এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মঙ্গলবার ৬ ঘণ্টা চলবে মোটরসাইকেল-অটোরিকশা
Published: 5th, May 2025 GMT
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মঙ্গলবার লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরার পর তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন দলের নেতা-কর্মীরা। ফলে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত যানজটের আশঙ্কা করছে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ছয় ঘণ্টার জন্য মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে যানজট ও ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলতে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলতে পারবে এই দুটি যান। প্রতিটি যানের জন্য ২০ টাকা টোল দিতে হবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আখতার প্রথম আলোকে বলেন, মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা চলতে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি সাময়িক। ঢাকা মহানগর পুলিশের অনুরোধেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা শেষে সোমবার কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশের পথে রওনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। কাতারের রাজধানী দোহায় যাত্রাবিরতি দিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে তাঁর। খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি বিমানবন্দর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসে না এসে নিচের রাস্তা দিয়ে গুলশানে যাওয়ার কথা। এ জন্যই এক্সপ্রেসওয়ের ব্যবহারে কিছুটা শিথিলতা আনা হয়েছে বলে সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন। এই পথে বিএনপি ও এর বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কারা কোথায় অবস্থান নেবেন, তাঁরা কী করতে পারবেন, কী করতে পারবেন না—সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন তিনি।
২০২৩ সালে চালুর পর থেকেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দুই এবং তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। তবে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় টোল প্লাজায় ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের পর কয়েক দিন সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হয়। মূলত এক্সপ্রেসওয়েতে জট ও দুর্ঘটনা এড়াতেই দুই ও তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এটি করা হয়েছে এর নির্মাণ ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের আগ্রহে।
বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি)। প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়ালসড়কের একাংশ চালু হয়েছে। বাকি পথের নির্মাণকাজ চলমান আছে। এক্সপ্রেসওয়েটি শুরুতে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত চালু করা হয়। এরপর কারওয়ান বাজর পর্যন্ত তা সম্প্রসারণ করা হয়।
আরও পড়ুনখালেদা জিয়া ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ছেড়েছেন২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনখালেদা জিয়া এলে ঢাকার কোন কোন পথে অভ্যর্থনা, রিজভীর নির্দেশনা০৪ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করে।
হাদিসে সালাতুল হাজতের ফজিলত ও নিয়ম বর্ণিত আছে, যা মুমিনের আল্লাহর ওপর ভরসাকে দৃঢ় করে।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়মসালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা সাধারণত দুই রাকাত আদায় করা হয়। তবে ইচ্ছা হলে চার বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়। নামাজের নিয়ম বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:
১. অজু করা
সালাতুল হাজত নামাজের জন্য পূর্ণ পবিত্রতা প্রয়োজন। তাই প্রথমে অজু করতে হবে। অজুর ফরজ চারটি: মুখমণ্ডল ধোয়া, দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া, মাথায় মসেহ করা এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া। এ ছাড়া সুন্নত অনুযায়ী অজু করা উত্তম, যেমন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা, কুলি করা, নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ইত্যাদি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)
সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হয়।২. নিয়ত করা
নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। নিয়তের উদাহরণ: ‘আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।’
নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট, মুখে বলা জরুরি নয়। (সাইয়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)
আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫৩. দুই রাকাত নামাজ আদায়
প্রথম রাকাত: তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া, যেমন সুরা ইখলাস। তারপর রুকু, সিজদা ও অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করা।
দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়া, রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।
এই নামাজ সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে, তবে খুশুখুজু (মনোযোগ) বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)
৪. নামাজের পর দোয়া
নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন বা মানুষের কাছে কোনো দরকার থাকে, সে যেন অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবীর ওপর দরুদ পড়ে এবং এই দোয়া পড়ে:
উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরর, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসম। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু, ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু।’
অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও দয়ালু। পবিত্র মহান আরশের প্রভু আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য। আমি তোমার কাছে তোমার রহমতের কারণ, ক্ষমার দৃঢ়তা, প্রতিটি পুণ্যের লাভ এবং সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করি। আমার কোনো গুনাহ রেখো না, যা তুমি ক্ষমা করোনি এবং কোনো দুশ্চিন্তা রেখো না, যা তুমি দূর করোনি।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস:: ৪৭৮)
৫. অতিরিক্ত দোয়া
ওপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। দোয়া করার সময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং ধৈর্যের সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষা করা।
আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫সালাতুল হাজতের সময়সালাতুল হাজত নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। এটি যেকোনো সময় আদায় করা যায়, তবে নিষিদ্ধ সময় (যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বা ঠিক মধ্যাহ্নে) এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোত্তম সময় হলো:
রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)।
ফজর বা মাগরিব নামাজের পর।
জুমার দিনে, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে। (মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, পৃষ্ঠা: ১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)
সালাতুল হাজতের ফজিলতসালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)
এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানসিক শান্তি ও ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।
সতর্কতানিষিদ্ধ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা।
খুশুখুজু: নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে ইবাদত পূর্ণতা পায়।
হারাম প্রয়োজনে না: সালাতুল হাজত শুধু জায়েজ ও হালাল প্রয়োজনের জন্য পড়তে হবে।
ধৈর্য: দোয়ার ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরা, কারণ আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে প্রয়োজন পূরণ করেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, ২/৪৮০, দারুল মা’রিফা: ১৯৮৯)
সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি অসাধারণ মাধ্যম। এটি দুই রাকাত নফল নামাজ, যার পর নির্দিষ্ট দোয়া ও নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা হয়। জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও এই নামাজ সহজেই আদায় করা যায়।
আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫