রপ্তানি প্রণোদনা কমবে থাকবে বিকল্প সুবিধা
Published: 6th, May 2025 GMT
২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর রপ্তানির বিপরীতে আর নগদ সহায়তা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। তাই আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটেও এ প্রণোদনার হার কিছুটা কমিয়ে আনা হবে। তবে রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে প্রণোদনার বিকল্প হিসেবে বিদ্যুৎ বিলে রেয়াতি সুবিধা দেওয়াসহ ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। এটি কমাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ থাকলেও নতুন বাজেটেও প্রায় একই পরিমাণ বরাদ্দ থাকতে পারে। অন্যান্য খাতে বাড়তি ভর্তুকির চাহিদা থাকায় ‘রপ্তানি প্রণোদনা’ খাতে বরাদ্দ কমবে। তা ছাড়া এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কয়েক বছর থেকেই ক্রমান্বয়ে এ প্রণোদনা কমিয়ে আনা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ২৫ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ৮ হাজার কােটি টাকায় নামিয়ে আনা হতে পারে।
চলতি অর্থবছর প্রথম দিন থেকেই সব ধরনের রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমায় সরকার। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন খাতে এ সহায়তা আরেক দফা কমানো হয়েছিল। এলডিসি উত্তরণের পর একসঙ্গে সম্পূর্ণ নগদ সহায়তা প্রত্যাহার করলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, যে কারণে অল্প অল্প করে কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ অবস্থায় রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে প্রণোদনার বিকল্প হিসেবে বিদ্যুৎ বিলে রেয়াতি সুবিধা দেওয়াসহ ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন ধরনের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রধান প্রধান রপ্তানি বাজারের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের উদ্যোগও থাকছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ অন্যান্য সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। গত দুই বছরে নগদ প্রণোদনা উদ্বেগজনক হারে কমানো হয়েছে। বর্তমানে পোশাক খাতের জন্য দেড় শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়, তবে এ সহায়তা পেতে যে হয়রানি করা হয় তার থেকে না দেওয়াই ভালো। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি খাত এলডিসি উত্তরণের জন্য প্রস্তুত নয়।
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ হলেও ২০২৯ সাল পর্যন্ত নগদ সহায়তা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ খাতকে বাঁচাতে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ঝামেলামুক্তভাবে আরও বেশি হারে নগদ সহায়তা দিতে হবে। একই সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের সমস্যা নানাভাবে রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করছে। এগুলোর সমাধান করতে হবে। তা ছাড়া তথাকথিত শ্রমিক নামধারী কিছু সন্ত্রাসী বিদেশিদের এজেন্ট হয়ে প্রায়ই কারখানা ভাঙচুর করছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
জানা গেছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) থেকে নিট খাদ্য আমদানি দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার মাধ্যমে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা এবং সংস্থাটির এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিসি অ্যান্ড কাউন্টারভেলিং মেজার্সের (এসসিএম) আওতায় অকৃষি পণ্য রপ্তানিতেও প্রণোদনা সুবিধা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ। তবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অনাগ্রহের কারণে এসব সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ডব্লিউটিওর এ চুক্তির আওতায় মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (জিএনআই) এক হাজার ডলারের নিচে হলে এলডিসি উত্তরণের পরও কৃষিজাত নয়, এমন পণ্যেও প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু মাথাপিছু আয় বেশি হওয়ায় সুবিধাটি নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৮ কোটি ডলার
নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের দেশে বৈধ পথে প্রায় ২৪৮ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩০ হাজার ২৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা)।
রবিবার (৩ আগস্ট ) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জুলাইয়ের যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তা আগের বছর একই সময়ের চেয়ে ২৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
আরো পড়ুন:
পাচারকৃত সম্পদ ফেরাতে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশের যৌথ প্রচেষ্টা জোরদার
লুটের টাকা জনহিতকর কাজে ব্যবহার করা হবে: গভর্নর
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থপাচারে বর্তমান সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ কারণে হুন্ডিসহ বিভিন্ন অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানো কমে গেছে। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে।
সদ্য সমাপ্ত ২০৪-২৫ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলার, ডিসেম্বর মাসে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার, জানুয়ারি মাসে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার, ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ২৩ লাখ ডলার, মে মাসে ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার এবং জুন মাসে ২৮২ কোটি ১২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
ঢাকা/নাজমুল/বকুল