অস্ত্র-ছুরি বের করছে। তখনই ভয় পেয়ে আইডি কার্ড গলায় ঝুলাইনি।”

তিনি বলেন, “সেদিন নতুন বাজার থেকে শুরু হওয়া মিছিল বাঁশতলা পেরিয়ে উত্তর বাড্ডার দিকে এগোতে থাকলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। পুলিশও টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ঠিক তখনই পুলিশের শর্টগানের গুলি এসে লাগে আমার বাম চোখে।”

রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে প্রথমে এএমজেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। চিকিৎসকরা জানান, চোখ ফেরানো সম্ভব নয়।

তন্ময় বলেন, “অপারেশনের আগে এক চিকিৎসক এসে বলেছিলেন, ‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ তখন আমি দুর্বল অবস্থায় অপারেশন টেবিলে শুয়ে কিছু বলতে পারিনি।”

অপারেশনের পরও তাকে অন্য রোগীর সঙ্গে একই বেডে রাখা হয়। বাইরে ছাত্রলীগের হামলার চেষ্টা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে পাশে দাঁড়ান ও খরচ বহন করেন। খবর পেয়ে রংপুর থেকে ছুটে আসেন তার মা-বাবা। ছেলেকে দেখে ভেঙে পড়েন তারা।

পরে বিদেশে চিকিৎসার চেষ্টা হলেও ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহায়তা, শিক্ষক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা পেয়েও উন্নত চিকিৎসা হয়নি। এখন বিদেশে গেলেও তেমন লাভ নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা।

স্বৈরাচার পতনের এক বছর পর দেশ নতুন আশা দেখলেও তন্ময়ের চোখে আলো ফেরেনি। তিনি বলেন, “১৮ জুলাই শুধু আমার চোখে গুলি লাগেনি, সেদিন আমার স্বপ্নেও গুলি লেগেছিল। আমি শুধু একটা চোখ হারাইনি, হারিয়েছি জীবনের ছন্দও।”

তন্ময়ের জীবনে যে অন্ধকারের দাগ লেগেছে, তা দেশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। স্বৈরাচার বিদায়ের ১ বছর পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য সময় প্রয়োজন।

তন্ময়ের মতো অসংখ্য তরুণের ত্যাগ ও বেদনায় আজকের মুক্তি সম্ভব হয়েছে, যা আমাদের সবার কাছে চিরস্মরণীয়।

ঢাকা/রাকিবুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টানা তিন দিন ৪ ঘণ্টা করে ঘুমালে শরীরে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে
  • শিবনারায়ণ রায়ের রবীন্দ্রমূল্যায়ন
  • ইয়েলো টিশার্ট
  • ‘কিরে, কেমন লাগছে?’, রাজের প্রাক্তন স্ত্রীর পোস্ট ঘিরে তোলপাড়
  • ‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’
  • আব্দুল কাদের শিবিরের সাথী ছিলেন, দাবি ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতির
  • মোহাম্মদ সিরাজ: বুমরাহীন ভারতের শেষ আশার নাম