বেনারসিশিল্পের উন্নয়নে পৃথক পল্লি স্থাপনের দাবি
Published: 8th, May 2025 GMT
রাজধানীর মিরপুরের বেনারসিশিল্পের আধুনিকায়ন এবং পণ্যের বহুমুখীকরণে সহায়তা করছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশন। আধুনিক তাঁত যন্ত্র সরবরাহ এবং ডিজিটাল ডিজাইন পদ্ধতির প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের উৎপাদন খরচ হ্রাস ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এ ছাড়া বেনারসি তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য রক্ষা এবং বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোক্তারা সরকারি সহায়তার পাশাপাশি পৃথক বেনারসিপল্লির দাবি জানিয়েছেন। খবর বিজ্ঞপ্তির
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর বেনারসিশিল্প এলাকায় আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী পণ্য বৈচিত্র্যকরণ প্রশিক্ষণ সমাপনী, পণ্য প্রদর্শনী ও শিল্প এলাকা পরিদর্শন অনুষ্ঠানে এসব বিষয় উঠে আসে। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো.
উদ্যোক্তারা এই শিল্পের সুরক্ষায় পৃথক বেনারসিপল্লি স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিনের দাবির বিষয়টি পুনরায় উত্থাপন করেন। তাঁরা জানান, ২০০৩ সালে ভাষানটেক বেনারসিপল্লির জন্য প্লট বরাদ্দের আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত সাড়া পাওয়া যায়নি। ভাষানটেকে প্লট বরাদ্দ পেলে ব্যবসার প্রসার এবং ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পের উন্নয়ন করা সম্ভব হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বেনারসিশিল্পের উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এই শিল্পের বিকাশে যেকোনো বাধা দূর করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হলে সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে।
সভাপতির বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, মিরপুরের বেনারসি শাড়িকে দেশব্যাপী ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করতে ফাউন্ডেশন বিভিন্ন এসএমই মেলা, হস্তশিল্প প্রদর্শনী ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বেনারসি শাড়ির গুণগত মান বজায় রেখে আকর্ষণীয় ব্র্যান্ডিং ও প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে বাজারমূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বেনারসি ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণসুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ফলে কারিগরদের ব্যবসায়িক মূলধনের সংকট অনেকাংশে কমেছে বলে জানান এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বেনারসি উদ্যোক্তারা ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, মিরপুরের বেনারসি ইতিমধ্যে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নিবন্ধন পেলেও অবৈধ পথে আসা নিম্নমানের ভারতীয় বেনারসির কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। যেখানে হাতে বোনা একটি বেনারসি শাড়ি তৈরি করতে ১০ দিন থেকে এক মাস সময় লাগে, সেখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রে তৈরি পলিয়েস্টার সুতার শাড়ি কম দামে বাজারে বিক্রি হওয়ায় দেশীয় কারিগরেরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।
উদ্যোক্তারা এই শিল্পের সুরক্ষায় পৃথক বেনারসিপল্লি স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিনের দাবির বিষয়টি পুনরায় উত্থাপন করেন। তাঁরা জানান, ২০০৩ সালে ভাষানটেকে বেনারসিপল্লির জন্য প্লট বরাদ্দের আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত সাড়া পাওয়া যায়নি। ভাষানটেকে প্লট বরাদ্দ পেলে ব্যবসার প্রসার এবং এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প বাঁচানো সম্ভব হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ৩২ শতাংশ এবং এই খাতে প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ কর্মরত। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বিবেচনা করে এসএমই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা মিরপুরের বেনারসিশিল্পের ঐতিহ্য রক্ষা এবং উন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গুরুত্বারোপ করেন। তাঁদের আশা, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে এই শিল্প হারানো গৌরব ফিরে পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন রস শ ল প র এই শ ল প র অন ষ ঠ ন ভ ষ নট ক র রহম ন র জন য ব যবস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ প্রস্তাব
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কার্যকর অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “চলুন আমরা এমন একটি মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়ে তুলি, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।”
এ বিষয়ে তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরে বলেন, এগুলো কার্যকর করলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য, বৈষম্য ও আর্থিক অস্থিরতার সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, “আমাদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”
বাসস লিখেছে, প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রথম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া তার জন্য গর্বের বিষয়, যেখানে সম্ভাবনা ও দায়িত্ব একসাথে রয়েছে। তিনি বলেন, চতুর্থ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সম্মেলনে নেওয়া অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বছরে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অপরিহার্য।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "আমরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের কণ্ঠস্বর শোনার দায়িত্ব নিচ্ছি। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”
তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সম্পদের ন্যায্য প্রবেশাধিকার হলো ন্যায়বিচারের মূল। একজন নারী যখন ব্যবসা শুরু করে, যুবসমাজ যখন সৌর শক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি পায়, বস্তিবাসী শিশু যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা পায়, তখন পরিবর্তন বাস্তব ও টেকসই হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেভিলে অঙ্গীকার একটি নতুন কাঠামো প্রদান করে, যা জোরদার করে দেশীয় সম্পদ উত্তোলন, অবৈধ অর্থ প্রবাহ প্রতিরোধ, উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে।
তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরেন, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্থায়নকে শক্তিশালী করবে:
১. ন্যায্যভাবে দেশীয় সম্পদ উত্তোলনে আন্তর্জাতিক সহায়তার সমর্থন থাকা প্রয়োজন। কর ব্যবস্থা প্রগতিশীল, স্বচ্ছ ও বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর ন্যায্য অংশ নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতা কাঠামোর আলোচনায় এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
২. নবীন অর্থায়ন ও সামাজিক ব্যবসা যৌক্তিক অর্থায়ন এবং এমন উদ্যোগ যারা লাভ পুনরায় সমস্যার সমাধানে বিনিয়োগ করে, চাকরি, অন্তর্ভুক্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত করে।
৩. বিশ্ব আর্থিক কাঠামো ও ঋণ শাসন সংস্কার; উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো শক্তিশালী কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে হবে। ঋণকে কঠোরতা নয়, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের হাতিয়ারে রূপান্তর করতে হবে।
৪. স্বচ্ছতা, অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধ ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, জানতে হবে কীভাবে সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সবচেয়ে দুর্বলদের জন্য বিনিয়োগের ত্বরান্বিতকরণ; স্থিতিশীল বাসস্থান, জলবায়ু-বান্ধব কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা/রাসেল