রাজধানীর মিরপুরের বেনারসিশিল্পের আধুনিকায়ন এবং পণ্যের বহুমুখীকরণে সহায়তা করছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশন। আধুনিক তাঁত যন্ত্র সরবরাহ এবং ডিজিটাল ডিজাইন পদ্ধতির প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের উৎপাদন খরচ হ্রাস ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এ ছাড়া বেনারসি তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য রক্ষা এবং বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোক্তারা সরকারি সহায়তার পাশাপাশি পৃথক বেনারসিপল্লির দাবি জানিয়েছেন। খবর বিজ্ঞপ্তির

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর বেনারসিশিল্প এলাকায় আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী পণ্য বৈচিত্র্যকরণ প্রশিক্ষণ সমাপনী, পণ্য প্রদর্শনী ও শিল্প এলাকা পরিদর্শন অনুষ্ঠানে এসব বিষয় উঠে আসে। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো.

মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা খান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।

উদ্যোক্তারা এই শিল্পের সুরক্ষায় পৃথক বেনারসিপল্লি স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিনের দাবির বিষয়টি পুনরায় উত্থাপন করেন। তাঁরা জানান, ২০০৩ সালে ভাষানটেক বেনারসিপল্লির জন্য প্লট বরাদ্দের আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত সাড়া পাওয়া যায়নি। ভাষানটেকে প্লট বরাদ্দ পেলে ব্যবসার প্রসার এবং ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পের উন্নয়ন করা সম্ভব হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বেনারসিশিল্পের উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এই শিল্পের বিকাশে যেকোনো বাধা দূর করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হলে সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে।

সভাপতির বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, মিরপুরের বেনারসি শাড়িকে দেশব্যাপী ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করতে ফাউন্ডেশন বিভিন্ন এসএমই মেলা, হস্তশিল্প প্রদর্শনী ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বেনারসি শাড়ির গুণগত মান বজায় রেখে আকর্ষণীয় ব্র্যান্ডিং ও প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে বাজারমূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

বেনারসি ক্লাস্টারের উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণসুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ফলে কারিগরদের ব্যবসায়িক মূলধনের সংকট অনেকাংশে কমেছে বলে জানান এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বেনারসি উদ্যোক্তারা ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, মিরপুরের বেনারসি ইতিমধ্যে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নিবন্ধন পেলেও অবৈধ পথে আসা নিম্নমানের ভারতীয় বেনারসির কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। যেখানে হাতে বোনা একটি বেনারসি শাড়ি তৈরি করতে ১০ দিন থেকে এক মাস সময় লাগে, সেখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রে তৈরি পলিয়েস্টার সুতার শাড়ি কম দামে বাজারে বিক্রি হওয়ায় দেশীয় কারিগরেরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।

উদ্যোক্তারা এই শিল্পের সুরক্ষায় পৃথক বেনারসিপল্লি স্থাপনের জন্য দীর্ঘদিনের দাবির বিষয়টি পুনরায় উত্থাপন করেন। তাঁরা জানান, ২০০৩ সালে ভাষানটেকে বেনারসিপল্লির জন্য প্লট বরাদ্দের আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত সাড়া পাওয়া যায়নি। ভাষানটেকে প্লট বরাদ্দ পেলে ব্যবসার প্রসার এবং এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প বাঁচানো সম্ভব হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ৩২ শতাংশ এবং এই খাতে প্রায় আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ কর্মরত। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বিবেচনা করে এসএমই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা মিরপুরের বেনারসিশিল্পের ঐতিহ্য রক্ষা এবং উন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গুরুত্বারোপ করেন। তাঁদের আশা, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে এই শিল্প হারানো গৌরব ফিরে পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ন রস শ ল প র এই শ ল প র অন ষ ঠ ন ভ ষ নট ক র রহম ন র জন য ব যবস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসইর তদন্তের জালে ‘অ্যাগ্রো অর্গানিকা’

পুঁজিবাজারের এসএমই প্ল্যাটফর্মে খাদ্য ও আনুসঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম খতিয়ে দেখছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। 

গত ২৯ মে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানিটির কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফারের (কিউআইও) মাধ্যমে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করেছে, তা প্রসপেক্টাস ও বিধি-বিধান অনুযায়ী করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এসএমই প্লাটফর্মে প্রায় তিন বছর আগে কোম্পানিটির লেনদেন চালু হলেও এখন পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের কাছে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেনি কোম্পানিটি। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে আরো ৯টি নির্দেশনা সাপেক্ষে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। পরিদর্শন কার্যক্রমে নতুন নির্দেশনার বিষয়টি অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন ওই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসির পরিদর্শনের নির্দেশ
গত ২৯ মে ২০২৫ তারিখে চিঠির মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির কার্যক্রম পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। তাতে বলা হয়, এ বিষয়ে পূর্ববর্তী নির্দেশনার সঙ্গে কোম্পানিটির পরিদর্শন কার্যক্রমে আরো ৯টি শর্ত অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হলো। অতএব সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস-২০২০ এর রুল ১৭ এর অধীনে কমিশনের পরিদর্শন, তদন্ত এবং তদন্ত বিভাগে একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

এছাড়া আরো একটি চিঠিতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বৃদ্ধির বিষয়ে বিএসইসি জানিয়েছে, অ্যাগ্রো অর্গানিকার পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আরো ৩০ কার্যদিবস বাড়ানো হয়েছে, যা ১৪ জুলাই, ২০২৫ তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে ডিএসই
কোয়ালিফায়েড ইনভেস্টর অফারের মাধ্যমে অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসি যে অর্থ সংগ্রহ করেছে, তা প্রসপেক্টাস ও বিধান অনুসারে হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।

কিউআইও এর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ প্রসপেক্টাস এবং কমিশনের সম্মতিপত্র অনুসারে ব্যবহার করে সময়ে সময়ে রিপোর্ট করা হয়েছে কি না, তা আর্থিক প্রতিবেদনে যাচাই করা করতে হবে।

অল্প পরিমাণ নগদ অর্থ ব্যয় ছাড়া সব লেনদেন ব্যাংকে হয়েছিল কি না ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অর্থ যাচাই করতে হবে।

সেই সঙ্গে কমিশনের সম্মতিপত্রের ২৬ নম্বর শর্ত অনুসারে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্য এবং সময় সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতি নিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

কোম্পানিটি এসএমই প্ল্যাটফর্মে ৩ বছর আগে লেনদেন চালু করেছিল কিন্তু এখন পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের কাছে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেনি, যার কারণ খতিয়ে দেখতে হবে।

অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক বিষয় থাকলে তা যাচাই করতে হবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “লভ্যাংশের বিষয়টি উচ্চ আদালতে মামলাধীন রয়েছে। বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করা হচ্ছে না।”

পরিদর্শন কার্যক্রম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ডিএসই ইতিমধ্যে তাদের পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। নতুন করে পরিদর্শেনর বিষয়ে কোনো তথ্য আমরা এখনো পাইনি।”

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কি না, সে তথ্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে নেই। একই সঙ্গে সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্যর (এনএভিপিএস) তথ্যও পাওয়া যায়নি।

শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি
অ্যাগ্রো অর্গানিকা পিএলসিকে ২০২৩ সালের ৩১ মে পুঁজিবাজার থেকে কিউআইও এর মাধ্যমে ৫ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। কোম্পানিটির প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, যার মোট পরিশোধিত মূলধন ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সে হিসাবে এর মোট শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ৩৩ লাখ। 

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩৬.৪৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫০.৫৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১২.৭০ টাকায়।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কমিউনিটি ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তাদের রিফাইন্যান্সিং চুক্তি
  • ডিএসইর তদন্তের জালে ‘অ্যাগ্রো অর্গানিকা’
  • বেসরকারি ব্যাংকে ট্রেইনি রিলেশনশিপ অফিসারের চাকরিতে করুন আবেদন, বেতন ৩১,০০০