২৫০ শয্যার মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ভালো নেই
Published: 6th, May 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের বহুতল ভবনের ২৫০ শয্যার চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালুর পর দুই বছর পার হয়েছে । কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও লোকবল নিয়োগ না হওয়ায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। অব্যবস্থাপনা ও হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
মুন্সীগঞ্জ জেলার ১৮ লাখ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। বিপুল জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিত করতে একটি আধুনিক ৬তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ শেষে হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। কিন্তু ১০০ শয্যার লোকবল দিয়েই চলছে ২৫০ শয্যার চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। ফলে সেবা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়ছেন রোগীরা।
হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা প্রদানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ৫৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ৪১ জন। নেই কোন সিনিয়র কনসালটেন্ট। ৯৯ জন নার্সের স্থলে রয়েছেন মাত্র ৫৬ জন। নেই কোন দারোয়ান ও নাইটগার্ড। এছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরও সংকট।
লোকবল নিয়োগ না হওয়ায় নতুন ভবনে আইসিইউ ও সিসিইউসহ নানা ধরনের আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ১২শ থেকে ১৫শ জন চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। অভ্যন্তরীণ বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন অন্তত ৩শ জন।
বহির্বিভাগে চিকিৎসকদের রুমে রুমে রয়েছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিয়োগকৃত দালালদের দৌরাত্ম্য। হাসপাতালটির প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ইনডোর ও আউটডোরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওষুধ কোম্পানি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের জন্য প্রবেশ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে বলে জানালেন কয়েকজন সাধারণ রোগী। রয়েছে প্রতিদিন আগত রোগীদের কাছ থেকে মোবাইল ও টাকা চুরির গল্প।
কর্তব্যরত বহিরাগত ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখে দিলেও হাসপাতালের ডিসপেনসারিতে অনেক জরুরি ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে রোগীদের বিতরণ না করায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে কোনো কোনো ওষুধ। পরে বাইরের ময়লার স্তুপে ফেলে দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।
অপরদিকে, হাসপাতালের অভ্যন্তরে রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার নামে বাইরের ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে বাণিজ্যের একটি চক্র গড়ে উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলেই পড়তে হচ্ছে এ চক্রের কবলে। হাসপাতালের ডাক্তাররা সুকৌশলে এসব দালালদের সহায়তা করছেন। তবে অভিযুক্ত ডাক্তার ও সিনিয়র নার্স-ব্রাদাররা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ২৫০ শয্যা এ হাসপাতালের কেবিনসহ জেনারেল বেডের বাথরুম সবকটিই অপরিষ্কার। টয়লেট ও পানির কল নষ্ট থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগীদের। খাবারের পানিও কিনে খেতে হচ্ছে। হাসপাতালের অনেক বেডই ভাঙা, যেগুলো ঠিক আছে, তার অনেকগুলোরই বিছানা নেই। ভর্তি রোগীদের প্রতিদিনের বরাদ্দকৃত খাবার নিম্নমানের দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
এ ছাড়া বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও ক্লিনিক দালালরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চিকিৎসকদের পাশে থেকে রোগীদের হয়রানি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওষুধ কোম্পানির দালালরা (ফুড-সাপ্লিমেন্ট) ইমারজেন্সিসহ ইনডোরে সকাল থেকে রাত অবধি চিকিৎসক-নার্সদের নানাভাবে ‘ম্যানেজ’ করে তাদের ওষুধ লেখাচ্ছেন।
হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা.
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আহম্মদ কবির বলেন, “হাসপাতালের ডাক্তার ও জনবল সংকট, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও ভর্তিকৃত রোগীদের দায়ীত্বে থাকা সিনিয়র নার্স-ব্রাদার ও বহির্বিভাগের ডাক্তারদের অভিযোগের বিষয়টি অবগত হয়েছি। আমি শিগগিরই সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়মে ছাড় দেওয়া হবে না। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির কোনো দালাল যাতে আশ্রয়-প্রশ্রয় না পায় সে ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের অবগত করা হবে। তারা দালালদের প্রশ্রয় দিয়ে রোগী টানা-হেঁচড়া করে জোরপূর্বক পরীক্ষা-নিরিক্ষা করাবে, তা হতে দেওয়া যাবে না। এদের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গনস ট ক স ন ট র ড য় গনস ট ক ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
এক হাজার ডায়ালাইসিস যন্ত্র কিনছে সরকার
দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ নানা ধরনের কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। এসব রোগীর ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হলেও প্রায় ৭০ শতাংশ তা নিতে পারছেন না। এই সংকট নিরসনে এক হাজার ডায়ালাইসিস যন্ত্র কিনতে যাচ্ছে সরকার। কিডনি প্রতিস্থাপনেও বড় বাধা আইনি জটিলতা ও দাতা সংকট। এজন্য আইন সংশোধনেও কাজ চলছে। কিডনির চিকিৎসা সহজকরণ ও ব্যয় কমাতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।
শনিবার রাজধানীর মিরপুর-২ এ অবস্থিত বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে শুরু হয়েছে তিন দিনের ‘বালাদেশ-কোরিয়া ফ্রেন্ডশিপ সম্মেলন-২০২৫’, যা চলবে আগামী সোমবার পর্যন্ত। সেখানে ‘কিডনি প্রতিস্থাপন’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নিয়ে এসব তথ্য জানান বক্তারা।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যসচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, কিডনি রোগীর চিকিৎসায় এক হাজার ডায়ালাইসিস মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে যে হারে কিডনি রোগী বাড়ছে, তাতে হাজার যন্ত্র স্থাপনের পরেও সব রোগীর ডায়ালাইসিস দেওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। এজন্য সরকারি সংস্থার উদ্যোগে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে কিডনি রোগের সচেতনতা অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এছাড়া দেশে কতজন কিডনি রোগী আছে জানতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কিডনি রোগী নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (এনআইকেডিউ)।
তিনি আরও বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপনে আইনি জটিলতা রয়েছে। এটি সংশোধন করা হচ্ছে, আপনারা চাইলে এ বিষয়ে মতামত দিতে পারেন।
বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য দেশে অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। সেটি গড়ে উঠলে শুধু কিডনি নয়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন সহজ হবে। কিডনি ডায়ালাইসিসের ২৫০ সেন্টার রয়েছে দেশে, এর ৮০ শতাংশ মেশিন ঢাকায়। সরকারি যে ডায়ালাইসিস মেশিন কেনা হচ্ছে, তা যদি ঢাকার বাইরে স্থাপন করা যায়, তাহলে সারাদেশে ডায়ালাইসিস সেবা সহজ হবে। কিডনি চিকিৎসায় দক্ষ জনবলেরও অভাব আছে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা.রফিকুল আলম বলেন, সারাবিশ্বেই কিডনি প্রতিস্থাপন ডোনার সংকট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ডোনার সংকট মোকাবেলা করতে বলছে। এ জন্য প্রদত্ত আইনে সংশোধন আনতে হবে। আবেগপ্রবণ হয়ে অনেকে কিডনি দিতে চান, কিন্তু আমাদের আইনে বাধা থাকার কারণে তা সম্ভব হয় না। এজন্য নিজেদের নীতিমালা তৈরি করা জরুরি।
তিনি বলেন, এশিয়ার মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপনে অর্থ সংকট বড় সমস্যা, এ জন্য আমাদের যাকাত ফান্ডের মতো আরও কিছু ফান্ড তৈরি করতে হবে। দক্ষ জনবল তৈরিতে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের বাৎসরিক চাহিদা আনুমানিক পাঁচ হাজার। কিন্তু গড়ে বছরে প্রায় ১২০ জন ব্যক্তি তাদের আত্মীয়দের নিকট থেকে প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনির ব্যবস্থা করতে পারেন। এখন ‘ব্রেন ডেড’ ব্যক্তিদের কাছ থেকে কিডনি নিয়েও প্রতিস্থাপন করতে পারলে সংকট কিছুটা কমে যাবে। আমাদের প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলঙ্কায়ও তা শুরু হয়েছে।