নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশকে কেন্দ্র করে ‘নারী বিদ্বেষী প্রচারণা, নারীবিরোধী এবং নারীর মর্যাদা হানিকর বক্তব্য এবং বর্বরোচিত আচরণে’র প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি (৬৭ নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম)।

রোববার সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা.

ফওজিয়া মোসলেমের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, শুক্রবার  নারী কমিশন এবং তাদের প্রস্তাবনা বাতিলের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে এবং সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারী জাতির প্রতি যে চরম অসম্মানজনক, বর্বরোচিত, ন্যাক্কারজনক আচরণ সংঘটিত হয়েছে— তা আমাদের সমগ্র নারী সমাজকে স্তম্ভিত করেছে। এই ধরনের বর্বরোচিত আচরণ ও বক্তব্য কোনও সভ্য দেশ ও সমাজের পরিচয় বহন করে না। 

বিবৃতিতে তিনি বলেন, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির (৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম) পক্ষ থেকে আমরা এই ঘটনার তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি— হেফাজতে ইসলামসহ এ ধরনের নারীবিরোধী, ধর্মব্যবসায়ী, মৌলবাদী দলগুলো নানা সভা সমাবেশে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এ ধরনের নারীবিদ্বেষী, অসম্মানজনক, অমর্যাদাকর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করলাম— বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ১০টি সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে। শুধুমাত্র নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই নারীবিরোধী গোষ্ঠীগুলো নারী কমিশন এবং তাদের প্রস্তাবনা বাতিল করার দাবির নামে নারীর সমতার অধিকারের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে উঠেছে।

ডা. ফওজিয়া মোসলেম বিবৃতিতে আরও বলেন, আমরা আরও লক্ষ্য করছি— ধর্মান্ধ, মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো কর্তৃক সংঘটিত দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর প্রতি এত বড় অন্যায়, বর্বরতা ও নৃশংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা সরকারের দায়বদ্ধতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। 

সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি মনে করে— যেকোনও বিষয়ে সবার মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কিন্তু সরকারের গঠিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল করার মতো অযৌক্তিক দাবি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি গণতন্ত্রকামী, সম-অধিকার ভিত্তিক এবং বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও শক্তিকে এই ধরনের অপতৎপরতা প্রতিহত করার আহ্বান জানাচ্ছে।

হেফাজতে ইসলামের অসাংবিধানিক সব দাবি-দাওয়া অগ্রাহ্য করে নারী-পুরুষের সমতা ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র গঠনে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র বর বর ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিষাক্ত’ কর্মপরিবেশে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ

কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল আলোচিত একটি বাক্য হলো—‘টক্সিক ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্ট’ বা ‘বিষাক্ত কর্মপরিবেশ’। কর্মক্ষেত্রে যদি বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি হয়, তা অনেকের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে।

মূলত পাঁচটি কারণে একটি কর্মক্ষেত্র বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। সেগুলো হলো বিষাক্ত নীতি ও পদ্ধতি, বিষাক্ত সংস্কৃতি, বিষাক্ত বস/ম‍্যানেজার, বিষাক্ত সহকর্মী ও বিষাক্ত উন্নয়ন সহযোগী/ক্লায়েন্ট।

উল্লিখিত পাঁচটি কারণের মধ্যে ‘বিষাক্ত সহকর্মী’ হলেন তাঁরা, যাঁরা প্রতিনিয়ত বিষবাষ্প ছড়ানোর মাধ্যমে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে রাখেন; যাঁরা নানান ছুতোয় আগুনে ঘি ঢেলে বসদের মাথা গরম করে নিজেরা ফায়দা লুটতে ও ফাঁকিবাজি করতে মরিয়া হয়ে পড়েন, যার প্রভাব পড়ে পুরো অফিসে ও অন্য কর্মীদের ওপর।

‘বিষাক্ত সহকর্মী’রা এটা চিন্তা করেন না, একটি অফিসে বিভিন্ন ব‍্যাকগ্রাউন্ডের ও ব্যক্তিত্বের মানুষ একসঙ্গে কাজ করেন, যাঁদের চিন্তাভাবনা, রুচিবোধ ও সহনশীলতা ভিন্ন ভিন্ন।

কর্মক্ষেত্রে সবাই সাধারণত একটি অভিন্ন লক্ষ্যে দিন শুরু করেন। কেউ কেউ আবার জীবিকার তাগিদে পাহাড়সম সমস্যা মাথায় নিয়েও অফিসে আসেন। এর মধ্যেও দেখা যায়—গুটিকয়েক সহকর্মীর অপ্রয়োজনীয় ও অপেশাদার আচরণ একটি ভালো কর্মপরিবেশ মুহূর্তেই বিষাক্ত করে তোলে।

এই আচরণ অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। ফলে অনেক দক্ষ ও সম্ভাবনাময় কর্মী এমন পরিবেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। যার বিরূপ প্রভাব পড়ে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক অর্জন ও সুনামের ওপর। একসময় সেই প্রতিষ্ঠান ‘সেরা নিয়োগদাতা’ বা ‘এমপ্লয়ার অব চয়েস’ হিসেবে গড়ে ওঠার পথ থেকেও ছিটকে যেতে পারেন।

প্রশ্ন জাগে, একটি অফিসে ‘বিষাক্ত কর্মপরিবেশ’ কেন তৈরি হয়? এর জন্য দায়ী কে?
এই প্রশ্নের খুব নির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে অভিজ্ঞতা বলে—এটি সাধারণত গুটিকয় কর্মীর চিরায়ত অসভ্যতা, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কিংবা দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে ঘটে। অনেক সময় ভুক্তভোগীরাও যথাযথ কর্তৃপক্ষকে কিছু জানান না, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে, সেটি দীর্ঘ মেয়াদে ক্যারিয়ার ও জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সচেতন থাকুন, নিজের অবস্থান মজবুত রাখুন। প্রয়োজনে নিজের ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় নির্ভয়ে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিন।

তবু এমন একটি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে অনেক কর্মী টিকে থাকার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে, প্রতিষ্ঠান ও কাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তারা ধৈর্যের সঙ্গে সর্বোচ্চটা নিংড়ে দেন। এর ফলে প্রতিষ্ঠান তাঁদের অনেক সময় নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে শনাক্ত করতে পারে।

তবে এটা সত্য—বিষাক্ত কর্মপরিবেশে কাজ করে টিকে থাকা যেমন কঠিন, তার চেয়ে কঠিন হলো মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা ও উৎপাদনশীলতা ধরে রাখা। দিন শেষে প্রতিষ্ঠান যে জবাবদিহি চায়, তা আসে মূলত অর্জিত ফলাফল থেকেই। তাই টিকে থাকার বাস্তবমুখী কিছু কৌশল নিচে তুলে ধরা হলো:

টিকে থাকার ৭টি কার্যকর কৌশল

১. আবেগের সীমানা নির্ধারণ করুন:
বিষাক্ত সহকর্মীর আচরণ কখনোই ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দিন—তাঁদের এসব আচরণ তাঁদেরই ব্যর্থতা, এর দায় আপনার নয়। গসিপ কিংবা দোষারোপের খেলায়ও জড়াবেন না। তাঁদের থেকে অহেতুক বিতর্ক এড়িয়ে চলুন।

২. অপেশাদার আচরণ নথিভুক্ত করুন:
বিষাক্ত সহকর্মীরা প্রায়শই অফিসের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে থাকেন। সময়–সুযোগমতো তাঁদের আচরণ ও বক্তব্য লিখে রাখুন। কোনো প্রকার কারসাজি, মানসিক নির্যাতন বা তাচ্ছিল্যজনক ভাষা ব‍্যবহার করে থাকলে তার জন্য কাউকে শেয়ার করে সাক্ষী রাখুন ও যথাযথ রেকর্ড সংরক্ষণ করুন।

৩. অফিশিয়াল যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করুন:
অপেশাদার ব্যক্তিদের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় না গিয়ে ই-মেইল, অফিস চ্যাট বা গ্রুপ মেসেজিং বেছে নিন। প্রমাণ রাখার জন্য তারিখ, সময় ও বিষয়ের উল্লেখ করুন।

৪. অন্ততপক্ষে একজন সহায়তাকারী সহকর্মী খুঁজুন:
অফিসে বিশ্বাসযোগ্য সহকর্মী বেছে নিন, যার সঙ্গে পেশাগত সমস্যাগুলো ভাগ করে নিতে পারেন। তবে ব্যক্তিগত দুর্বলতা প্রকাশ না করাই শ্রেয়। প্রয়োজনে এইচআর বিভাগের একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকেও ঘটনাগুলো মৌখিকভাবে জানিয়ে রাখতে পারেন।

৫. নিজের কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখুন:
নেতিবাচক পরিবেশ উপেক্ষা করে নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুন। সময়মতো কাজ সম্পন্ন করুন, অর্জিত ফলাফলগুলো রিপোর্ট করুন, যাতে আপনার অবদান দৃশ্যমান থাকে।

৬. নিজের যত্ন নিন ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন:
বিষাক্ত সহকর্মীদের চিন্তা অফিসের পর মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। কখনো অফিসের চাপ বাসায় টেনে আনবেন না। শারীরিক ব্যায়াম করুন, পরিবার ও বন্ধুদের বেশি করে সময় দিন, শখের কাজ করুন, গান শুনুন কিংবা বই পড়ুন। প্রয়োজনে কিছুদিনের ছুটি নিন।

৭. এক্সপোজার সীমিত ও নতুন সুযোগ অনুসন্ধান করুন:
বিষাক্ত সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ সীমিত করুন। যদি কাজের ব্যাঘাত না ঘটে, তবে তাঁদের এড়িয়ে চলুন। ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনে পেশাদার সৌজন্য বজায় রাখুন।

পাশাপাশি নিজের প্রফেশনাল সিভি আপডেট করুন, পেশাগত নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করুন এবং ভালো সুযোগ পেলে নতুন পথে এগিয়ে যান। বিষাক্ত পরিবেশের চাকরি ছাড়ার আগে এক্সিট ইন্টারভিউতে কর্তৃপক্ষকে সবকিছু লিখিতভাবে জানিয়ে দিন।
সবশেষে মনে রাখতে হবে—একটি বিষাক্ত কর্মপরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা প্রশংসনীয়। কিন্তু সেটা নিজের আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে ও মানসিক শান্তির বিনিময়ে নয়।

সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে, সেটি দীর্ঘ মেয়াদে ক্যারিয়ার ও জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সচেতন থাকুন, নিজের অবস্থান মজবুত রাখুন। প্রয়োজনে নিজের ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় নির্ভয়ে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিন।

এম এম মাহবুব হাসান, ব‍্যাংকার ও উন্নয়ন গবেষক
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হলে সিট না দেওয়ায় নোয়াখালী সরকারি কলেজের হল সুপার লাঞ্ছিত
  • ১৩ ছাত্রীর অভিযোগ বরখাস্ত শিক্ষক
  • অশালীন আচরণের অভিযোগ ১৩ ছাত্রীর, বরখাস্ত শিক্ষক
  • হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধীদের অশালীন আচরণের প্রতিবাদ চিকিৎসকদের
  • আতঙ্কে বিদ্যালয়ে যাননি মধুপুরে ‘মব ভায়োলেন্সের’ শিকার প্রধান শিক্ষক
  • ‘বিষাক্ত’ কর্মপরিবেশে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ
  • পাকিস্তান এখনো দায়িত্বশীল আচরণ দেখাচ্ছে: শেহবাজ