তৃতীয় দিনেও ক্লাসে যাননি কুয়েটের শিক্ষকরা, বিপাকে সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থী
Published: 6th, May 2025 GMT
একাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার তৃতীয় দিনেও ক্লাসে যাননি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষকরা। শিক্ষকদের লাঞ্চিতকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন তারা। শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় বিপাকে পড়েছেন সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাসরুমগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। শিক্ষকরা ক্লাসে না যাওয়ায় যাননি শিক্ষার্থীরা। হলের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করছেন। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে হলের সামনে আড্ডা দিতে ও ক্যাম্পাসের সড়কগুলোতে চলাচল করতে দেখা যায়। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসেনি। প্রধান গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.
এদিকে শিক্ষকদের লাঞ্চিত করার ঘটনায় এরই মধ্যে দুই দফা ক্ষমা চেয়েছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় বিপাকে পড়েছেন ৭ হাজার ৫৬৫ জন শিক্ষার্থী। কবে থেকে আবার ক্লাস শুরু হবে তা এখনও অনিশ্চিত। কুয়েটে আগে থেকেই প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। এর ওপর গত আড়াই মাস কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। এ অবস্থা চলমান থাকায় বেড়েছে সেশনজট।
কুয়েটের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম, মো. ওবায়দুল্লাহ, শেখ মুজাহিদ, গালিব রাহাত, তৌফিক সমকালকে বলেন, ‘কুয়েটে এক বছরেরও বেশি সেশনজট ছিল। আরও আড়াই মাস পিছিয়ে গিয়েছি।’ তারা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ভুল-ত্রুটির জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমরা চাই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।’
কুয়েটের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই ক্যাম্পাসের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর ফলে প্রশাসনিক অনেক সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে। ক্যাম্পাসের উন্নয়ন কর্মকান্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে।’
কুয়েটের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান ভুঞা ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার বলেন, ‘উপাচার্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সংকট নিরসনের চেষ্টা করছেন।’
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষের পর থেকে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা। এর আগে কখনও এত দীর্ঘ সময় ধরে অচলাবস্থা দেখেনি কুয়েটের কেউ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র শ ক ষকর পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করে।
হাদিসে সালাতুল হাজতের ফজিলত ও নিয়ম বর্ণিত আছে, যা মুমিনের আল্লাহর ওপর ভরসাকে দৃঢ় করে।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়মসালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা সাধারণত দুই রাকাত আদায় করা হয়। তবে ইচ্ছা হলে চার বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়। নামাজের নিয়ম বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:
১. অজু করা
সালাতুল হাজত নামাজের জন্য পূর্ণ পবিত্রতা প্রয়োজন। তাই প্রথমে অজু করতে হবে। অজুর ফরজ চারটি: মুখমণ্ডল ধোয়া, দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া, মাথায় মসেহ করা এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া। এ ছাড়া সুন্নত অনুযায়ী অজু করা উত্তম, যেমন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা, কুলি করা, নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ইত্যাদি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)
সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হয়।২. নিয়ত করা
নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। নিয়তের উদাহরণ: ‘আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।’
নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট, মুখে বলা জরুরি নয়। (সাইয়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)
আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫৩. দুই রাকাত নামাজ আদায়
প্রথম রাকাত: তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া, যেমন সুরা ইখলাস। তারপর রুকু, সিজদা ও অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করা।
দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়া, রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।
এই নামাজ সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে, তবে খুশুখুজু (মনোযোগ) বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)
৪. নামাজের পর দোয়া
নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন বা মানুষের কাছে কোনো দরকার থাকে, সে যেন অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবীর ওপর দরুদ পড়ে এবং এই দোয়া পড়ে:
উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরর, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসম। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু, ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু।’
অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও দয়ালু। পবিত্র মহান আরশের প্রভু আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য। আমি তোমার কাছে তোমার রহমতের কারণ, ক্ষমার দৃঢ়তা, প্রতিটি পুণ্যের লাভ এবং সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করি। আমার কোনো গুনাহ রেখো না, যা তুমি ক্ষমা করোনি এবং কোনো দুশ্চিন্তা রেখো না, যা তুমি দূর করোনি।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস:: ৪৭৮)
৫. অতিরিক্ত দোয়া
ওপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। দোয়া করার সময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং ধৈর্যের সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষা করা।
আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫সালাতুল হাজতের সময়সালাতুল হাজত নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। এটি যেকোনো সময় আদায় করা যায়, তবে নিষিদ্ধ সময় (যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বা ঠিক মধ্যাহ্নে) এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোত্তম সময় হলো:
রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)।
ফজর বা মাগরিব নামাজের পর।
জুমার দিনে, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে। (মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, পৃষ্ঠা: ১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)
সালাতুল হাজতের ফজিলতসালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)
এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানসিক শান্তি ও ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।
সতর্কতানিষিদ্ধ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা।
খুশুখুজু: নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে ইবাদত পূর্ণতা পায়।
হারাম প্রয়োজনে না: সালাতুল হাজত শুধু জায়েজ ও হালাল প্রয়োজনের জন্য পড়তে হবে।
ধৈর্য: দোয়ার ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরা, কারণ আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে প্রয়োজন পূরণ করেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, ২/৪৮০, দারুল মা’রিফা: ১৯৮৯)
সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি অসাধারণ মাধ্যম। এটি দুই রাকাত নফল নামাজ, যার পর নির্দিষ্ট দোয়া ও নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা হয়। জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও এই নামাজ সহজেই আদায় করা যায়।
আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫