আগাম বর্ষায় ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা অংশের পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুই কিলোমিটার রক্ষা বাঁধ। ইতোমধ্যে বাঁধটির পাশে কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী কাছাকাছি চলে আসায় স্থানীয়দের মধ্যেও দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। 

ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত স্থায়ী আর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে অনুমোদন শেষে কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। 

স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখারকান্দি জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। 

আরো পড়ুন:

তিস্তার পানিকে যুদ্ধাস্ত্র বানিয়েছে ভারত: মির্জা আব্বাস

দখল-দূষণে বিপন্ন লক্ষ্মীপুরের খাল ও নদী উদ্ধারে অভিযান

গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকার ধস শুরু হয়। ১৬ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে নদীতে। এতে কংক্রিটের সিসি ব্লকগুলো তলিয়ে যায় পানিতে। এছাড়া এলাকাটির আশপাশে দেখা দেয় ফাটল। পরে বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। 

গত বছর ওই বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল তা দুই কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পূর্ব পাশের নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো দুই কিলোমিটার রক্ষা বাঁধটি এখন পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ, যা সমীক্ষা শেষে নিশ্চিত হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

এরইমধ্যে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন দেখাও দিয়েছে। আর বাঁধটি ভেঙে গেলে পদ্মায় বিলীন হতে পারে জাজিরার পদ্মা ক্যান্টনমেন্ট, হাট-বাজারসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পদ্মা নদীর পাড়ে দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করলে ফসলি জমি, গবাদি পশু এবং এলাকার বাসিন্দারা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের। 

স্থানীয় জেলে মো.

আজিজুল হক বলেন, “গত বছরেই আমার বাড়ির পেছনটা নদীতে চলে গেছে। এবার যদি বাঁধটা ভেঙে যায়, তাহলে পুরো বসতবাড়ি আর মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও থাকবে না। আমরা গরিব মানুষ, নদীভাঙা দেখেই বড় হয়েছি। কিন্তু এখনকার ভাঙন আরও ভয়ংকর। সরকার যদি দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ না দেয়, তাহলে সব কিছু হারিয়ে পথে বসতে হবে।”

রাশিদা বেগম নামে এক গৃহবধূ বলেন, “আমার স্বামীর সামান্য একটা দোকান ছিল হাটের পাশে। সেটাও এখন ভাঙনের হুমকিতে। রাতে ঘুমাই ভয়ে, না জানি কখন বাঁধ ভেঙে সব ভেসে যায়। পদ্মা সেতু হয়েছে ভালো কথা কিন্তু তার পাশে আমাদের জীবনটাই এখন ঝুঁকিতে। আমরা চাই, সরকার যেন দ্রুত এই রক্ষা বাঁধটা মজবুত করে দেয়।”

এ বিষয়ে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বনিক বলেন, “গত বারের ধসে পড়া বাঁধের ১০০ মিটার অংশের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দুই কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালু ভর্তি ৩৩ হাজার জিওব্যাগ ও সিসিব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। বর্ষার আগে বাঁধটি মেরামতের কাজ শেষ হবে।”

বাঁধের বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধটি সেতু বিভাগ নির্মাণ করেছিল ১২-১৩ বছর আগে। ওই বাঁধে সমীক্ষা চালানো হয়েছে, তাতে বাঁধটি এই মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হয়েছে। বাঁধটি মজবুতকরণ করার জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাঁধটি মজবুতকরণ করা না হলে ভাঙনের ঝুঁকি রয়েছে।”

ঢাকা/আকাশ/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ ট কসই ব ড় ব প রকল প র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে: ট্রাম্প

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েল ও ইরান সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধাপে ধাপে কার্যকর হবে এবং এই যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে।

রয়টার্স ও আল জাজিরা ট্রাম্পের ট্রুথ সোশালে করা পোস্টের বরাতে এ খবর দিয়েছে। তবে ইরান বা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য আসেনি।

আরো পড়ুন:

কাতারে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার ‘উচ্চ সতর্কতা’ জারি

‘ইরানে রেজিম চেঞ্জ হলে কে ক্ষমতায় বসবে, তা কেউ বলে দিতে পারে না’

ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, “ইসরায়েল ও ইরান পরস্পরের চলমান সামরিক অভিযান শেষ করে আগামী ৬ ঘণ্টার মধ্যে একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতিতে যাবে। এই যুদ্ধবিরতি প্রথমে ১২ ঘণ্টার জন্য কার্যকর হবে। এরপর ২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হলে যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ বলে বিবেচিত হবে।”

তিনি আরো বলেন, “ইরান প্রথমে যুদ্ধবিরতি শুরু করবে এবং ১২ ঘণ্টা পরে ইসরায়েলও তাদের অভিযান বন্ধ করবে। একে একে দুই দেশই শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ করবে।”

ট্রাম্প এই সমঝোতাকে একটি বড় সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই ১২ দিনের যুদ্ধ কয়েক বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নিতে পারত, কিন্তু তা হয়নি এবং আর কখনোই হবে না।”

ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, “এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং অবশেষে দুই পক্ষকে একটি সমঝোতায় আনতে পেরেছে।”

সোমবার (২৩ জুন) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় কাতার ও ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই এই ঘোষণা দেন ট্রাম্প।  

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ