২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর রপ্তানির বিপরীতে আর নগদ সহায়তা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। তাই আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটেও এ প্রণোদনার হার কিছুটা কমিয়ে আনা হবে। তবে রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে প্রণোদনার বিকল্প হিসেবে বিদ্যুৎ বিলে রেয়াতি সুবিধা দেওয়াসহ ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। এটি কমাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ থাকলেও নতুন বাজেটেও প্রায় একই পরিমাণ বরাদ্দ থাকতে পারে। অন্যান্য খাতে বাড়তি ভর্তুকির চাহিদা থাকায় ‘রপ্তানি প্রণোদনা’ খাতে বরাদ্দ কমবে। তা ছাড়া এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কয়েক বছর থেকেই ক্রমান্বয়ে এ প্রণোদনা কমিয়ে আনা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ২৫ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ৮ হাজার কােটি টাকায় নামিয়ে আনা হতে পারে। 

চলতি অর্থবছর প্রথম দিন থেকেই সব ধরনের রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমায় সরকার। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন খাতে এ সহায়তা আরেক দফা কমানো হয়েছিল। এলডিসি উত্তরণের পর একসঙ্গে সম্পূর্ণ নগদ সহায়তা প্রত্যাহার করলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, যে কারণে অল্প অল্প করে কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। 
এ অবস্থায় রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে প্রণোদনার বিকল্প হিসেবে বিদ্যুৎ বিলে রেয়াতি সুবিধা দেওয়াসহ ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন ধরনের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রধান প্রধান রপ্তানি বাজারের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের উদ্যোগও থাকছে। 
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ অন্যান্য সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। গত দুই বছরে নগদ প্রণোদনা উদ্বেগজনক হারে কমানো হয়েছে। বর্তমানে পোশাক খাতের জন্য দেড় শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়, তবে এ সহায়তা পেতে যে হয়রানি করা হয় তার থেকে না দেওয়াই ভালো। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি খাত এলডিসি উত্তরণের জন্য প্রস্তুত নয়।  

তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ হলেও ২০২৯ সাল পর্যন্ত নগদ সহায়তা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ খাতকে বাঁচাতে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ঝামেলামুক্তভাবে আরও বেশি হারে নগদ সহায়তা দিতে হবে। একই সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের সমস্যা নানাভাবে রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করছে। এগুলোর সমাধান করতে হবে। তা ছাড়া তথাকথিত শ্রমিক নামধারী কিছু সন্ত্রাসী বিদেশিদের এজেন্ট হয়ে প্রায়ই কারখানা ভাঙচুর করছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। 
জানা গেছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) থেকে নিট খাদ্য আমদানি দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার মাধ্যমে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা এবং সংস্থাটির এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিসি অ্যান্ড কাউন্টারভেলিং মেজার্সের (এসসিএম) আওতায় অকৃষি পণ্য রপ্তানিতেও প্রণোদনা সুবিধা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ। তবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অনাগ্রহের কারণে এসব সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ডব্লিউটিওর এ চুক্তির আওতায় মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (জিএনআই) এক হাজার ডলারের নিচে হলে এলডিসি উত্তরণের পরও কৃষিজাত নয়, এমন পণ্যেও প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু মাথাপিছু আয় বেশি হওয়ায় সুবিধাটি নিতে পারেনি বাংলাদেশ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর দ দ এলড স

এছাড়াও পড়ুন:

লিফটের ওপর বাড়তি কর প্রত্যাহারের দাবি

২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে লিফটকে মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা ও তার ওপর বিদ্যমান বাড়তি শুল্ক–কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ এলিভেটর, এসকেলেটর অ্যান্ড লিফট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলিয়া)।

আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতি এমদাদ উর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জ্বল। এ ছাড়া সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। খবর বিজ্ঞপ্তি

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২১–২২ অর্থবছর পর্যন্ত লিফট মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে আমদানি করা হতো। মূলধনি যন্ত্রপাতিতে আমদানি শুল্ক থাকে ন্যূনতম। কিন্তু হঠাৎ বিগত সরকার ২০২২–২৩ অর্থবছর থেকে লিফটকে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করে। এতে শুল্ক–কর অনেক বেড়ে যায়। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে বাংলাদেশ এলিভেটর, এসকেলেটর অ্যান্ড লিফট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু সে প্রতিবাদ আমলে নেওয়া হয়নি।

বেলিয়ার নেতারা বলেন, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও লিফটকে বাণিজ্যিক পণ্য শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে পণ্যটির করহার আরও বাড়ানো হয়েছে। ফলে লিফট খাতে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও নতুন আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ মোট শুল্ক–কর দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশ। গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে যা ছিল ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

সংগঠনের সভাপতি এমদাদ উর রহমান বলেন, লিফট বিক্রি ও চুক্তি সম্পাদনের পরে উৎপাদন ও আমদানি করা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। চলতি জুনের আগে লিফটের ক্রয়াদেশ, ঋণপত্র খোলা, প্রস্তুতি পর্যায়, জাহাজীকরণ অবস্থায় ও বন্দরে শুল্কায়ন পর্যায়ে সহস্রাধিক লিফট প্রক্রিয়াধীন। এই লিফটগুলো আগের ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ শুল্কহারে বিক্রি করা হয়েছে। এখন সেগুলোর জন্য নতুন ধার্য করা বাড়তি হারে অর্থাৎ ৪৩ শতাংশ হারে শুল্ক–কর দিতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জুনের আগে লিফটগুলোর জন্য আগের হারে শুল্ক–কর ধার্যের জন্য জোর দাবি জানান তিনি।

বেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম বলেন, দেশের আবাসন খাতের উন্নয়নে লিফট অন্যতম প্রধান উপকরণ। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অতিরিক্ত শুল্ক–কর আরোপের ফলে পণ্যটির দাম অনেক বেড়ে যাবে এবং ভোক্তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন। সার্বিকভাবে আবাসন খাতের উন্নয়ন ঝিমিয়ে পড়বে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন খাতটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী ও হাজার হাজার কর্মী। তাই প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনের আগেই লিফটের বাড়তি এই শুল্ক–কর প্রত্যাহার ও আগের মতো মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসেবে গণ্য করার দাবি জানান তিনি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের অতিরিক্ত মূল্যায়নের ফলে আমদানি পর্যায়ে লিফটের জন্য অতিরিক্ত শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ প্রক্রিয়াটি বাস্তবসম্মত হওয়া প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চামড়ার দেশেই বছরে ১,৫০০ কোটি টাকার চামড়া আমদানি
  • শিক্ষা নিয়ে নাগরিকদের উদ্বেগ আমলে নিন
  • দেশে খাদ্য পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক: উপদেষ্টা
  • জনস্বাস্থ্যবিরোধী বাজেট: সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তর একত্র করার দাবি
  • কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল হতে পারে
  • কমলা-মাল্টা-লেবুতে সম্ভাবনার সুবাস
  • জুলাই গণ–অভ্যুত্থান: ফ্ল্যাট পাবে শহীদদের পরিবার
  • লিফটের ওপর বাড়তি কর প্রত্যাহারের দাবি বেলিয়ার
  • লিফটের ওপর বাড়তি কর প্রত্যাহারের দাবি
  • ২১ ও ২৮ জুন কাস্টমস,ভ্যাট ও কর কার্যালয় খোলা থাকবে