কাশ্মীরের পেহেলগাম ইস্যুতে উত্তেজনার মধ্যে একে অপরের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশে অন্তত ৪১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। উত্তেজনা এখনো থেমে নেই। যেকোনো সময় আরও বড় পরিসরে হামলার শঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। চিরবৈরি দু’দেশের সংঘাতে এখন পর্যন্ত কী কী সমরাস্ত্রের ব্যবহার হলো, তা নিয়ে কৌতূহল অনেকের। এই প্রতিবেদনে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপারেশন সিঁদুরে উচ্চ ও দীর্ঘ পাল্লার হামলা চালাতে সক্ষম এমন বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করেছে দিল্লি। এই অস্ত্রগুলোর মধ্যে স্কাল্প ক্রুজ মিসাইল, হেমার বোমা ও লোটারিং মিউনিশন (আত্মঘাতী ড্রোন) উল্লেখযোগ্য।
কোন অস্ত্রের কী কাজ
স্কাল্প ক্রুজ মিসাইল: এটি একটি দূরপাল্লার মিসাইল, যা আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা হয়। এটি ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে। প্রতিপক্ষের কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানার জন্য এটি ডিজাইন করা হয়েছে। মিসাইলটি মূলত বাঙ্কার, সামরিক ঘাঁটি ও সুরক্ষিত অবকাঠামো ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়।
হেমার বোমা: এটি একটি স্মার্ট বোমা। নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানার জন্য এটি ডিজাইন করা হয়েছে। বিশেষ করে শক্তিশালী অবকাঠামো- যেমন কংক্রিটের বাঙ্কার ও বহুতল ভবন ধ্বংসে এই বোমা ব্যবহার করা হয়। এটি ৫০-৭০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
লোটারিং মিউনিশন: এটি এক ধরনের ড্রোন। শত্রুপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নজরদারি, লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণ এবং চূড়ান্ত আঘাত হানার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই ড্রোনগুলো নির্দিষ্ট এলাকায় বাতাসে ঘোরাফেরা করতে পারে এবং লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্তের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অথবা দূরনিয়ন্ত্রিতভাবে হামলা চালিয়ে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে।
এই অস্ত্রের বিশেষত্ব হলো- একবার লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা হলে, এরা সরাসরি নিজেদের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আঘাত হানে। ফলে এগুলোর পুনঃব্যবহার সম্ভব নয়।
ভারত সরকারের প্রকাশিত বিবৃতি অনুসারে, অপারেশন সিঁদুরে মোট ৯টি স্থানে হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে চারটি পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে এবং পাঁচটি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলায় কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করা হয়নি। টার্গেটগুলো আগে থেকে যাচাই করা হয়েছিল। সেসব জায়গায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অপারেশন সেন্টার রয়েছে এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরেই হামলা চালানো হয়।
অন্যদিকে মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভারতের চালানো হামলার জবাব দিয়েছে পাকিস্তানও। ইসলামাবাদের হামলায় ভারত শাসিত কাশ্মীরে ১৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৪৩ জন। দিল্লির বিমান হামলার জবাবে দেশ দুটির মধ্যে কার্যত সীমান্ত হিসেবে পরিচিত এলাকায় পাকিস্তান যখন ভারী গোলাবর্ষণ শুরু করে, তখন এই ঘটনা ঘটে ।
ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানি ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর তাৎক্ষণিক প্রতিরক্ষায় ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পরে বলা হয়, তারা তিনটি রাফাল, একটি এসইউ-৩০ এবং একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
স্থলভাগের শক্তি বিবেচনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারত এগিয়ে থাকলেও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি ও মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর বা রকেট লঞ্চারের সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি সংখ্যা ৬৬২, ভারতের ১০০। পাকিস্তানের মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর ৬০০, ভারতের ২৬৪।
এছাড়া অন্যান্য সমরাস্ত্রের মধ্যে ভারতের ট্যাংক সংখ্যা ৪ হাজার ২০১টি, সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৪টি, টোওড আর্টিলারি বা টেনে নেয়ার কামান ৩ হাজার ৯৭৫টি। পাকিস্তানের ট্যাংক রয়েছে ২ হাজার ৬২৭টি, সাঁজোয়া যান ১৭ হাজার ৫১৬টি, টোওড আর্টিলারি ২ হাজার ৬২৯ টি।
তবে পাকিস্তান ঠিক কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারতের হামলার জবাব দিয়েছে তা এখনো স্পষ্টভাবে জানা যায়নি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর আর ট ল র লক ষ য
এছাড়াও পড়ুন:
নরসিংদীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক
নরসিংদীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে, দেখা দিচ্ছে শয্যা সংকট। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তার মশা নিধনে ড্রেনগুলো দ্রুত পরিষ্কারের জন্য পৌরসভার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসেই প্রায় ১০০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। অক্টোবর মাসের প্রথম তিনদিনে ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিনই জ্বর, শরীর ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে আসছেন রোগীরা। যাদের অবস্থা গুরুতর, তাদেরকেই ভর্তি করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
নার্সদের অমর্যাদাকর অবস্থানে রাখা হয়েছে: ফরহাদ মজহার
বাঁশবাগানে পাওয়া সেই নবজাতক মারা গেছে
রোগীর স্বজন নাসরিন আক্তার বলেন, “আমার ভাই পাঁচদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। প্রথমে বুঝতেই পারিনি তার ডেঙ্গু হয়েছে। এখন প্লাটিলেট কমে গেছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, অবস্থা গুরুতর। খুব দুশ্চিন্তায় আছি। হাসপাতালের চিকিৎসকরা যথাসাধ্য করছেন, শয্যার সংকট আর ওষুধের জোগান সবসময় মেলে না।”
আরেক রোগীর বাবা মো. সাহেব আলী বলেন, “আমার ছোট ছেলের বয়স ১০ বছর। জ্বর নিয়ে ভর্তি করাতে হয়েছিল তাকে। ওর ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। হাসপাতালে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। আমরা গরিব মানুষ, ছেলেকে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সমর্থ্য নেই।”
হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমাণ এক রোগীর চাচা মাহবুব হোসেন বলেন, “হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না। ডেঙ্গু যে এত ভয়াবহ হবে বুঝতে পারিনি। প্রশাসন যদি আগে ব্যবস্থা নিত, তাহলে এমন অবস্থা হতো না।”
স্থানীয় কলেজছাত্র জুবায়ের হোসেন বলেন, “জুলাইয়ের শেষ দিক থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, অথচ পৌরসভা থেকে মশা নিধনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়নি অনেকদিন। আমরা খুব চিন্তায় আছি। শুধু ওষুধ আর হাসপাতাল দিয়ে এই রোগ ঠেকানো যাবে না। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন কারণে এডিস মশার প্রজনন বাড়ছে। প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসছেন জ্বর নিয়ে। অনেকেরই অবস্থা গুরুতর। সীমিত সামর্থ্যে আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমতো সেবা দিতে। রোগীর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।”
ঢাকা/হৃদয়/মাসুদ