জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় অবশেষে মামলা করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রশাসন। এ মামলায় হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত শিক্ষক, ছাত্রলীগ নেতাকর্মী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মোট ৭১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার (৭ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড.

হারুন অর রশীদ বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলা দায়েরের পরপরই তাজহাট থানা পুলিশ এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।

মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১১, ১৫ ও ১৬ জুলাই প্রতিদিন দুপুর ২টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট ও সংলগ্ন মহাসড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিল। এসময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা, লোহার রড, কিরিচ, ইট-পাটকেল, হাতবোমা, পিস্তলসহ সংঘবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়।

আরো পড়ুন:

মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

শ্রীপুরে ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

এছাড়াও পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ছররা গুলি, টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। এতে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ শহীদ হন এবং আহত হন অনেক শিক্ষার্থী।

মামলায় উল্লেখিত আসামীদের মধ্যে রয়েছে— বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, দুইজন শিক্ষক, ৩৬ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী, আটজন পুলিশ সদস্য এবং ১২ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। এছাড়াও ৮০ থেকে ১০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে, বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়াকে।

ক্রমান্বয়ে অন্য ‎আসামিরা হলেন,  বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার দাস ওরফে টগর, সহ-সভাপতি বিধান বর্মন, গ্লোরিয়াস ফজলে রাব্বী, ছাত্রলীগ নেতা তানভির আহমেদ তানভির, যুগ্ম-সম্পাদক শাহিদ হাসান সিদ, সহ সভাপতি মমিনুল হক (নং-০৬), আখতার হোসেন, মো. শাহীন ইসলাম, প্রচার সম্পাদক সাব্বির হোসেন ওরফে রিয়ান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, মৃত্যুঞ্জয় রায়, উপ-প্রচার সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল নোমান, উপ-সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক মো. রিফাত হোসেন, ফরহাদ হোসেন এলিট, আবির শাহরিয়ার অনিক, উদ্যোক্তা উদ্ভাবনবিষয়ক সম্পাদক আরিফুজ্জামান ইমন, মাদ্রাসাবিষয়ক সম্পাদক গাজিউর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী আকাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক সেজান আহম্মেদ ওরফে আরিফ, পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক আরাফাত রহমান আবির, উপ-স্কুলবিষয়ক সম্পাদক শোয়াইবুল ইসলাম ওরফে সাল্লু, সামাজিক যোগাযোগবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল রায়হান, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অমিত হাসান ওরফে অমিত, উপ-অটিজমবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান (হৃদয়), সাংগঠনিক সম্পাদক পিপাস আলী, উপ-ক্রিড়া সম্পাদক মানিক চন্দ্র সেন, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেন, ক্রিয়া সম্পাদক সিয়াম আরাফাত, ছাত্রলীগ কর্মী নাফিউল ইসলাম, আবু সালেহ নাহিদ, বায়োজিদ মোস্তাফি, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, সহকারী রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমান তুফান, কর্মচারী আমির হোসেন, সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান (পলাশ), উপ-রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা শাখা) তৌহিদুল ইসলাম (জনি), সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রক্টর অফিস) রাফিউল হাসান রাসেল, মাস্টাররোল কর্মচারী নুরনবী, নিরাপত্তা শাখার কর্মচারী মো. নুর আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার (ডেসপাস শাখা) মোকতারুল ইসলাম, সেমিনার সহকারী আশিকুন্নাহার টুকটুকি, উপ-রেজিস্ট্রার (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) মোছা. মাহবুবা আক্তার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন দপ্তরের কর্মচারী ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি মাহবুবার রহমান (বাবু), প্রক্টর অফিসের কর্মচারী মো. আপেল, সাবেক উপচার্যের পিএ ও নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, তাজহাট থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জিকরুল মাহবুব শোভন, ২৮নং ওয়ার্ড যুবলীগ কর্মী শামিম হাসান হিটন, মহানগর যুবলীগ কর্মী শাহারিয়ার নয়ন, ২৮নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ কর্মী ইশাক রিজন, ২৮নং যুবলীগ কর্মী আহসান হাবিব লালন, আল-আমিন, ২৮নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ কর্মী সায়ির বিন আশরাফ ওরফে আনন্দ, তাজহাট থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ-সভাপতি আতিকুল বারী জামিন, ২৮নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী জাকির মুসা, রংপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সিদ্দিক রনি, ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কর্মী মো. নয়ন, তাজহাট থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শিপন, রংপুর সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আল ইমরান হোসেন, আরিফুজ্জামান, তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম, ফাঁড়ি ইনচার্জ বিভূতিভূষণ রায়, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, আমির আলী, রংপুর উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ উপ-কমিশনার মো. শাহানুর আলম পাটোয়ারী।

তাজহাট থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম সরদার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এছাড়াও একজনের গ্রেপ্তারের বিষয়ও নিশ্চিত করেন।

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ য ত থ ন ন ত কর ম ল গ কর ম র রহম ন ল ইসল ম য বল গ সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

লিফলেট বিতরণে যাওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলার অভিযোগ

মাদারীপুরের শিবচরে তারেক রহমানের ৩১ দফা–সংবলিত লিফলেট বিতরণের সময় বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার রাত আটটার দিকে শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেলে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লিফলেট নিয়ে বের হন মাদারীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে লাবলু সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থকেরা। শিবচর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করেন তাঁরা। ফেরার পথে উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকায় এলে শিবচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান বাবুল ফকিরের লোকজনের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ।

এ সময় উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে আহত হন উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন। ভাঙচুর করা হয় পাঁচটি মোটরসাইকেল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিবচর থানা–পুলিশ ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া সুমন আহম্মেদ ও রাশেদ মৃধা বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা লিফলেট নিয়ে তাঁরা চরশ্যামাইল এলাকার কাজীর দোকান নামক স্থানে এলে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল ফকিরের ছেলে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা সুমন ফকিরের নেতৃত্বে শতাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে তাঁদের অনেক লোকজন আহত হয়েছেন। মোটরসাইকেল রেখে তাঁদের অনেকে সেখান থেকে ফিরেছেন।

বিএনপি নেতা সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজন অনুসারীর কথাকাটাকাটি হয়। পরে বিষয়টি মিটমাটও হয়ে গেছে। লিফলেট বিতরণ শেষ করে মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরার সময় রাস্তায় গতিরোধ করে দুই দিক থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করে। কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। হামলায় যারা আহত বেশির ভাগই বিএনপির কর্মী সমর্থক। তিনি হামলার নিন্দা জানিয়ে জড়িতের বিচার দাবি করেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে বাবলু ফকিরের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমিসহ অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিই। এ ঘটনায় থানায় এখনো অভিযোগ দেয়নি কেউ। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ