পাকিস্তানে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ সামরিক অভিযানে শতাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় দিল্লিতে ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে রাজনাথ সিং এই দাবি করেন।

রাজনাথ সিং বলেন, অভিযান এখনো শেষ হয়নি। তবে ভারত আর কোনো হামলা চালাতে চায় না। কিন্তু পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালালে তার উপযুক্ত জবাব দিতে ভারত প্রস্তুত।

ভারতের দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তানের কোন কোন স্থানে সন্ত্রাসী ঘাঁটি নষ্ট করা হয়েছে—বৈঠকে বিরোধী নেতাদের বিস্তারিতভাবে তা জানানো হয়।

বৈঠকের পর অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যা জানানো হয়েছে, তা আমরা শুনেছি। গোপনীয়তার স্বার্থে কিছু তথ্য সরকার জানাতে চায়নি। এই সন্ধিক্ষণে আমরা সরকারের সঙ্গে আছি।’

সরকারি সূত্রের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক বার্তা পাঠ করা হয়। তাতে তিনি এই কঠিন পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলার পর প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু নিজে সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠকের দিন চলে যান বিহার। সেই থেকে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পরদিনই সরকার সর্বদল বৈঠক ডাকে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ডাকা সেই বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী মোদি উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠকে পৌরোহিত্য করেন রাজনাথ সিং। তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু প্রমুখ।

বিরোধী নেতাদের মধ্যে বৈঠকে ছিলেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধী, তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিএমকের টি আর বালু, আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিং, উদ্ধব সেনার সঞ্জয় রাউত, এনসিপির সুপ্রিয়া সুলেরা।

সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, বিরোধী নেতারা সবাই পরিণতবোধের পরিচয় দিয়েছেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সবাই মোটামুটিভাবে রাজনৈতিক দিক থেকে ঐক্যবদ্ধ।

বৈঠক শেষে খাড়গে অবশ্য দ্বিতীয়বারেও প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের তিনি বলেন, ‘প্রথম বৈঠকের মতো দ্বিতীয় বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। উনি নিজেকে সংসদের চেয়েও বড় মনে করেন। এ বিষয়ে তাঁকে পরে আমরা প্রশ্ন করব। এখন এই সংকটকালে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করব না।’

সন্ত্রাসবাদীদের প্রত্যাঘাতের পর দেশের উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তের সীমান্তবর্তী বিমানবন্দরগুলোয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত দেশের ২৭টি বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে।

এ কারণে বিমান চলাচলেও নানা ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ৪৩০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, আকাশ এয়ারসহ বেসামরিক বিমান সংস্থাগুলোর প্রত্যেককেই বহু ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে।

উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিমানবন্দরগুলো বন্ধ রাখার ফলে দিল্লি বিমানবন্দরের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ফ্লাইটরাডার-এর তথ্য অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীর থেকে গুজরাট পর্যন্ত আকাশসীমা প্রায় বন্ধই বলা যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপস থ ত ছ ল ন র জন থ স ব ম নবন মন ত র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি জানান, সপ্তাহখানেক আগে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানান আসিফ মাহমুদ।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবির মুখে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এখন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। তিনি আজ রাতে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফর্মালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্নকরণ নিশ্চিত করাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার।’

আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণার দাবিতে আজ রাত ১০টার পর থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। সেখানে হাসনাতের সঙ্গে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়েছেন। অবস্থান কর্মসূচিতে ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘গোলামি না আজাদী, আজাদী আজাদী’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচির কারণে যমুনার সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এই কর্মসূচি চলার মধ্যেই রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, ফ্যাসিস্ট ও খুনি আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না।’

জুলাইয়ের সব শক্তি, শহীদ পরিবারের সদস্যদের ও আহতদের রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ