ভারত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের ভেতরে ৯টি জায়গায় হামলা চালিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্র হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা বলেছে। বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি, তবে এটা স্পষ্ট– উভয় পক্ষই একটি যুদ্ধের মখোমুখি। কয়েক বছর কিংবা কয়েক দশক ধরে উভয়ের মধ্যে যে সংঘর্ষ চলে আসছে, এটা হয়তো তার চাইতে বড় হবে। ইতোপূর্বে আমরা এ ধরনের সংকট দেখেছি। ভারত ও পাকিস্তান বেশ কয়েকবারই পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ করেছে; যেমন ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালে। 

২০১৬ ও ২০১৯ সালেও উভয় পক্ষের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তবে তা বড় যুদ্ধের রূপ নেয়নি। এসব যুদ্ধ সীমিত পর্যায়ে হওয়ার কারণ হলো, উভয় পক্ষেরই এই বোঝাপড়া আছে যে, ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন। ফলে বড় আকারের যুদ্ধ হলে তা খুবই ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে। যে কারণে উভয় পক্ষের মধ্যেই এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ কিংবা অন্তত সতর্কতা ছিল। এ দুই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদেরও চাপ ছিল, যাতে সংঘাত বড় যুদ্ধের রূপ নিতে না পারে।

অনুরূপভাবে এইবারও উভয় পক্ষ কিছুটা সংযত থাকবে, যদিও অন্য দেশগুলোর পক্ষ থেকে সেই ধরনের চাপ কম থাকতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজনা দ্রুত বাড়তে পারে। উত্তেজনা যদি বাড়তে থাকে, উভয় পক্ষকে নিরস্ত করা কঠিন হবে এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়ালে এমন অবস্থায় তারা পৌঁছবে, যেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন হবে।

ভারত কেন এখনই পাকিস্তানে আক্রমণ করল? ভারত বলছে, গত মাসে প্রধানত ভারতীয় পর্যটকদের ওপর ব্যাপক সামরিক উপস্থিতির কাশ্মীরে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, এটা তারই প্রতিশোধ। কাশ্মীরের ওই হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারায়। হামলার পর রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি গ্রুপ দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। যে কারণে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে যায়। ভারতীয় সূত্র বলছে, এই গ্রুপ অপেক্ষাকৃত নতুন, তবে তারা পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার অংশ। 

পাকিস্তান পর্যটকদের ওপর হামলার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। যদিও পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এসব গোষ্ঠীর কার্যক্রমে অনুমোদন দেয়নি, অতীতে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে, পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠান বা সামরিক বাহিনীর কিছু অংশ আদর্শিক, আর্থিক বা অন্যান্য সহায়তার মাধ্যমে তাদের সমর্থন করে থাকে। ভারতে অতীতের সন্ত্রাসী হামলাগুলোয়, যেমন ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলায় অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম পাকিস্তান থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল। ভারত সরকার দাবি করে, হামলাকারীরা পাকিস্তানি ফোনের নির্দেশনায় কাজ করে। 

তবে কাশ্মীরে সাম্প্রতিক পর্যটকদের ওপর হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। ভারত বারবার পাকিস্তানকে এসব গোষ্ঠী নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। যদিও মাঝে মাঝে এসব গোষ্ঠীর নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পরে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার কথিত মাস্টারমাইন্ডও আছে। এ ছাড়া পাকিস্তানে এমন মাদ্রাসা এখনও চালু রয়েছে, যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি গোষ্ঠীর জন্য সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে অভিযুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ খুবই সীমিত। অন্যদিকে পাকিস্তান দাবি করে, কাশ্মীরে হামলাগুলো স্থানীয় কাশ্মীরিদের দ্বারা সংঘটিত, যারা ভারতের ‘দখলের বিরুদ্ধে’ প্রতিবাদ করছে অথবা পাকিস্তানি নাগরিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ দুই অবস্থান স্পষ্টতই একে অপরের সঙ্গে মেলে না।

যা হোক, এখন দেখতে হবে উভয় পক্ষই উত্তেজনা আরও বাড়াতে চায় কিনা। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মনে হচ্ছে, বড় যুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা কম। দিল্লি হয়তো এ হিসাব করছে, ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তারা এমনটা চায় না। মঙ্গলবারের পাকিস্তানে হামলার আগেই তারা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে। যুদ্ধ হলে তা বাধাগ্রস্ত হবে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির দিক থেকে উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে দেখা গেছে, পশ্চিমা দেশগুলো সামরিক হামলার দ্রুত নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু এখন হয়তো সবাই ভাবছে, ভারত-পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় সংকট তাদের নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। 

২২ এপ্রিল কাশ্মীরে হামলার পূর্বে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছিলেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এবং সাধারণ ভারতীয়রা সেখানে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে। তারপরও পেহেলগামে অঘটন ঘটে। এতে তাঁর দাবির অসারতা প্রমাণ হয়। ফলে ভারতের কাছে এর জবাব দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। পাকিস্তান আক্রমণ প্রতিহত করে, যেখানে তারা ৫টি যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করে। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলায় ৪১ জন হতাহতের কথা জানা যায়। 

এর পর কী হবে? আশা করা যায়, সীমিত সামরিক সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়ে যাবে, যেমনটা অতীতেও হয়েছে। তবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। অবশ্য এই বিরোধ নিরসনে হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহী এমন দেশও খুব কম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে ইউক্রেন, গাজা ও ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে অন্য সংঘাতে জড়িয়ে রয়েছেন এবং তাঁর প্রশাসনের কূটনীতি এখন পর্যন্ত অদক্ষ ও অকার্যকর প্রমাণিত।

ট্রাম্পকে ভারতীয় হামলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটি ‘দুঃখজনক’ এবং তিনি ‘আশা করেন’, এটি দ্রুত শেষ হবে। এই বক্তব্য অতীতের সেই শক্তিশালী বক্তব্যের চেয়ে অনেক আলাদা, যা আমরা আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কাছ থেকে শুনেছি, বিশেষত যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, দিল্লি ও ইসলামাবাদকে নিজেদেরই এ পরিস্থিতির সমাধান করতে হবে। 

ইয়ান হল: অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক; দ্য কনভারসেশন থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

পূজার ছুটিতে বিশেষ ট্রেন ‘টুরিস্ট স্পেশাল’ চলবে ঢাকা–কক্সবাজার রুটে

শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় টানা ছুটি থাকছে এবার। দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটিসহ টানা চার দিন বন্ধ থাকবে অফিস–আদালত। লম্বা এই ছুটিতে যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ঢাকা–কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম–ঢাকা রুটে বিশেষ ট্রেন চালু করছে রেলওয়ে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত এসব ট্রেন চলবে। এর মধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ‘ঢাকা স্পেশাল’ চলবে। চট্টগ্রাম থেকে বেলা পৌনে ৩টায় এই ট্রেন ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছবে রাত ৮টায়। ৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম স্পেশাল ঢাকা থেকে ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়।

এ ছাড়া ট্যুরিস্ট স্পেশাল চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর। বিশেষ এই ট্রেন ৩০ সেপ্টেস্বর ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। কক্সবাজার পৌঁছাবে সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে। কক্সবাজার থেকে এই ট্রেন ছাড়বে বেলা সাড়ে ১১টায়। ৪ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন এই ট্রেন চলাচল করবে।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি বিশেষ ট্রেনে ১৮টি বগি থাকবে। দিনে আসন থাকবে ৮৩৪টি এবং রাতের বেলায় ৭৮৯টি। ভাড়া নিয়মিত ট্রেনের মতো।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্ম সফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের ছুটি থাকবে। লম্বা ছুটিতে পর্যটন শহর কক্সবাজারে পর্যটকদের চাপ বেড়ে যায়। কক্সবাজারে যাওয়ার ক্ষেত্রে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ট্রেন। তাই যাত্রীর চাপ সামাল দিতে বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে। এসব ট্রেনে নিয়মিত আন্তনগর ট্রেনের মতো সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা থাকবে। যাত্রীরা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তার কী হবে
  • পূজার ছুটিতে বিশেষ ট্রেন ‘টুরিস্ট স্পেশাল’ চলবে ঢাকা–কক্সবাজার রুটে
  • সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর অন্তঃসত্ত্বা মায়ের আত্মহত্যার অভিযোগ