রেড ক্রিসেন্টের ভবন নির্মাণ, নিয়োগ ও অর্থ ব্যবহারে অনিয়ম
Published: 6th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভবন নির্মাণ, জনবল নিয়োগ ও অর্থ ব্যবহারে অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব অভিযোগে গত রোববার রাজধানীর মগবাজারে সংস্থাটির জাতীয় সদর দপ্তরে দুদক অভিযান চালায়।
এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আশিকুর রহমান ও উপসহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন। অভিযানে রেড ক্রিসেন্টের মহাসচিব ও উপমহাসচিবের বক্তব্য নেওয়া হয় এবং নিয়োগ ও ভবন নির্মাণসংক্রান্ত একাধিক নথি সংগ্রহ করা হয়।
দুদকের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ২০০১ সালে বোরাক রিয়েল এস্টেট এবং ২০০৩ সালে মাল্টিপ্ল্যান ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সঙ্গে দুটি ভবন নির্মাণ চুক্তি করে। এসব চুক্তিতে ডেভেলপারদের (নির্মাতা প্রতিষ্ঠান) সঙ্গে একতরফাভাবে সুবিধাজনক শর্ত রাখা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি চুক্তিতে ডেভেলপারকে ৭৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ শেয়ার দেওয়া হয়, যা দুদকের মতে আর্থিকভাবে ক্ষতিকর ও অস্বাভাবিক। এ ছাড়া বিভিন্ন পদে নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের অভিযোগেরও প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। বিশেষ করে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত নিয়োগ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
দুদক বলছে, সংস্থাটি দেশি-বিদেশি অনুদানের অর্থও সঠিকভাবে ব্যয় করেনি। অভিযানকালে কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও সংগৃহীত নথিপত্র বিশ্লেষণ করে কেনাকাটা ও দরপত্র প্রক্রিয়ায় একাধিক অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
দুদকের অভিযান ও অনিয়ম–দুর্নীতির বিষয়ে জানতে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রথম আলো। আজ মঙ্গলবার রাতে সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়, দুদক যেসব বিষয়ে তদন্ত করতে এসেছিল, সব কটিই বিগত আওয়ামী লীগ আমলের অনিয়ম–দুর্নীতি নিয়ে। এর সঙ্গে বর্তমানের সদস্যদের কোনো সম্পর্ক নেই।
দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ড ক র স ন ট স স ইট ভবন ন র ম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
চিকিৎসকদের নিয়ে ‘হেলথ সার্ভিস’ করে আলাদা বেতনকাঠামো ও পিএসসির সুপারিশ
বিদ্যমান স্বাস্থ্য ক্যাডারসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্যাডার এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সব জনবল নিয়ে নতুন সিভিল সার্ভিস করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। প্রস্তাবিত এই সার্ভিসের নাম হবে ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস (বিএইচএস)’। শুধু তা–ই নয়, এই সার্ভিসের জন্য একজন চিকিৎসকের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র সচিবালয় করা, নিয়োগের জন্য আলাদা পিএসসি গঠন এবং পৃথক বেতনকাঠামোরও সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে স্বাস্থ্য খাতের জন্য এখনকার মতো মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকবে না। অবশ্য বিদ্যমান বিসিএস ক্যাডারভুক্তদের জন্য নতুন সার্ভিসে যাওয়া বা বিকল্প সুযোগ রাখার কথাও বলেছে কমিশন।
বর্তমানে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসির অধীনে) বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারে নিয়োগ হয়; এর মধ্যে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারও রয়েছে। বেতনকাঠামোও অন্যান্য ক্যাডারের মতো। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের অধীনে স্বাস্থ্য খাত পরিচালনা করা হয়। এই দুই বিভাগের দায়িত্বে থাকেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বাধীন এই কমিশনের প্রতিবেদনে মূল সুপারিশ করা হয়েছে ৩২টি। এর মধ্যে ওই সব সুপারিশ রয়েছে। পাশাপাশি একটি স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি সাংবাদিকদের দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে পিএসসির অধীনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারে নিয়োগ হয়। সম্প্রতি সরকারের কাছে জমা দেওয়া জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এসব ক্যাডারকে ১৩টি সার্ভিসে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। আর নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে তিনটি পিএসসি করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সার্ভিসের জন্য পৃথক দুটি পিএসসি করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। নাম হবে পিএসসি (শিক্ষা) ও পিএসসি (স্বাস্থ্য)। বাকি সার্ভিসের জন্য একটি পিএসসি হবে, নাম হবে পিএসসি (সাধারণ)। বর্তমানে বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগে একটি পিএসসি কাজ করছে।
কর্মকর্তার সংখ্যার দিক দিয়ে বড় ক্যাডার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডার। এর মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা আছেন ৩০ হাজারের বেশি। আর শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা প্রায় ১৬ হাজার।
এখন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন পুরো স্বাস্থ্য খাতের জন্য যে সুপারিশ করেছে, সেটি কার্যত বিদ্যমান ব্যবস্থা পাল্টে ফেলার মতো। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, পেশাদারি, দক্ষতা ও জবাবদিহিমূলক সেবার মান নিশ্চিত করতে বিদ্যমান স্বাস্থ্য ক্যাডার, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ক্যাডার এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সব জনবল নিয়ে প্রশাসনিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত ও পেশাভিত্তিক একটি নতুন সিভিল সার্ভিস গঠন করতে হবে।
বিদ্যমান পরিচালনা কাঠামোও বদলে ফেলার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। কমিশন বলছে, ‘হেলথ সার্ভিসের’ অধীনে ১১টি আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ থাকবে। এর মধ্যে প্রতিটি বিভাগীয় সদরে একটি করে মোট আটটি এবং ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম মহানগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি করে মোট ৩টি কর্তৃপক্ষ থাকবে। আর হেলথ সার্ভিসের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় গঠন করা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন মুখ্য সচিব পদমর্যাদার একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক, যিনি হবেন ‘চিফ অব বিএইচএস’। তাঁর অধীনে জনস্বাস্থ্য, ক্লিনিক্যাল সেবা এবং চিকিৎসা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা—এই তিনটি প্রধান খাত পরিচালনার জন্য জ্যেষ্ঠ সচিব পদমর্যাদার তিনজন উপপ্রধান নিযুক্ত হবেন, যাদের নাম হবে ডেপুটি চিফ অব হেলথ বা ডিসিএইচ।
কমিশন বলছে, প্রতিটি খাতের অধীনে একজন করে মহাপরিচালকের (ডিজি) পদ সৃষ্টি করা হবে, যাঁরা সচিব সমমানের পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত থাকবেন এবং কার্যক্রম পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট ডেপুটি চিফ অব হেলথের অধীনে কাজ করবেন।
গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগে অনুসন্ধান কমিটিস্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন বলছে, হেলথ সার্ভিসের জন্য আলাদা সচিবালয় থাকবে না। সব ফাইল ডিজি পর্যায় থেকে সরাসরি বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসের ডেপুটি চিফের কাছে যাবে।
কমিশন স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এ বিষয়ে কমিশন বলেছে, স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ করে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা দিতে হবে। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যের অবস্থা, স্বাস্থ্য সমস্যার ধরন ও রোগতাত্ত্বিক প্রয়োজনীয়তার আলোকে উপজেলাওয়ারি বাজেট ও পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। আর বিভাগীয় পর্যায়ের কার্যক্রম স্বশাসিত আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হবে, যা নিয়ন্ত্রণ করবে বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস। জনবল নিয়োগ, বদলি, নিয়ন্ত্রণ ও ক্রয়-সংগ্রহ-আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য দায়দায়িত্বের প্রয়োগযোগ্য বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন বলেছে, কর্মরত জনবলের জন্য একটি স্বতন্ত্র চাকরিবিধি ও পৃথক বেতনকাঠামো প্রণয়ন করতে হবে এবং যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন–ভাতা পাবেন, যাতে পেশাদারি, দক্ষতা ও জবাবদিহিমূলক সেবার মান নিশ্চিত হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়া নিয়মিত করা এবং স্বচ্ছতা আনার জন্য একটি স্বতন্ত্র পিএসসি (স্বাস্থ্য) গঠন করতে হবে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদের ক্ষেত্রে (যেমন চিফ অব বিএইচএস, ডেপুটি চিফ অব বিএইচএস, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ–উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, মহাপরিচালক, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ইত্যাদি) স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য উচ্চপর্যায়ের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে।