সম্প্রতি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) উদ্যোগে যে বিনিয়োগ সম্মেলনটি হলো, তাতে সংশ্লিষ্ট সবাই দেশে একটা বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন। বিনিয়োগ নিয়ে এ ধরনের উদ্যোগ আয়োজন এটাই প্রথম নয়। এর আগে বিনিয়োগ বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও খুব সফল হয়নি।
বিনিয়োগ নিয়ে দেশে একাধিক সংস্থা কাজ করে। বিনিয়োগের অনুমোদন, নিবন্ধন, জমি বরাদ্দ, পরিবেশ ছাড়পত্র, ট্রেড লাইসেন্স প্রভৃতি পেতে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে হয়। ছয়টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। বিডা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ), পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ (পিপিপিএ) এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।
গত ১৩ এপ্রিল বিডার পরিচালনা পর্ষদের সভায় উল্লিখিত ছয়টি সংস্থার একীভূতকরণের প্রস্তাব ওঠে এবং বিষয়টি যাচাই করার জন্য শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এর সদস্যসচিব।
৩০ এপ্রিল জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে একীভূতকরণের বিষয়ে বিডার উত্থাপিত প্রস্তাবের সামগ্রিক বিষয় পরীক্ষা ও যাচাইপূর্বক মতামত দেবে এ কমিটি। যদিও বেজা ও বিডা বাদে অন্য চার সংস্থার কাছে প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি পাঠানো হয়নি। এটাকেই বলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।
বিডার পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকের দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর প্রজ্ঞাপন কেন? নির্বাচিত সরকার পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসে এবং সেই মেয়াদ সামনে রেখে নীতি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই সরকারের মেয়াদ বেঁধে দিয়েছেন, যা দুই বছরের কম। সরকার যদি সত্যি সত্যি বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে চায়, দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় বিশাল আকারের বিনিয়োগ সম্মেলন ‘স্মৃতিস্মারক’ হয়েই থাকবে।
কমিটি গঠনের পর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ভিন্নমতও পাওয়া যাচ্ছে। অনেক বিনিয়োগকারী ছয় প্রতিষ্ঠান একীভূত করার পক্ষপাতী নন। নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে ব্যবসারত একটি চীনা কোম্পানি বলেছে, ছয়টি সংস্থা একীভূত হলে তাদের অনিশ্চয়তা বাড়বে এবং ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ (এফডিআই) নিরুৎসাহিত হবে। ঢাকা ইপিজেডে অবস্থানরত আরেকটি চীনা বস্ত্র কোম্পানি ২৭ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি লিখে একীভূত করার উদ্যোগ স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে। বেজা, বেপজা, হাইটেক পার্কের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাও এ উদ্যোগের নানা জটিলতার কথা জানিয়েছেন।
ঢাকা চেম্বারের (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও শাশা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ সংস্থাগুলো একীভূত করার উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও বেপজাকে এ প্রক্রিয়া থেকে আলাদা রাখার কথা বলেছেন।
অর্থাৎ জটিল সমস্যার সহজ সমাধান নেই। কমিটিকে দেখতে হবে ছয় সংস্থা একীভূত হলে কতটা লাভবান হওয়া যাবে। আমলাতান্ত্রিক সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করা যায়, সে বিষয়ে তাদের সজাগ থাকতে হবে। বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো একীভূত হোক বা না হোক, প্রশাসনিক দক্ষতা ও সমন্বয় বাড়ানোর বিকল্প নেই। সব ক্ষেত্রে সরকার সংস্কারের কথা বলছে। তারা বিনিয়োগের বাধাগুলো দূর করার ক্ষেত্রে যদি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে, সেটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে আশা করি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন কীভাবে
আজ থেকে সব করদাতাকে অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে হবে। দেশের প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। করযোগ্য আয় থাকলে টিআইএনধারীদের রিটার্ন দিতে হয়।
গত বছর থেকে নির্দিষ্ট এলাকার অধিক্ষেত্রের ব্যক্তি করদাতা, সারা দেশের ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। গতবার ১৭ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দেন।
এবার দেখা যাক কীভাবে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেবেন।
কোথায় দেবেন
সব করদাতা ২০২৫-২৬ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জমা দিতে পারবেন।
অনলাইনে রিটার্ন জমার আগে প্রথমে করদাতাকে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন নিতে করদাতার নিজের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নম্বর লাগবে। এ দুটি দিয়ে নিবন্ধন করে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাপ্তি রসিদ মিলবে।
কীভাবে দেবেন
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন তথা ই-রিটার্ন দিতে করদাতাকে কোনো কাগজপত্র আপলোড করতে বা জমা দিতে হবে না। শুধু ওই সব দলিলাদির তথ্য দিলেই হবে। যেমন সনাতনি পদ্ধতিতে চাকরিজীবীদের আয়ের বা বেতন-ভাতার প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যাংক হিসাবের এক বছরের লেনদেন বিবরণী (স্টেটমেন্ট) জমা দিলেই চলবে। আগের বছরের ১ জুলাই থেকে পরের বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত (অর্থবছর) সময়ের ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, সুদের তথ্য ও ব্যাংক হিসাবের নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য দিতে হবে।
কীভাবে কর দেবেন
করদাতারা ব্যাংক ট্রান্সফার, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, রকেট, নগদ অথবা অন্য কোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই কর পরিশোধ করে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের জন্য রাজস্ব বোর্ডের কর্মীরা কল সেন্টার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করবেন।
যেসব দলিলের তথ্য প্রয়োজন
রিটার্ন জমার সময় নিজের প্রয়োজন অনুসারে কিছু কাগজপত্রের তথ্য লাগবে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস থেকে এসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করতে হবে। যেসব কাগজপত্রের লাগবে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌরকরের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট।
বিনিয়োগ করে কর রেয়াত পেতে চাইলেও কিছু কাগজপত্র লাগবে। যেমন জীবনবিমার কিস্তির প্রিমিয়াম রসিদ, ভবিষ্য তহবিলে দেওয়া চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে (ডিপিএস) চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিলের চাঁদা ও গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ, জাকাত তহবিলে দেওয়া চাঁদার সনদ।