যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি কেন টিকবে না
Published: 8th, May 2025 GMT
ভূখণ্ড বেদখল, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অবকাঠামো ধ্বংস ও সীমাহীন মানবিক ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও ইউক্রেনের অর্থনীতি দারুণভাবে টিকে থাকার সক্ষমতা দেখিয়ে চলেছে। অনেক গুণ শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সামরিক প্রতিরোধের পেছনে দেশটির সফল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে ধসে পড়ার কথা, তার বদলে এই যুদ্ধ বরং সেগুলোকে আরও শক্তিশালী করেছে।
রাজস্ব সংগ্রহ ও স্বেচ্ছাসেবামূলক তহবিল সংগ্রহ—এই দুয়ের সমন্বয়ে ইউক্রেন নাটকীয়ভাবে সামরিক বাহিনীর আকার বাড়িয়েছে, প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারাও একটা মাত্রায় বজায় রেখেছে। ইউক্রেনকে এই সাফল্যের জন্য কৃতিত্ব দিতে হবে। কিন্তু যুদ্ধের বিপুল খরচ মেটানোর ক্ষেত্রে দেশটির নিজস্ব সম্পদের অভাব রয়েছে। ফলে বাইরের আর্থিক সহায়তা অত্যাবশ্যক। ইউক্রেনের যুদ্ধকালীন স্থিতিশীলতা একটা বৈপরীত্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সেটা হলো, রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা উল্লেখ করার মতো বাড়ার পরও বিদেশি সহায়তার ওপর মৌলিকভাবে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে।
রাশিয়ার অর্থনীতিকে প্রায়ই একটা সর্বাত্মক যুদ্ধের সফলতার গল্প বলে দেখা হয়। সাধারণ একটা ধারণা যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়ার অর্থনীতি সংকটে পড়েনি। কিন্তু এই আপাত শক্তিমত্তার কারণ হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর রাশিয়ার নির্ভরশীলতা। গত এক দশকে তেল ও গ্যাস থেকে রাশিয়ার রাজস্ব আয় ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। এই রাজস্বই রাশিয়ার বাকি অর্থনীতিকে টেকসই রাখছে।
২০২২ সালে বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেটা রাশিয়ার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু বর্তমানে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় রাশিয়ার সামনে সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের যে ভবিষ্যৎ প্রবণতা, সেটাও রাশিয়ার জন্য বড় সমস্যা তৈরি করবে। দ্য ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির অনুমান হলো, আগামী পাঁচ বছরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহ অভূতপূর্বভাবে বেড়ে যাবে। এটা নিশ্চিতভাবেই রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করবে।
ইউক্রেন ২০২৭ সাল পর্যন্ত সাহায্য ও ঋণ হিসেবে বিদেশি সহায়তা নিশ্চিত করে ফেলেছে। কিন্তু রাশিয়াকে সামরিক খাতের ব্যয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপরই নির্ভর করতে হবে। কাগজে–কলমে ইউক্রেন অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা সাম্প্রতিক খনিজ চুক্তি এই মূল্যায়নকে জটিল করে তুলছে।
চুক্তিতে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহারের জন্য একটি যৌথ বিনিয়োগ তহবিল গঠনের কথা থাকলেও শর্ত থেকে স্পষ্ট যে এতে যুক্তরাষ্ট্রই লাভবান হবে। চুক্তি অনুযায়ী, তহবিল পুষ্ট করার জন্য ইউক্রেনকে এ খাত থেকে রাজস্ব আয়ের অর্ধেকটা দিয়ে দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এমন কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। এই বৈষম্য থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারবে।
এই চুক্তিকে ব্যাপকভাবে ইউক্রেনের বিজয় বলে প্রচার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে আগের চুক্তির খসড়ায় অনেক কঠিন শর্ত ছিল এবং ইউক্রেনকে বিজয়ী করার জন্য শর্তগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত চুক্তিটিতেও এমন শর্ত রয়েছে, যেটা ঔপনিবেশিক চিহ্ন বহন করছে। বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও এই চুক্তি কার্যকর না–ও হতে পারে।
খনিজ সম্পদ উত্তোলনের কাজটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এবং এ ক্ষেত্রে প্রচুর পুঁজি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। আবার বিনিয়োগকারীদের রাজনৈতিক ঝুঁকির কথাও বিবেচনা করতে হয়। ভবিষ্যতে ইউক্রেনে যে সরকার আসবে, তারা চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি আরও ভালো কোনো প্রস্তাব দেয়।
এখানে ভাষ্যটা কী তৈরি হচ্ছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প প্রশাসনের করা এই খনিজ চুক্তিকে আন্তর্জাতিকভাবে জবরদস্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। একটা দেশ যখন গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করছে, তখন সেই দেশের সঙ্গে এভাবে ব্যবসা করাটা ঠিক নয়।
ইউক্রেনকে আত্মরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের ওপর কিছু মাত্রায় নির্ভর করে যেতে হবে। ইউক্রেন এখন চুক্তিটাকে সেই বিবেচনা থেকেই দেখছে। তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় রাশিয়ায় যুদ্ধযন্ত্রের জন্য রসদ যখন ফুরিয়ে আসবে, তখন ইউক্রেনের দিকে ঘুরে যাবে।
লুক কুপার থিঙ্কট্যাংক এলএসই আইডিয়াসের রিসার্চ ফেলো দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র র র জন য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার পাচ্ছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু
বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্যখাতে দীর্ঘদিনের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন ২০২৫ সালের জন্য পুরস্কৃত করেছে দেশের শীর্ষ কৃষি উদ্যোক্তা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে।
প্রতিষ্ঠানটি গত মঙ্গলবার রাতে এক ঘোষণায় ২৭ দেশের ৩৯ জনকে ‘টপ এগ্রি ফুড পাইওনিয়ার’ হিসেবে মনোনীত করে। সেই তালিকায় রয়েছেন লাল তীর সীডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিশিষ্ট রাজনীতিক আবদুল আউয়াল মিন্টু।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বীজ, সবজি ও প্রাণিসম্পদ খাতসহ কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় কাজ করছেন মিন্টু। ১৯৯৪ সালে মাত্র ২৫ একর জমির ওপর তিনি ‘লাল তীর সীডস লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ বেসরকারি কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। বর্তমানে এটি জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণে আঞ্চলিকভাবে সপ্তম স্থানে রয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশে তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন (আইএসটিএ স্বীকৃত) বীজ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করেন, যা দেশে একমাত্র। মিন্টুর উদ্যোগে দেশে হাইব্রিড ও উন্নত বীজের ব্যবহার জনপ্রিয় হয় এবং সবজি উৎপাদনে বিপুল সাফল্য আসে।
উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতি, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণার মাধ্যমে দেশের কৃষি উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার গবেষণার মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো মহিষের জীবন রহস্য উন্মোচন হয়। পাশাপাশি উন্নত জাতের গরু মোটাতাজাকরণে সীমেন প্রযুক্তির প্রচলনও তারই হাত ধরে শুরু হয়।
পুরস্কার প্রসঙ্গে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমি সবসময় কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে অবদান রাখতে চাই। এই সম্মান আমাকে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।’
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর ৩৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২১–২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের ডেস মইনসে আয়োজিত নরম্যান ই. বোরলাগ আন্তর্জাতিক সংলাপে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাশাল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ব এখন খাদ্য, পুষ্টি ও জলবায়ুভিত্তিক সংকটের সম্মুখীন। এই ৩৯ জন সম্মানিত ব্যক্তি সাহসী পরিবর্তনকারী, যারা বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন।’
এ বছর মনোনীতদের মধ্যে রয়েছেন বিজ্ঞানী, কৃষক, নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা ও মানবতাবাদীরা। যারা বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।