নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ: ৬৭ নারী-মানবাধিকার সংগঠনের তীব্র নিন্দা
Published: 6th, May 2025 GMT
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশকে কেন্দ্র করে ‘নারী বিদ্বেষী প্রচারণা, নারীবিরোধী এবং নারীর মর্যাদা হানিকর বক্তব্য এবং বর্বরোচিত আচরণে’র প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি (৬৭ নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম)।
রোববার সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা.
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির (৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম) পক্ষ থেকে আমরা এই ঘটনার তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি— হেফাজতে ইসলামসহ এ ধরনের নারীবিরোধী, ধর্মব্যবসায়ী, মৌলবাদী দলগুলো নানা সভা সমাবেশে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এ ধরনের নারীবিদ্বেষী, অসম্মানজনক, অমর্যাদাকর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করলাম— বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ১০টি সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে। শুধুমাত্র নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই নারীবিরোধী গোষ্ঠীগুলো নারী কমিশন এবং তাদের প্রস্তাবনা বাতিল করার দাবির নামে নারীর সমতার অধিকারের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে উঠেছে।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বিবৃতিতে আরও বলেন, আমরা আরও লক্ষ্য করছি— ধর্মান্ধ, মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো কর্তৃক সংঘটিত দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর প্রতি এত বড় অন্যায়, বর্বরতা ও নৃশংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা সরকারের দায়বদ্ধতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি মনে করে— যেকোনও বিষয়ে সবার মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কিন্তু সরকারের গঠিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল করার মতো অযৌক্তিক দাবি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি গণতন্ত্রকামী, সম-অধিকার ভিত্তিক এবং বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও শক্তিকে এই ধরনের অপতৎপরতা প্রতিহত করার আহ্বান জানাচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের অসাংবিধানিক সব দাবি-দাওয়া অগ্রাহ্য করে নারী-পুরুষের সমতা ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র গঠনে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরক র র বর বর ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
জবির ছাত্রী হলে ‘প্রভোস্টের ছাত্রী’ ত্রাস
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী হল নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলে ক্যান্টিনের খাবারে পোকা পাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ করার জেরে এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে ‘প্রভোস্টের ছাত্রী’র বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ফাতেমা তুজ জোহরা ইমু বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি হল ডিবেটিং সোসাইটির নেত্রী। ভুক্তভোগী হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী উম্মে মাবুদা।
আরো পড়ুন:
৩ দাবিতে আবারো রাস্তায় রুয়েট শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব পরিবহন নিশ্চিতের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর রাতে ক্যান্টিনে পরিবেশিত বরবটি-আলু ভাজিতে পোকা পাওয়া যায়। বিষয়টি সমাজকর্ম বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী উম্মে মাবুদা তার ফেসবুকে প্রমাণসহ পোস্ট করেন। পোস্টটি ভাইরাল হলে বহু শিক্ষার্থী এতে সহমত প্রকাশ করেন। পোস্টের পরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্ত ইমু ভুক্তভোগী মাবুদাকে একাধিকবার পোস্ট ডিলিট করতে চাপ দেন এবং প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বারবার তাগাদা দেন।
তবে ভুক্তভোগী মাবুদা ইন্টার্নশিপে থাকা অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে দেখা করতে না পারায় গত ৬ নভেম্বর সকালে ইমু সরাসরি তার কক্ষে গিয়ে অপমানজনক ভাষায় কথা বলেন।
ভুক্তভোগী মাবুদা বলেন, “তিনি রুমে এসে চিৎকার করে বলেন— ‘পোস্টটা কেন দিলি? ভোটের প্রসঙ্গ কেন আনলি? এখনই গিয়ে পোস্ট ডিলিট কর, নতুন করে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিবি।’ তিনি আমাকে ভয় দেখিয়েছেন যে আমার পোস্টে তার ভোট নষ্ট হবে।”
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। তিনি প্রাধ্যক্ষের বিভাগের ছাত্রী হওয়ায় গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে জোরপূর্বক ডিবেটিং সোসাইটির পদ দখল করেছেন এবং সেই পদ ব্যবহার করে হলে দীর্ঘদীন ধরেই প্রভাব বিস্তার করে আছেন। তিনি হলে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছেন।
ক্যান্টিনের খাবারের মান, রুম বণ্টন, এমনকি কোনো অভিযোগের বিষয়েও তার ‘শেষ কথা’ চলে। তিনি ছাত্রী হলের সবকিছুই প্রায় নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন হল প্রাধ্যক্ষের প্রশ্রয়ে। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে হলে ছাত্রী তুলে আসন ভাগাভাগিরও অভিযোগও করেন শিক্ষার্থীরা।
হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, ইমু দীর্ঘদিন ধরে হলে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ডেকে অপমান করেন ইমু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, “তিনি প্রাধ্যক্ষ ম্যাডামের বিভাগের ছাত্রী। এ কারণে যা খুশি করেন। অনেকে মুখ খুলতে পারে না।”
আরেকজন বলেন, “ডিবেটিং সোসাইটিতে তার নেতৃত্বই অবৈধ। নির্বাচন হয়নি, গঠনতন্ত্র মানা হয়নি। তিনি নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন এবং সেই ক্ষমতা দেখিয়েই বাকি সব নিয়ন্ত্রণ করেন।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেমাতুজ জোহরা ইমু বলেন, “হলের খাবারে মাঝে মাঝে পোকা পাওয়া যায়, এটা সত্যি। তবে ওই শিক্ষার্থী দুই জায়গায় ভিন্ন কথা বলেছে এবং ভোটের প্রসঙ্গ টেনেছে। আমি শুধু জানতে চেয়েছি কেন এমন পোস্ট দিল।” তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন ইমু।
তবে পোস্ট ও হুমকি বিষয়ে মাবুদার বলেন, “আমার পোস্টে কোনো ব্যক্তির নাম ছিল না। শুধু খাবারের মান নিয়ে বলেছি। ইমু আপু সেটাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানালেন। এখন যদি ভোটের আগে এমন আচরণ হয়, ভোটে জিতে গেলে কী হবে—তা সহজেই বোঝা যায়।”
মাবুদার পোস্টে সহমত প্রকাশ করে অনেক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, বিষয়টি ‘বাজে রাজনীতি’ এবং ইমুর আচরণের কারণে হলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সন্ধী লেখেন, “পুরো প্রসঙ্গটাই খাবার নয়, ভোট। কেউ ভালো কিছু বলতে গেলেই তাকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। এটা খুব নোংরা প্রবণতা।”
সার্বিক বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। যদি ইমু সত্যিই তাকে (মাবুদা) ক্ষমা চাইতে বলতে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করে থাকে, তাহলে তাকেও ক্ষমা চাইতে হবে।”
তিনি বলেন, “খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ এসেছে, বরবটি-কলমিশাক নিষিদ্ধ করা ছিল। তবুও কেন আনা হলো সেটিও তদন্ত করা হবে। রবিবার (৯ নভেম্বর) বৈঠক ডাকা হয়েছে।”
অভিযুক্ত ইমুর বিষয়টি স্বীকার করে প্রাধ্যক্ষ বলেন, “আমি শুনেছি ইমু মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এ বিষয়ে হলে কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। প্রয়োজন হলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী