ভারত পাকিস্তানকেই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে
Published: 8th, May 2025 GMT
ভারত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের ভেতরে ৯টি জায়গায় হামলা চালিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্র হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা বলেছে। বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি, তবে এটা স্পষ্ট– উভয় পক্ষই একটি যুদ্ধের মখোমুখি। কয়েক বছর কিংবা কয়েক দশক ধরে উভয়ের মধ্যে যে সংঘর্ষ চলে আসছে, এটা হয়তো তার চাইতে বড় হবে। ইতোপূর্বে আমরা এ ধরনের সংকট দেখেছি। ভারত ও পাকিস্তান বেশ কয়েকবারই পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ করেছে; যেমন ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালে।
২০১৬ ও ২০১৯ সালেও উভয় পক্ষের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তবে তা বড় যুদ্ধের রূপ নেয়নি। এসব যুদ্ধ সীমিত পর্যায়ে হওয়ার কারণ হলো, উভয় পক্ষেরই এই বোঝাপড়া আছে যে, ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন। ফলে বড় আকারের যুদ্ধ হলে তা খুবই ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে। যে কারণে উভয় পক্ষের মধ্যেই এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ কিংবা অন্তত সতর্কতা ছিল। এ দুই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদেরও চাপ ছিল, যাতে সংঘাত বড় যুদ্ধের রূপ নিতে না পারে।
অনুরূপভাবে এইবারও উভয় পক্ষ কিছুটা সংযত থাকবে, যদিও অন্য দেশগুলোর পক্ষ থেকে সেই ধরনের চাপ কম থাকতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজনা দ্রুত বাড়তে পারে। উত্তেজনা যদি বাড়তে থাকে, উভয় পক্ষকে নিরস্ত করা কঠিন হবে এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়ালে এমন অবস্থায় তারা পৌঁছবে, যেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন হবে।
ভারত কেন এখনই পাকিস্তানে আক্রমণ করল? ভারত বলছে, গত মাসে প্রধানত ভারতীয় পর্যটকদের ওপর ব্যাপক সামরিক উপস্থিতির কাশ্মীরে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, এটা তারই প্রতিশোধ। কাশ্মীরের ওই হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারায়। হামলার পর রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি গ্রুপ দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। যে কারণে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে যায়। ভারতীয় সূত্র বলছে, এই গ্রুপ অপেক্ষাকৃত নতুন, তবে তারা পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার অংশ।
পাকিস্তান পর্যটকদের ওপর হামলার সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। যদিও পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এসব গোষ্ঠীর কার্যক্রমে অনুমোদন দেয়নি, অতীতে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে, পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠান বা সামরিক বাহিনীর কিছু অংশ আদর্শিক, আর্থিক বা অন্যান্য সহায়তার মাধ্যমে তাদের সমর্থন করে থাকে। ভারতে অতীতের সন্ত্রাসী হামলাগুলোয়, যেমন ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলায় অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম পাকিস্তান থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল। ভারত সরকার দাবি করে, হামলাকারীরা পাকিস্তানি ফোনের নির্দেশনায় কাজ করে।
তবে কাশ্মীরে সাম্প্রতিক পর্যটকদের ওপর হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। ভারত বারবার পাকিস্তানকে এসব গোষ্ঠী নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। যদিও মাঝে মাঝে এসব গোষ্ঠীর নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পরে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার কথিত মাস্টারমাইন্ডও আছে। এ ছাড়া পাকিস্তানে এমন মাদ্রাসা এখনও চালু রয়েছে, যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি গোষ্ঠীর জন্য সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে অভিযুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ খুবই সীমিত। অন্যদিকে পাকিস্তান দাবি করে, কাশ্মীরে হামলাগুলো স্থানীয় কাশ্মীরিদের দ্বারা সংঘটিত, যারা ভারতের ‘দখলের বিরুদ্ধে’ প্রতিবাদ করছে অথবা পাকিস্তানি নাগরিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ দুই অবস্থান স্পষ্টতই একে অপরের সঙ্গে মেলে না।
যা হোক, এখন দেখতে হবে উভয় পক্ষই উত্তেজনা আরও বাড়াতে চায় কিনা। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মনে হচ্ছে, বড় যুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা কম। দিল্লি হয়তো এ হিসাব করছে, ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তারা এমনটা চায় না। মঙ্গলবারের পাকিস্তানে হামলার আগেই তারা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে। যুদ্ধ হলে তা বাধাগ্রস্ত হবে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির দিক থেকে উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে দেখা গেছে, পশ্চিমা দেশগুলো সামরিক হামলার দ্রুত নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু এখন হয়তো সবাই ভাবছে, ভারত-পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় সংকট তাদের নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।
২২ এপ্রিল কাশ্মীরে হামলার পূর্বে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছিলেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এবং সাধারণ ভারতীয়রা সেখানে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে। তারপরও পেহেলগামে অঘটন ঘটে। এতে তাঁর দাবির অসারতা প্রমাণ হয়। ফলে ভারতের কাছে এর জবাব দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। পাকিস্তান আক্রমণ প্রতিহত করে, যেখানে তারা ৫টি যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করে। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলায় ৪১ জন হতাহতের কথা জানা যায়।
এর পর কী হবে? আশা করা যায়, সীমিত সামরিক সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়ে যাবে, যেমনটা অতীতেও হয়েছে। তবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। অবশ্য এই বিরোধ নিরসনে হস্তক্ষেপ করতে আগ্রহী এমন দেশও খুব কম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে ইউক্রেন, গাজা ও ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে অন্য সংঘাতে জড়িয়ে রয়েছেন এবং তাঁর প্রশাসনের কূটনীতি এখন পর্যন্ত অদক্ষ ও অকার্যকর প্রমাণিত।
ট্রাম্পকে ভারতীয় হামলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটি ‘দুঃখজনক’ এবং তিনি ‘আশা করেন’, এটি দ্রুত শেষ হবে। এই বক্তব্য অতীতের সেই শক্তিশালী বক্তব্যের চেয়ে অনেক আলাদা, যা আমরা আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কাছ থেকে শুনেছি, বিশেষত যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, দিল্লি ও ইসলামাবাদকে নিজেদেরই এ পরিস্থিতির সমাধান করতে হবে।
ইয়ান হল: অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক; দ্য কনভারসেশন থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় পার্টিতে নেতাদের বিরোধ, ডিগবাজি
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনে ৫ আগস্টের পর জাতীয় পার্টি (জাপা) চাপে পড়ায় পূর্ববর্তী ভূমিকার দায় এড়াতে বিরোধে জড়িয়েছেন দলটির নেতারা। তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ আমলের তিন বিতর্কিত নির্বাচনে এমপি হলেও পরিবর্তিত রাজনীতিতে ‘টিকতে’ দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে সরাতে চাচ্ছেন। ফ্যাসিবাদের দোসর তকমামুক্ত হতে জাপায় নতুন নেতৃত্বের চেষ্টা করছেন তারা। এই তৎপরতায় দলের বাইরের ‘ইন্ধন’ও রয়েছে।
জাপা সূত্র সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছে। দলটির ছয় জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, তারা মনে করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের নেতৃত্বে থাকলে জাপা টিকতে পারবে না। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের বিরোধিতার কারণে সরকারের বৈঠক এবং সংস্কারে ডাক না পাওয়া জি এম কাদের যেভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে বলছেন, তাতে জাপার বিপদ বাড়ছে। তাই তাঁকে ঝেড়ে ফেলতে ডিগবাজি খেয়ে তৎপর হয়েছেন জাপার আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতারা।
জি এম কাদের ২৮ জুনের সম্মেলন স্থগিত করলেও জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, ওই দিন সম্মেলন হবেই। কাদের না এলে তাঁর অনুপস্থিতিতেই সম্মেলন হবে। নতুন নেতৃত্বও নির্বাচিত হবে সেদিন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মসূচি থাকায় ২৮ জুন চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দলের সম্মেলন করা সম্ভব নয়– কারণ দেখিয়ে ১৭ জুন জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানান।
যদিও তাঁর বিরোধীদের ভাষ্য, চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র না পেলে প্রেসিডিয়ামের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সম্মেলন হবে। তবে এখনও চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভাড়া পাওয়ার চেষ্টা চলছে। সম্মেলনের জন্য আগামীকাল রোববারের মধ্যে পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া যাবে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যানবিরোধীরা।
এখনও জি এম কাদেরের অনুগত প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটওয়ারী সমকালকে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন। তিনি অনুপস্থিতি থাকলে সেই সম্মেলন অবৈধ হবে।
জাপা নেতারা জানান, জি এম কাদেরকে সরাতে সামনে আনা হয়েছে দলের গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা। এ ধারার ফলে জাপা চেয়ারম্যান কারণ দর্শানো ছাড়াই দলের যে কাউকে পদ থেকে সরাতে পারেন, বহিষ্কার করতে পারেন। যে কাউকে যে কোনো পদ দিতে পারেন। এ জন্য তাঁর জবাবদিহিতা নেই।
১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাপা প্রতিষ্ঠা করার পর থেকেই এই ধারা রয়েছে দলের গঠনতন্ত্রে। এর ক্ষমতাবলে এরশাদের পর জি এম কাদেরও অনেক নেতাকে পদ দিয়েছেন, বহিষ্কার করেছেন। সম্মেলনে নির্বাচিত মহাসচিবকে সরিয়েছেন।
এ ধারা বিলোপে একাট্টা হয়েছেন জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ সাবেক ও বর্তমান জ্যেষ্ঠ নেতাদের বড় অংশ। তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগে বিতর্কিত নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। আনিসুল ইসলাম এবং রুহুল আমিন হাওলাদার ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির এমপি ছিলেন।
জাপার চেয়ারম্যান হতে চাচ্ছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। মহাসচিব হতে চাচ্ছেন রুহুল আমিন হাওলাদার। ২০১৪ সালের নির্বাচন এরশাদ ও জি এম কাদের বর্জন করলেও রওশন এরশাদ ও আনিসুলের নেতৃত্বে জাপা অংশ নেয়। জাপা বিরোধী দলের আসনে বসলেও হাসিনা সরকারের মন্ত্রী হন আনিসুল ইসলাম। ২০১৮ সালেও তিনি এমপি হন। গত বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিরোধীদলীয় উপনেতা হয়েছিলেন।
রুহুল আমিন হাওলাদার ২০১৪ এবং ২০২৪ সালে এমপি হয়েছেন। ২০১৩ সালে ছিলেন সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী। মুজিবুল হক চুন্নু তিন নির্বাচনেই এমপি হয়েছেন। ২০১৪ সালে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। জি এম কাদেরের সঙ্গে বিরোধে রওশনের নেতৃত্বে পৃথক জাতীয় পার্টি গড়া কাজী ফিরোজ রশিদ এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে এমপি হন। তারাও জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর তৎপরতায় যোগ দিয়েছেন।
বিরোধী দলের আসনে বসেও প্রায় সব ইস্যুতে সরকারের সুরে কথা বলে আওয়ামী লীগের আমলে গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা পাওয়া জাপার নেতাদের মধ্যে জি এম কাদের বাদে অন্যরা ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনার সমালোচনা করছেন।
কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন জি এম কাদের। তবে তিনি একাধিকবার বলেছেন, যারা শেখ হাসিনার সময়ে সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে জাপাকে যন্ত্রণা দিয়েছে, তারাও আবার তৎপর হয়েছে। তাদের লক্ষ্য নতুন ক্ষমতাধরদের খুশি করে আগামী নির্বাচনে কিছু একটা পাওয়া।
যদিও এসব বক্তব্যকে নাকচ করেছেন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চাওয়া ব্যারিস্টার আনিসুল। তিনি বলেছেন, জি এম কাদের নিজে শেখ হাসিনার মন্ত্রী হয়েছেন। সরকারকে ব্যবহার করে বিরোধীদলীয় উপনেতা, নেতা হয়েছেন। তাঁর মুখে এসব কথা মানায় না।
চেয়ারম্যানকে ভারতের দোসর আখ্যা দিয়ে আনিসুল ইসলাম বলেছেন, জি এম কাদের একসময় বলেছেন, ভারত অনুমতি না দেওয়ায় তিনি সব কথা বলবেন না। এখন তিনি যেসব কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সমর্থনে, সেগুলো কি ভারতের অনুমোদনে বলছেন? তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অব্যবহার হয়, আর্থিক কেলেঙ্কারিরও অভিযোগ রয়েছে।
এখনও জি এম কাদেরের সঙ্গে রয়েছেন বলে জানালেও মুজিবুল হক চুন্নু সমকালকে বলেন, সম্মেলন ২৮ জুন হবে কিনা জানি না। তবে প্রেসিডিয়ামের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ওইদিন চীন মৈত্রীতে বা কাকরাইলে সম্মেলন হবে। চীন মৈত্রী না পাওয়ায় কাকরাইলে সম্মেলন করা যেত। কিংবা প্রেসিডিয়ামের অনুমোদন নিয়ে সম্মেলন স্থগিত করা যেত। চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্তে সম্মেলন স্থগিত করায় কাজটি সুন্দর হয়নি। সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম এবং রুহুল আমিন হাওলাদার একটি প্যানেল দিচ্ছেন। জি এম কাদেরের প্যানেল থেকে আমি মহাসচিব প্রার্থী হতে চাই। জি এম কাদের যদি সম্মেলন না করেন, তখন কোথায় যাব?
২০(ক) ধারা পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে চুন্নু বলেন, জি এম কাদের গণতন্ত্রের কথা সবচেয়ে বেশি বলেন। তিনি গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু ২০(ক) ধারাও রাখছেন। এ ধারা বলে তিনি যে কোনো সময়ে মহাসচিবকেও সরাতে পারেন। এত অনিশ্চয়তা নিয়ে রাজনীতি হয় না। তাই ধারাটি শিথিল করে প্রেসিডিয়ামের অনুমোদনে বহিষ্কার এবং পদ দেওয়ার নিয়ম করতে বলেছি।
জি এম কাদেরবিরোধীদের সূত্রের খবর, আনিসুল চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন মহাসচিব হবেন। চুন্নুকে নির্বাহী চেয়ারম্যান হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হবেন কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি এককালে এরশাদকে ছেড়ে জাপা ভেঙে বিএনপির জোটে গিয়েছিলেন। জাপা ভেঙে একই নামে দল করা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে দলে ফিরিয়ে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনিও শেখ হাসিনার মন্ত্রী ছিলেন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিষয়ে আনিসুল ইসলাম বলেছেন, তাঁকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি। যারা অতীতে জাতীয় পার্টি থেকে চলে গেছেন, পৃথক দল করেছেন– তাদের সবাইকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা রয়েছে। সৌজন্যতার অংশ হিসেবে বিএনপি এবং অন্য দলকে আমন্ত্রণ করা হবে।
সম্মেলনের সঙ্গে সরকার বা সরকারি সংস্থার যোগসূত্র নেই বলেও দাবি করেন আনিসুল ইসলাম। তবে জি এম কাদেরের অনুসারী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, যারা সম্মেলন চান তাদের সবাই ‘ডিপ স্টেটের’ নিয়ন্ত্রিত ছিলেন। তারা নতুন করে কিছু করছেন মানেই, রাষ্ট্রযন্ত্রের সমর্থনে করছেন। কিংবা ৫ আগস্ট-পরবর্তী মামলা থেকে বাঁচতে করছেন। আবার সবাই ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হওয়ায় ব্যবসা রক্ষার স্বার্থেও তৎপর হতে পারেন।