কাতার সফর শেষে দেশে ফিরলেন সেনাপ্রধান
Published: 5th, May 2025 GMT
কাতার সফর শেষে আজ সোমবার দেশে ফিরেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সফরকালে তিনি কাতারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানায়।
গত শনিবার সরকারি সফরের অংশ হিসেবে কাতারে যান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেদিন তিনি কাতার অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট শেখ জোয়ান বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে দুই দেশের মধ্যে ক্রীড়াক্ষেত্রে সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ এবং বাংলাদেশে ‘অলিম্পিক ভিলেজ’ নির্মাণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।
পরদিন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী শেখ সাউদ বিন আব্দুল রহমান বিন হাসান বিন আলি আল থানি এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল আজিজ বিন ফয়সাল বিন মুহাম্মদ আল থানির সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, স্থানীয় প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্ভাবনা এবং দক্ষ জনশক্তি বিনিময়সহ বিবিধ বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ ছাড়া ওয়াকার-উজ-জামান কাতার সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জসিম বিন মুহাম্মদ আল মানাইর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনায় দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার, যৌথ প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণার্থী বিনিময় এবং কাতারে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের কর্মসংস্থানের বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়।
উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী প্রধান ৩ মে সরকারি সফরে কাতার গমন করেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাখাইনে করিডোরের উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করে ইইউ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে করিডোরের উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করেন তিনি। বাংলাদেশের মানবিক অংশীদার হিসেবে শরণার্থীদের সহায়তার ক্ষেত্রে বাস্তববাদী থাকতে পেরে তিনি আনন্দিত। আন্তঃসীমান্ত সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সরকার এবং জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতীয় নির্বাচন কখন হবে– এটি বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তরণকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে যাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন, যাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জিত হয়। তবে সংস্কারগুলো সম্পন্ন করা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দিয়ে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে অংশ নেন তিনি। ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন।
রাখাইনে মানবিক করিডোর নিয়ে এক প্রশ্নে মাইকেল মিলার বলেন, শরণার্থীরা এ প্রান্তে থাকলে আমরা তাদের প্রয়োজন এখানে মেটাব। তারা যদি সীমান্তের অপর প্রান্তে থাকে, তাহলে আমাদের দেখতে হবে কীভাবে সেখানেও সহায়তা পাঠানো যায়। এর মধ্য দিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি ভালো হতে পারে। পৃথিবীর নানা স্থানে ইইউ আন্তঃসীমান্ত সহায়তা করেছে এবং এটা এ ক্ষেত্রেও কাজ করতে পারে। তবে এটা তখনই সফল হতে পারে, যখন দুই প্রান্তের মানুষ নিরাপদ থাকে এবং সরকারগুলো একমত হয়।
সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের কৌশলগত পছন্দের কেন্দ্রে রয়েছে মৌলিক অধিকার ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। আমরা একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল এক বিশ্বে বসবাস করছি।
বাংলাদেশের সমৃদ্ধি হচ্ছে ইইউর সমৃদ্ধি। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ইইউর স্থিতিশীলতায়। এ কারণে আমরা অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব শক্তভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকে সমর্থন করছি। গত ডিসেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইইউ রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমরা এতে যোগ দিয়েছি বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহ থেকে। গত আট মাসে আমি পর্যবেক্ষক হিসেবে লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথে রাজনৈতিক যাত্রা চলমান। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য সুযোগ, যাতে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত ও গণতন্ত্র পুনর্বহাল করা যায়। পাশাপাশি গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ যাতে মুক্তভাবে কাজ করতে পারে।’
চলমান সংস্কার নিয়ে মাইকেল মিলার জানান, তিনি ইউরোপের অর্ধেক সংখ্যক দেশকে স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তর হতে দেখেছেন। বাংলাদেশে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইইউ সহযোগিতা করতে চায়। একই সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সাহায্য, বাংলাদেশের সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে চায়। একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা গড়তে ইইউ সাহায্য করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ যে রূপান্তরের মধ্যে রয়েছে, তা ইইউর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা চান এমন বাংলাদেশ, যাদের সঙ্গে ইইউ কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, ইইউ বাংলাদেশকে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে প্রস্তাব দিয়েছে। বন্দর ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে তারা কাজ করছে। এ ছাড়া অন্যান্য অনিরাপদ পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ইইউর সহযোগিতা দেখতে চান তারা। পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে তারা এ অঞ্চলে একসঙ্গে কাজ করছেন। অভিবাসন নিয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, নিরাপদ, সম্মানজনক ও নিয়মিত অভিবাসনের পক্ষে ইইউ। তবে দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ থেকে প্রায়ই অভিবাসন দেখা যায় অনিয়মিত, অসম্মানজনক ও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচনের সময় নিয়ে তাদের কোনো মত নেই এবং নির্দিষ্ট কোনো তারিখে নির্বাচন করার জন্য কাউকে চাপ দিচ্ছেন না। সংস্কার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংস্কার বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত সময় থাকা দরকার এবং পরিবেশটা এমন থাকা উচিত যেন কাজ করতে গিয়ে দম ফেলার সুযোগ থাকে। দেখা যাক, নির্বাচনের সময় নিয়ে কতটা ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়।
রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কঠোর পরিশ্রম করছে মন্তব্য করে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা সংস্কারের উচ্চাভিলাষী এজেন্ডাকে সমর্থন করি এবং রাজনৈতিক দল ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে সমঝোতার জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করি, খুব স্পষ্টভাবে সংস্কারের একটি অগ্রাধিকারমূলক তালিকা ঠিক করে তা অর্জনের চেষ্টা করা হবে।’ তিনি জানান, সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা বিষয়ে অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অর্থায়নের সুযোগ আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় পাশে দাঁড়ানোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে ইউরোপের।
ইইউর আমন্ত্রণে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে দলটির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের ব্রাসেলস সফর বিষয়ে জানতে চাইলে মাইকেল মিলার বলেন, ‘দলটির আগ্রহে আমরা প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। বিএনপি, এনসিপি বা অন্য যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদরদপ্তরের দরজা খোলা। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলগুলোর মতামত এবং জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা বিষয়ে আমরা নিজ নিজ দলের ভাষ্য শুনতে আগ্রহী।’
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন নিয়ে চলমান বিতর্ক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইইউ রাষ্ট্রদূত জানান, এটি একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে তারা নারী-পুরুষের সমান অধিকারে বিশ্বাসী। সারাবিশ্বে তারা এই ধারণার বিকাশে কাজ করে চলেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখতে চান।
ইইউ রাষ্ট্রদূতের মতে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নৃশংসতা বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকলে বিচার প্রক্রিয়ায় সময়ক্ষেপণ সমীচীন নয়। এ নিয়ে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন সমর্থন করে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে বিষয়গুলো খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে যারা অপরাধে অভিযুক্ত, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনার দায়িত্ব বাংলাদেশের বিচারিক কর্তৃপক্ষের। তবে এ ক্ষেত্রে জবাবদিহি প্রয়োজন। মাইকেল মিলার বলেন, কোনো ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করতে হলে সাক্ষ্যপ্রমাণ লাগবে। যদি সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকে, তাহলে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচার যখন শুরু হবে, তখন অকারণে দেরি করা ঠিক হবে না।