পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শতাধিক ‘জঙ্গি’কে হত্যা করা হয়েছে: সর্বদলীয় বৈঠকে রাজনাথের দাবি
Published: 8th, May 2025 GMT
পাকিস্তানে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ সামরিক অভিযানে শতাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় দিল্লিতে ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে রাজনাথ সিং এই দাবি করেন।
রাজনাথ সিং বলেন, অভিযান এখনো শেষ হয়নি। তবে ভারত আর কোনো হামলা চালাতে চায় না। কিন্তু পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালালে তার উপযুক্ত জবাব দিতে ভারত প্রস্তুত।
ভারতের দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তানের কোন কোন স্থানে সন্ত্রাসী ঘাঁটি নষ্ট করা হয়েছে—বৈঠকে বিরোধী নেতাদের বিস্তারিতভাবে তা জানানো হয়।
বৈঠকের পর অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যা জানানো হয়েছে, তা আমরা শুনেছি। গোপনীয়তার স্বার্থে কিছু তথ্য সরকার জানাতে চায়নি। এই সন্ধিক্ষণে আমরা সরকারের সঙ্গে আছি।’
সরকারি সূত্রের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক বার্তা পাঠ করা হয়। তাতে তিনি এই কঠিন পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলার পর প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু নিজে সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠকের দিন চলে যান বিহার। সেই থেকে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পরদিনই সরকার সর্বদল বৈঠক ডাকে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ডাকা সেই বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী মোদি উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠকে পৌরোহিত্য করেন রাজনাথ সিং। তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু প্রমুখ।
বিরোধী নেতাদের মধ্যে বৈঠকে ছিলেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধী, তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিএমকের টি আর বালু, আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিং, উদ্ধব সেনার সঞ্জয় রাউত, এনসিপির সুপ্রিয়া সুলেরা।
সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, বিরোধী নেতারা সবাই পরিণতবোধের পরিচয় দিয়েছেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সবাই মোটামুটিভাবে রাজনৈতিক দিক থেকে ঐক্যবদ্ধ।
বৈঠক শেষে খাড়গে অবশ্য দ্বিতীয়বারেও প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের তিনি বলেন, ‘প্রথম বৈঠকের মতো দ্বিতীয় বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। উনি নিজেকে সংসদের চেয়েও বড় মনে করেন। এ বিষয়ে তাঁকে পরে আমরা প্রশ্ন করব। এখন এই সংকটকালে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করব না।’
সন্ত্রাসবাদীদের প্রত্যাঘাতের পর দেশের উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তের সীমান্তবর্তী বিমানবন্দরগুলোয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত দেশের ২৭টি বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে।
এ কারণে বিমান চলাচলেও নানা ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ৪৩০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, আকাশ এয়ারসহ বেসামরিক বিমান সংস্থাগুলোর প্রত্যেককেই বহু ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে।
উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিমানবন্দরগুলো বন্ধ রাখার ফলে দিল্লি বিমানবন্দরের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ফ্লাইটরাডার-এর তথ্য অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীর থেকে গুজরাট পর্যন্ত আকাশসীমা প্রায় বন্ধই বলা যায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপস থ ত ছ ল ন র জন থ স ব ম নবন মন ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলও কি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে
১৫ বছর ধরে অনেক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল আর সংগঠন মিলে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন।
এর ফলে হাসিনা সরকারের পতন হয় ও তিনি এবং তাঁর দলের কর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ পরিবর্তন শুধু একটা সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের ভয় ও দমনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাহস, আশা ও গণতান্ত্রিক চেতনার একটি বড় জয় ছিল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, কিছু গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনের সফলতাকে শুধু নিজের নামে দাবি করতে শুরু করে। কেউ কেউ বলতে থাকে, তাদের কারণেই সরকার পতন ঘটেছে। তাই তারাই ভবিষ্যতে ক্ষমতার একমাত্র ভাগীদার।
আবার কিছু ধর্মীয় বা আদর্শিক গোষ্ঠী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যারা আগে প্রকাশ্যে তেমন সক্রিয় ছিল না। এ ছাড়া কিছু নতুন দল, যারা আগে রাজনীতিতে খুব একটা পরিচিত ছিল না, তারাও হঠাৎ করে সামনে চলে এসেছে। তারা নিজেদের ‘নতুন শক্তি’, ‘ভিন্নধারার দল’ হিসেবে উপস্থাপন করে, কিন্তু তাদের আচরণে কখনো কখনো পুরোনো রাজনীতির কৌশলই দেখা যায়।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার দুটি মূলমন্ত্রেই ব্যর্থ২২ আগস্ট ২০২৪এই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী একসঙ্গে থাকলেও আন্দোলনের পর তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ করছে। এতে আন্দোলনের মূল চেতনা—জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন ধীরে ধীরে পেছনের দিকে চলে গেছে।
এ বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে, যাঁরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরাই কি আবার ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে নতুন একধরনের স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেবেন?
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট, ২০২৪