বিবিসির বিশ্লেষণ: ভারত-পাকিস্তানের নেতাদের ‘বড় জুয়া’
Published: 7th, May 2025 GMT
পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে নাটকীয় উত্তেজনার এক ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
যদিও অনুমান করা হচ্ছিল যে, ভারত কোনো না কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে, তবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্রতা অনেককে বিস্মিত করেছে।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সাউথ এশিয়া এটিডর আনবারাসান এথিরাজন।
আরো পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর তাগিদ জাতিসংঘ মহাসচিবের
ভারতের হামলাকে ‘কাপুরুষের কাজ’ বললেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর পর্যালোচনা করে এমন মন্তব্য করেছেন বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সাউথ এশিয়া এটিডর আনবারাসান এথিরাজন।
আনবারাসন লিখেছেন, ভারতের দাবি করছে তারা যে স্থানগুলোতে বোমা বর্ষণ করেছে, সেগুলোর সঙ্গে জঙ্গিদের সংযোগ ছিল এবং তাদের লক্ষ্য পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনা ছিল না।
অন্যদিকে, পাকিস্তান পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, আর সেই প্রতিক্রিয়ার ধরন ও লক্ষ্য নির্ধারণ করবে দিল্লির পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কী হবে।
দুই দেশই মনে করে তারা উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, উত্তেজনা এখন তুঙ্গে এবং যে কোনো সামরিক সংঘাতের সম্ভাব্য পথ কীভাবে গড়াবে তা বলা কঠিন।
ইতিহাসে দেখা যাচ্ছে, অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলো মাঝেমধ্যে হস্তক্ষেপ করে এই দুই দেশের উত্তেজনা প্রশমনে সাহায্য করেছে।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে অন্যান্য বৈশ্বিক ইস্যুতে মনোযোগ দেওয়ায় এবার কত দ্রুত ওয়াশিংটন হস্তক্ষেপ করবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
এদিকে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের রাজনৈতিক নেতারাই জনগণকে দেখাতে চাইবেন তারা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং বিজয় অর্জন করেছেন।
এই পদক্ষেপে উভয় দেশের নেতারাই তাদের জনগণের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবেন।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বেক্সিমকো গ্রুপের ৯৪টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ
এবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের ৯৪টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া সালমান এফ রহমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ ৭৯ জনের বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সালমান এফ রহমান, তাঁর স্ত্রী সৈয়দ রুবাবা রহমান, ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সালমানের ভাই আহমেদ সোহাইল ফসিহুর রহমান, সোহাইলের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার হাসানের সব শেয়ার ও বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বেক্সিমকোর যে ৯৪টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো টেক্সটাইলস লিমিটেড, বেক্সিমকো ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্ক, বেক্সিমকো মিডিয়া লিমিটেড, বেক্সিমকো সিনথেটিক লিমিটেড, বেক্সিমকো রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, বেক্সিমকো কেমিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো ট্রেডিং লিমিটেড, বেক্সিমকো প্রপার্টিজ লিমিটেড, বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিংস লিমিটেড, বেক্সিমকো ইনফরমেশন টেকনোলজি লিমিটেড, বেক্সিমকো ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, বেক্সিমকো গ্লোবাল লজিস্টিকস লিমিটেড, বেক্সিমকো এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড, বেক্সিমকো কম্পিউটারস লিমিটেড, বেক্সিমকো এভিয়েশন লিমিটেড, বেক্সিমকো পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, বেক্সিমকো অ্যাগ্রো কেমিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো অ্যাস্ট্রো কোম্পানি লিমিটেড, বেক্সিমকো হোল্ডিংস লিমিটেড, বেক্সিমকো লজিস্টিকস লিমিটেড, বেক্সিমকো মাইনিং অ্যান্ড এনার্জি কর্পোরেশন লিমিটেড।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সালমান এফ রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের নামে থাকা ৩৭২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।
দুদকের পক্ষ থেকে আজ আদালতকে জানানো হয়েছে, সালমান এফ রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। দুদক জানতে পেরেছে, সালমান এফ রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠরা এসব ব্যাংক হিসাবের অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর করার চেষ্টা করছেন।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, অবরুদ্ধের আদেশ হওয়া ৩৭২টি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে সালমান এফ রহমানের ৩টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। আর তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের নামে দুটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। বাকিগুলো তাঁর পরিবার ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
গত ১৩ জানুয়ারি সালমান এফ রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের নামে থাকা ২৫০ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ক্রোক করা এসব সম্পদের বেশির ভাগই রয়েছে ঢাকার দোহারে।
সিআইডি বলছে, রপ্তানি–বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ১৭টি মামলা করে সিআইডির আর্থিক দুর্নীতি দমন বিভাগ ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। এসব মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলে শায়ান ফজলুর রহমানসহ অন্যদের নামে দোহারে প্রায় দুই হাজার শতাংশ জমি, জমিতে নির্মিত স্থাপনা ও রাজধানীর গুলশানে একটি ফ্ল্যাটের খোঁজ পায়।
এরপর ১৩ জানুয়ারি সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং সালমানের ভাই এ এস এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ অন্য আসামিদের নামে থাকা সম্পদের বিবরণ আদালতে তুলে ধরে ক্রোকের আবেদন করে সিআইডি। আদালত সেদিনই এসব সম্পদ ক্রোক করার আবেদন মঞ্জুর করেন। অপরাধ তদন্ত সংস্থাটি বলছে, ক্রোক করা এসব সম্পত্তির বাজারমূল্য ২৫০ কোটি টাকা।
মামলাগুলোয় সালমান এফ রহমান, তাঁর পরিবারের সদস্যসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদনে সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমতি না নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং ও আর আর হোল্ডিং লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে এসব প্রতিষ্ঠান গড়েন তাঁরা।